কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হত্যার আগে কয়েক দফা বৈঠক করে ঘাতকরা। টানা দুই ঘণ্টার বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের পর মাত্র দেড় মিনিটেই শেষ হয় কিলিং মিশন।
এর আগে গৌরীপুর ও তিতাসে রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার মধ্যে যুবলীগ নেতা জামালকে ‘বোরকা পরে’ গুলি করে হত্যার ঘটনাটি সিনেমার চিত্রায়নকেও হার মানিয়েছে।
খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
এ ঘটনার পর থেকে তিতাসের রাজনৈতিক নেতাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরবর্তী টার্গেট কে, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মাথায়।
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বোরকা পরে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলেও তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে। যে কোনো সময় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।
মামলার নথি ঘেটে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য।
হত্যাকাণ্ডের আগে পরে কী হয়েছিল
হত্যাকাণ্ডের দিন ঘাতকরা দীর্ঘক্ষণ জামালের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে একজন দফায় দফায় খোঁজ খবর রেখেছিলো- জামাল কখন কোথায় আছে্ন, কি করছেন। পরে খবর পেয়ে তিন দুর্বৃত্ত বোরকা পরে এসে জামালকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। দুই দফা গুলি করে ঘটনাস্থলেই জামালের মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে এক যুবকের পিস্তল হাত থেকে পড়ে যায়।
মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটেই কিলিং মিশন শেষ করেন তারা।
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রত্যক্ষদর্শীরা বুঝতে পারছিলেন না কি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ জামালকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
বাজারের এক প্রান্তে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটলেও অন্য প্রান্তের মানুষ জানতে পারেন প্রায় আধঘন্টা পর।
কী বলছে জামালের পরিবার
জামাল স্ত্রী ও স্বজনরা জানান, হত্যার আগে একাধিকবার জামাল হোসেন ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জামালের স্ত্রী থানায় জিডিও করেছিলেন।
পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা নিহত জামাল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তিতাসের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও হত্যা, অস্ত্রসহ ৯টি মামলার আসামি সন্ত্রাসী শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদারকে দায়ী করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে জামালের স্ত্রী পপি আক্তার মামলায় এসব কথা উল্লেখ করেন।
মামলার এজাহারে যা আছে
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জামালকে হত্যার আগে সোহেল শিকদারের নেতৃত্বে তার ওপর একাধিকার হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছেন ৩২ বছর বয়সী সুজন, ২৮ বছর বয়সী আরিফ, ৩৮ বছর বয়সী ইসমাঈল, ৪৮ বছর বয়সী সোহেল শিকদার, ৪৫ বছর বয়সী বাদল, ৩৫ বছরের শাকিল, ৩৭ বছরের শাহ আলম, ৩৯ বছরবয়সী অলি হাসান, ৪২ বছর বয়সী কালা মনির। এছাড়াও অজ্ঞাত আছেন আরও ৮ জন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ‘হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে জামাল যখন বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন মামলার ৩ নম্বর আসামি ইসমাইল সেখানে অবস্থান করে তাকে ঠাণ্ডা পানি খাওয়ানোর কথা বলে সময়ক্ষেপণ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই বোরকা পরা ৩ সন্ত্রাসী গুলি চালায়।
‘মৃত্যুর আগে জামাল হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর আসামি সুজন ও আরিফের নাম বলে যান।’
আসামিরা সবাই সোহেল শিকদার বাহিনীর সদস্য বলে জানা গেছে।
কুমিল্লা উত্তরের ডন হতে চান সোহেল শিকদার
কুমিল্লা জেলায় রাজনৈতিক মতবিরোধে যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটনা ঘটেছে তিতাস উপজেলায়। এখানে খুনের ঘটনা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, রাজনৈতিক খুনাখুনি হলো পরম্পরা।
তিতাস উপজেলা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিতাস, দাউদকান্দিসহ আশপাশের এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ডন হতে চান নিহত যুবলীগ নেতা জামাল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সোহেল শিকদার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দসহ অন্তত ৫০ জন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোহেল শিকদার বাহিনীর সঙ্গে তিতাসের রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ চলছিল।
স্থানীয়রা আরও জানান, শিকদার বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডে কোনো বাধা এলে সু-পরিকল্পিতভাবে তা দমন করা হয়। হত্যাকাণ্ডের আগে কেউ কোনোকিছু টের পায় না।
গৌরীপুর বাজারসহ তিতাস উপজেলা সদরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর তিতাস উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসাইন সরকার ও তার শ্যালক মহিউদ্দিনকে গৌরিপুর বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার ৫ মিনিট আগেও কেউ টেয় পায়নি এমন কিছু হতে যাচ্ছে।
সে সময় ধারালো অস্ত্র ও গুলির আঘাতে মনির খুন হওয়ার পর তার গ্রুপের নেতৃত্ব ও মামলার তদারকি করতেন নিহত জামাল।
মনির হত্যা মামলায় পরে ডিবি পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন সোহেল শিকদার। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে জামাল এবং মনিরের স্ত্রীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকেন। এমনকি মনিরের ঢাকার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী ও জামালকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। পরে মনিরের স্ত্রী ঢাকার কদমতলী থানায় এ বিষয়ে সোহেল শিকদারের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এদিকে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর মনির হত্যা মামলায় স্বাক্ষীদের নিয়ে আদালতে আসেন জামাল হোসেন। ওই সময় আদালতের অভ্যন্তরে জামালসহ মামলার স্বাক্ষীদের ওপর হামলা করেন সোহেল শিকদারসহ অন্যরা।
মনির হত্যা মামলা মীমাংসা না করার জেরেই জামালকে সোহেল শিকদারসহ অন্যরা হত্যা করেছে বলে মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে।
দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞাঁ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মামলা করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পরিকল্পনা করেই জামালকে হত্যা করা হয়েছে। যাকে বলা হয় টার্গেট কিলিং। ইতোপূর্বে তিতাস, জিয়ারকান্দি, গৌরীপুর এলাকায় আধিপত্য নিয়ে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা অতীতের সব ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা রেহাই পাবে না। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’
এর আগে, গত রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে বোরকা পরা ৩ দুর্বৃত্ত যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। তাদের গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পাথরবাহী ট্রাকের ধাক্কায় ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৪ আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গৌরীনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সিলেটগামী পাথরবাহী একটি ট্রাক সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিলে ৬ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
হাসপাতাল সূত্রে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার লুবিয়া গ্রামের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী নয়ন মিয়া।
এ ঘটনায় নয়ন মিয়ার ভাই ৪০ বছর বয়সী হারুন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নয়াগাঙ্গের পাড় গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী শাহ আলম, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রঞ্জিত সাহার ছেলে ২৩ বছর বয়সী পার্থ সাহাসহ অজ্ঞাতনামা আরও একজন আহত হয়েছেন।
চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশ অমান্য করায় টাঙ্গাইলের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছেন গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌরসভার সূতি পলাশ মহল্লার দারুল কোরআন ও কওমী মাদ্রাসায় যান ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা। সেখান গিয়ে তিনি দেখতে পান সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টিনের ঘরে দমবদ্ধ পরিবেশে ছোট ছোট শিশুরা ক্লাস করছে।
তিনি উপস্থিত হওয়ার পরপরই গরমে রায়হান নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ সেখানে কোনো পানির ব্যবস্থা ছিল না। এমতাবস্থায় ইউএনও তার গাড়িতে রাখা খাবার পানি এনে শিশুটির মাথায় ও চোখমুখে দেয়ার ব্যবস্থা করান।
খবর পেয়ে শিশুটির বাবা বাছেদ মিয়া সেখান হাজির হন এবং চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যান।
পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বাছেদ মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমে যেখান কোথাও একদণ্ড তিষ্ঠানো (থাকা) যায় না, সেখান প্রতিষ্ঠান প্রধান সরকারি নির্দেশে ছুটি না দিয়ে জলন্ত দুপুরজুড়ে ক্লাস নেন। অভিভাবকরা সন্তানদের ক্লাসে পাঠাতে বাধ্য হন।’
তিনি বলেন, ‘দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তখন টিনের ঘর নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানে আইপিএস বসানোর জন্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফিসও আদায় করা হয়েছে, কিন্তু আইপিএস বসানো হয়নি।’
সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে ক্লাস চালু রাখায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ সাদী ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সরকারি নিয়ম মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে মুচলেকা দেন।
এরপর তপ্ত দুপুরজুড়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ পেয়ে পৌর শহরের কোনাবাড়ী বাজারে লাইটহাউজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড আলহেরা নূরানী মাদ্রাসায় হাজির হন ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা। সেখানে গিয়েও অভিযোগের সত্যতা পান তিনি।
ওই স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলপ্রধান মৌখিক ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো শিশু ক্লাস না করলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে বাচ্চাদের ক্লাসে পাঠাচ্ছেন।
ওই স্কুল ও মাদ্রাসাপ্রধান হাবিবুর রহমানও ইউএনওর কাছে মুচলেকা দেন।
ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যের চেয়ে শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে, শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রেখে কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য