রাজধানীর বেশির ভাগ মার্কেটই ফায়ার সার্ভিসের দৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাহিনীর ঢাকা সদর জোন-১-এর উপসহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ।
গাউছিয়া মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা জানান।
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শনে এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ আছে। এর মধ্যে ঠাঁটারীবাজারের একটা মার্কেট আছে, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, চকবাজারে মার্কেটসহ অনেক মার্কেট আছে। এই মার্কেটগুলো ফায়ার সার্ভিসের চাহিদা ফুলফিল করতে পারেনি। ঢাকার বেশির ভাগ মার্কেটই আমাদের চোখে ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা অনুরোধ করব এই মার্কেটগুলো যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘গাউছিয়া মার্কেটে ছয়টা সিঁড়ি আছে। সিঁড়ির কার্নিশে দোকান রয়েছে। এই সিঁড়িগুলো সরাতে হবে। ২০২০ সালের শেষের দিকে আমরা এখানে একটা মহড়া করেছিলাম। এই মার্কেটে ফায়ার এক্সটিংগুইশার আছে। ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া যা যা থাকা দরকার তা নেই। অন্যান্য ফায়ার নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার জন্য আমরা সুপারিশ আকারে দেব।’
এই মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে এখানে মহড়া করেছি। মার্কেট আগের থেকে উন্নত, তবে ঝুঁকি এখনও শেষ হয়নি। কখনও এখানে আগুন লাগলে এখানে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতা আছে। এখানে পর্যাপ্ত পানির উৎস নাই।
‘এই মার্কেটে আগুন নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না। আর কী কী করতে হবে, এই মার্কেটে সেটা আমরা সুপারিশ আকারে দেব। এই মার্কেটে ফায়ার টিম আছে বলে জানিয়েছেন মালিক সমিতি, তবে তার অস্তিত্ব পাইনি।’
ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গাউছিয়া মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বাবু বলেন, ‘দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিস যে নির্দেশনা দিয়েছে তা পরিপূর্ণ করেছি। আমাদের ফায়ার সার্টিফিকেট আছে। এ ছাড়া সব ভবনেই কিছু ত্রুটি থাকে।
‘আমাদের এখানে আউটডোরসহ যে ত্রুটি আছে, তা দুই-এক দিনের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করব।’
সিঁড়ির মধ্যে দোকান নিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এসব দোকান বসাতে সমিতির কোনো দায় নেই। কর্তৃপক্ষ যারা দোকান বরাদ্দ দিয়েছে, তারা জানেন এ বিষয়ে। সমিতির সভাপতি হিসাবে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কাজ আমার না। এরপরও ফায়ার সার্ভিস এসব দোকান সরাতে বলছে, আমরা কমিটির সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিব।’
মার্কেট যখন নির্মাণ করা হয়েছে তখন থেকেই সিঁড়িতে দোকান রাখা হয়েছে বলে জানান দোকানদাররা। সিঁড়ির দোকানগুলোর জন্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাড়া গুনতে হয়। অ্যাডভান্স দিতে হয় ৫ লাখ।
কথা হয় গাউছিয়া মার্কেটের তিন তলার সিঁড়িতে দেয়া ‘রোমিও-জুলিয়েট’ নামে একটি দোকানের মালিক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে এখানে দোকান করছি। মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিই৷ পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে এই দোকান ভাড়া নিয়েছি।’
মার্কেটের সিড়ি আটকে মালামাল রাখতে দেখা গেছে৷ আগুন লাগলে এই সিঁড়ি দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হবে। এটাকে ঝুকিপূর্ণ মনে করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় সিঁড়িতে এভাবে মালামাল রাখি না। ঈদের কারণে এখন এভাবে রাখা হচ্ছে।’
এভাবে সিঁড়ি আটকে মালামাল রাখাটা যে ঝুঁকিপূর্ণ, সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।
দুর্গাপূজার আগে দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেছেন, এ উৎসবে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা।
প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে আনসার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিঘ্ন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব পূজামণ্ডপে ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে এ উৎসব উদযাপন করা হবে।’
আইজিপি তিন স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘পূজা সামনে রেখে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আনসার ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি জেলায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় ও নৌ অঞ্চল মনিটরিং করছে কোস্টগার্ড ও বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট।’
আইজিপি বাধাবিপত্তির বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, বিশেষত সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধে সাইবার নজরদারি বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে বিশৃঙ্খলার কোনো জায়গা নেই। কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে, যাতে নাগরিকরা উৎসব চলাকালীন যেকোনো ঘটনা বা উদ্বেগের কথা জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন:বায়ুদূষণ কমাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস-মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সড়ক-মহাসড়ক থেকে প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
রোববার দেয়া চিঠিতে পুরনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালু করতেও বলা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বায়ুদূষণ রোধে ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত যানবাহন প্রত্যাহার এবং ডিজেলচালিত পুরনো যানবাহনের নিঃসরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য বিআরটিএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফিটনেসবিহীন ও ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত হয়েছে এমন যানবাহনকে রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের জন্য বিআরটিএ কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঢাকায় পুরনো ডিজেলচালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস পরীক্ষার সময় নিঃসরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।
সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। রোববার রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, আজ বিকেলে ডিবির একটি টিম সাবের হোসেন চৌধুরীর গুলশানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৪-এর বাংলাদেশ পর্বের ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
এ হ্যাকাথন শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে একটানা ৩৬ ঘণ্টা চলার পর শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয়।
গতকাল রাতে রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) এবং অনলাইনে একসঙ্গে শুরু হওয়া নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ফলাফলে ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ‘কোয়ান্টাম ভয়েজার্স’ তাদের গৌরবগাঁথা সাফল্য রচনা করে।
টিমের সদস্যরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ রায়হান (টিম লিডার), ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জাহাঙ্গীর হোসেইন ও ফারহান মাসুদ সোহাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মুয়াম্মার তাজওয়ার আসফি এবং ইউসুফ হাসান সিফাত।
গত ১০ বছর বিশ্বব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় টানা তিনবারসহ সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করা হয়।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ১ কোটি শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ২ লাখ শিক্ষার্থীকে সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এবার বাংলাদেশের ৯টি শহর থেকে ৩ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নেন।
সর্বমোট ৫০০টি প্রকল্পের মধ্যে হাইব্রিড মডেলে বাছাইকৃত শীর্ষ ৫০টি নিয়ে এআইইউবিতে এবং বাকি ৪৫০টি প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪-এর দুই দিনব্যাপী নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন।
আরও পড়ুন:ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানীতে অসহনীয় রূপ নিয়েছে যানজট।
আগেও যানজটের সমস্যা ছিল, তবে এখন যতই সময় যাচ্ছে, তা আরও প্রকট হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেখানে-সেখানে পার্কিং, বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, ফুটপাত দখল, গাড়ির তুলনায় রাস্তার সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাব, আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, রাজধানীকেন্দ্রিক শিল্পকারখানা স্থাপন এবং অফিস-আদালত ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় যানজটও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। বেশ কিছুদিন কর্মবিরতির পর সড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা, কিন্তু তাদের মধ্যে আগের মতো কাজে গতি দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসী।
তারা মনে করেন, পুলিশ যদি আগের মতো সড়কে কাজ না করে, তবে এ যানজট দিনকে দিন বেড়েই চলবে।
এদিকে রাজধানীতে বাড়ছে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, মালবাহী ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও ট্রাকের সংখ্যা।
সড়কের তুলনায় যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যাধিক্য এবং অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচলই যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ, যার ধকল পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গণঅভ্যুত্থানের পর জনরোষের শিকার হয় পুলিশ। থানা ও সড়ক ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় ছাত্র-জনতা সড়কে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব নেয়। সে সময় অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক অবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে উঠে আসে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ হাজারো অবৈধ যানবাহন।
অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাফিক পুলিশ সড়কে এলেও সড়ক আইন মানতে চাননি এসব যানবাহনের চালকরা। এমনকি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তাচ্ছিল্য করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন তারা।
আগে শহরের অলিগলিতে চললেও ৫ আগস্টের পর থেকে প্রধান সড়কে ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা।
গণপরিবহনের যাত্রীদের যেসব অভিযোগ
প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, মৌচাক ও নতুন বাজার মোড়ে অপেক্ষমাণ বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় যানজট প্রতিদিনের চিত্র হলেও আগের চেয়ে এখন প্রকট আকার দেখা দিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে হয়। পুলিশ থাকলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না।
পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আগেই যানজট নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি জানান যাত্রীরা।
ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল আনিসুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘সড়কে দিনকে দিন যানজট বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাস্তায় আগের চেয়ে বেড়েছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সড়কে যেন থেকেও নেই।
‘কারণ আগের মতো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে না। আগে যেভাবে তারা সড়কে দায়িত্ব পালন করতেন, এখন অনেকটা তারা নীরব দর্শকের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ যদি আগের মতো সড়কে কাজ না করে তবে এই যানজট দিন দিন বেড়েই চলবে।’
কুড়িল-নতুনবাজার থেকে প্রতিদিন গণপরিবহন গ্রিন ঢাকায় যাতায়াতকারী ফেরদৌস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে ঢাকায় অসহনীয় যানজট বাড়ছেই। আগের থেকে এখন বেশি যানজট। কেউ কাউকে মানছে না। ফলে রাস্তায় একটা অরাজকতা চলছে।
‘ট্রাফিক পুলিশ আরও কঠোর থাকলে এসব কমে যেত, কিন্তু আগের মতো সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে যানজট ব্যাপক বেড়ে গিয়েছে। পল্টন থেকে বাসে উঠলে আগে কুড়িল আসতে সময় লাগত এক ঘণ্টা। এখন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়।’
মূল সড়কগুলোতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকগুলো চলে আসায় যানজট ও দুর্ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এলোমেলোভাবে গাড়ি চালানো, প্রায়ই উল্টো দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কারণে দুর্ঘটনা ঘটছেই।
যানজট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা
ঢাকার যানজট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজতে পুলিশ ও দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই সিটি ট্রাফিক সিস্টেম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের যানজট নিরসন করতে হবে। আমাদের অবিলম্বে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’
কী বলছে ট্রাফিক পুলিশ
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নাজমুল হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘সড়কে যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। যানজটের জন্য পুলিশ কখনোই দায়ী না।
‘এখানে বেশ কিছু বিষয় কাজ করছে। পুলিশ আগের চেয়েও অনেক বেশি কর্মস্পৃহা নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সড়কে এখন প্রায়ই দেখা যায় দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জমায়েত হচ্ছেন। এতে করে সড়কের ট্রাফিক সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটে।
‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে ৫ আগস্টের পর কাভার্ড ভ্যানগুলো সড়কে নেমে যাচ্ছে আর এসবে কারণেও ট্রাফিক জ্যাম বেড়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও আমরা সর্বোচ্চ কাজ করছি।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন সড়কে উঠে যাচ্ছে, তবে আমরা তাদের প্রতিহতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
‘আমরা শুরুতে কয়েক দফা তাদের বুঝিয়েছি; কয়েক দফা তাদের ওয়ার্নিং দিয়েছি। এখন আমরা মামলা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’
ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত ব্যাটারির রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কারও রিকশার তার ছিঁড়ে দেয়া হচ্ছে, কারও সিট খুলে নেয়া হচ্ছে।
‘এ রকম লঘু শাস্তি দেয়া হচ্ছে, তবে জনবল ও যানবাহন স্বল্পতার কারণে রেকারিং কিংবা ডাম্পিং করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দিন দিন কঠোর হচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সড়কে এ ধরনের একটি যানবাহনও চলতে দেয়া হবে না।’
নাজমুল হাসান বলেন, ‘রাজধানীর ১২৮টি রুটের বাস চালকদের সচেতন করতে কাজ করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার পাশাপাশি বেশ কিছু লাইসেন্সবিহীন বাস সড়কে উঠে যাচ্ছে। আর এতে যানজট বাড়ছে।
‘আমরা এই লাইসেন্সবিহীন বাসগুলোকে সড়কে ওঠা বন্ধ করতে কাজ করছি।’
নগর পরিকল্পনাবিদের ভাষ্য
যানজট সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে গাড়ির সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী রাস্তা বাড়ছে না। গত কয়েক বছর বছরে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
‘যেখানে প্রাইভেট গাড়ি কমানোর কথা, সেখানে প্রতিনিয়তই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এক্সিসটিং রোড (বিদ্যমান সড়ক) এত গাড়ির ভার নিতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘মেগা সিটি মানেই প্রচুর গণপরিবহন, কিন্তু সেই গণপরিবহনের মাত্রা কিন্তু বাড়ছে না। গণপরিবহন যত ভালো করা যায়, ততই প্রাইভেট গাড়ির প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হবে এবং তারা গণপরিবহনে যাতায়াত করবে।’
এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘ঢাকার যানজট নিরসনে ২০০৫ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করে সরকার। ২০০৫ সালের সেই প্ল্যানটাকে যদি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে ২০২৪ সালে এসে অনেক উন্নতি করার কথা ছিল। অর্থাৎ যানজট বাড়ার কথা ছিল না, কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’
ড. আদিল আরও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরেই যানজট দেখা যায়, কিন্তু সেটা পরিমিত লেভেলের। ঢাকার যানজট বড় সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করা যায়, তবে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
‘ঢাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বড় অভাব রয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে খারাপ। এটিকে আরও আধুনিক করতে হবে।’
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে রোববার ঢাকার দুটি বাজারে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুইটি টিম বাজার তদারকি করে। এ সময় তদারকি টিম সাত প্রতিষ্ঠানকে ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
‘আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার ও গুলশান কাঁচাবাজারে তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে তদারকি টিমের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহেদী হাসান। এ সময় নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, ডাল, ডিম ও মুরগির বাজারে তদারকি করা হয়। টিমের সদস্যগণ মূল্য তালিকা টাঙানোসহ পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের রসিদ খতিয়ে দেখেন।
‘এ সময় মূল্য তালিকা সঠিকভাবে না টাঙানো ও যথাযথভাবে না লেখা ও সংরক্ষণ না করায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করার পাশাপাশি একজন মুরগি ব্যবসায়ীকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘…গুলশান কাঁচাবাজারে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্বে দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মানসুরীন খান চৌধুরী।
‘অভিযানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।’
আরও পড়ুন:ঢাকার কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর বোর্ডিং মার্কেটের একটি হোটেলে ট্রাকের ধাক্কায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।
এ ঘটনায় হোটেলের মালিকসহ দুজন দগ্ধ হয়েছেন, যারা হলেন মোহাম্মদ মিন্টু (৫৫) ও মোহাম্মদ হাসেম মিয়া (৩০)। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ দুজনকে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালটিতে আনা হয়।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর থেকে দগ্ধ হয়ে দুইজন বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মিন্টুর শরীরের ৫২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে মোহাম্মদ হাসেম মিয়ার দেহের ছয় শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দুজনের মধ্যে মিন্টুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মন্তব্য