পুলিশ হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে চিনেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শনিবার এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন দাবি করেন।
বেনজীর লিখেন, “আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত ও সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে চাই যে, ‘আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়’ নামে আমি কাউকে চিনি না। আমার সাথে তার এমনকি প্রাথমিক পরিচয়ও নাই।”
তিনি আরও লিখেন, ‘আমি আমার ল’ এনফোর্সমেন্ট ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় খুনি, সন্ত্রাসী, ড্রাগ ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ভেজালকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি; কখনোই সখ্যতা নয়। আপনাদের অফুরান ভালোবাসা, সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
আরাব নিয়ে আলোচনার শুরু যেখান থেকে
পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ আলোচনা শুরু হয়। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি সোনা দিয়ে।
আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিওবার্তার পর বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)।
সে সময় ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
রবিউলকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমরা তাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছিলাম। দুবাইতে তিনি অবস্থান করছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে এখন আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেব।’
ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি আরাবের।
তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার হযরতউল্লাহ জাজাই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার এভিন লুইস, ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা, বাংলাদেশি লেখক সাদাত হোসাইন, অভিনেত্রী দীঘি, আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী নোবেল, বেলাল খানসহ অনেকে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। তাদের একটি বড় অংশ দুবাইতে গিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রয়োজনে সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ
খুনের মামলার আসামির নিমন্ত্রণে দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে যাওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপি ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ১৬ মার্চ দুপুরে এ কথা জানান।
নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাব খান পুলিশ খুনের আসামি। বিষয়টি জানানো হয়েছিল সাকিবকে, কিন্তু তিনি দুবাইয়ে কেন গেলেন? এটি দুঃখজনক।’
দুবাইয়ে যাওয়া সাকিব কিংবা অন্য কারও সঙ্গে ডিবি কথা বলেছে কি না, তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাকিবসহ অন্যান্যদেরও জানানো হয়েছে। জানানোর পরেও তারা কেন পুলিশ খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন, এটা আমি জানি না।’
সাকিব-হিরো আলম দেশে ফিরলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা যদি প্রয়োজন মনে করি তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
‘সোর্সের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল সাকিবকে’
দুবাইয়ে অবস্থানরত খুনের মামলার আসামি আরাব খানের বিষয়ে সাকিবকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল দাবি করে কোন মাধ্যমে ক্রিকেটারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়, তাও জানিয়েছে পুলিশ।
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামের প্রশ্নোত্তরভিত্তিক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে প্রচারিত অনুষ্ঠানটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন ডিএমপি ডিবিপ্রধানের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার একটা স্পেসিফিক প্রশ্ন আছে। এই ঘটনা (খুনের আসামির দাওয়াতে সাকিবসহ তারকাদের দুবাই গমন) পত্রপত্রিকায় জানাজানি হওয়ার পর আপনাকে উদ্ধৃত করে পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে, সাকিব আল হাসান জানা সত্ত্বেও দুবাইতে গিয়েছেন বা আপনারা সাকিব আল হাসানকে জানানোর পরও তিনি দুবাইতে গিয়েছেন। আপনারা সাকিব আল হাসানকে কীভাবে জানিয়েছেন যে, এইখানে যায়েন না? এইটা...মানে এইটা কী রকম?’
জবাবে ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাকে জানিয়েছি। সে বিষয়টা জেনেছেও। পাশাপাশি আপনি বলেছেন, তিন দিন যাবত সারা বাংলাদেশের ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে, ইউটিউব থেকে শুরু করে তোলপাড়।’
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রশ্ন করে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, “জবাব হারুন অর রশীদ, ফেসবুক তোলপাড় হোক। আমি জানতে চাইছি যে, আপনি এখানে বলেছেন, আপনাকে আমি উদ্ধৃত করছি, ‘তারা সেখানে হাজির হয়েছেন এবং জানার পরও, মানে আমরা তাদরকে অবগত করার পর, আপনি সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমরা তাদেরকে অবগত করার পরও তারা দুবাই গিয়ে আরাব খানের…।’ আপনারা কি জানিয়েছেন? মানে তাকে জানিয়েছেন কি না?”
জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে জানিয়েছি এবং তারা অবগত হয়েছে। অবগত হওয়ার পরেও…।’
হারুন অর রশীদের ওই বক্তব্যের মাঝেই খালেদ মুহিউদ্দীন তার উদ্দেশে বলেন, ‘জনাব হারুন অর রশীদ, আপনি সরাসরি জানান নাই কেন?’
উত্তরে ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, ‘আমি তাকে কীভাবে জানাব? আমি তার প্রিয় লোকজনের মাধ্যমে তাকে জানিয়েছি?’
ইন্টারপোলকে চিঠি
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আরাবকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এতিমখানায় খাবার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাবকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
‘আমরা অনেক কিছুই শুনেছি, জেনেছি। যেসব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, তা যাচাই-বাচাই করে বাদবাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মহাসড়কে রয়েছে ৮৮৩টি বিপজ্জনক বাঁক। তাতে এসব পয়েন্টে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। এসব বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও পথচারী।
মহাসড়কে বিগত ১০ বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে মহাসড়কের ওই অংশ সোজা করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তথ্যমতে, ৮৮৩টি বাঁকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি বাঁক রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের মাদারীপুর রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতায় রয়েছে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর ও নড়াইল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে বগুড়া রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতাধীন বগুড়া, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ২৪৮টি।
এর বাইরে কুমিল্লা রিজিওনে ১৮১টি ও সিলেট রিজিওনে ১২৬টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এই মরণফাঁদ সবচেয়ে কম রয়েছে গাজীপুর রিজিওনে। এখানকার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকের সংখ্যা ৬৪টি।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি বিবেচনায় মহাসড়কের বাঁকগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। এসব বাঁকে যে রেগুলার দুর্ঘটনা ঘটছে এমনটা নয়। তবে এই স্পটগুলোতে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কোনোটাতে কম ঝুঁকি, কোনোটাতে বেশি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কিছু সড়কে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হয়েছে। আরিচা মহাসড়কে কাজ হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রোড প্রশস্ত করা এবং সার্ভিস লেন করার মাধ্যমে কাজ হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি কমানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ককে বাঁকমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত গবেষকদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মহাসড়কের এসব বাঁক বছরের পর বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাঁকই আগের মতোই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
‘পাশাপাশি অনেক যানবাহনের ফিটনেস না থাকার পরও তারা মহাসড়কে বেপরোয়া। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তে ফিটনেস ফেইলের তথ্য বেরিয়ে আসে।’
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, বরিশাল থেকে মহাসড়ক ধরে গৌরনদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে একজন চালককে অতিক্রম করতে হয় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের অবস্থান চিহ্নিত করা যায় না। চালক যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে ঘটে যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সারাদেশে এ ধরনের ৮৮৩টি বাঁক রয়েছে।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে নানামুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুর্ঘটনাপ্রবণ বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করার কাজটিও করে থাকে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, বরিশাল থেকে ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। এর মধ্যে কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রোল পাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা ব্রিজের ঢাল, জয়শ্রী, গৌরনদীর প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুল সংলগ্ন, বাটাজোড়, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি ও ভুরঘাটা সেতুর আগে বিপজ্জনক এসব বাঁক রয়েছে।
বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলেও মনে করে হাইওয়ে পুলিশ। গত এক বছরে সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় হয়েছে মাদারীপুর রিজিওনে। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে কুমিল্লা, গাজীপুর, সিলেট ও বগুড়া রিজিওন।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। বাঁকগুলো সম্পর্কে আশপাশ এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের নিয়েও সভা করা হয়েছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও পালন করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছে। নিহত থমচু বম রামথার পাড়ার কারবারি। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১১টার দিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম রামথার কারবারি পাড়ায় জুমে যাচ্ছিলেন থমচু বম ও তার ছেলে। এ সময় সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা লাশ উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘রামথারপাড়া এলাকা থেকে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা অভিযোগ তোলা সেই প্রযোজক রহমত উল্লাহ এবার তার বিরুদ্ধে অসত্য ও মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে শাকিবকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
রহমত উল্লাহর পক্ষে আইনজীবী মো. তবারক হোসেন ভূঁইয়া মঙ্গলবার এই নোটিশ পাঠান। তিন দিনের মধ্যে শাকিব বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানানো হয় এতে।
আইনজীবী ফারহানা ইসলাম তামান্না বলেন, মঙ্গলবার আমরা আমাদের ক্লায়েন্টের পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কুরিয়ার সার্ভিস ও সরাসরি গিয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এই আইনজীবী বলেন, নোটিশে আমরা তিন দিনের সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নোটিশে বলা হয়েছে, আমাদের মক্কেল রহমত উল্লাহ একজন প্রযোজক হওয়া স্বত্বেও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে তার নামে মিথ্যা, মানহানিকর এবং আক্রমণাত্মক মন্তব্য/বিবৃতি দিয়েছেন শাকিব খান।
এতে বলা হয়, গত ১৯ মার্চ ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকে নায়ক শাকিব খান বলেছেন- রহমত উল্লাহর মতো একজন ভুয়া, প্রযোজক নামধারী, বাটপার, প্রতারক। তিনি সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং এফডিসিতে গিয়ে শিল্পী সমিতি, পরিচালক প্রযোজক সমিতিতে ভুয়া প্রযোজক বিচারক বিচার চেয়েছেন। এ ছাড়া গোয়েন্দা শাখাকে বলেছেন যে, রহমত উল্লাহ প্রযোজক না হয়ে আজেবাজে প্রোপ্রাগান্ডা সৃষ্টি করেছেন যা অসত্য।
নোটিশে আরও বলা হয়, রহমত উল্লাহকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন। এতে তার সুনাম নষ্ট হয়েছে। এভাবে গণমাধ্যমের সামনে অপমানজনক, মিথ্যা মন্তব্য/বিবৃতি দেয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।
নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে দেয়া মন্তব্য/বিবৃতিগুলো সরিয়ে না নিলে বা দুঃখ প্রকাশ না করলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানো হয় এতে।
গত ১৫ মার্চ বিকেলে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর শাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ।
তার লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এই প্রযোজক ২০১৭ সালে তার সিনেমাটির শুটিংয়ের সময় শাকিব খানের দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, শুটিংয়ের সময় শাকিবের বিরুদ্ধে এক সহ-প্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগও তোলেন তিনি।
আরও পড়ুন:বগুড়ায় এক বিচারকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডতা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বেশ কিছু তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করা পুলিশ হত্যা মামলার আসামি বাংলাদেশি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খানকে আটকের কোনো তথ্য নেই দুবাই পুলিশের কাছে।
মঙ্গলবার রাতে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দুবাই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স-এর তথ্যকেন্দ্র । তাদের দাবি, আরাব খানকে আটক করা নিয়ে তারা কিছু জানে না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ই-মেইল পাঠিয়ে ভারতীয় পাসপোর্টধারী আরাব খান সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। একই তথ্য জানতে চাওয়া হয় তাদের অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমেও।
উত্তরে দুবাই পুলিশের তথ্যকেন্দ্র বলেছে, ‘আরাব খান নামের কাউকে আটকের তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ আরাবকে নিয়ে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘না, কোনো তথ্যই নেই।’
এর আগে এদিনই দুপুরে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে আরাবকে আটকের তথ্য জানায় বাংলাদেশি একাধিক সংবাদমাধ্যম। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা হচ্ছিল না।
কয়েক দিন ধরেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন আরাব খান, আসছিলেন লাইভেও। তার আটকের খবরের মধ্যেই বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকেও ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি।
এ ছাড়া দুবাইয়ে আরাব খান আটক হননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান পালিয়ে থাকতে পারবেন না। আমি এটুকুই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের আসামি কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে পালিয়ে থাকতে পারবে না। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুবাইয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা শুরু হয়। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে।
আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন।
এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিও বার্তার পর বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) নজরে আসে।
ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি তার। সাকিবসহ অন্যরা এই আয়োজনে অংশ নেন।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আমরা আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
আরাবকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার রাজিব আল মাসুদ।
সবশেষ সোমবার দুবাইয়ে থাকা আরাবের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন গ্রহণের কথা শুনেছেন বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার পুলিশ ফাঁড়ির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আরাব খানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেছি। ওই নামে রেড নোটিশ জারির একটা বিষয় (আবেদন/অনুরোধ) দিয়েছি। এটা বোধ হয় ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে, এ রকম একটা খবর আমি পেয়েছি।’
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভয়াশ্রম থেকে অবৈধভাবে আহরণ করা ৬ হাজার কেজি মা ইলিশ জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। মঙ্গলবার ভোরে এই বিশেষ অভিযান চালানো হয়। পরে জব্দ করা এসব ইলিশ গরিব-দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান জানান, জাটকা নিধন রোধে দুই মাসব্যাপী অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা রক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালাকালে মৎস্য আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ রয়েছে।
কোস্টগার্ড কর্মকর্তা আরও জানান, গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকা থেকে আহরণ করা বিপুল ইলিশ ঢাকায় আসবে। পরে কোস্টগার্ডের পাগলা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শামস্ সাদেকীন নির্ণয়ের নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতু সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি পিকআপ ভ্যান তল্লাশি করে ৬ হাজার কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়। তবে এসব ইলিশের মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন। অভিযান শেষে জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় মাদ্রাসা, এতিমখানা, গরিব ও দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়।
পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় দুবাই প্রবাসী আলোচিত ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী ও নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল বিন আতিকের আদালতে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর আলম খানকে জেরা শেষ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্য দিয়ে মামলার ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ জুন দিন ঠিক করেন বিচারক।
মামলার আসামিরা হলেন- মো. রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মো. মিজান শেখ, আতিক হাছান ওরফে দিলু শেখ, সুরাইয়া ওরফে কেয়া, মো. সারোয়ার হোসেন ও মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান। এদের মধ্যে আরাব ও কেয়া পলাতক। বাকি ৬ আসামি কারাগারে রয়েছেন।
এই মামলার দুই আসামি মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ও মোছা. ফারিয়া বিনতে মিম অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তাদের বিচার চলছে শিশু আদালতে।
২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাতে বনানীর একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভিকটিম মামুন ইমরান খানকে ডেকে এনে মারধর করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১০ জুলাই গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন উলুখোলার বাইরদিয়া রাস্তার পাশে বাঁশ ঝোপে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
ওই ঘটনায় ১০ জুলাই নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন। একই বছরের ১৮ জুলাই রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে রহমত উল্লাহ নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘মামুন ইমরান খান টেলিভিশনের বিভিন্ন ক্রাইম সিরিয়ালেও অভিনয় করতেন। রহমতউল্লাকে তার বাসায় জন্মদিনের দাওয়াত দেন আসামি আফরিন।
রহমতউল্লাহ ওই অনুষ্ঠানে পুলিশ বন্ধু মামুনকেও যাওয়ার অনুরোধ করেন। আর সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েই খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন।
হত্যার পর মামুনের মরদেহ গুম করতে বস্তায় ভরে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কালীগঞ্জের জঙ্গলে পেট্রোল দিয়ে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়।
ওই বছরের ১০ জুলাই রহমতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামুন ইমরান খানের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার কলাকোপায়। তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য