হিমালয়ের সমতল অঞ্চল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষকেরা এবার বোরো আবাদের পরিবর্তে গম আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। চাষিরা বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কমে যাবার আশংকায় তারা গম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তারা
বলছেন, গম আবাদে সেচ খরচ কম। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে এবার ব্যাপক ফলনও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে এবার গমের দামও ভালো পাবার আশা করছেন তারা।
বিস্তীর্ণ মাঠ, যতদূর চোখ যায় দুলছে গমের শিষ। এরপর চারপাশে চোখ ঘোরালেও একই চিত্র চোখে পড়বে। প্রতি বছর এই জমিগুলোতে বোরোর আবাদ করা হলেও এ বছর চাষিরা চাষ করছেন গম। তারা বলছেন গমের আবাদে খরচ কম। খুব বেশি সেচের প্রয়োজন পড়েনা। গমেরগঞ্জপরে পাট, পাটের পরে তারা আমন আবাদ করবেন। এতে গম আবাদ করলে লাভের পরিমাণটা বেশি। তাই এবার অনেক চাষিই গমের আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
চাষিরা বলছে, গমের ফলনও ব্যাপক আবহাওয়াও অনুকূলে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম ঘরে তুলবেন তারা। তাদের আশা সঠিকভাবে গমের ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণ করবেন সরকার । তবে চাষিদের সহযোগিতা করছেন না কৃষি সম্পধসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও করেছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গধামের ফারুক হোসেন জানান, এবার দুই একর জমিতে গম লাগিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তিনবার সার এবং তিনবার সেচ দিতে হয়েছে। বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম পাব আশা করি।
সদর উপজেলার সীতাগধামের সলেমান আলী বলেন, ‘গমের ফলন এবার ভালো হয়ছে। সরকার যদি ন্যায্যমূল্য দেয়, তবে চাষিরা ভালো লাভবান হবেন। তবে কৃষি অফিস আমাদের খোঁজ নেয়না। তিন বিঘা গমের আবাদ করেছি একদিনও অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। ধনীলোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার বীজ দিয়ে আসে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজউদ্দিন জানান, এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে গম পাঁকা শুরু হয়েছে। আর এক দু সপ্তাহের মধ্যে গম কাটা শুরু হবে। এবার কৃষকরা গম আবাদে লাভবান হবে।
এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। ৮৩ হাজার ৫০০ টন গম উৎপাদনের আশা করছেন বলে জানালেন তিনি।
মেহেরপুরে টানা চার দিন বৃষ্টি শেষে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহওয়ায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া মাঠের ফসল।
জেলায় অনেক ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পানি কমে যাওয়ায় বতর্মানে দেখা মিলেছে জমিতে থাকা ফসলের, যার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
বৃষ্টিতে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উঠতি সবজির।
কৃষকরা জমি থেকে পানি বের করে, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে ফসল রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তেমন একটা সুফল মিলছে না।
মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে নুয়ে পড়েছে ধানক্ষেত, ভেঙে পড়েছে কলা, পেঁপে, করলা, চিচিঙ্গা, শসা, ওল, লাউয়ের গাছ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কাঁচামরিচ, মাসকলাই ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের।
কৃষকদের ভাষ্য, উঠতি বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচের ক্ষেত থেকে পানি নেমে গেলেও রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। এ সবজিগুলো আর ঘরে উত্তোলন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
জমি থেকে পানি বের করে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অধিকাংশ কৃষক। তারপরও চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।
কৃষকরা ফসল বাঁচাতে কতটুকু সফল হবেন, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আবার রয়েছে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা।
জেলা কৃষি বিভাগের প্রাথমিক ধারণা, মেহেরপুর জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে চার হাজার ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাংনী উপজেলার কৃষক মামুন আলী বলেন, ‘আমার চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ ছিল। গাছগুলো থেকে কেবল সপ্তাহখানেক হবে মরিচ সংগ্রহ করা শুরু করেছি। এমন সময় টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গাছের গোড়া সব ডুবে গেছে।
‘আর গত দুই দিন বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে জমির অধিকাংশ গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। এখন যে অবস্থা জমির তিন ভাগ গাছ মরে যাবে।’
আরেক কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছিলাম। সপ্তাহ দেড়েকের মধ্যেই কপি বাজারে তুলতে পারতাম। অথচ টানা বৃষ্টিতে কপির জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সব গাছ নিস্তেজ হয়ে মরতে শুরু করেছে।’
কলাচাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার চাষিদের কাছ থেকে ২০ বিঘা কলার বাগান কেনা আছে। টানা চার দিনের বৃষ্টির সাথে বাতাস থাকায় গাছের গোড়া নরম হয়ে বাতাসে সব গাছ নুয়ে পড়েছে মাটিতে। ফলে এ বছর লোকসানে পড়তে হবে।’
ধানচাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি ধান কেটে জমিতেই সারিবদ্ধ করে রাখছিলাম। জমির অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। এমন সময় শুরু হয় বৃষ্টি, যা চলে টানা চার দিন।
‘জমিতে পানি জমায় সব ধান তলিয়ে যায়। এখন পানি নামলেও ধানের সব গাছ বের হয়ে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুর জেলার উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, দুই-তিন দিন পর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
জমি থেকে পানি বের করে দেয়ার পরামর্শের পাশাপাশি এ সময়ে ক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করার পরামর্শ এ কর্মকর্তার।
এ অঞ্চলের আবহওয়ার তথ্য নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ অঞ্চলে বিগত চার দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩৮ মিলিমিটার, তবে আগামী দুই-এক দিনে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।’
আরও পড়ুন:নানা ধরনের সবজির মধ্যে বিশেষ একটি জায়গা দখল করে আছে ‘কাঁকরোল’। আর ব্যাপকভাবে এই সবজির চাষ হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম গোমড়ায়। গ্রামটিতে বসবাসকারী সবাই বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন, যার মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। তাই গোমড়া গ্রামটি এখন ‘কাঁকরোল গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুর। এখানে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘গোমড়া’। এই গ্রামের চারশ’ একর জমিতে প্রায় ১২শ’ কৃষক কাঁকরোল চাষকে তাদের জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরজমিনে জানা যায়, এই এলাকায় কয়েক বছর আগেও পানি ও বিদুতের অভাবে বহু জমি পতিত ছিলো। এখন এ দুটি সুবিধা পাওয়ায় আর পতিত পড়ে থাকছে না এসব জমি। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে গ্রামের প্রায় সবাই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করছেন।
শরৎ ঋতুর এই সময়টাতে পুরো এলাকার সবজির ক্ষেত কাঁকরোলে ছেয়ে গেছে। যদিও এসব ক্ষেতে গরম ও শীতের আগাম সবজি বেশি আবাদ করেন স্থানীয়রা। এখানকার উৎপাদিত সবজির মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
গোমড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে এই এলাকায় পানির জন্য প্রায় সব জমিই পতিত থাকতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ আসায় পানি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আবাদের আওতায় এসেছে অনেক জমি।
‘আমরা মৌসুমভিত্তিক সবজির আবাদ করে থাকি। আমরা এখন সবজির মধ্যে কাঁকরোল লাগিয়েছি। সবজি আবাদ করে এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’
কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ‘এটা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় আমরা সবজির আবাদই করি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোল লাগাইছি। আমি এবার কাঁকরোল বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হয়েছি। পোলাপানের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পাঁচ সদস্যের সংসার চলছে এই সবজি আবাদ করেই।’
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। আগে কী যে কষ্ট করছি! মানষের জমিতে সারাদিন কাম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাইছি। কোনো কোনোদিন কামও পাইতাম না। এই টাকা নিয়া বাজার করবার গেলে কষ্ট হইছে। এখন বাড়ির পাশে রহমত ভাইয়ের জমিন বাগি (বর্গা) নিয়া শুরু করছি কাঁকরোলের চাষ। এখন আল্লাহর রহমতে নিজেরা ভালা আছি।’
তবে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ রয়েছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট কাঁচা নিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এদিকে কাঁচা রাস্তা হওয়ায় আমরা সবজি বাজারে তুলতে পারি না। নিলেও খরচ অনেক পড়ে যাওয়ায় লাভ কম হয়। সময়মতো বাজারে না নেয়ায় সঠিক দামও পাই না। আমরা কৃষকরা অবহেলিত।’
কৃষক খাইরুল বলেন, ‘এই এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা করলে আমাদের খুব উপকার হবে। আমরা কৃষকরা সবজি আবাদ করে দামটা বেশি পাইতাম। খারাপ রাস্তায় সব গাড়ি সহজে আসবার চায় না। আসলেও ভাড়া বেশি পইড়া যায়। এজন্য লাভটা কম হয়।’
যেভাবে চাষ
কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে, যা দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। মার্চ ও এপ্রিলে এই সবজির চাষ করা হয়। চারা গজানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। কাঁকরোল লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। তাই বাগানে দু’ধরনের গাছ না থাকলে পরাগায়ন ও ফলন কম হয়।
চাষে খরচ ও লাভ কেমন
কৃষকেরা বলছেন, কাঁকরোল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় খরচ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়ে থাকে।
কাঁকরোলের উপকারিতা
কাঁকরোল অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি৷ এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে৷ কাঁকরোলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না; ত্বককে করে উজ্জ্বল। এছাড়া কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার জানান, পাহাড়ের পাদদেশে কাঁকরোলের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। সবজি চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই সবজি কৃষক সরাসরি ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছে। সবজির মান ভালো হওয়ায় কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো।
‘আমি মনে করি অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তা জমি ফেলে না রেখে মৌসুমভিত্তিক সবজি আবাদ করলে অবশ্যই লাভবান হবে। এ বছর এই উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোলের আবাদ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সময়ে তা জানিয়ে দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে সোমবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতক শ্রেণির আগামী ২০ জুলাই অনুষ্ঠেয় ভর্তি পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।’
এর আগে বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম লুৎফুল আহসানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির জুম সভায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ ও সময়সূচি পরবর্তী সময়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলমান থাকায় এ গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভর্তি সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম লুৎফুল আহসান বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। এতে ক্লাস-পরীক্ষা, দাপ্তরিক এবং প্রশাসনিক সকল কাজই বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়।’
এর আগে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছের নেতৃত্ব দিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। এবার ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।
বিগত বছরগুলোতে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এবার নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমোদন পাওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে।
কৃষি গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেনারি ও এনিম্যাল সাইন্স ইউনিভার্সিটি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে। এতে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৭১৮টি। গত বছর আসন সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৪৮টি।
গত বছরের তুলনায় এবার আসন বেড়েছে ১৭০টি।
এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১১৬টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩৫টি, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৯৮টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪৮টি, চট্টগ্রাম ভেটেনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটিতে ২৭০টি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩১টি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০টি এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০টি আসন রয়েছে।
এর আগে ১৭ এপ্রিল কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছিল গত ২২ এপ্রিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ মে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সেটি আরও ৬ দিন বাড়ানো হয়, যা শেষ হয় ৫ জুন।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। এবার কৃষি গুচ্ছে ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।
কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৩ সালের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী (ইংরেজি ১০, প্রাণিবিজ্ঞান ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞান ১৫, পদার্থবিজ্ঞান ২০, রসায়ন ২০ এবং গণিত ২০) ১০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। সারা দেশের মোট আটটি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী, ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ। কেন্দ্রগুলোতে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতে চাল রপ্তানি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে রোববার রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘কৃষি প্রযুক্তি মেলা-২০২৪’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আশার কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘চাল আমদানি নয়, ভবিষ্যতে আমরা চাল রপ্তানি করব।’
তিনি বলেন, ‘বিগত দুই বছর সরকার চাল আমদানি করেনি। এবারও চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না।’
কৃষি প্রণোদনা সরকারের পরিকল্পিত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি প্রণোদনা দিয়ে, ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের পাশে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কৃষিকে প্রযুক্তিবান্ধব করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
‘যে প্রণোদনা আজ বিতরণ করা হচ্ছে সেটা সঠিক ব্যবহার হলে বেশি জমিতে চাষাবাদ হবে আর উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।’
কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলা হচ্ছে, কিন্তু কৃষকের উৎপাদন খরচের খবর কেউ নিচ্ছে না।
‘দাম বাড়লে ভোক্তার সমস্যা আর পণ্যের দাম কমলে কৃষকের সমস্যা। উৎপাদন খরচ না উঠলে কৃষক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন।’
এর আগে মন্ত্রী সাপাহার উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিন দিনব্যাপী কৃষি প্রযুক্তি মেলা উদ্বোধনের পাশাপাশি স্টল পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন।
বাসস জানায়, এআইপি নীতিমালা ২০১৯-এর আলোকে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তার আলোকে ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি পেয়েছিলেন ১৩ জন।
আগামী ৭ জুলাই, রোববার সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান।
স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশবিষয়ক সংগঠক চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।
জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এম এ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।
কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন উন্নত জাতের ফল চাষের জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজবীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফল চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম, মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষি কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষি সিরাজ, বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষি মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।
রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারির জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কে এম সবুজ ও বারোমাসি আমচাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। তারা হলেন জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর পাঁচটি বিভাগে এআইপি সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে এক বছর।
এআইপিরা সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ এবং বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার।
এ ছাড়া নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা পান এআইপিরা।
আরও পড়ুন:পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সুভাষ ছড়াচ্ছে পাকা আনারস। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি সদরসহ চিম্বুক এলাকার প্রতিটি পাহাড়ের ঢালে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস।
আকারে বড়, রসালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে বান্দরবানে উৎপাদিত আনারস। ফলন ভাল ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি জুমিয়ারা।
জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি সদরের চিম্বুক, লাইমিপাড়া, ফারুক পাড়া, শৈলপ্রপাতসহ সব পাহাড়ে এখন একই চিত্র। প্রতিটি পাহাড়ের ঢাল ঢেকে গেছে পাকা আনারসে।
প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা। মে-জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয় প্রতিটি আনারস। আর কাঁধে থুরুং নিয়ে বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী এসব আনারস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। সেই আনারস বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাটবাজার ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
এছাড়াও পাইকারি বিক্রেতারা বাগানে গিয়ে আনারস কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড়ে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ জাতের আনারস আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
শুধু তাই নয়, পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন জুমিয়া চাষীরা।
লাইমিপাড়া এলাকার চাষী পাকসিয়াম বম বলেন, ‘এ বছর আনারসের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। আমাদের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস অন্যান্য জেলার আনারসের চেয়ে অনেক ভালো। খুবই মিষ্টি, রসালো ও আকারে বড় হওয়ায় পাইকাররা বাগানে এসে আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
‘আমাদের বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পর্যটকরাও আসেন। অনেকে এখানে বসেই আনারসের স্বাদ নেন। আবার অনেকে বাড়ির জন্য নিয়ে যান। তবে পাইকারি বিক্রির চেয়ে খুচরা বিক্রি করতে পারলে আমাদের লাভ বেশি হয়।’
ফারুক পাড়া এলাকার আরেক কৃষক সানতোয়াল বম বলেন, ‘এ বছর ছয় একর জায়গায় আনারসের বাগান করেছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
‘অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় আনারস চাষে পরিচর্যা তেমন একটা না করলেও চলে। অনেক সময় একই জমিতে দুবার ফলন পাওয়া যায়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ অঞ্চলে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন আনারস আকারে বড়, রসালো ও খেতে খুবই সুস্বাদু। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত আনারসের চাহিদাও রয়েছে বেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলন বাড়াতে আনারস চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে আনারসসহ মৌসুমি ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এসব পণ্য অনেক সময় কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। তাই যাতে আনারস সংরক্ষণের মাধ্যমে আনারস থেকে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বিগত বছর জেলায় তিন হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৭ হাজার টন আনারস। আর চলতি বছর তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার টন।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে টাঙ্গাইলের প্রমত্তা যমুনা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকদের দুশ্চিন্তা বেড়ে চলছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুই পাড়ের অসংখ্য ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
অপরিপক্ক তিলক্ষেত তলিয়ে গিয়ে এতদিনে গাছ পচে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। ফলে চরাঞ্চলে রোপন করা তিল উঠিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। এছাড়াও ছোট ছোট পাট গাছও তলিয়ে গেছে অনেকের। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা।
অপরদিকে, বালু উত্তোলনের ফলে তীব্র পানির স্রোতে চরাঞ্চলের ফসলি জমিগুলো ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানি কমা শুরু করলে এ ভাঙন আরও তীব্র হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাবসারার কালিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘নদীতে কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের বিভিন্ন নিচু জায়গায় পানিতে ভরে গেছে; তলিয়ে যাচ্ছে তিল পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল।
‘এবার কয়েক বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। পানি আসায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই তুলে ফেলতে হয়েছে। যার কারণে চলতি মৌসুমে তিল চাষে অনেকটা লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’
অর্জুনার জগৎপুরা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন সরকার বলেন, ‘চরাঞ্চলে নতুন পানি প্রবেশ করেছে। তবে, আজ (সোমবার) কিছুটা পানি কমলেও নিচু জমির ফসলগুলো তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে তিল ও ছোট ছোট পাট গাছ বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই অপরিকল্পিত তিল তুলে ফেলছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে তিল ও পাট চাষে লোকসান হবে কৃষকের। এছাড়া অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছি আমরা।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জেলার পোড়াবাড়ী পয়েন্টে যমুনা নদীতে গত দুইদিন পানি বৃদ্ধি পায়নি। বরং ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার থেকে বর্তমানে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীতে পানি কমলেও তলিয়ে যাওয়া তিল গাছ পচে গেছে। তবে, কৃষকদের সঙ্গে উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোখলেছুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে বন্যায় এখন পর্যন্ত ২০ হেক্টর জমির অপরিপক্ক তিল পানিতে তলিয়ে পচে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া পাট চাষ হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ৩২ হেক্টর জমি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য