প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো সংলাপে বিএনপি যাবে না জানিয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর গুলশানে মঙ্গলবার দুপুরে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব তার দলের অবস্থান ব্যক্ত করেন।
কাতারে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছায়া সরকারের উদাহারণ দিয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে এমন সরকার না থাকার কারণ জানতে চান।
জবাবে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছায়া সরকার কে করবে? যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।
‘বিএনপি তো তার নিজের গঠনতন্ত্র নিজে ভঙ্গ করছে। তাদের গঠনতন্ত্রে আছে যে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না, কিন্তু তারা সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন সেই দলের কাছে কী আশা করবেন?’
ওই বক্তব্যের এক দিন পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমরাও কোনো সংলাপ করব না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না।’
বিদ্যুৎ খাতে ‘অসম’ চুক্তি, ‘দুর্নীতি’, ‘অব্যবস্থাপনা’ ও বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিএনপি। সেই প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আর কোনো গ্রেপ্তার (বিএনপি কর্মীদের) হবে না, পুলিশি হয়রানি হবে না, গায়েবি মামলা হবে না, কিন্তু এর তিন দিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।’
‘যত চুক্তি তত লাভ’
সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা নীতি সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দেশের সমগ্র বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি, লুট ও অব্যবস্থাপনা হয়েছে। এর কুফল এখন সমগ্র দেশবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে। দেশকে একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ারের সাথে সরকারের আরেকটি একপেশে ও দেশের জন্য অত্যাধিক ক্ষতিকর চুক্তি প্রকাশ হলো।’
ফখরুল বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, অযোগ্য কোম্পানিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প প্রদান, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিনা টেন্ডারে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টালগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতে বছরের পর বছর খরচ বাড়ানো হয়েছে। সরকার পরিণাম না ভেবে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রাইভেট সেক্টরেও যৌথ মালিকানার নামে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আনন্দে বিভোর ছিল, এখনও আছে।
‘এখন এক শ্রেণির ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সরকারি কর্তাদের পৌষ মাস। যত চুক্তি তত লাভ। কুইক রেন্টাল ও আইপিপি চুক্তিগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে সরকার-ঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের কৌশলে অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেয়া যায়।’
‘দুই মাসে দাম বেড়েছে তিনবার’
বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের মূল্য আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এ নিয়ে গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১২ বার। এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১১৮ পারসেন্ট বাড়ানো হলো।
‘অপরদিকে সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উসকে দেবে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে, কিন্তু জবাবদিহিহীন এ সরকারের তাতে কিছু যায় আসে না।’
সরকারের ‘অদূরদর্শিতা’ ও ‘দুর্নীতি’ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাকে ভয়াবহ সংকটে নিক্ষেপ করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে দেশের কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিদ্যুৎ বেগে কমছে।
‘দেশের গড় মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই বলেই সরকারের পক্ষে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন সূত্র বলছে, অক্টোবর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমছে। বিদ্যুৎ সচিবও বলছেন, কয়লার দাম কমছে এবং আও কমবে। প্রশ্ন হলো কয়লার কমতি দামের মধ্যেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো কেন? এদিকে রামপাল ও বরগুনার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার দাম বেশি ধরা হচ্ছে মর্মে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা যায়।’
বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ‘অসম চুক্তির’ দায় সরকারের মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব চুক্তি সম্পাদনের আগে দেশের স্বার্থ সুরক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের, কিন্তু সরকার সে গুরু দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই এই ভেবে যে, একটি দেশের সরকার দেশ ও জনগণের এত বড় ক্ষতি কীভাবে করতে পারে!’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এটি কাটিয়ে ওঠা পরবর্তী যেকোনো সরকারের পক্ষেই হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশের স্বার্থ বিনষ্টকারী সব চুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব আইন বাতিল করা হবে, কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’
দলমত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিএনপির চলমান আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বর্তমান সরকারকে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় অবাধ ও গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য দলমত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে চলমান গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কিল-ঘুষিতে এক যুবক মারা গেছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গোলাপবাগের মানিক নগর এলাকায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৮ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ আল সোহানের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার, বাউফল উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তার বাবা বাউফল ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যেয়ে সেখানে জানতে পারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোলাপবাগ মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে কিলঘুষির ঘটনায় সোহান নামে এক যুবক গুরুতর আহত হন। পরে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
‘পরে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তবে কী কারণে তাকে মারধর করা হলো এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
নিহতের চাচতো ভাই সাগর মিয়া বলেন, ‘আমার চাচতো ভাই সোহান গত দুই বছর আগে দোলা আক্তার নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে। বিষয়টি উভয় পরিবারের লোকজন জানতেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্ত্রী দোলাকে নিয়ে তার বাবার গোলাপবাগের ভাড়া বাসায় যান। বাসা থেকে ফেরার সময় বাড়িওয়ালা জামাল মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়, তখন জামাল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে সোহানকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে সোহান অচেতন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, পরে তাকে দ্রুত মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের বিষয়টা বাড়িওয়ালা ও আশেপাশের লোকজন জানতেন না। এ ঘটনায় মধ্যরাতে অভিযুক্ত বাড়িওয়ালা জামালকে আটক করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।’
আরও পড়ুন:স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রেস সচিব অনিকেত রাজেশ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
হেলিকপ্টারে করে সকাল ১০টায় তার মরদেহ নির্বাচনী এলাকা ঝিনাইদহে নেওয়া হবে। সেখানে জানাজার পর আছরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হবে। এ সময় নূরে আলম সিদ্দিকীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হবে। এরপর সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
নূরে আলম সিদ্দিকীকে মুক্তিযুদ্ধের ‘চার খলিফার একজন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মুজিববাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি। তিনি প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ছিলেন।
নূরে আলম সিদ্দিকী ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন।
বিশ্বের ১০টি সর্বাধিক বায়ু দূষণ শহরের মধ্যে নয়টিই দক্ষিণ এশিয়াতে এবং ঢাকা এদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে মোট অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশের জন্যই দায়ী এই বায়ু দূষণ।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব এবং সাশ্রয়ী সমাধান রয়েছে। তবে এর জন্য দেশগুলোর মধ্যে নীতিমালা ও বিনিয়োগের সমন্বয় প্রয়োজন।
‘স্ট্রিভিং ফর ক্লিন এয়ার: এয়ার পল্যুশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার ঢাকায় উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই অঞ্চলের কিছু অতি ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র এলাকার বায়ূকণা যেমন ঝুল এবং ধূলিকণা (পিএম২.৫) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত নিরাপদ মানদণ্ডের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় এই বায়ুদূষণ প্রতি বছর আনুমানিক দুই মিলিয়ন লোকের অকাল মৃত্যু ঘটায়। এর কারণে অর্থনৈতিক ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
‘মারাত্মক বায়ুদূষণের ফলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ দেখা দেয় এবং এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বাড়ায় এবং উৎপাদন ক্ষমতা ও কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেন, ‘বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এমন অনেক নজির রয়েছে যে অঙ্গীকার, সঠিক পদক্ষেপ ও নীতিমালা গৃহীত হলে এই বায়ুদূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব।
‘বাতাসের গুণমান ব্যবস্থাপনা বাড়াতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে এই শক্তিশালী পদক্ষেপের পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত সমাধান এই বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি বড় এয়ারশেড চিহ্নিত করা হয়েছে- যেখানে স্থানিক বাতাসের গুণমানে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বেশি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান- ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিস্তৃত একটি সাধারণ এয়ারশেডের আওতাভুক্ত। প্রতিটি এয়ারশেডের বায়ূকণা বিভিন্ন উৎস ও অবস্থান থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ- ঢাকা, কাঠমান্ডু ও কলম্বোর মতো শহরে শুধু সংশ্লিষ্ট শহরের মধ্যে থেকেই এক-তৃতীয়াংশ বায়ুদূষণ সৃষ্টি হয়। এই বায়ুদূষণের আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই চারটি দেশ ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয় পাদদেশের বাতাসের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে কাঠমাণ্ডু রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয় পরিচালক সিসিল ফ্রুম্যান বলেন, ‘বায়ুদূষণ একটি শহর, রাজ্য বা জাতীয় সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অল্প কিছুসংখ্যক দেশ বাতাসের মান উন্নয়নে নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা অতিজরুরি।’
প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট, বড় কারখানা ও পরিবহনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলমান নীতিগত পদক্ষেপগুলো যদি দক্ষিণ এশিয়াজুড়েও সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলেও শুধু পিএম২.৫ হ্রাসের মতো আংশিক সাফল্য আসবে।
বৃহত্তর অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য খাত বিশেষ করে ছোট উৎপাদন, কৃষি, আবাসিক রান্না এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দিতে হবে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফার্নিচার কারখানায় আগুন লেগে একটি শিশুসহ দুজন দগ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকের এই ঘটনায় দগ্ধদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
কামরাঙ্গীচরে বাসার মিয়া প্রাইমারি স্কুলের পাশেও ফার্নিচার কারখানায় দগ্ধরা হলেন ছয় বছর বয়সী মিম আক্তার ও ৩৩ বছরের জহিরুল ইসলাম।
দগ্ধ জহিরুল ইসলামের সহকর্মী শেখ ফরিদ বলেন, ‘আমাদের ফার্নিচার কারখানার পাশে ওই শিশুটির বাসা । সব সময় আমাদের এখানে আসা-যাওয়া ছিল তার । আমার হাতে ফার্নিচারের বার্নিশ ছিল এবং পাশেই মোমবাতি জ্বালানো ছিল।
‘ওই বাচ্চা আগুনের পাশ দিয়ে দৌড় দিলে তাকে বাঁচাতে গেলে বার্নিশ মোমের উপরে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে দুজনের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে আমরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার এস এম আইউব হোসেন বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুইজনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে মিম নামে ছয় বছরের একটি শিশু রয়েছে। তার শরীরের ২৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জহিরুল ইসলামের চিকিৎসা চলছে তার কত শতাংশ দগ্ধ হয়েছে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৪ মে দিন ধার্য করেছে আদালত।
ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদের আদালতে মঙ্গলবার মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন এ তারিখ নির্ধারণ করেন। এদিন ১৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত।
আসামিরা হলেন, ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি ওরফে শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন ও মহিউদ্দিন।
জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ নামে দুজন আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে হচ্ছে।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।
২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন।
আরও পড়ুন:চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৩ মে দিন ঠিক করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন সাক্ষ্য দিতে সাক্ষী না আসায় আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী এ তারিখ ধার্য করেন।
২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর এ মামলায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
গত বছরের ২০ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদকে রিমান্ড চলাকালীন হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
ওই সময় আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করা হয়। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নোবেল ও ফরহাদ জবানবন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে চিত্রনায়িকা শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে পরিচয় মিলছিল না তার। উদ্ধারের রাতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শিমুর মরদেহ রাখা হয় ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে। সেখানে যাওয়ার পরই শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদকে আটক করে র্যাব। ওই সময় দুজনের কাছ থেকে একটি রক্তমাখা প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। পরে তাদের পুলিশে হস্তান্তর করে র্যাব।
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার একটি বাসায় থাকতেন শিমু। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরদিন কেরানীগঞ্জে খোঁজ মেলে তার মরদেহের।
আরও পড়ুন:গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ ফিরে পেতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে, পরে রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছে দিয়েছে আদালত।
জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের দিন ধার্য করে।
আদালতে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও আইনজীবী এমকে রহমান। আর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন ফকির ও আইনজীবী সানজিদা খানম।
এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আইনি বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গাজীপুরের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
এর আগে ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরশেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য