আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ডিও পত্রের মাধ্যমে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
চিঠিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলীয় অন্য নেতৃবৃন্দ এবং প্রয়োজনে সমমনা দলগুলোর নেতৃবৃন্দসহ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে সিইসি লিখেছেন, ‘২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করে আসছি।
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আসছে।’
চিঠিতে বর্তমান ইসি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান কমিশনের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আপনারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও আপনাদের এমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশলের বিষয়ে কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই।’
চিঠিতে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও কমিশন মনে করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা বা মতবিনিময় হতে পারে। আপনাদের নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সদয় সম্মত হলে দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।’
সংসদে বিদ্যুৎ ‘ফেরি করা’ নিয়ে তার দেয়া বক্তব্য ঘিরে অসাধু লোকজন ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করছেন জাতীয় সংসদে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।
মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন তিনি। একই সঙ্গে দেশবাসী বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানান এই সংসদ সদস্য।
মমতাজ বলেন, আমি সংসদে দু একটি কথা বলেছি। সেই সুবাদেই দু একটি কথা ধরে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন কেউ কেউ, এই কষ্টের মধ্য দিয়ে। বিদ্যুৎ থাকেছে না। সবাই এই কষ্ট পাচ্ছে। আপনারা জানেন সারা বিশ্বের কী অবস্থা, যুদ্ধ গেল। এটা আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। বড় বড় দেশই হিমশিম খাচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে, আমরা করছি।
এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি কেন বলেছিলাম সংসদে, আপনারা তো জানেন এটা মিথ্য কথা নয়। বিদ্যুৎ যে হারে সরকার উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের লাইন দিয়েছে; সেই প্রশংসাই করেছি। আমার নির্বাচনি এলাকায় আগে ৩০ ভাগ ঘরে বিদ্যুৎ ছিল আমি দায়িত্ব নেয়ার পর শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি।
তিনি বলেন, সে জন্য কিন্তু সংসদে বলেছিলাম। যেভাবে লাইন দিয়েছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি। সেটাই সংসদে বলা হয়েছিল। সেটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুলভাবে উপস্থাপন করে অনেকেই অসাধু কিছু লোকজন খামাখাই দুটি বাজে কথা ফেসবুক ইউটিউবে বলার চেষ্টা করছেন।
মমতাজ বলেন, আমি বলব, আপনার যারা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা দেন; আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এই সমস্যার কথা কেউ কিন্তু জানতাম না। সারা বিশ্বের অবস্থার কারণে আমরা সমস্যায় পড়ে গেছি।
তিনি বলেন, সরকার কিন্তু চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংসদে আলোচনা হচ্ছে। যে সমস্যাটা এ মুহূর্তে আছে, এটা সাময়িক। সরকার চেষ্টা করছে সাময়িক এ সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন আগামীতে বিদ্যুতের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি।
মমতাজ বলেন, একসময় এলাকায় গেলে গ্রামের মা-বোনেরা এসে বলতেন- আপা, কিছু চাই না। আমাদের বিদ্যুতের লাইন দেন, মিটার দেন। মিটারের অভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। এই যে একটা সংকট ছিল তখন, সেটা কিন্তু আমরা সমাধান করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ তখন খুশি হয়েছিল। সেজন্য সংসদে বলেছিলাম, মানুষ বিদ্যুৎ চাইতো। একসময় এ চাওয়ার ব্যাপারটা আর থাকবে না। সরকার যেভাবে বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে, উৎপাদন করছে, ঘরে ঘরে মিটার পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন কিন্তু সত্যিকার অর্থে গ্রামে গেলে কেউ বলেন না আপা, দুইটা মিটার দেন, পাঁচটা মিটার দেন। মিটার দেওয়ার জায়গা আসলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই কিন্তু বাস্তব। আর সেই কথাটাই সংসদে আমি বলেছিলাম।
মমতাজ বলেন, আমি বিনীতভাবে বলবো- আপনারা জ্ঞানী মানুষ হয়েও ভুল ব্যাখ্যা দেন, বাজেভাবে উত্থাপন করেন, দেখেন আমার কথার সত্যতা আছে কি না? আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এ সমস্যা হবে এটা আপনি-আমি কেউ জানতাম না।
তিনি বলেন, আমরা কি জানতাম পাকিস্তান শ্রীলঙ্কায় আজ এই অবস্থা হবে?আমরা জানতাম না। আমরা অনেক কিছুই জানতাম না। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আমরা কী জানি। যখন আমি বলেছি তখন বিদ্যুতের অবস্থা এত ভালো ছিল। মানুষ খুশি ছিল। এখন এই সমায়িক সমস্যাকে ধৈর্যর সাতে মোকাবিলা করতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। কীভাবে বিদ্যুতের খরচ কমানো যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।
মমতাজ বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি করে লাভ নেই। অশান্তিই বাড়বে। ফেসবুকে একজন বলছে, মমতাতের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। এগুলো মিথ্যাচার প্রোপাগান্ডা। শুধু শুধু মানুষকে হয়রানি, ছোট করা। অনুরোধ করব, মিথ্যার আশ্রয়-প্রশয় কেউ দেবেন না। ধৈর্য ধরুন। নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি এই কষ্টের থেকে মুক্তি পাব।
সম্প্রতি দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং। তীব্র তাপপ্রবাহ এই দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়েছে। এ অবস্থাতে সংসদে এক সময় দেয়া মমতাজের বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা।
মমতাজ সংসদে দাঁড়িয়ে ওই বক্তব্যে বলেছিলেন, আমি যখন সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলাম। সে সময় এতগুলো কাগজ চলে আসতো যে বিদ্যুৎ চাই বিদ্যুৎ চাই। আমি সে সময় বলতাম, বিদ্যুতের একদিন এমন অবস্থা শেখ হাসিনা করবেন, ফেরিওয়ালারা যেমন ঘুরে আর বলে চুড়িয়ালা রাখবেন নাকি ভাই, ওইরকম বিদ্যতের অবস্থা আমাদের হবে, ঘুরতে হবে; বিুদ্যৎ রাখবেন নাকি বিদ্যুৎ। তবু কাস্টামার খুঁজে পাব না, গ্রাহক খুঁজে পাব না। আজ কিন্তু তাই হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতা করার মতো সংকট দেশে নেই।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মঙ্গলবার ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। বিএনপির সাথে যেকোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্ততায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।’
এর এক দিন পর কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে, এমন কোনো সংকটও দেশে নেই।’
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের বিষয়, নিজেরাই সমাধান করব।’
বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করতে যাবে, এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে এই রকম কোনো সংকট স্বাধীন বাংলাদেশে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন আরও গণতান্ত্রিক হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা আরও গণতান্ত্রিক হয়েছে। গণতন্ত্র হঠাৎ করে রাতারাতি প্রতিষ্ঠা পায় না। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সময় লাগে। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র এখন অনেক পরিপূর্ণ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে চলছে। কাজেই এখানে বাইরের কোনো মধ্যস্থতা, বাইরের কোনো হস্তক্ষেপের দরকার নেই। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করব। ‘সময় বলে দেবে কখন কী হবে। আপাতত আলাপ-আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) আমাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমরা কী আলোচনা করব? তারা আজ নালিশের রাজনীতি করছে। কী পেয়েছে?
‘তারা আমেরিকায় নালিশ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নালিশ করে তারা কী পেয়েছে? পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। এখন তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান চায়। এই তত্ত্বাবধানে আবার নতুন সূত্র তুলে ধরছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সংকটে সমাধান হলো আমাদের সংবিধান। সংকটে আর কোনো সমাধান নেই। সংবিধানই যদি কোনো দেশের সমাধান না দিতে পারে, তাহলে সে দেশে গণতন্ত্র হবে কী করে?’
আরও পড়ুন:আজ বুধবার ৭ জুন, ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলি চালায়।
ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ৬ দফা আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনতা। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।
পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওই সম্মেলন।
পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ৬ দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ।
৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার জনগণ। সূচনা হয় গণআন্দোলনের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদিন হরতাল পালিত হয়। সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১ জন শহীদ হলে দিনটি ৬ দফা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে একচেটিয়া রায় প্রদান করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রতিবছরের মতো এবারও দিনটি যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবে জাতি। দিবসটি স্মরণে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাসক দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল দিনটি পালনে যথাযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দল ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে ৬ দফা দিবসের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে জামায়াতের ইসলামীর ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় বনানী ওয়ারলেস গেট নবাবী রেস্টুরেন্ট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
গোপনে মিটিং করার সময় তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বনানীতে নবাবী রেস্টুরেন্টে মঙ্গলবার রাতে গোপনে বৈঠক করছিলেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ জামাত-শিবিরের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইননানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন তিনি।
সূত্র বলছে, বিএনপি মহাসচিব পিটার হাসের আমন্ত্রণে দূতাবাসে যান। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব একাই অংশ নেন।
বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস। বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রচারণা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এই বৈঠক ও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
বিএনপি মহাসচিব এর আগে ১৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের আরও দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিএনপির অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যান। সেখানে বৈঠক শেষে দুপুর ২টার পর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
এর আগে রোববার পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। জানা যায়, ওই বৈঠকে পিটার হাস আগামী নির্বাচন নিয়ে জাপার পরিকল্পনা জানতে চান।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বতীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের জন্য আলোচনার দরজা সবসময় খোলা আছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিএনপি ও জামায়াতের দেশবিরোধী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ১৪ দল।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনা রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। বিএনপির সাথে যে কোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্ততায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।’
এসময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমেরিকার ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিএনপি বা সুশীল সমাজের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়া যায়। মার্কিন ভিসা নীতির কারনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে বিএনপিকে বলবো-সাহস থাকলে সেই নির্বাচনে আপনারা আসেন।’
সভায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনাকে পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
৪০ দফা ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব খুলনা গড়ার প্রত্যয়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি নির্মাণ ও নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ খুলনা গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। বাড়িভিত্তিক সবুজায়নে উৎসাহিত করা হবে। নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। নগরায়ন হবে পরিবেশবান্ধব। জমি, বায়ু, শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হবে।’
ইশতেহারে দ্বিতীয় দফায় নগরীতে পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নগরীতে বিদ্যমান পার্ক ও উদ্যানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া উন্মুক্ত সুবিধাজনক স্থানে একটি বড় পার্ক, লেডিস পার্ক ও ২টি শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। নদী-সংলগ্ন স্থানে ভ্রমণের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।’
স্মার্ট খুলনা গড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাস স্টপেজসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্য ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটি ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিক সমস্যা জানানো, সেবা ও প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। সকল সেবাসমূহকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করা হবে এবং ই-সেবা চালু করা হবে।’
খালেকের ৪০ দফার মধ্যে আরও রয়েছে- জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ ব্যবস্থা, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ড্রেন পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা সিটি গড়ে তোলা, সুলভ মূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পন্ন, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, পথচারী-বান্ধব ফুটপাত, মানবিক উন্নয়নের খুলনা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী, সিভিক সেন্টার গড়ে তোলা, অনুদান তহবিল চালু, মিডিয়া সেন্টার চালু ও সেরা সংবাদ পুরস্কার প্রবর্তন, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর প্রতিযোগিতার আয়োজন, স্মার্ট ডিজিটাল খুলনা, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানচিত্র প্রদর্শন, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত খুলনা, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস মিটিগেশন সেল স্থাপন, হটলাইন নগর তথ্য কেন্দ্র চালু, পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক কমিটি গঠন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ও বিকাশ, জলাশয় ও পুকুর সংরক্ষণ, শিশুদের সাঁতার শেখানোর বিশেষ উদ্যোগ, নগরীর বাজারগুলোর আধুনিকায়ন, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে রাস্তার নামকরণ, বধ্যভূমিগুলোর স্মৃতি সংরক্ষণ, যাতায়াত ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, ওয়াসা, কেডিএ, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন ও বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়ন, কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে বুলেটিন প্রকাশ এবং খুলনা মহানগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ।
ইশতেহার ঘোষণার আগে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা দেন সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এসময় তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে দেশের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে-যা প্রায় ৩ বছর স্থায়ী ছিল। সে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নগরবাসীকে হয়ত কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’
অনিচ্ছাকৃত ও অনাকাঙ্খিত এ বিলম্বের জন্য নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে খুলনা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সদ্য বিদায়ী এ মেয়র।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক কাজী আমিনুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা এম ডি এ বাবুল রানা, অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী, সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য