যাত্রীদের ওঠানামার জন্য শুক্রবার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন।
এর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেলের ৯টি স্টেশনের সবগুলোই চালু হলো।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন।
তিনি রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন।
বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রী সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে পুরোদমে শুরু হবে মেট্রো ট্রেন চলাচল। তখন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ট্রেন চলবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ার পর যাত্রা ছিল উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনকেন্দ্রিক। তখন মাঝের অন্য কোনো স্টেশনে ট্রেন থামত না। পরে বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে ৯টি স্টেশন চালু হয়।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
এ রুটে বুধবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়।
সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলেছে, মেট্রো ট্রেন চলাচল শুরু হলে তারা যাত্রীদের এ বিষয়ে অবহিত করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডিএমটিসিএলের ভেরিফায়েড পেজে দেয়া পোস্টে বলা হয়, উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও রুটে মেট্রো ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রো ট্রেন চলতি সপ্তাহ থেকে শুক্রবারও চলাচল করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ মঙ্গলবার বাসসকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও মেট্রো রেল চালানোর চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আশা করছে শুক্রবার থেকে মেট্রো ট্রেন কাজীপাড়ায় থামবে। তাই স্টেশনটি পরিচালনা কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভাঙচুর করে।
স্টেশন দুটির জন্য ৩৭ দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল মেট্রোরেল। ২৫ আগস্ট থেকে আবার মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও দুটি স্টেশনই বন্ধ রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এমডি জানান, কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য স্টেশন দুটি প্রস্তুত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে স্টেশন দুটি মেরামতের জন্য আনুমানিক খরচ ৩০০ কোটি টাকা ধারণা করা হলেও পরবর্তী সময়ে মেরামত খরচ যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, এই স্টেশনগুলির মেরামত খরচ কমবে। কারণ আমরা স্থানীয় বাজার থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করব।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত মেরামতের ব্যয় নির্ণয় করবে পর্যালোচনা কমিটি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কর্তৃপক্ষ বন্ধ স্টেশন দুটি সংস্কার এবং চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা যাবে। মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ও বিএনপি দুটি সমার্থক শব্দ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপিই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার এক বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আমাদের (বিএনপি) অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির বহু নেতা নির্বাসিত হয়েছেন। আজকে আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন হেলায় না চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকারে যারা আছেন, তাদের বলব- এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেকে তাদের চেয়ারে বসে আছেন। এরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাধা হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছেন। তাদেরকে দ্রুত চেয়ার থেকে সরাতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জনগণের অধিকার এখনও ফয়সালা হয়নি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নানা সংস্কারের কথা বলছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার সেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, অনতিবিলম্বে দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাজানো মামলায় জেল খেটেছি, এর বিচার আমরা করব। গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যেখানেই তাদের পেয়েছে গণপিটুনি দিয়েছে। এই ১৭ বছরে ৩৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। কই আমাদের তো ফুল দিয়ে বরণ করেছে। আমরা জেলে গিয়েছি বীরের মতো, বেরও হয়েছি বীরের মতো।’
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা যে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ছাত্র-জনতার স্রোতে স্বৈরাচার হাসিনা ভেসে গেছে। ছাত্র-জনতাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ও দেবে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রথম ম্যান্ডেট নির্বাচন দিতে হবে। একইসঙ্গে গত ১৬ বছরে যে জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানের নামে নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমালোচনা সংবলিত স্লোগানের উত্তাল হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এবং আশপাশের পুরো এলাকা।
নেতাকর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নয়াপল্টনে আশপাশের এলাকা ও অলিগলিতে অবস্থান করেন ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকায় যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়।
আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সমাবেশে আসতে পেরে সবার মধ্যেই আনন্দ-উদ্দীপনা কাজ করেছে বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, দুপুর ১২টার আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খ্ণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন সমাবেশস্থল নয়াপল্টনে। এসময় নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও পোস্টার দেখা যায়।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে জাতীয়বাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদীন ফারুক, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, গাজীপুর জেলা বিএনপির ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলা বিএনপির নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, গাজীপুরের শওকত হোসেন সরকার, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, মৎসজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কার্যক্রম সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে; তবে এই সরকারের ব্যর্থতা হবে সবার ব্যর্থতা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে নিজেরাই যেন ব্যর্থতার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এই সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘এই সরকারের ব্যর্থতা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে।
‘তবে কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তী সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া জরুরি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দরকার।
‘কারণ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না। কেবল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন ও জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্ষম এবং উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ নিতে পারে। এর কিছু আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে।
‘দেশ এবং জনগণ এখন গুম, খুন, অপহরণ আর বিভীষিকাময় আয়নাঘরের আতঙ্কমুক্ত এবং স্বাধীন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পর এবার দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের এই আড়াই কোটি ভোটার একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেননি। কিংবা তাদের নিজেরাও কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী ও তরুণ। এই বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যা-ই থাকুক জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না হলে কোনো সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে না।’
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালেই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি- সব ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির আরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিমার্জনকেও দল স্বাগত জানায়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এমনকি কেউ যদি মনে করেন একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে- তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না।
এ কারণেই বিএনপি বার বার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে, একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র-রাজনীতি ও রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানারকম কথা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি যে প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন।
‘রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয় তেমনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যে ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি।
‘সুতরাং, আমার আহ্বান- কোনো প্রলোভন কিংবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজের নেতৃত্বদানের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখুন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস প্রমুখ।
বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। অবশ্য তার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কসহ পুরো এলাকা।
প্রসঙ্গত, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে পূর্বঘোষিত ১৫ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ দুদিন পিছিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আয়োজন কের বিএনপি।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দুপুর বেড়া আড়াইটার দিকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর ১২টা থেকেই স্লোগান দিতে দিতে দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এর আগে বুধবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী শাসনবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। পরে সমাবেশের তারিখ পিছিয়ে মঙ্গলবার নির্ধারণ করা হয়।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ইমরান হাসান নামের এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
সুজনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক শাহ আলম মিয়া।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন রেজা উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে সুজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে সোমবার সুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে ইমরান হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
এ ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর নিহতের মা কোহিনুর আক্তার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
আরও পড়ুন:যুবক ফজলুকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর ভাষানটেক থানায় হওয়া মামলায় দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে মঙ্গলবার সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালতে এ আদেশ দেন।
এর আগে শ্যামল দত্তকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. সাহিদুল বিশ্বাস ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ওই সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে রিমান্ডের আদেশ দেয়।
এর আগে সোমবার ভোর ছয়টার দিকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকা থেকে স্থানীয়রা শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবুকে আটক করেন। এরপর তাদের ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর নিহত ফজলুর ভাই সবুজ বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ মামলায় শ্যামল দত্তকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভাষানটেক থানাধীন এলাকায় বিজয় মিছিল করতে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফজলু মারা যান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য