এক বছর ধরে ক্রমাগত কাশিতে ভুগছিলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নুর আলম। তিনি আধুনিক চিকিৎসা পাওয়ার আশায় রামপাল থেকে খুলনা শহরের বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এসেছিলেন। তবে ক্লিনিকে প্রবেশ করার আগে প্রধান ফটকে এসে থমকে যান তিনি।
নুর আলম বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম, আমি কি ভুল করে এখানে চলে এসেছি। চুর্ণবিচুর্ণ দেয়াল ও টিনের ছাদের ভবন দেখেই আমি বুঝে গেছি, ভেতরে কোনো ভালো চিকিৎসা হয় না।’
‘যেহেতু অনেক দূর থেকে এসেছি, আবার রোগও সারছে না। তাই আশা নিয়ে ভেতরে গেলাম। তবে সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। একজন কর্মচারী পরীক্ষার জন্য আমার কফ সংগ্রহ করেন। পরে একজন নার্স রিপোর্ট দেখে আরেক কর্মচারীকে বলেন আমাকে কিছু ওষুধ দিতে।’
‘সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে যখন বের হচ্ছিলাম, তখনো ক্ষোভে বুকের ব্যাথা আরও বেড়ে গেল। কারণ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে আমাকে ৬০০ টাকার বেশি খরচ করতে হয়েছে। আমি মনে করি আমার এই টাকাটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।’
খুলনার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নুর আলম।
সেখানে ১৭ বছর ধরে কাজ করা একজন কর্মচারী জানান, তিনি যোগদান করে একটি এক্স-রে মেশিন দেখতে পেয়েছেন। তবে কখনো সেই মেশিনটি ব্যবহার করা হয়নি। তার মতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেশিনটি অকেজো হয়ে আছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে, টিনের ফুটা দিয়ে পানি পড়ে। এতে মেঝে ও দেয়াল ভিজে যায়। এ ধরনের ভবনে কখনো ভালো চিকিৎসা হতে পারে না।
‘বক্ষব্যাধি ক্লিনিক হলেও, এখানে প্রায় সব যক্ষ্মা রোগীরা আসেন। শুধু থুথু পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। একটি ভালো এক্স-রে মেশিন এখানে পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজন।’
একজন মেডিক্যাল অফিসারই ক্লিনিকের একমাত্র চিকিৎসক। কিন্তু প্রায়ই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। আর এখানে ১২ জন জনবলের মধ্যে ৫টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
ক্লিনিকের একমাত্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের ভবনে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রতিদিন পাশের পুকুর থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে আসতে হয়। কারণ কফ সংগ্রহ করার সময়ে রোগীরা পানি চাই।’
ক্লিনিকের আরও কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা ধানাধীন নিউ মার্কেট এলাকায় ১৯৬২ সালে ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে যার দেয়ালের প্লাষ্টার খুলে পড়ছে, টিনের চালগুলি ফুটা হয়েছে গেছে।
শুধু এই ক্লিনিকটি নয়, খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গায় ৭ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত ১০০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবস্থাও একই। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৫ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হলেও গত ৫৮ বছর সেখান নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়নি।
বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে চলছে কোনো মতে চিকিৎসা। দ্বিতল ভবনের সবগুলো ওয়ার্ড ও রুমের ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়ছে। ভবনের ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। রোগীদের জন্য টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্লাড, এক্সরে, ইসিজি ছাড়া অন্য কোনো রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই।
১০০ শয্যার ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের ১৮৪ জন জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২২ জন। এর মধ্যে দুজন বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ও বাকি চারজন মেডিক্যাল অফিসার এখন কর্মরত রয়েছেন, বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক সেখানে নেই।
তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী ছয় মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয়। জরাজীর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনগুলো মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) এসব ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’
খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ‘বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। তবে সমস্যা হলো, চিকিৎসকরা সেখানে কাজ করতে চান না। সেখানে কেউকে পদায়ন করলে, তারা নানাভাবে বদলি হয়ে যান।’
পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা বঞ্চিত যক্ষ্মা রোগীরা
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘যক্ষ্মা এমনি একটি রোগ যা নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। এর মধ্যে একনাগাড়ে রোগীকে ৬ মাস থেকে ৯ মাস ওষুধ সেবন করতে হব এবং কোনো একদিন বিরত থাকা উচিত নয়।
‘প্রায় দেখা যায়, প্রথম ১০ দিন ওষুধ সেবনের পরে রোগীর কাশি বন্ধ হয়ে গেছে ও বুকে ব্যাথা কমে গেছে। তখন তিনি ওষুধ সেবন করা বন্ধ করে দেন। এতে কিছুদিন পরে তার আবারও সেই রোগ শুরু হয়। আর পরে যেটা হয়, সেটা আরও ভয়ংকরভাবে হয়।’
তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা একটি রোগ। ওষুধের ডোজ পূর্ণ না করলে সেই সব ব্যাকটেরিয়া মারা যায় না। তাদের কিছু ব্যাক্টেরিয়া বেঁচে থাকে। তাখন ওষুধে কাজ করতে চায় না। মাল্টি ড্রাগ বা ড্রাগ রেজিস্টেন্স। আগে যেখানে ৬ বা ৯ ওষুধ খেলে রোগ ভালো হত, শরীরে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্স সৃষ্টির কারণে এবার সেই রোগীকে ওষুধ সেবন করতে হতে পারে ১৮ মাস পর্যন্ত। আর এই যক্ষা ছড়িয়ে যেতে পারে ফুসফুসসহ এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও, যেমন মস্তিষ্ক, কিডনি বা মেরুদণ্ডে।’
তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীদের জন্য সব থেকে কর্মকরী চিকিৎসা হল সরাসরি পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা (ডাইরেক্ট অবজারবেশন ট্রিটমেন্ট –ডিওটি)। যেখানে একজন অভিজ্ঞতা সম্মন্ন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী যক্ষ্মা রোগীকে নির্ধারিত ওষুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে পারেন। ডিওটি’র মাধ্যমে রোগীরা দ্রুত ডোজ সম্পন্ন করেন, অসম্পূর্ণ চিকিত্সার ফলে ড্রাগ রেজিস্টেন্স সৃষ্টি হয় না, একই রোগী পুনরায় সংক্রমিত হন না ও অন্যকে সংক্রমিত করেন না। আমাদের দেশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলির এই সেবা নিশ্চিত করা উচিত। তবে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ওপর এই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তা সঠিক মনিটরিং কম হয়।’
যক্ষ্মায় প্রতিদিন দেশে মারা যায় ১২০ জন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অধীনে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি), যক্ষ্মা প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার (ডাব্লিউএইচও) ২০২২ সালের যক্ষ্মা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এনটিপি জানায়, বিশ্বব্যাপী বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় সংক্রমিত হয়, আর এর মধ্যে মারা যায় ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি।
এনটিপি’র লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘ডাব্লিউএইচও ২০২২ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ২০২১ সালের যক্ষ্মা রোগের পরিসংখ্যান রয়েছে। আর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেখানে ২০২২ যক্ষ্মা রোগের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের নতুন করে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৬২ জন। এই সময়ে মোট ২৯ লাখ মানুষ যক্ষ্মার পরীক্ষা করেছেন। আর মারা গেছেন ৪২ হাজারের বেশি। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা যান প্রায় ১৫৫ থাকে ১২০ জনের কাছাকাছি।’
ডাব্লিউএইচও পৃথিবীর ৩০ টি দেশকে উচ্চ যক্ষ্মাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর করোনার পরে বৈশ্বিক মহামারিতে যক্ষ্মারই অবস্থান রয়েছে বলে জানান তিনি।
ডা. মো.মাহফুজার রহমান সরকার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফল হয়েছে।
ডাব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত প্রতি লাখে মারা যেত ৫৪ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন ও ২০২১ সালে মারা গেছে ২৫ জন। সুতরাং আমরা মৃত্যুর হার অনেক কমিয়েছি।’
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে এনটিপি পরিচালিত ৭টি হাসপাতাল, ৪২টি ক্লিনিকসহ সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সকল হাসপাতালে ৫০০ বেশি জিন এক্সপার্ট মেশিন, ১১৯টি মাইক্রোস্কোপ, ২০৫টি ডিজিটাল এক্সরে ও ৩৮টি ট্যুয়েন্ট রয়েছে, যা দিয়ে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের শিবালয়ে স্থানীয় মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবের উদ্যোগে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুরু হয়েছে । উক্ত খেলা উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির ১ নং সদস্য , জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির ।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকাল ৪ টায় শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্ট উদ্বোধন করা হয় ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, জেলা বিএনপির সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি'র সহ-সভাপতি এবং জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো: লোকমান হোসেন, উপজেলা বিএনপি সভাপতি রহমত আলী লাভলু, সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জেলা কৃষকদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ,জেলা বিএনপির সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: ফেরদৌস রহমান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো: হোসেন আলী, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো: শহিদুল ইসলাম ।
এছাড়া উপস্থিত ঘিওর উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মো: রাজা মিয়া মেম্বার, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আসিফ ইকবাল রনি, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আখতারুজ্জামান আক্তার, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মামিনুল ইসলাম মমিন, জেলা যুবদলের সদস্য মোসলেম উদ্দিন,জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব খান অয়ন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জিহাদ প্রমূখ । সভাপতিত্ব করেন,মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার মহিদুর রহমান কাজল ।
প্রধান অতিথি এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমান এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এদেশে প্রথম ফুটবল খেলাকে আন্তর্জার্তিক পর্যায়ে নিয়ে যান। তাদের চেষ্টায় সার্ফ ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করার সম্ভব হয়। মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে যুব সমাজকে খেলার মাঠে আনতে হবে । মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে হলে খেলাধুলার বিকল্প নাই ।
স্থানীয় মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাব আয়োজিত টুর্ণামেন্টে নক-আউট পদ্ধতিতে আটটি দল অংশ নিচ্ছে। উদ্বোধনী খেলায় টাইব্রেকারে মানিকগঞ্জ কৈট্রা ফিউচার ফুটবল একাডেমী ৫-৪ গোলে পাবনার নবযুগ মিলন সমিতিকে হারায়। রেফারি ছিলেন আবুল কালাম।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
মন্তব্য