দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক আর অজানা শঙ্কায় দিনাতিপাত করছে মানুষ। পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে দিশেহারা সবাই। এমনই সময় পরিক্রমায় এলো ৭ মার্চ ১৯৭১। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষ অপেক্ষায়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এলেন এবং বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’
সেই অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই আনুষ্ঠানিকতা পায় একাত্তরের ২৬ মার্চ।
বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন আজ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
২৬ মার্চ দিনটি বাঙালির কাছে একইসঙ্গে গৌরব ও শোকের। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করে গণহত্যা। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ এই ঘোষণার পর ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
প্রতিবছর বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় দিনটি পালন করে জাতি। স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।
দিনটি উযাপনে এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুবের মসনদ। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো-বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে শহর থেকে গ্রাম-গ্রামান্তর।
বাঙালির ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করতে না পেরে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দেয় সরকার। জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে হামলা চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের৷
বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়৷
আওয়ামী লীগের তৎকালীন শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷
চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন৷
এদিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়৷
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ৷ ওই রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুরু করেন প্রতিরোধ যুদ্ধ। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ৷
৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা৷ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ৷
কর্মসূচি
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটি আজ সূর্যোদয়-ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে।
আরও রয়েছে- সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের অব্যবহিত পর)। সকাল ৭টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভা:
মহান স্বাধীনতা দিবসে আজ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে।
বাদ যোহর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০) খ্রীষ্টান সম্প্রদায়, আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।
টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচি:
সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল কর্মসূচিতে অংশ নেবে।
আরও পড়ুন:খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরযানের ওপর প্রায় ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ থেকে ইসিতে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ অনুযায়ী গত ১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত এই জরিমানা আদায় করা হয়।
১১২টি চেকপোস্টের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৪০টি মামলা হয় আর আটক করা হয় ১ হাজার ৯২৮টি যানবাহন। এতে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ৮৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৮০ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা।
আগামী ১২ জুন খুলনা সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। এ ছাড়া ভোটের মাঠে ৩১টি ওয়ার্ডে ১৩৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা) এবং জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আরও পড়ুন:জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে সবার সঙ্গে আলোচনার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদরদপ্তরে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মঙ্গলবার ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। বিএনপির সাথে যেকোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্ততায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।’
এর এক দিন পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে, এমন কোনো সংকটও দেশে নেই।’
একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই।’
জামায়াতে ইসলামীকে বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন, রাজনৈতিক অধিকার, সভা-সমাবেশ করবে, তারা তাদের মতামত প্রদর্শন করবে, জানাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমি যতদূর জানি, জামায়াতে ইসলামী এখনও নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত দল নয়।
‘কাজেই এ বিষয়ে আমাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার নিরূপণ করবেন এখানে সমাবেশ করতে দিলে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। পরেই তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।’
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারা যেটা বলেছে সেটাই যথেষ্ট। তারাই মনিটরিং করছেন।
‘আমরা এটুকু মনে করি, রাষ্ট্রদূতরা যাতে তাদের শিষ্টাচার মেনে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বুধবার সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। খবর বাসসের
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে ঐতিহাসিক এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, যুব লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৯৬৬ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা হিসেবে পরিচিত ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের শোষণ, বঞ্চনা, পরাধীনতা ও অত্যাচারের অবসান ঘটাতে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) দিনব্যাপী হরতালের ডাক দেয়।
হরতাল চলাকালে সেদিন ঢাকা, টঙ্গি ও নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ও আধাসামরিক ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) গুলি চালালে শ্রমিক নেতা মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১০ জন নিহত হন।
পাকিস্তানি নৃশংসতা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বেগবান করে যা এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনের পতন ঘটে।
আরও পড়ুন:ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, দেশের অন্যান্য জায়গায় আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গা এবং ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী, দিনাজপুর, যশোর ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আরও পড়ুন:আজ বুধবার ৭ জুন, ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলি চালায়।
ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ৬ দফা আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনতা। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।
পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওই সম্মেলন।
পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ৬ দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ।
৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার জনগণ। সূচনা হয় গণআন্দোলনের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদিন হরতাল পালিত হয়। সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১ জন শহীদ হলে দিনটি ৬ দফা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে একচেটিয়া রায় প্রদান করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রতিবছরের মতো এবারও দিনটি যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবে জাতি। দিবসটি স্মরণে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাসক দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল দিনটি পালনে যথাযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দল ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে ৬ দফা দিবসের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের কষ্ট লাঘবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বাজার ও কাঁচাবাজারের পণ্যের দামের পার্থক্য থাকায় গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। পেঁয়াজ ও আদার মতো পচনশীল আইটেমগুলোর জন্য আঞ্চলিক স্টোরেজ ব্যবস্থা স্থাপনের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন সরকার প্রধান।
‘প্রধানমন্ত্রী বর্তমান ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রবণতা এবং দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। এই দুটি সমস্যা সমাধানে কাজ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রথম কৌশল হবে এটিকে আরও বাড়তে না দেয়া এবং তারপর তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শুধু ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এটা ঠিক নয়। এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
‘ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও ৩০ বিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে। তবে এটি আবারও ৫০ বিলিয়ন ডলারে যেতে পারে।’
আগামী অর্থবছরে (অর্থবছর-২৪) মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখ করে মন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে কিছু উদ্বেগ থাকতে পারে। তবে সামনে এমন লক্ষ্য রাখা ভুল নয়।’
স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পণ্যটি আমদানির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এভাবে আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে ও সঠিক সময়ে বাজারে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
জিটুজি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর জোর
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারত ও চীনের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জিটুজি প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ ওইসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি (লাইন্স অফ ক্রেডিট) রয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে কালবিলম্ব বা অবহেলা যাবে না। কারণ এসব উদ্যোগ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও কিছু বেসরকারি ব্যাংক রেমিট্যান্স পাঠাতে সরকার নির্ধারিত আড়াই শতাংশের বাইরে কিছু বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে।’
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বিপুল আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে যে, ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোট চাইতে সরকার দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে পারবে।’
১১৩৮৭ কোটি টাকার ১৮ প্রকল্প অনুমোদন
এম এ মান্নান জানান, একনেক সভায় মোট ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নয়টি নতুন ও নয়টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে একটি প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়।
সভার শুরুতেই একনেক বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য এত চমৎকার বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানায়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনড় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সেদেশের কংগ্রেসের ছয় সদস্যের চিঠি দেয়ার বিষয়টিও হোয়াইট হাউস অবগত।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন্সের পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারাইন জ্যাঁ পিয়ের সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- “বাংলাদেশে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে চিঠি দিয়ে ছয় কংগ্রেসম্যান অনুরোধ করেছেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানও জানানো হয়েছে সেখানে। পাশাপাশি ওই চিঠিতে বাংলাদেশের জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?”
জবাবে জন কিরবি বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় এবং এই যোগাযাযোগের (চিঠি পাঠানো) বিষয়েও আমি অবগত। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্যে আমরা অনড় অবস্থানেই আছি।
‘এই দায়বদ্ধতা থেকেই সম্প্রতি পররাষ্ট্র দপ্তর ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের (অবাধ ও সুষ্ঠু) নির্বাচন আয়োজনে বাধাদানকারীদের ভিসা দেয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য বব উড ২ জুন নিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২৫ মে লেখা চিঠিটিসহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বাকি কংগ্রেস সদস্যরা হলেন- স্কট পেরি, ব্যারি মুর, টিম বারচেট, ওয়ারেন ডেভিডসন এবং কিথ সেল্ফ। তারা সবাই বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির সদস্য।
চিঠিতে বাংলাদেশকে অবাধ নির্বাচনের একটি সর্বোত্তম সুযোগ করে দেয়ার জন্য কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সেনাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
চিঠিটির বিষয়ে সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে ছয় কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবে সরকার।
তিনি বলেন, ‘এরকম চিঠি অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এ ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে।’
বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম বা শক্তির কাজ করার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন- বাংলাদেশের মানুষ আমাদের শক্তি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য