খুনের মামলার আসামির নিমন্ত্রণে দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে যাওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কথা জানিয়েছেন।
নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাব খান পুলিশ খুনের আসামি। বিষয়টি জানানো হয়েছিল সাকিবকে, কিন্তু তিনি দুবাইয়ে কেন গেলেন? এটি দুঃখজনক।’
ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, ‘আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশটি যেন না পাওয়া যায় তাই কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়। এরপর ডিবি তদন্ত করেছে। আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে।
‘পরবর্তীতে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এর মধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যান।’
হারুন বলেন, ‘আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি। সে একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছে। মিডিয়াতে ও অনেকের বলার পরও সাকিবসহ অনান্য স্টার খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাইয়ে গিয়েছেন এবং তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন।
‘আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আরাবের নামে এখন পর্যন্ত কতগুলো মামলা রয়েছে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। মামলা রয়েছে; চার্জশিট রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’
আরাব খানই যে রবিউল, সেটি ডিবি কখন নিশ্চিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘যখন কোনো মামলার চার্জশিট প্রদান করা হয়, তখন সব আসামিরা কে কোথায় আছে তার খোঁজখবর নেওয়া হয়। আরাব খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেসবুকে ওই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলেই আমরা তথ্য পাই আরাব খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম।’
ডিএমপি ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ‘খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে সে এখন দুবাইতে অবস্থান করছে।’
দুবাইয়ে যাওয়া সাকিব কিংবা অন্য কারও সঙ্গে ডিবি কথা বলেছে কি না, তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাকিবসহ অন্যান্যদেরও জানানো হয়েছে। জানানোর পরেও তারা কেন পুলিশ খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন, এটা আমি জানি না।’
সাকিব-হিরো আলম দেশে ফিরলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা যদি প্রয়োজন মনে করি তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানহানির অভিযোগে দৈনিক পত্রিকা ডেইলি স্টারের কাছে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি বুধবার জানান তাপসের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
তিনি জানান, গত ৫ জুন রেজিস্ট্রি ডাকে ওই নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশটি ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও লেখক নাজিবা বাশারকে পাঠানো হয়।
নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে থাকা প্রতিবেদন অপসারণ এবং সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘ডেইলি স্টারের পত্রিকা এবং অনলাইন ভার্সনে প্রতিবেদন বা কলাম প্রকাশ করা হয়। কলামের লেখা ছিল ‘বাতাস প্রবাহের জন্য গাছ কর্তন’, আরেকটি টাইটেল ছিল যেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নামকে বিকৃত করে লেখা হয় ‘ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন পরিবেশবাদীর চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে’। শুধু তাই নয় মেয়র তাপসের নাম বিকৃত করে লেখা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। এ ধরণের বক্তব্য আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি আইন অনুযায়ী মানহানির পর্যায়ে পড়ে। প্রতিবেদন দেখে মেয়র তাপস আমাকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।’
সাত দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ না নিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওই আইনজীবী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়িতে প্রাইভেট কারের ভেতর দুজন নারী-পুরুষের মরদেহ নগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল।
পরে স্থানীয় লোকজনের দেয়া খবরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জানান, এলেনবাড়ি এসএসএফের স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরে প্রাইভেট কারটি দাঁড় করানো ছিল।
মরদেহ দুটি ৫৩ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন ও ৪২ বছর বয়সী মৌসুমী আক্তার রানির।
দেলোয়ার এসএসএফের অফিস সহায়ক এবং মৌসুমীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়।
পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, ‘তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অবস্থা দেখে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, প্রাইভেট কারে তারা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন অথবা উত্তেজক কিছু সেবন করেছিলেন। নারীর ব্যাগে কনডম পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষে মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন:দিনাজপুর সদরে দম্পতির ঝগড়া মীমাংসা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আবদুস সোবহান (৪২) নামের এক ব্যক্তি।
এ ঘটনায় হত্যাকারী নূর মোহাম্মদকে (৬০) আটক করেছে পুলিশ।
সদর উপজেলার আস্করপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর এলাকায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুনের ঘটনা ঘটে। বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে নূর মোহাম্মদকে আটক করা হয়।
খুন হওয়া আবদুস সোবহান আস্করপুর ইউনিয়নের সুন্দরা মাঝাপাড়া এলাকার আমিনুদ্দিন ইসলামের ছেলে। নূর মোহাম্মদ কুড়িগ্রাম জেলার প্রয়াত আবদুল গণির ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নূর মোহাম্মদ সুন্দরা মাঝাপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। এক বছর আগে স্ত্রীকে নিয়ে মুকুন্দপুর গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। নানা বিষয় নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকত তার।
মঙ্গলবার নূর মোহাম্মদের শ্বশুর জয়নাল আবেদীন ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মোতাহারের পাশাপাশি শাহাজান, হামিদুলকে নিয়ে তাদের বিবাদ মীমাংসা করার জন্য। একপর্যায়ে নূর মোহাম্মদকে বাড়ি থেকে ডাকার জন্য সোবহানকে পাঠানো হয়। তিনি বাড়িতে ডাকতে গেলে নূর মোহাম্মদ দা দিয়ে সোবহানের ঘাড়ের ওপর কোপ দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আবদুস সোবহান।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, নুর মোহাম্মদকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে জামায়াতের ইসলামীর ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় বনানী ওয়ারলেস গেট নবাবী রেস্টুরেন্ট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
গোপনে মিটিং করার সময় তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বনানীতে নবাবী রেস্টুরেন্টে মঙ্গলবার রাতে গোপনে বৈঠক করছিলেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ জামাত-শিবিরের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইননানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে ক্রমেই অনিরাপদ অঞ্চল হয়ে উঠছে কক্সবাজারের টেকনাফ। স্থানীয়দের অনেকেই এর মধ্যে ভয়ে এলাকা ছেড়েছে। শিশুরা এখন মাঠে খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিরাও রাত হলে ভয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যান।
গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভাবতে হচ্ছে।
টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গারা গড়ে তুলেছে ‘অপহরণ সংগঠন’। সেখানে চলছে বিদেশি পিস্তল, ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। বাধা দিতে গেলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও গুলি চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তারা। নিয়মিত অভিযানে আটক করেও ঠেকানো যাচ্ছে না অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের। হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, স্বর্ণের চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে ‘অপরাধ রাজ্য’ তৈরি করেছে তারা।
একসময়ের শান্তিপূর্ণ টেকনাফে এখন অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাধারণ রোহিঙ্গারাও অপহরণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। টেকনাফের পাহাড়-জঙ্গলে আস্তানা গড়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ দিলেও আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলে লাশ মাটির গর্তে পুঁতে রাখা হচ্ছে। পরে সেসব কঙ্কাল উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও তাদের দমানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ক্যাম্পে খুন এখন নিয়মিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে একটু মাথাচাড়া বা পরিচিত হয়ে উঠছে, তাকেই খুন করা হচ্ছে।
রোববার অপহরণের শিকার হয়েছে হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ হোসাইন সূর্য। তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা।
স্থানীয় লেদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সূর্য এলাকার সোলতান আহমেদের ছেলে। রোববার স্কুল ছুটির পর অপহরণ করা হয় তাকে।
তার বাবা সোলতান বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা ফোন করে বলছে, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে আমার ছেলেকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি।’
শুক্রবার লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচ রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ না দেয়ায় গত শনিবার রাতে এক যুবকের হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। পরে ওই হাতসহ তাকে ফেরত পাঠায় অভিভাবকের কাছে। মুক্তিপণ না দিলে বাকিদের হত্যা করা হবে বলে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছে অপহরণকারীরা।
এ বিষয়ে হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দমদমিয়া, জাদিমোরা, লেদা, আলীখালী, রঙ্গীখালী, পানখালী, কম্মুনিয়াপাড়া ও মরিচ্চ্যঘোনা এলাকার মানুষ অপহরণ আতঙ্কে ভুগছে। এসব এলাকায় মাদক ব্যবসাও বেড়েছে। অপহরণকারীদের হাত থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুছাত্র পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সদর ইউনিয়নে কয়েকটি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে আস্তানা গড়েছে ১০-১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাদের অপহরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু, ছেলেমেয়ে, স্কুলছাত্র; এমনকি অটোরিকশাচালকরাও। যে কোনো সময় যে কেউ অপহরণের শিকার হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
অনেকে সন্ধ্যার পর সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে দেন না। কেউ কেউ বিশেষ পাহারায় সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন।
অপহরণের ঘটনায় থানায় জিডি ও অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত ২৮ এপ্রিল পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডী উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল, তার দুই বন্ধু ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউসুফ ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার ইমরান। ২৪ মে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার হয়, যারা এখন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে।
টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সাত মাসে টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে আটটি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৫০। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে। একই সময়ে অপহৃত অনেককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা দিনে ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে। জানার চেষ্টা করে কাকে অপহরণ করলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। সেভাবে টার্গেট করে অপহরণের ঘটনা ঘটায়।’
বাহারছড়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. হুমায়ুন বলেন, ‘এই ইউনিয়নে অর্ধলাখের মানুষের বসবাস। অধিকাংশ জেলে ও কৃষক। সবাই অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে দিনেও ঘর থেকে বের হন না।’
এসময় বাহারছড়া ইউনিয়নের এক নারী সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার মো. ইসহাক অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেন হুমায়ুন।
তিনি বলেন, ‘অপহরণে জড়িত থাকায় বর্তমানে কারাগারে ইসহাক। তবে নারী সদস্য এখনও গ্রেপ্তার হননি। বারবার অভিযোগ করার পরও অপহরণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি আমরা।’
বাহাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সঙ্গে অপহরণের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধী কোনো চক্র রয়েছে, যাদের অবস্থান বেশ শক্ত। গত ৫ মাসে তারা বাহারছড়া ইউনিয়নের ১৫-২০ জনকে অপহরণ করেছে।’
অপহরণকারীদের দমনে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের দাবি করেন তিনি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কম্বনিয়াপাড়া মহেশখালিয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, খারাংখালী, সাতঘড়িয়াপাড়া, রইক্ষ্যম এলাকায় অন্তত ৭০০ পরিবার অপহরণ আতঙ্কে ভুগছে। এসব গ্রামের চারজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।’
টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা টাকার লোভে অপহরণ করছে। অপহরণের ঘটনা মাদকের লেনদেনের পিছনেও হচ্ছে। যারা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসছেন, তাদের কেউ থানায় অভিযোগ করছেন না। তাদের অনেকের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
‘একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী এসব অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকও আছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘এসব এলাকার পাহাড়-জঙ্গল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা ও পুলিশের চৌকি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
‘এগুলো বাস্তবায়ন হলে অপহরণের ঘটনা কমে যাবে। পাহাড়ি এলাকার চাষিদের দলবেঁধে কাজে যায়ার কথা বলেছি।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে চার্জার ফ্যান অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় খান ইলেকট্রনিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান পরিচালনা করে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সদর উপজেলার পুরান বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস।
জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘লোডশেডিং ও তাপমাত্রা বেশি থাকার সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী চার্জার ফ্যানের দাম বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ আসে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খান ইলেকট্রনিক্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
এসময় অন্য দোকানদারদের সতর্ক করা হয় বলে জানান তিনি।
এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ উঠে ইমন কাজীর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে তিনি খুন হন। এ মামলায় ওই নারীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া আল-আমিন শেখ শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
সোমবার বরিশালের হিজলা থানার গোবিন্দপুর খন্না এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল-আমিনকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার ওয়ারী বিভাগ।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, গত শনিবার কদমতলীর পশ্চিম মোহাম্মদবাগ সোনা মারিয়া জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে বস্তাবন্দী ইমন কাজীর মরদেহ পাওয়া যায়। পরে ভুক্তভোগীর বাবা কদমতলী থানায় মামলা করেন। মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি ডেমরা জোনাল টিম। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার সঙ্গে জড়িতকে শনাক্ত করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি আরও জানান, ইমন কাজী ও আল-আমিন শেখ পেশায় অটোরিকশাচালক। সেই সুবাদে আল-আমিনের বাড়িতে ইমনের যাতায়াত ছিল। একপর্যায়ে আল-আমিনের স্ত্রীর সঙ্গে ইমন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে। আল-আমিন বিষয়টি জানতে পেরে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইমনকে পাঁচ হাজার টাকা ধার দেয় আল-আমিন। কয়েকদিন পর ধারের টাকার জন্য ইমনকে চাপ দিতে থাকে।
গত ৩০ মে আল-আমিন ভুক্তভোগী ইমনকে কৌশলে তার বাসায় আনেন। সেখানে তাকে কোকের বোতলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘হত্যার পর ইমনের অটোরিকশাটি গেন্ডারিয়ার গঙ্গা শাহ মাজার এলাকায় ফেলে দেয়া হয়। পরদিন সন্ধ্যায় ইমনের মরদেহ বস্তায় ভরে কদমতলীর হেনোলাক্স গলির একটি ডোবায় ফেলে পালিয়ে বরিশালে শ্বশুরবাড়ি চলে যান আল-আমিন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য