ভোট চুরির অপবাদ যুক্তরাষ্ট্রেও আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অন্য দেশকে অপবাদ দেয়ার আগে নিজের দেশে ভোট চুরির অপবাদগুলো থামান।
মঙ্গলবার রাজধানীর বংশালে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্কুল মাঠে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিটগুলোর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক প্রতিবেদনে সোমবার বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।
এ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র আছে? যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন, তাদের দেশেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার আগে ঘরের খবর নেন।
‘আজও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরাজয় মেনে নেননি। বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা বলেন, আপনাদের দেশেও গান অ্যাটাক হয়। অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজেদের চেহারা দেখুন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি যতই নালিশ করুক, বিদেশিদের কথায় বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ত্রুটিমুক্ত করতে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্হাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।’
বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে, লবিস্ট নিযোগ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন কাঁদায় আটকে গেছে। আন্দোলনের এ গাড়ি আর উঠবে না। তাদের আন্দোলনে জনগণ নেই। নেতা-কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই তাদের এখন অবলম্বন ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও চোরাগোপ্তার পথ। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।’
শেখ হাসিনার মতো দেশে এত উন্নয়ন অর্জন কোনো নেতা করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির পদযাত্রা মানেই পতন যাত্রা। বিএনপির আন্দোলন কাঁদায় আটকে যাওয়া গরুর গাড়ির মতো আটকে গেছে। এ গাড়ি আর উঠবে না। বিএনপির আন্দোলনের গাড়ি খাদে পড়েছে। এখন তারা ষড়যন্ত্র করছে।
‘তাদের আন্দোলন এখন নাশকতা। বিএনপির আন্দোলন এখন আর জমছে না। কার সঙ্গে খেলবে আওয়ামী লীগ? এবার খেলা হবে নির্বাচনে। খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, নাশকতার বিরুদ্ধে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাঈনুদ্দিন রানার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজার সঞ্চালনায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
আরও পড়ুন:আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জের হবে মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনটা একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়।
সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখনই এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার দেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়, মিথ্যা বলে বেড়ায়। আর কিছু আছে বিদেশি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়।
‘যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে- তারা আছে, তাদের আওলাদ আছে; তারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। যারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সমর্থন করেনি তাদের সঙ্গেই তাদের সব আত্মীয়তা। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।’
নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভোট চুরি করা তাদের রেকর্ড। গণতন্ত্র হরণ করা তাদের রেকর্ড। ওদের মুখেই এখন আবার আমরা গণতন্ত্র শুনি!
যারা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি দল, তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তাদের কাছে ভোটের কথা শুনতে হয়। চুরি করা যাদের অভ্যস, সেই চোরদের কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণ কী শুনবে, কী দেখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনেও তো কম কারচুপি হয়নি। ১৯৯৬ সালে এই খালেদা জিয়াকেই বাংলাদেশের মানুষ ভোট চুরির অপরাধে বিতাড়িত করেছে। আবার ২০০৬ সালে নির্বাচনে ১ কোটি ২৩ কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোট চুরি করতে গেছে। তখনও জনগণের আন্দোলনেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।’
আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে দলটির প্রধান বলেন, ‘আমাদের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরও মজবুত থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন কারাবরণ, অত্যাচার-নির্যাতন, তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধ করে যুদ্ধাহত হয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ- এখানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা, স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা, জয় বাংলা মুছে ফেলা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা- অনেক অপকর্মই করা হয়েছে। আসলে সত্য এক সময় না এক সময় উদ্ভাসিত হবেই। সত্য কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটাই হয়ে গেছে।
‘৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। জয় বাংলা স্লোগান আবার ফিরে এসেছে।’
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এটুকু করতে পেরেছি এই ১৪ বছরে। ২০০৮ এ সরকারে আসার পর একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই বাংলাদেশের এই উন্নতিটা সম্ভব হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের তৈরি হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এটাকে আমাদের স্থায়ী করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার শক্তিশালী সংগঠন আছে। সংগঠনের শক্তিশালী নীতিমালা আছে। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে, একটা পরিকল্পনা আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে, জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করি বলেই আমরা সাফল্য আনতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক পণ্যের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে বিদ্যামান আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি।
জাতীয় জাদুঘর এর সামনে সোমবার এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োচন করা হয়।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হলে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধে সুস্পষ্ট আইন এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও আমরা পুরোপুরি এর ব্যবহার রোধ করতে পারছি না। এ জন্য ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
পরিবেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করলেও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অনেকেই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করার জন্য আমাদের প্রত্যেককেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হেমায়েত উদ্দিন, বিমান রয়, হাবিবুর রহমান, মনির হোসেন, মামুনুর রশীদ, সাবরিনা চৌধুরী, চিত্রনায়িকা জ্যোতিকা জোতি, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান রুবেল, সফিউল আযম, উৎপল সাহা, আতিকুর রহমান, ব্যারিস্টার গোলাম শাহরিয়া প্রমুখ।
আরও পড়ুন:জ্বালানি সংকটে দেশের দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে সারাদেশে চলছে ধারাবাহিক লোডশেডিং। আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক।
সোমবার সকালে নগরীর মিস্ত্রীপাড়া বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ দেন তিনি।
এসময় খালেক বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তীব্র লোডশেডিং চলছে। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষের জীবনযাপন। আমাদের নির্বাচনী প্রচারও এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভোটেও এর (লোডশেডিং) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
তবে দেশের বর্তমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু।
সোমবার সকালে নগরীর ফুল মার্কেট এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ। খুলনাবাসী ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলছেন। তারা বলছেন, লোডশেডিং থাকলে গরমে মারা যাবেন।
‘বিদ্যুৎ নিয়ে দেশে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে, সে কারণেই এমন লোডশেডিং হচ্ছ। একইসঙ্গে তীব্র গরম পড়ায় মানুষের বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
দেশে কেন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খারাপ হলো, এ বিষয়ে সরকারকে জবাব দিতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ যদি না থাকে, তাহলে আমাদের দেশে অনেক বড় ক্ষতি হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মিল কলকারখানা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:ভোট দেয়ার সময় ধর্মকে ব্যবহার না করে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকেই বেছে নেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, ‘যারা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা ভোটের মাঠে ইসলামকে ব্যবহার করতে পারেন না।’
আজ দুপুরে বরিশালের বিএম কলেজে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের সাথে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
বরিশালে যেহেতু ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের এ কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, ‘ইভিএম স্বচ্ছতার প্রতীক। নির্বাচনের সময় ইভিএমএ কারিগরি কোনো ত্রুটি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইভিএম নিয়ে কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, বরং ইভিএম না থাকলেই দুশ্চিন্তা বেশি।
‘বর্তমানে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধরে রাখতে কমিশন বদ্ধপরিকর। প্রত্যেক প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কাজ করছেন।’
নির্বাচনে এবার প্রায় ৩ হাজার প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
এসময় ভোটের মাঠে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু আহম্মেদ আল মামুন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নিবন্ধন প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোকে শতভাগ শর্ত পূরণ করতে হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, এখানে কোনো ডিসকাউন্ট (ছাড়) নেই।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
নিবন্ধন প্রত্যাশী ১২ দলের প্রাথমিক তালিকা ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
ইসি আলমগীর বলেন, ‘মাঠ কর্মকর্তাদের দলীয় কার্যালয় ও কমিটির বিষয়ে তথ্য পাঠাতে সোমবার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। তা আসতে হয়ত আরও দুয়েকদিন সময় লাগবে।’
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কমিটির বিষয়ে ১২টা দলের তথ্যই কমিশন পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু জেলার তথ্য পুরোপুরি পাইনি। কোনোটা ৭০ শতাংশ, কোনটার ৫০ শতাংশ, কোনোটার ৪০ শতাংশ এসেছে। আর উপজেলার তথ্য এসেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আগামী তিন চারদিন পর আমরা যথাযথভাবে বলতে পারব যে ঠিক কী তথ্য পেয়েছি।’
প্রক্রিয়াটা আইনেই বলা আছে উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, ‘মাঠের তথ্য আর আমাদের কাছে দলগুলো কাগজপত্র যা জমা দিয়েছে, এ সংক্রান্ত কমিটি তা মিলিয়ে দেখবে। তারপর কমিশনের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে কমিটি। এরপর প্রাথমিক তালিকা আপত্তির জন্য প্রকাশ করা হবে।
‘যে কেউ আপত্তি দিতে পারবে। আপত্তি আসলে শুনানি হবে, না আসলে হবে না। তারপর চুড়ান্ত তালিকা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টার্গেট জুনের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা।’
তবে কোনো কারণে আপত্তি শুনানিতে দেরি হলে এটা জুলাইতে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
দলের নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো কোটা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১২টা দল কোয়ালিফাই করলে ১২টাই নিবন্ধন পাবে। একটা কোয়ালিফাই করলে একটাই পাবে। কোনোটাই কোয়ালিফাই না করলে কোনোটাই নিবন্ধন পাবে না।’
কোনো দলের সব ঠিক থাকার পরও যদি বড় দলগুলো তাদের কার্যালয় বা ব্যানার-বিলবোর্ড খুলে ফেলে, নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনারা যে কাগজপত্র দিয়েছে, তা মাঠে দেখা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করেছেন। তখন সংশ্লিষ্ট দলের নেতারা বলেছেন (ব্যানার-বিলবোর্ড) ভেঙ্গে ফেলেছেন। তবে এক্ষেত্রে আগে যে সেগুলো ছিল, তার কোনো ফটো দেখাতে হবে। প্রমাণ থাকতে হবে যে ছিল। প্রমাণের দায়িত্বও তো তাদের। অফিস করলে তো মিলাদ দেয়, সাংবাদিকদের দাওয়াত দেয়, সেগুলোর প্রমাণ দেখাবে।’
শতভাগ শর্ত পূরণ করলে নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞাপন দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে কারো কোনো আপত্তি থাকলে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে জানান। তাহলে শুনানি হবে; আমরা আবার যাচাই করবো। অভিযোগ সঠিক না হলে পাবে, সঠিক হলে পাবে না। আর শর্ত পূরণ করতে হবে তো হবেই, না করলে একটাও হবে না। এখানে ডিসকাউন্ট নেই। শতভাগ শর্তই পূরণ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:জামায়াতে ইসলামীর তিন দফা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকাতে ঢাকার প্রবেশমুখসহ সাভারের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বাহিনীর সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় সোমবার ভোর থেকেই পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া সাভার বাসস্ট্যান্ড, বিরুলিয়া ও আশুলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে।
আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াত। এই সমাবেশ ঘিরে যাতে তারা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে না পারে, এ কারণে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
‘আমিনবাজার নিয়মিত চেকপোস্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন বিভিন্ন পরিবহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে, তবে এখনও কেউ আটক হয়নি। আমিনবাজার ছাড়াও বিরুলিয়া, সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাদের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের তিন দফা দাবিতে সোমবার বিকেল ৩টায় রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
রাজধানীর অভিজাত একাধিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। আগামী ১৭ জুলাই আসনটিতে হবে উপনির্বাচন। বর্তমান সংসদের পাঁচ মাস বাকি থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আগ্রহে কমতি নেই। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির রাজনীতিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও তারকারা।
ঢাকা-১৭ আসনটি গুলশান, বনানী, ভাষানটেক থানা ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যু হয় গত ১৫ মে।
শূন্য হওয়া আসনটিতে গত ১ জুন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আগামী ১৭ জুলাই হবে নির্বাচন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দলের অন্তত দুজন হেভিওয়েট নেতা। আছেন স্থানীয় পর্যায়ের দুই প্রভাবশালী নেতা, সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতাও। আগ্রহ আছে ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় এবং চিত্রজগতের একাধিক ব্যক্তির। এ ছাড়া গুঞ্জন আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সমাঝোতার অংশ হিসেবে শরিক বা সম্ভাব্য শরিক কাউকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে আসনটি।
আওয়ামী লীগ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি আবদুল কাদের খান ও মো. ওয়াকিল উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচবিএম ইকবাল।
বঙ্গবন্ধু জোটের একাংশের সভাপতি চিত্রনায়ক আলমগীর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা-নির্মাতা সিদ্দিকুর রহমান আলোচনায় রয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখা গেছে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের। আলোচনায় আছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ দলে বেশ প্রভাবশালী ও দলীয় সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন। তিনি সংসদীয় বোর্ডেরও সদস্য। তার মূল আসন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন)। সে আসনে দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী)।
কাজী জাফরউল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু ভাবিনি। যেসব সংবাদ বা আলোচনা হচ্ছে, তা স্পেকুলেশন।’
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পরশ ও ফাহিম পরস্পর চাচাত-জেঠাত ভাই। পরশ ১৫ আগস্টের শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। আর ফাহিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের মনোনয়নের প্রসঙ্গ এলে বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবেই আলোচনা ও ঐকমত্য হবে, তবে আবদুল কাদের খান ও ওয়াকিল উদ্দিন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বলে নিউজবাংলাকে জানান।
আলোচনায় থাকা মোহাম্মদ এ আরাফাতের মন্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। যদিও কয়েক দিন আগে একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এতদিন আমি দল বা সরকারের বাইরে থেকে আদর্শিক লড়াই করেছি। এবার যেহেতু আমাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়েছে, ফলে দল ও নেত্রী সিদ্ধান্ত নিলে আমি সেটাকে অবশ্যই রেসপেক্ট করব।’
মনোনয়ন পেতে আগ্রহী নন জানিয়ে চিত্রনায়ক আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক চিন্তা লালন করি। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি, তবে নির্বাচনের রাজনীতিতে আমি আগ্রহী না।’
চিত্রনায়ক ফেরদৌস মনোনয়ন চেয়ে পোস্টারিং ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন করছেন; গিয়েছেন গণসংযোগেও।
গত নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম আলোচনায় এসেছিল। এবার তার নাম আসছে ঢাকা-১৭ আসনে। মনে করা হচ্ছে যদি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী দেখতে চায়, তাহলে সাকিবকে প্রার্থী করা হতে পারে।
এ আসনে মনোনয়ন কে পেতে পারেন এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে এখনও আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাই হয়নি, তবে দলের সভাপতি বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরাও নিচ্ছি।
‘মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের আলোচনায় যাকে যোগ্য এবং বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে বলে মনে করা হবে, তিনিই মনোনয়ন পাবেন।’
এদিকে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতির আশাবাদী হওয়ার কারণ দুই ব্যবসায়ীর লাভজনক পদে যাওয়া। একজন আলমগীর মহিউদ্দিন, যিনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেয়া আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। আরেকজন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি ব্যবসায়ী পরিচয়েই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য জানান, ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনএফের আবুল কালাম আজাদও আগ্রহী। তার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডেন্ট আন্দালিব রহমান পার্থর নামও ক্ষেত্রবিশেষে শোনা যাচ্ছে। যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের কারও সঙ্গে সমাঝোতা হয়, তাহলে এ দুজনের কেউ একজন পেতে পারেন মনোনয়ন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য