রাজধানীর মিরপুর রুপনগর থানা এলাকায় নির্মাণাধীন দশ তলা ভবনের সাত তলার লিফটের ফাঁকা দিয়ে পড়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
মিরপুরের রূপনগরে নির্মাণাধীন ভবনে সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ওই শ্রমিক ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাবু মিয়া।
বাবু মিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা সহকর্মী মনির হোসেন জানান, সোমবার সকালের দিকে রূপনগরে দশ তলা ভবনের সাত তলায় প্লাস্টারের কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত লিফটের ফাঁকা দিয়ে পা পিছলে সে নিচে পড়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক সোমবার সকাল ১০টার দিকে তাকে মৃত বলে জানান।
তিনি আরও জানান, বাবু মিয়ার বাবা, গ্রামের নাম, ঠিকানা কোনো কিছুই বলতে পারি না। সে গতকালই কাজে যোগ দিয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি রূপনগর থানাকে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর খিলক্ষেত বরুয়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মেছের আলীর মরদেহ উদ্ধার হয় ২৩ মে। মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড তা-ও নিশ্চিত হতে পারছিল না পুলিশ।
ঘটনার মোড় ঘুরে যায় একটি ব্যাগের হদিস পাওয়ার পর। মরদেহ উদ্ধারের পরদিন ঘটনাস্থলের পাশে ওই ব্যাগটি পায় পুলিশ। আর এই ব্যাগের সূত্র ধরেই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এটি হত্যাকাণ্ড। শেষ পর্যন্ত শনাক্ত হয় হত্যাকারী।
মেছের আলী হত্যার ঘটনায় রোববার রাতে রমজান আলী নামে একজনকে শ্রীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, খিলক্ষেতের বরুয়া বাজার সংলগ্ন বাসা থেকে ২০ মে রাতে বের হয়ে নিখোঁজ হন মেছের আলী। ২৩ মে বিকেলে বরুয়ার বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মেছের আলীর ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকায় এবং প্রকাশ্যে কারও সঙ্গে মেছের আলীর শত্রুতা না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল যে মেছের আলীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এমন ধারণা থেকেই পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ উদ্ধার
মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে সেখানে একটি ব্যাগ পান পুলিশের তদন্তকারীরা। সেই ব্যাগের ভেতরে কাস্তে, কম্বলসহ কিছু কাপড় ও মিনা নামে একজনের জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ড পাওয়া যায়।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাগ উদ্ধারের পর মিনা ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শাহাবুদ্দিন নিজেও একটি ঘটনার শিকার।
হত্যা রহস্যে নাটকীয় মোড়
শাহাবুদ্দিন ও মিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে মিনার স্বামী শাহাবুদ্দিন তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে সহজ-সরল এই মানুষটি নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন।
রেলওয়ে স্টেশনে বয়স্ক এক লোকের সঙ্গে শাহাবুদ্দিনের কথা হয়। তাকে ভাতিজা সম্বোধন করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমিও নেত্রকোণায় যাব, চল একসাথেই যাই। আমরা যদি এখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে।’
ওই ব্যক্তি বিকল্প রাস্তার কথা বলে শাহাবুদ্দিনকে বাসে করে নিয়ে আসেন কারওয়ান বাজারে। সেখানে তিনি শাহাবুদ্দিনকে চা খাওয়ান। চেতনানাশক মেশানো ওই চা খাওয়ার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। আর এই ফাঁকে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও পকেটে থাকা ৪০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই বয়স্ক ব্যক্তি। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় শাহাবুদ্দিন নেত্রকোণায় পৌঁছেন।
শাহাবুদ্দিনের ব্যাগ যেভাবে মেছের আলীর মরদেহের পাশে
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রযুক্তির সহায়তায় ওই বয়স্ক ব্যক্তির সন্ধান পায় পুলিশ। তার নাম রমজান আলী। থাকেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে চা বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে ছিনতাই করেন। কয়েক বছর ধরে এই কাজ করে আসছিলেন তিনি।
খিলক্ষেতের বরুয়া বাজার ও মেছের আলীকে যেখানে পাওয়া যায় সেই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০ মে একজন বয়স্ক লোক অটোরিকশায় মেছের আলীর সঙ্গে যাচ্ছেন। তার কাঁধে ঝুলানো র্যাক্সিনের একটি ব্যাগ। আর এই ব্যাগের ভেতরে ছিল শাহাবুদ্দিনের ব্যাগটি, যা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়।
ব্যাগের মধ্যে থাকা মিনা নামে এক নারীর জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সূত্র ধরে খু্ঁজে বের করা হয় তার স্বামী শাহাবুদ্দিনকে। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় পুলিশ পায় রমজানের তথ্য।
এডিসি ইফতেখায়রুল বলেন, ‘এই দুটি ঘটনা একই ব্যক্তি ঘটিয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা শ্রীপুর থেকে রমজান আলীকে গ্রেপ্তার করি। তিনি মেছের আলীকে চেতনানাশক খাইয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘রমজান আলী মেছের আলীকে চেতনানাশক খাইয়ে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা নিয়ে চম্পট দেয়। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মেছের আলী অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগে মারা গেছেন কিনা তা ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
চার হাজার টাকার লোভে মেছের আলীকে হত্যা
শাহাবুদ্দিনের মতো মেছের আলীকেও টার্গেট করে চেতনানাশক খাইয়ে তার কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা নিয়ে যান রমজান।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এডিসি ইফতেখায়রুল জানান, মেছের আলী নিখোঁজের দিন রমজানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মেছের আলীর সবজির ভ্যানে বসেই অনেকক্ষণ কথা হয় দুজনের। রাতে বাসা থেকে মেছের আলী বের হয়ে রেলগেটের সামনে আসেন। সেখানে এক জায়গায় বসার পর রমজানা তাকে চা পান করান। চেতনানাশক মেশানো ওই চা পান করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মেছের আলী। পরে তার কাছে থাকা চার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেহ টেনে নিয়ে বড় বড় ঘাস আছে এমন জায়গায় ফেলে আসেন রমজান।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেছের আলীর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর রমজান দেখতে পান যে তার কাছে ৪ হাজার টাকা রয়েছে। এই চার হাজার টাকার লোভেই মেছেরকে দেয়া চায়ে চারটি চেতনানাশক বড়ি মিশিয়ে দেন তিনি।
‘মেছের আলীকে ফেলে যাওয়ার সময় রমজান আলী ভুলবশত ওই ব্যাগটি ঘটনাস্থলে ফেলে যান। আর ওই ব্যাগের সূত্র ধরেই আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।’
আরও পড়ুন:ঢাকা জজ কোর্টে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে সৃষ্ট এই ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতদের সবাই বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য। তারা হলেন- ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম সায়েম, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন তারুণ্য, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মোসাম্মৎ মুক্তি।
তাদের মধ্যে ওমর ফারুক ওরফে ফারুকীকে ঢামেক নিউরো সার্জারি ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাত ৮টার দিকে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া মোসাম্মৎ মুক্তি ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। বাকি তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে যান। তারা দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
তারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
ঢামেক পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, জজকোর্ট প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের সংঘর্ষ হয়েছে।
রোববার রাত ৮টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এক পর্যায়ে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
রাত ১০টার পরও থেমে থেমে হামলা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, হাফিজ সিরাজী নামে এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া স্ট্যাটাস থেকে ঘটনার শুরু। গত শুক্রবার দুপুর ১২টা এক মিনিটে এ অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিলে রোববার সন্ধ্যায় মিরপুর ১৩ নম্বরে করেকজন সন্দেহ করে একজনকে আটক করে। এ সময় কয়েকজন যুবক তাকে মারধর করলে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এরপরই সংঘর্ষ বাধে।
হাফিজ সিরাজী নামের অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া স্ট্যাটাসের জন্য যাকে মারধর করা হয়েছে তিনি দাবি করেছেন, তার নাম সোহেল। তিনি স্থানীয় দোকানদার। উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার পর এই ব্যক্তি বলেন, তার আইডি হ্যাক করে এসব পোস্ট দেয়া হয়েছে। তারই এক রুমমেট অন্যদের ডেকে এনে হামলা করিয়েছেন।
রাত পৌনে ১০টার দিকে কাফরুল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে- এমন অভিযোগে এক ব্যক্তিকে মারধর করে জনতা। তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এর ফলে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এখনো থেমে থেমে হামলা করা হচ্ছে। কতজন আহত হয়েছে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে দালাল চক্রের সাত সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতি ও রোববার গোপন সংবাদে অভিযান চালিয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে।
এর মধ্যে ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ড থেকে এক নারীসহ চারজনকে আটক করা হয় বৃহস্পতিবার।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। তিনি বলেন, তারা হাসপাতালের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আমরা তাদেরকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করি।
এ ছাড়া রোববার বিকেলে মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে আটক করা হয় তিনজনকে। এদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, তিনজনকে আটক করা হয়। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে মুচলেকা নিয়ে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।আরেকজন শিক্ষার্থীকেও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একজনকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:বেলাল উদ্দিন পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর শান্তিনগরে। চলমান দাবদাহে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে রোববার সকালে গেলেন এলাকার ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে। উদ্দেশ্য, চার্জার ফ্যান কেনা। একে একে ৪-৫টি দোকান ঘুরেও কোন দোকানেই মিললো না চার্জার ফ্যান। দোকানিদের বক্তব্য, ক্রেতার চাপ বেশি। স্টকে থাকা সবই বিক্রি হয়ে গেছে।
বেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৪-৫ দোকান ঘুরে না পেয়ে অবশেষে তিনি যান ওয়াল্টনের শো-রুমে। শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগের দিকে এগুতেই রাজিয়া মঞ্জিলে ওই শো-রুমে যাওয়ার পরও হতাশ হতে হলো। শো-রুমের এক কর্মী বললেন- গতকালই (শনিবার) আমাদের এখানে অন্তত একশ’ চার্জার ফ্যান বিক্রি হয়েছে। স্টক শেষ। কোম্পানিতে অর্ডার পাঠানো হয়েছে। দুই/তিন পর এল পেতে পারেন।’
‘তবে ওই বিক্রেতা ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যানের দাম বললেন ৩ হাজার ৯৯০ টাকা। আর ১৪ ইঞ্চি আকারে ফ্যানের দাম ৪ হাজার ৩৯০ টাকা। এটা আমার কাছে বেশি মনে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
বাজার ঘুরে অবশ্য চার্জার ফ্যানের দাম নিয়ে বেলাল উদ্দিনের বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে। কোম্পানিভেদে প্রতিটি চার্জার ফ্যানের দাম ১০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
গুলিস্তানের সুন্দরবন মার্কেটের পাইকারি ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতা রাজিব খানও দাম বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
রোববার দুপুরে রাজিবের ‘খান এন্টারপ্রাইজ’ নামের দোকানে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতার ভিড়। ওই মার্কেটের অন্য সব ইলেক্ট্রনিকসের দোকানেও ক্রেতার ব্যাপক আনাগোনা দেখা গেছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই এসেছেন তার দোকানে। সবার একটাই চাহিদা- চার্জার ফ্যান।
রাজিব খান বলেন, ‘গত ৪-৫ দিন ধরে চার্জার ফ্যানের চাহিদা অনেকটা বেড়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। এগুলো আমদানি করা পণ্য। মার্কেটে সরবরাহে ক্রাইসিস দেখা দিলেই দাম বেড়ে যায়। আমদানিকারকরা যে পণ্য এক মাস ধরে বিক্রি করবেন, চাহিদা বাড়ায় সেই পণ্য ১-২ দিনেই শেষ হয়ে গেছে।
‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ানোর কারণে আমাদেরও দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বিক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত ৪-৫ দিনে ফ্যানের সাইজ ও কোয়ালিটি ভেদে ১০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে গেছে।’
মহল্লার দোকানেও একই চিত্র
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায়ও মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডে ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানগুলোতে চার্জার ফ্যান কেনার হিড়িক দেখা যায়।
এখানে চার্জার ফ্যান কিনতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমার বাসা মোহাম্মদপুর হাউজিং লিনটেডে। লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে দিনে রুমে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই কারেন্ট চলে যায়। তাই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। কিন্তু দোকানিরা দাম অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। যে ফ্যান আগে ৫ হাজার টাকায় কিনেছি, সেই ফ্যান এখন সাড়ে ৬ হাজার টাকা চাচ্ছে। দোকানি বলছে- ফ্যানের সাপ্লাই কম অনেক, তাই দাম বেশি।’
নোমানের মতো আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার এই প্রতিবেদকের। তাদের কেউ চার্জার ফ্যান কিনেছেন, কেউবা কিনতে এসেছেন। সবার একটাই কথা, মনের মতো চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। আর পেলেও দাম অনেক বেশি।
সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির দাম বেড়েছে
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হলেও এই মার্কেটে এসি, আইপিএস, সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারির বিক্রি বেড়ে গেছে। প্রভাব পড়েছে দামেও।
এ অবস্থায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা ক্রেতাদের এসব পণ্য কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
মার্কেটটির ফারহানা ইলেক্ট্রনিকসের বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, ‘সোলার আইটেমের সঙ্গে এসি/ডিসি লাইটের বিক্রিও খারাপ না। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চার্জার ফ্যানের। তবে সরাসরি বিদ্যুৎনির্ভর ফ্যানের চাহিদা নেই।’
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মো. সুমন বলেন, ‘গরম বেড়ে যাওয়ার কারণে সোলার আইটেম ও আইপিএসের চাহিদা বেড়েছে। দোকানের জন্য আজ মাল কিনতে এসে দেখি দাম অনেক বাড়তি।’
সুন্দরবন মার্কেটের দোতলায় ওয়ার্ল্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেদের মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গরমের কারণে আইপিএসের চাহিদা ও দাম দুই-ই বেড়েছে। সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির বিক্রি বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে দামও। সোলার প্যানেলে প্রতি ওয়াটে দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। এছাড়া মানভেদে ব্যাটারির দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা মাল কিনতে এসে দেখছেন দাম বেশি। তারাও মন খারাপ করছেন। আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামে বিক্রি করি। তবে দাম বাড়লেও বিক্রি ভালো।’
বেড়েছে এসির চাহিদাও
নুরজাহান রোডের আরবি ইলেক্ট্রনিক্সের ইনচার্জ মঞ্জুর মোর্সেদ বলেন, ‘গত ৩-৪ দিনে এসির বিক্রি বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি এসি বিক্রি হচ্ছে এখন। তবে সমস্যা হচ্ছে এসির সাপ্লাই কম।’
মোহাম্মদপুরের সপ্তর্শী ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক সুমন নন্দী বলেন, ‘রোজার ঈদের সময় গরমে এসি বিক্রি হয়েছিল অনেক। তবে গত কয়েক দিনের গরমেও এসির বিক্রি বেড়েছে, তবে রোজার ঈদের সময়ের চেয়ে একটু কম। এসি, কুলার, চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেশি। আমাদের সাধারণ দোকান। অন্য সময় দিনে ১-২টা এসি বিক্রি হলেও এখন ৫ থেকে ৭টা এসি বিক্রি হচ্ছে।’
এসির টেকনিশিয়ানের অভাব
এসির বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা পড়েছেন আরেক সংকটে। স্বাভাবিকভাবে দিনে এক থেকে দুটি এসি বিক্রি হয়। সেই চাহিদা মাথায় রেখেই দোকানিরা এসি বাসা বা অফিসে নিয়ে সেট করে দিয়ে আসার জন্য টেকনিশিয়ান রাখেন।
বর্তমানে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এসি নির্দিষ্ট সময়ে সেট করে দিয়ে আসার মতো টেকনিশিয়ান নেই অধিকাংশ দোকানে। এ অবস্থায় সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে হাতেগোনা টেকনিশিয়ানদের। কোনো কোনো ক্রেতার বাসায় গভীর রাতে গিয়ে এসি সেট করে দিচ্ছেন তারা।
এসি কিনতে আসা ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় এয়ার কুলার আছে। কিন্ত এই গরমে তা দিয়ে কাজ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এসি কিনতে এসেছি। তবে সমস্যা হলো দোকানিরা বলছেন তাদের টেকনিশিয়ানের অভাব। এসি সেট করে দিতে একদিন দেরি হবে।’
মোহাম্মদপুরের এইচ এ ইলেক্ট্রনিক্সের বিক্রেতা ওহিদুর রহমান বলেন, ‘এসি টেকনিশিয়ানের অভাব। গরমের কারণে হুট করে এসির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু টেকনিশিয়ান অর্থাৎ এসি বাসায় গিয়ে সেট করে দেয়ার জনবল তো বাড়েনি। তাই তাদের এখন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসি বিক্রি করেও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস দিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘মার্কেটে এয়ার কুলারের অভাব। সাপ্লাই থাকলে এখন প্রতিদিন অন্তত ২০টা এয়ার কুলার বিক্রি করতে পারতাম। এসিরও সাপ্লাই নেই। কারণ এলসি করতে পারছে না কোম্পানি।’
গরমে বেড়েছে রোগবালাই
একে তো ভয়াবহ গরম, তার ওপর চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ অবস্থায় গরমজনিত রোগবালাই বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে ওষুধের দোকানে ভিড় বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা শিশুদের সর্দি-জ্বর, কাশির সিরাপ, ওরস্যালাইন ও গ্লকোজের।
বসিলার রিফাত মেডিক্যাল কেয়ারের মালিক মো. আজাদ বলেন, ‘গত ৪-৫ দিনে এলার্জি ট্যাবলেট, স্যালাইন, ঘামাচি পাউডার, গ্লুকোজ, টেস্টি স্যালাইন, জুস, কোমল পানীয় বিক্রি বেড়েছে। আর শিশুদের সর্দি-জ্বর ও কাশির ওষুধের বিক্রিও অনেকটা বেড়ে গেছে। তবে এসব ওষুধের সাপ্লাইয়ে কোনো ঘাটতি নেই।’
আরও পড়ুন:সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পুলিশ ও সরকারি কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিওকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে পুলিশের মনোবল ভাঙার কোনো সুযোগ নেই।’
সম্প্রতি ডিবিপ্রধান হারুন সিঙ্গাপুরে নিজের ও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ১৩ দিনের ছুটি নেন।
ছুটির আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তিনি আর দেশে ফিরবেন না বলে গুঞ্জন ওঠে।
রোববার নিজ কার্যালয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আমাকে নিয়ে নয়, গত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে দেশের বাইরে থেকেও কিছু লোক সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ভিডিও করছে। তারা বলছে, অনেক সরকারি কর্মকর্তা দেশের বাইরে যাওয়ার পর ফিরবেন না। এটা সম্পূর্ণ গুজব। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি প্রাপ্তি একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য একাধিক স্তরে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদেরও অন্যদের মতোই পরিবার আছে এবং বিশেষ কারণে তাদের ছুটির প্রয়োজন হয়।’
‘কেউ যদি মনে করে এ ধরনের ভিডিও বানালে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়বে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে এসব কথা ছড়িয়ে ভিউ পেতে পারে, অর্থ উপার্জন করতে পারে। কিন্তু আমি পুলিশের মনোবল ভাঙার কোনো কারণ দেখছি না।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেকে এক সেনা কর্মকর্তার বাসা থেকে চুরি হওয়া পিস্তল চার বছর পর উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শনিবার রাতে বরিশালের গৌরনদী থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে।
এ সময় চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারেক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ির রান্না ঘরের মাটির নিচে অস্ত্রটি লুকানো ছিল।
রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ রাতে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. সামছুল হুদার বাসায় চুরি হয়।
চোর বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে টাকা, ঘড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রীর সঙ্গে লাইসেন্স করা বিদেশি পিস্তল, ৫০টি গুলি ও দুটি ম্যাগজিন নিয়ে যায়।
ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ভাষানটেক থানায় মামলা করেন।
পিবিআই জানায়, অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখায় তারেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চুরির মামলাসহ ভাষানটেক থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য