অপহরণের পর নির্যাতন করে টাকা আদায় করাই অপহরণকারীরা প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু এই চক্রটি অপহৃতদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। ভুক্তভোগী পরিবারের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে দাবি করা হয় মুক্তিপণ।
পাঁচ শ টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে অপহৃতদের ছেড়ে দেন তারা। আবার কখনও টাকা না নিয়েও একদিন পর ছেড়ে দেয়ার উদাহরণ আছে। এভাবে পাঁচ শতাধিক অপহরণ করেছে চক্রটি।
এই চক্রের হোতা মিল্টন মাসুদের সাবেক স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে মাসুদসহ শাহীনুর রহমান ও সুফিয়া বেগম নামের আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানার একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
নিউজবাংলাকে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বর দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে সেটি আবার বন্ধ করে রাখতেন মাসুদ। চারটি বিয়ে করলেও এখন এক স্ত্রীর সঙ্গেই আছেন তিনি।’
তার বিরুদ্ধে আগেই পাঁচটি অপহরণ মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাসুদ মাদকসেবী। তার কাজই হচ্ছে কৌশলে শিশুদের অপহরণ করা।’
এডিসি বলেন, ‘শুধু ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য মাসুদের ৭-৮টি সিম ছিল। ভিকটিম ছাড়া তিনি তার এই নম্বরগুলো দিয়ে অন্য কাউকে ফোন দিতেন না।
‘ওই সিমগুলোর একটি সাবেক এক স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এটাই আমাদের মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে সাহায্য করেছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবারকে ফোন দেয়ার পর নম্বর বন্ধ থাকার কারণে আমরা তাকে ধরতে পারছিলাম না। পরে এক ভিকটিমের পরিবারকে তিনি একটি নম্বর থেকে ফোন দেন। পরে আমরা আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সাবেক এক স্ত্রীর নম্বর শনাক্ত করি।
‘তখন ওই নারীর বাসা তল্লাশি ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা নিশ্চিত হই মাসুদ তার সাবেক স্ত্রী। পরে ওই নারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মাসুদকে গ্রেপ্তার করি।’
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, ‘২৪ মার্চ রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের হলি ল্যাবের সামনে থেকে ৬ বছরের শিশু শাহিন শেখ হারিয়ে গেলে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি জিডি করা হয়। এর সূত্র ধরে প্রথমে অপহরণকারী চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
‘চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, বাজার, রেস্তোরাঁসহ নানা জায়গায় একা থাকা ও বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরতে বেরোনো শিশুদের টার্গেট করে কৌশলে অপহরণপূর্বক তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘চক্রের হোতা মাসুদ ও তার সহযোগী শাহীনুর ছয় থেকে সাত বছর ধরে ৫০০ থেকে ৬০০ শিশুকে অপহরণ করেছেন। টার্গেট করা শিশুকে তার বাবা-মায়ের বন্ধু কিংবা ব্যবসায়িক পার্টনার পরিচয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মা-বাবার আর্থিক অবস্থা কৌশলে জেনে নিতেন চক্রের সদস্যরা। এরপর শিশুর মা-বাবা টাকা পাবেন বলে কল করতে বলা হতো তাদের কাছে। সেই কৌশলে মোবাইল নম্বর নিয়ে শিশুটির মা-বাবাকে ফোন করে সন্তান অপহরণ হয়েছে জানিয়ে টাকা দাবি করতেন তারা।’
ডিসি মোর্শেদ বলেন, ‘বাবা-মা ভয়ে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিতেন অপহরণকারীদের। টাকা দেয়ার কিছু সময় পরে দেখা যায়, অপহৃত শিশুটি বাসায় ফিরে এসেছে। কোনো বাবা-মা যদি টাকা নাও দিতে পারেন, তবুও তাদের সন্তান ফেরত চলে এসেছে বলেও জানা গেছে।
অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ডিএমপির এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।’
যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অভিনেত্রী শমী কায়সারকে একটি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক এই সভাপতিকে তিন মাসের জামিন দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সে মামলায় শমী কায়সারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিম্ন আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন শমি কায়সার।
অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দেয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে এ মামলায় তাদের দেয়া সাত বছরের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ইমেজকে ক্ষুণ্ন করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন।
‘আজকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আমাদের লিভ দিয়েছেন (আপিলের জন্য অনুমতি)। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদক ও আমাদের আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাত বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন। এই মামলায় দুইজন আসামি। দুইজনের ক্ষেত্রেই সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে অভিযোগপত্রের বাইরের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একটি নির্মাণ কোম্পানির চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন।
এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন মামুনও আপিল করেন।
দুই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আজ এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার এ পদে তাকে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিয়া আলী আকবর আজিজি ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদকে দুদকের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের কথা জানানো হয়।
গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছাম্মৎ আছিয়া খাতুন। এর পর থেকে দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদ খালি ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন পদত্যাগ করেছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুল মোমেন। সোমবার তার পদত্যাগপত্র প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয় এবং তা গ্রহণ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে মঙ্গলবার এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, পদত্যাগের কারণ আবদুল মোমেন ‘ব্যক্তিগত’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে ১৯৮২ সালের বিশেষ বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আবদুল মোমেনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন।
পরে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দিতে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই আবদুল মোমেনকে দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর গত ১৭ আগস্ট আবদুল মোমেনকে দুই বছরের চুক্তিতে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
পরের দিন তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। গত ১ অক্টোবর থেকে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
আবদুল মোমেন ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও বিমানের এমডি ছিলেন।
তার আগে নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস। ২০০৯ সালে অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আরও পড়ুন:‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিলের অনুমতি দিয়েছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। তিনি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
‘জয় বাংলা’কে ২০২০ সালের ১০ মার্চ জাতীয় স্লোগান করার ওই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সাথে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ’
আদালত আরও বলে, ‘আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন। এটা এ আদালতের এখতিয়ার-বহির্ভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।’
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছে উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলে, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন। এরপর আদালত রায়ের অংশ ঘোষণা করে।
আদেশে আদালত বলে, ‘ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।
খ. সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারী এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
গ. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকরা যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এ রুলের শুনানি শুরু হয়। এরপর হাইকোর্ট রায় দেয়।
সম্প্রতি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরি প্রার্থীর চৌদ্দ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে দেখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।’
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।’
রাজধানীতে ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য