রাজধানীর মগবাজার থেকে সাত রাস্তামুখী ফ্লাইওভারের নিচের পিলারগুলোতে ব্যানার-পোস্টার তুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাদা রং করা হয়েছে। ধবধবে সাদা রংয়ের ক্যানভাসে ফুটে উঠছে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি। তাতে শোভা পাচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতি এবং শিক্ষণীয় বিষয়।
ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন করা চারটি পিলারের একটিতে পরিবেশ সংরক্ষণের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পিলারের একপাশে এক কিশোর চারা গাছ লাগাচ্ছে, আরেক কিশোর বই নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। একটিতে লেখা রয়েছে হর্ন বাজাবেন না, পোস্টার না লাগাই। আর দুটি পিলের একটিতে ফুল, পাখি, সূর্য এবং আরেকটিতে ফুলের নকশার সঙ্গে নৌকা দিয়ে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কেবল কাজ শুরু হলেও পিলারগুলো যে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তা পথচারীদের আকৃষ্ট করছে। অনেকেই মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করছেন সেই দৃশ্য।
সোমবার দুপুরে মগবাজার চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের পিলারে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে শুরুতে মেয়র আতিকুল ইসলাম চিত্রশিল্পীদের অনুপ্রেরণা দিতে নিজেই রংতুলির আঁচড়ে গ্রাফিতি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ফ্লাইওভারের পিলারে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর্ট যত্রতত্র পোস্টার বন্ধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের, এই শহরটা আমাদের। এই দেশ, এই শহর বাহিরের কারোর নয়। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। অথচ যত্রতত্র পোস্টার লাগিয়ে আমরা নিজেরাই এই শহরের দৃশ্য দূষণ করছি। আমরাই শব্দ দূষণ করছি, বায়ু দূষণ করছি। শহরের দূষণ বন্ধে আমাদের নিজেদের ঠিক হতে হবে, সচেতন হতে হবে। শুধু সরকার, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিলে হবে না। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।’
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের উড়াল সড়কের পিলারগুলোতে তাকালে দেখা যায় যত্রতত্র পোস্টার লাগানো, অমুক ভাই সালাম নিন, তমুক ভাই এগিয়ে চলুন, ভাই আপনি নেতা হবেন, আমরা আপনার পেছনে আছি এসব লেখা পোস্টারে ভরা। যত ধরনের তেলবাজি, পামপট্টি সব পোস্টারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। নিচের দিকে লিখে রাখে সৌজন্যে অমুক। এসব সৌজন্যে অমুকদের বলতে চাই এগুলো বন্ধ করুন। অন্যথায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। জেল হবে, জরিমানা হবে।’
এসময় ডিএনসিসির মেয়র আরও বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন থেকে পোস্টার-ব্যানারে ভরা অসুন্দর পিলারগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা চিত্রকর্মের মাধ্যমে পিলারগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছি। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি শহর গড়ে তুলতে চাই। পিলারগুলোতে চিত্রকর্মের মাধ্যমে শিক্ষণীয় ম্যাসেজ দেয়া হবে। যেমন হর্ন বাজাবেন না, পোস্টার না লাগাই, গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই, তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন, আসুন দেশকে ভালোবাসি।’
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন রিকশায় যারা পেইন্টিং কাজ করতেন তাদের যেন সম্পৃক্ত করি ৷ তাই রিকশা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের এই গ্রাফিতি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারে শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে বাকি ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের পিলারেও গ্রাফিতি করা হবে।’
এসময় ফ্লাইওভারের পিলারের সৌন্দর্য রক্ষায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর ঘোষণাও দেন তিনি।
আরও পড়ুন:সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতীতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ বছরে এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
‘সে টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। এই মর্মেও তদন্তে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।
‘১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই গায়েব হয়ে গেছে। তবে সবকিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।’
সাংবাদিক রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব, যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেসব কথাবার্তা বলেছেন, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কারও বেডরুমের পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না।
‘এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি যে, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখন যেহেতু সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখন কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন তো দেখতেছি ওরা কাজ করতেছে। একটু হইলেও আমরা হোপফুল। আশা করা যাচ্ছে পজেটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।’
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে ব্যর্থতার একপর্যায়ে ডিবি থেকে র্যাবকে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কথার ফানুস হয়েই নিষ্ফল হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ স্টলে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলমান অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর দশম দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর সব্যসাচী স্টলে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বাংলা একাডেমি প্রেসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে সদস্য সচিব করা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধি মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ এবং শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
চলমান অভিযান ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে, সে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এ দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, দলীয় বাহিনীর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে।
‘গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেণি তৈরি করে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এককথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। আর এখন অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এ সকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ, জেলা ম্যাজিস্ট্রটরা, স্পেশাল আদালতের বিচারকগণ, আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবীগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলব।
‘অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে আমি বলব, কোনো শয়তান যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে না যেতে পারে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনজীবীদের আমি বলব, কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সবোর্চ্চ সতর্ক থাকুন।’
আরও পড়ুন:বিচার বিবেচনা ছাড়া হুটহাট কাউকে জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর রাজারবাগে মঙ্গলবার দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার এজাহার সুন্দর করে লিখেন, তথ্য দিন। গত ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। তা না হলে এ পদে থাকার কোনো মানে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পতিত সরকার ও তার দোসররা লাখ লাখ টাকায় দেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মবতন্ত্র ভয়াবহ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সব বিভাগ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর মতিঝিল থানার আয়োজনে সোমবার বিকেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। যারা নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছেন, তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণহত্যার বিচার হতেই হবে। যারা গণহত্যা করেছে, তারাই এ দেশে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
‘তারা জুলাইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের শিশু বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে, গুলির নির্দেশ দিয়েছে। তারা কেউ যেন বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া একসাথে চলবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘সংস্কার ঘোষণা দিয়ে হয় না। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা দেশকে বিভাজনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের ছোট্ট একটা দেশকে ভাগ করে সংস্কার এ দেশের মানুষ কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন:হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুল মজিদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাবেক এমপি আবদুল মজিদ খানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। হবিগঞ্জের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তৃণমূল বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত সোমবার শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেককে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অংশ নেন পারভেজ মিয়া। বিকালে আসামিদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৯ অক্টোবর মামলা করেন নিহতের মা কানিছ ফাতেমা।
মন্তব্য