ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন।
রাজধানীর গুলশানে নগর ভবনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এই বৈঠক হয়।
বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন সিস্টেম, রিটেন পন্ড ও খালগুলোর সমন্বিত টেকসই উন্নয়নে সহযোগিতা দিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত।
বৈঠকে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতকে ডিএনসিসি মেয়র ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের খাল দখলমুক্তকরণ ও খনন কার্যক্রম সম্পর্কে জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ওপেন স্পেস ও জলাধারগুলো প্লটে রুপান্তর করে নির্মাণ হচ্ছে নতুন নতুন ভবন।
‘এই শহরকে বাঁচাতে হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের জলাধারগুলোর সমন্বিত টেকসই উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডস আমাদেরকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। ফলে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের শহরগুলোতে দেখেছি দৃষ্টিনন্দন খাল। খালগুলোতে নৌযান চলাচল করে। নেদারল্যান্ডসের শহরগুলোর খালের আদলে ঢাকার খালগুলোর উন্নয়ন করতে চাই। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেদারল্যান্ডসের উত্তম কার্যক্রমের মডেল ও অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য সহায়ক হবে।’
এ সময় ডিএনসিসি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন সিস্টেম, রিটেন পন্ড ও খালগুলোর সমন্বিত টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
জবাবে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন বলেন, ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, স্যানিটেশন ম্যানেজমেন্ট ও খালগুলোর টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডস কাজ করতে আগ্রহী। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
বৈঠকে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান, ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ফোলকার্ট ডি জ্যাগার ও ইকোনমি অ্যান্ড কমার্শিয়াল বিষয়ক উপদেষ্টা মন্নুজান খানম এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু ‘অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা’ বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। তবে পরিবার বলছে, তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই ও ছায়া তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধারণা থেকে কথাগুলো বলছে। পুলিশের এই ধারণা ঘিরে অসংখ্য প্রশ্ন সামনে এসেছে, যেগুলোর উত্তর পাওয়া দরকার। এটি হত্যাকাণ্ড।
মামলার তদন্তে অসঙ্গতি ও অমীমাংসিত প্রশ্নের উল্লেখ করে সেগুলো সামনে রেখে একটি বই সংকলন করেছেন দুরন্ত বিপ্লবের বোন শাশ্বতী বিপ্লব। শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ নামে সংকলনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুরন্ত বিপ্লবের মা রোকেয়া আক্তার খাতুন। তিনি বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই, ছোট ভাই সবাই দুরন্তকে চেনেন। আমি মা হিসেবে তাকে যতটা চিনেছি তা বর্ণনাতীত। এটা সত্য, সে পানিতে ডুবে মরে নাই। দুরন্তর সার্কেলের লোকজন, যাদের সঙ্গে সে চলাফেরা করতো, তাদের মধ্যেই কারও স্বার্থে আঘাত লাগায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব গত বছরের ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। ওইদিনই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর ৫ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। ওইদিন রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় ১৪ নভেম্বর হত্যা মামলা করা হয়।
মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ। পরবর্তীতে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে থানা থেকে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা জেলার পিবিআই-এর পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
দুই সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি। তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার। ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ নামে একটি লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় দুরন্ত বিপ্লব পানিতে তলিয়ে যান।
তবে তদন্তকারীদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ দুরন্ত বিপ্লবের বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘পিবিআই ও ডিবি পুলিশ কথাগুলো বলছে ধারণা থেকে। বলছে- হতে পারে, হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে তো অকাট্যভাবে প্রমাণ হয় না যে দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
‘পুলিশের তদন্ত ও বক্তব্য নিয়ে আমাদের মনে অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো বলছে, দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনা নয়, হত্যার শিকার হয়েছেন। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আবেদন করে মামলাটি পিবিআইকে দেয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করেছিলাম। পিবিআইয়ের তদন্তে আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যেগুলো তাদের তদন্তের সঙ্গে মিলছে না। আমরা এসব প্রশ্নের জবাব চাই।’
‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ বইটির সম্পাদক শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘বইটিতে দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজ হওয়ার দিন গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। সংকলনটি আমাদের দিক থেকে একটি প্রপোজিশন বা প্রস্তাবনা। যেটা এই মামলার তদন্তে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রশ্নগুলো ধরে তদন্ত এগিয়ে নিলে মৃত্যু রহস্যের সুরাহা করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই বইয়ে য তথ্য-উপাত্ত আছে, তার বাইরে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত ও সূত্র আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। সংগত কারণেই আমরা এই বিষয়গুলো এই বইয়ে আনতে পারিনি। মামলাটি তদন্তানাধীন। সে কারণে সব কিছু প্রকাশ করা যায় না।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার উপ-পরিদর্শক সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত তদন্তে যা পেয়েছি সেগুলো দুরন্ত বিপ্লবের পরিবারকে জানানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে। যদি নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই যাচাই-বাচাই করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার একদিনেই ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে প্রকোপটা বরাবরের মতোই ঢাকায় বেশি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২০২ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতালে রয়েছে ১৭৬ জন। বাকি ২৬ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানায়, এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৩ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে সাতজন।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট এক হাজার ৭০৪ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এক হাজার ১১৯ জন। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম ৫ মাসে এতো মৃত্যু এবং হাসপাতালে এতোসংখ্যক রোগী আগে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহর ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে দেশজুড়ে।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে বর্ষাকাল বা বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর ততোটা সম্পর্ক নেই। কারণ ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভা এখন জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবন, ওয়াসার মিটার বক্সসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। এটা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পসের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের পাশের ডাস্টবিনে মরদেহটি পাওয়া যায়।
নবজাতক ছেলে এবং একদিন বয়সের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক বলেন, ‘নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।’
রাজধানীর বাড্ডার গুপিপাড়ায় গাছে পানি দিতে গিয়ে সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে এক কিশোর নিহত হয়েছে।
বাড্ডার গুপিপাড়ায় শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাসিন মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বাবুল মিয়ার ছেলে। সে উত্তর বাড্ডা গুপিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো।
তাসিনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তার মামা সাঈদ মিয়া জানান, তাসিন একটি অনলাইন কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতো। শনিবার সকালের দিকে ভবনের সাত তলার ছাদে ফুলের টবে পানি দেয়ার সময় অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যায় সে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে শনিবার সকাল ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁও কুনিপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক গ্যারেজ মালিকের মৃত্যু হয়েছে।
তেজগাঁও কুনিপাড়া এলাকায় রিকশার গ্যারেজে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলমের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। তিনি তেজগাঁও কুনিপাড়ায় পরিবারের সাথে থাকতেন।
মোহাম্মদ আলমকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তার ছেলে মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবার শনিবার সকালে নিজের গ্যারেজে রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়ার সময় ইলেকট্রিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত বলে জানান।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তেজগাঁও থানাকে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় চিকিৎসক ফাহাদের (ছদ্মনাম)। অপরিচিত ব্যক্তি ফাহাদকে জানান, তার কাছে সৌদি রিয়াল আছে। যা কম দামে বিক্রি করবেন। ৯ লাখ রিয়াল বিক্রি করবেন ৯ লাখ টাকায়। লোভে পড়েন ফাহাদ, নামমাত্র মূল্যে সৌদি রিয়াল কেনার জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দেন ৯ লাখ টাকা। আর ওই ব্যক্তি ফাহাদকে দেন একটি ব্যাগ।
বাসায় ফেরার পর ব্যাগ খুলে ফাহাদ দেখতে পান রিয়ালের পরিবর্তে ভেতরে রয়েছে গামছায় মোড়ানো পেপার। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছে। বনানী থানায় একটি মামলা করেন। এ্ই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বনানী থানা পুলিশ প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, মো. মিরাজ তালুকদার, আহাদ শেখ, হায়দার মৃধা, মফিজুল মিয়া ও ইমারাত মোল্লা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ফাহাদ বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি সৌদি রিয়েল কোথায় ভাঙ্গানো যায় তাকে জিজ্ঞেস করেন। ফাহাদ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে এআর মানি এক্সচেঞ্জ দেখিয়ে দেন। তখন ফাহাদকে তার সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ফাহাদও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে এআর মানি এক্সচেঞ্জে যান।
তিনি জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মানি এক্সচেঞ্জে থেকে ১০০ রিয়াল পরিবর্তন করে টাকা নেন। এআর মানি এক্সচেঞ্জ থেকে বের হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফাহাদকে জানান, তার কাছে আরো অনেক সৌদি রিয়াল আছে। যা মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ে একটু কম মূল্যে ৯ লাখ রিয়াল ৯ লাখ টাকায় দিতে পারবেন। ফাহাদের বোন হজের জন্য সৌদি আরব যাবেন। সৌদি রিয়াল প্রয়োজন হওয়ায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে রিয়াল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১ মার্চ সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফাহাদকে ফোন করে রিয়াল নেয়ার জন্য বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ আসতে বলেন। ফাহাদ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথা মতো আসেন। তখন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সাথে আসা ২ জন ব্যক্তি তাকে একটি ব্যাগ দেন।
ওসি জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানান, ব্যাগের মধ্যে ৯ লাখ রিয়াল আছে। ফাহাদ সরল বিশ্বাসে ব্যাগটি গ্রহণ করে নগদ ৯ লাখ টাকা দেন। পরে বাসায় গিয়ে ব্যাগটি খুলে ভেতরে পেপার গামছা দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। ফাহাদ প্রতারণার বিষযটি বুঝতে পেরে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর উদ্দিন ও এসআই প্রিয়তোষ চন্দ্র সরকার মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করেন। এরপর ২১ মে গোপালগঞ্জ থেকে আসামী লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিরাজ, আহাদ, হায়দার, মফিজুল ও ইমারাতকে গ্রেপ্তার করে।
সমাবেশ শেষে ফেরার পথে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার ১২টার পর ওই ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম. ই. মামুন বলেন, ‘নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে আমাদের পার্টি অফিসে হামলা হয়। আজকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। কেরানীগঞ্জে সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির আরও নেতা-কর্মীরা ছিলেন। সভা শেষ করে যাওয়ার সময় আমাদের পার্টি অফিসে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে আমাদের পার্টি অফিসে ঢুকে আমাদের লোকদের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজও আছে আমার কাছে। সেখানে দেখা যায়, নিপুণ রায় ইট-পাটকেল ছুড়ে দৌড়াচ্ছেন।’
ম. ই. মামুন আরও বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের মতো নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাহার বাঙালি।’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিস ছিল তাদের সমাবেশস্থলের পাশেই। তারা প্রোগ্রাম শেষ করে আমাদের অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিল। তখন আমাদের মধ্যে এক মুরুব্বি তাদের জিজ্ঞাসা করেন যে তোমরা এমন করছো কেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যান। সে সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা পার্টি অফিসের চেয়ার-ভাঙচুর করতে থাকে।’
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহবুদ্দিন কবীর জানান, তেমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে ছিলেন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, বিএনপির কিছু কর্মী বিশৃঙ্খলা করেছে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য