দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করল অ্যাডভান্সড রিসার্চ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এআরএফবি। ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই গবেষণা সংস্থার উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর আর্মি গলফ ক্লাবে এই অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট গবেষক, চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও এআরএফবির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে কেক কাটা হয়। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে নানা বয়সী শিশুরাও অংশ নেয়।
পরে আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে এআরএফবির ১৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এআরএফবি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মো. ফসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক এআরএফবির সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. জহিরুল হক, এআরএফবির সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক-গবেষক ড. জহির বিশ্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জালাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ওয়াই এম বেলালুর রহমান।
আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লতিফুল বারী, দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ নাদিম, কারিতাস বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. থিওফিল নকরেক, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমেটেডের সাবেক ডিজিএম সেলিনা বানু, চিত্রশিল্পী দেলোয়ার হোসেন, মেটাডোর কোম্পানির কো. সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন, সংগীত গবেষক ড. এবিএম রেজাউল রিপন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম, পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি ওয়াই এম বেলালুর রহমান এবং আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় আনিকা সুবাহ্ আহমেদকে সন্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়।
বিশ্বসেরা গবেষক র্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন বিভাগের ৯৫ জন গবেষক। তাদের মধ্যে ৯৩ জন শিক্ষক ও ২ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স-২০২৩ এ বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারা। তালিকায় দেশের ১৬৮টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৩৩৫ জন গবেষক রয়েছেন।
তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান, দ্বিতীয় সালেহ আহাম্মেদ ও তৃতীয় স্থানে মো. শরিফুল আলম। তালিকায় বাংলাদেশি শীর্ষ ৫ হাজার গবেষকের মধ্যে জবির ৮৯ জনের নাম রয়েছে।
ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৯তম, আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৫০৮তম আর বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৪৫৩৩তম।
এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বের ২১৬টি দেশের ১৯৫২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ লাখ ৪১ হাজার ৫২৩ জন বিজ্ঞানী বা বৈজ্ঞানিক গবেষকের তালিকা করেছে। তাদের সবার গবেষণাসহ বিভিন্ন কর্ম বিশ্লেষণ করে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দেশভিত্তিক বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করা হয়েছে।
সায়েন্টিফিক ইনডেক্স গবেষকদের গুগল স্কলারের রিসার্চ প্রোফাইলের বিগত পাঁচ বছরের গবেষণার এইচ ইনডেক্স, আইটেন ইনডেক্স ও সাইটেশনের তথ্যের ভিত্তিতে এই র্যাংকিং প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, ‘এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। তবে এ তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য আরও অনেক শিক্ষকই আছেন, যারা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করেছেন। কিন্তু গবেষণাপত্র অনলাইনে আপলোড না করায় তাদের নাম আসেনি। আমরা আশাবাদী, আগামীতে এই সংখ্যা অনেক বাড়বে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক স্থান পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন। ইতোমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বুয়েট, ঢাবিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আগামীতে গবেষণায় আরও ভালো ফল আসবে এবং মান আরও উন্নত হবে বলে আশা করছি।’
এর আগে ২০২১ সালে প্রকাশিত তালিকায় দেশের মোট এক হাজার ৭৮৮ জন গবেষকের মধ্যে জবির ২১ জন এবং ২০২২ সালে দুই হাজার ৭৭২ জনের মধ্যে ৬৩ জন গবেষক স্থান পেয়েছিলেন।
এদিকে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের তালিকা ও র্যাংকিং প্রকাশ করা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স লিমিটেডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকার শীর্ষ ১০ বা ১০০-তে বাংলাদেশের কোনো বিজ্ঞানীর নাম নেই। তবে সায়েন্টিফিক ইনডেক্সে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের ৩ জন ঠাঁই পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এবং আইসিডিডিআর,বির ২ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী রাশিদুল হক।
আরও পড়ুন:প্রাণঘাতী রোগ কালাজ্বর নির্ভুলভাবে শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিমের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে কালাজ্বর নির্ণয়ের এই নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগমসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক দলের সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য গবেষক দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আধুনিক ও সমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন করা গেলে শিগগির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকাসহ বিভিন্ন ধরনের টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন করা যাবে।’
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, ‘রিয়েল টাইম পিসিআরভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কালাজ্বর শনাক্তকরণের একটি রোগীবান্ধব পদ্ধতি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব।
‘কালাজ্বর শনাক্তকরণে আগে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি-মজ্জা, যকৃত, প্লিহা, লিম্ফ নোড-এর টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো। এতে রোগ শনাক্তকরণের জন্য ৭দিন সময় লেগে যেত। নতুন এই পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় ও নির্মূলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকদের এই গবেষণা ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত জার্নাল PLOS Global Public Health-এ প্রকাশ হয়েছে।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে কাজ করবে ইউরোপের দেশ রোমানিয়ার ওরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গবেষণার ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করার কথা জানায়।
গবেষক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের কিছু শিক্ষার্থী মেডিসিন অনুষেদে পড়াশোনা করছেন। তবে যদি ভূগোল বিভাগে কেউ পড়তে যান তাকে অগ্রিম অভিনন্দন।’
বাংলাদেশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরাও রোমানিয়ার দ্য ইউনিভার্সিটি অব ওরেডিয়ায় নানা ধরনের গবেষণার সুবিধা পাবেন বলে জানান তারা।
জবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেনের আমন্ত্রণে ওরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের গবেষক দল পরিদর্শনে আসে। গবেষক দলের প্রধান ওরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি, ট্যুরিজম অ্যান্ড স্পোর্ট অনুষদের ডিন ড. আলেক্সজান্ডার।
দলের অন্য সদস্যরা হলেন একই অনুষদের অধ্যাপক ড. ডোরিনা ক্যামেলিয়া এবং সহকারী অধ্যাপক ড. টিউডর ইউলিয়ান।
এর আগে, গবেষক দল ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সেমিনার কক্ষে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
এ সময় রোমানিয়ার ভৌগলিক নানা দিক নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া রোমানিয়ায় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়াসহ নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তারা।
মতবিনিময় সভায় লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন, বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের, অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জমান, ড. নিগার সুলতানা, এন এম রিফাত নাসের, ড. নাজমুন নাহার, মো. মহিউদ্দিন, মো. আশ্রাফ উদ্দিন, ড. রিফফাত মাহমুদ ও সামিনা বেগমসহ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্পে অনুদানের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ৩০ জন শিক্ষক মনোনীত হয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণার জন্য প্রকল্প অনুযায়ী ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষক ও গবেষকদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সর্বনিম্ন চার লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. পরিমল বালা নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষক এ বছর ফেলোশিপ পেয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপ থেকে প্রাপ্ত অর্থ গবেষণার কাজকে আরও বেগবান করবে। গবেষণার জন্য এ টাকার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা উচিত, যাতে শিক্ষক ও গবেষকরা তাদের গবেষণা কাজ ভালো সুবিধা নিয়ে করতে পারেন৷’
চলতি অর্থবছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচির বিভিন্ন খাত থেকে মোট ৬৮২টি গবেষণা প্রকল্পে অনুদানের জন্য নির্বাচিত এক হাজার ৩৬৪ জন গবেষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষক যুগ্মভাবে ১৫টি প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুদান পাওয়া শিক্ষকরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লোকমান হোসেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দ আলম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জমির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিস আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ড. জয়ন্ত কুমার সাহা, সহকারী অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ ও সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল।
গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সরোয়ার আলম, অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, সহযোগী অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক, সহযোগী অধ্যাপক ড. বিষ্ণু পদ ঘোষ, সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন ও গৌতম কুমার সাহা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার।
এছাড়াও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে অধ্যাপক দোলন রায়, সহযোগী অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার মণ্ডল, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোসা. উম্মে হাবিবা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক ড. শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম, সহযোগী অধ্যাপক ড. তনিমা মুস্তাফা, সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ড. রুমানা তাছমীন, প্রভাষক শিল্পী সাহা এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী নাহিদা বেগম, সহকারী ও অধ্যাপক মেঘলা সাহা পিংকি।
আরও পড়ুন:দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। অন্য কারণের পাশাপাশি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সঠিক সচেতনতা এবং সমন্বিত চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে স্ট্রোকের মৃত্যুঝুঁকি ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রোববার আয়োজিত স্ট্রোক বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এমন তথ্য তুলে ধরেন।
বিএসএমএমইউ-এর শহীদ ডা. মিল্টন হলে এই সেমিনারের আয়োজন করে নিউরো সার্জারি বিভাগ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হলে অনেক মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। তবে স্ট্রোকের চিকিৎসা করার চেয়ে স্ট্রোক প্রতিরোধ করাটা জরুরি। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
‘খাবারে বাড়তি লবণ না খাওয়া, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা, স্ট্রেস না নেয়া, ধূমপান না করার ওপর জোর দিতে হবে। মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করতে হবে। অধিক সময় মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকলে স্ট্রেস বেড়ে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।’
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হয়েছে ২৯ অক্টোবর, শনিবার। ‘জানুন স্ট্রোকের লক্ষণ, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন’ স্লোগান নিয়ে বিএসএমএমইউ-তে দিবসটি পালিত হয়।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার সকালে বিএসএমএমইউ-এর নিউরোলজি, নিউরো মেডিসিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগ পৃথক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এছাড়াও নিউরো সার্জারি বিভাগ আয়োজন করে বৈজ্ঞানিক সেমিনার।
সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ জন স্ট্রোকের কারণে মারা যাচ্ছে। বিশ্বে প্রতি হাজারে ৮ থেকে ১০ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। আর স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ৪৮ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
বিশ্বে প্রতি লাখে ২ থেকে ১৩টি শিশু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। শিশুদের স্ট্রোকের অর্ধেক হয় রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে। বাকি অর্ধেক হয় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে। ২৫ ভাগ শিশু বার বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। স্ট্রোকে আক্রান্ত ৬৬ ভাগ শিশুর হাত-পায়ের দুর্বলতা ও খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। স্ট্রোক শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়।
বাংলাদেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি। এই সময়ের মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব। শতকরা ৮০ ভাগ স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী ওষুধের মাধ্যমেই সুস্থ হয়।
সেমিনারে আরও বলা হয়, স্ট্রোক প্রতিরোধে ৭টি পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারে তেল ও লবণের ব্যবহার কমানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্ট্রেস কমাতে নামাজ, উপাসনা বা মেডিটেশন করা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ-এর নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন খান।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, অধ্যাপক ডা. আইউব আনসারী, অধ্যাপক ডা. সুকৃতি দাস, অধ্যাপক ডা. হাসান জাহিদুর রহমান, অধ্যাপক ডা. কনোজ কুমার বর্মন, অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি দে, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রকিবুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল আমিন ও ডা. খায়রুন নবী খানসহ অন্যান্য শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) চতুর্থ গবেষণা দিবস পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার।
দিবসটির কর্মসূচি মধ্যে ছিল- শোভাযাত্রা, গবেষণা পোস্টারিং, ওরাল প্রেজেন্টেশন, মিট দ্য প্রেস, গবেষণা অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও আলোচনা সভা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে সকাল ৮টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে বটতলা, টিএসসি, এ-ব্লক, ডি-ব্লক, সি-ব্লক ঘুরে কেবিন ব্লকে গিয়ে শেষ হয়।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বৈজ্ঞানিক অধিবেশন ও পোস্টার প্রেজেন্টেশনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক-গবেষকরা। বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে ১০টি ওরাল প্রেজেন্টেশন ও ২০টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন করা হয়। ১০টায় মিট দ্য প্রেস ও ১১টায় ছিল আলোচনা সভা।
এ বছর শ্রেষ্ঠ গবেষণার জন্য কয়েকশ’ গবেষকের মাঝ থেকে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, মেডিক্যাল অফিসারসহ ১৬ জনকে গবেষণা পদক বা রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণার ধারা অব্যাহত না রাখতে পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে। তরুণ চিকিৎসকরা গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিক দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। শুধু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারলেই বছরে এক লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
‘বিএসএমএমইউ-তে গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উপাচার্য অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হয়েছে। গবেষণা ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, চিকিৎসকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের চাহিদা পূরণে গবেষণা খাতে বছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে একসঙ্গে ২৪ গবেষক-চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সমন্বিত গবেষণা পুরস্কারের ২০ শতাংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা অর্জন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বমানের চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহায়তা দেয়া হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদাদ্দের আলী বলেন, ‘গবেষণায় ইথিক্যাল পার্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই গবেষণার ক্ষেত্রে ইথিক্যাল মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনে (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণায় এই বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে। গবেষণা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স, কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য