গড় হিসেবে একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সবমিলিয়ে মোটরসাইকেলে সঠিকভাবে হেলমেট পরেন ৪৭ শতাংশ যাত্রী। তবে নারী ও শিশুদের মধ্যে হেলমেট পরার প্রবণতা খুবই কম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে সোমবার এক কর্মশালায় এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার সময়কালে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭২টি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার (৯২ শতাংশ) ছিল সন্তোষজনক। তবে যাত্রীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ, যেখানে নারী এবং শিশুদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা ছিল খুবই কম।
এতে বলা হয়, চালকদের মধ্যে সিট বেল্ট ব্যবহারের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে গাড়িতে যাতায়াতকারী শিশুদের কাউকেই নিরাপদ শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০ শতাংশ যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় অর্ধেক যানবাহনকে প্রস্তাবিত গতির (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেশি গতিতে চলতে দেখা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার তাবাসসুম আবদুল্লাহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা।
কর্মশালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা (যেমন- জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, জি এইচ এ আই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডব্লিউ আর আই), একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাউন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট থেকে ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ থেকে ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি তার এলাকায় সড়ক এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা বলেন।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল ব্যবহার করার জন্য কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ (লিফট, এক্সেলেটর ইত্যাদি) ৩৬টি নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, পথচারীদের অনিরাপদ রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে সড়ক দ্বীপে বেড়া স্থাপন, বিমানবন্দর সংযোগ সড়কের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ, সড়ক বাতি স্থাপন, ফুটপাত তৈরি, ড্রেন তৈরি, আরসিসি পাইপলাইন নির্মাণ এবং রোড সাইন ও মার্কিং পুরাতন ফুট ওভারব্রিজ মেরামত ও রক্ষণাবক্ষেণ ইত্যাদি।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নেয়া উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আবারও তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
কাউন্সিলের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সহেলা সিদ্দিকা পুনরায় এনবিআরে ‘যুক্তিসংগত সংস্কার’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, কারণ তার নেতৃত্ব সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগেই তাকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ১৯ জুন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বাতিল করে সরকার রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে।
এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআর কর্মকর্তারা নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, শিশুমেলা থেকে এনবিআর কার্যালয় পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সব কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ তালাবদ্ধই থাকবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে আঞ্চলিক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো চালু রাখা এবং কর্মরতদের নিজ নিজ দফতরে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান লঙ্ঘন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয়, হিসাব ও অডিট, সমাজ কল্যাণ, আইন, রাজস্ব, সম্পত্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, যান্ত্রিক, সংস্থাপন, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দফতরে থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং সড়কবাতি সচল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সাবেক সরকারের দোসর বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নগরভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। দেখামাত্র প্রতিহত করা হবে। কোনও কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে নগর ভবনের বেশ কিছু কক্ষে শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা খুললেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ বন্ধই থাকবে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ নিয়োগ দিতে চাইলে সেটিও প্রতিহত করা হবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। শনিবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেরেবাংলা নগর থানার অন্তর্গত শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয় (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), বিডা কার্যালয় (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
ডিএমপি জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী রবিবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
সারা দেশে লঘুচাপের প্রভাবে গত দুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে বাতাসে দূষণের উপস্থিতিও কমে এসেছে অনেকটা। গত দুদিনের মতো আজও ঢাকার বায়ুমান ‘ভালো’র কাছাকাছি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৬৪। এই সূচক ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত, যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকার শ্রেণি থেকে যা অনেক দূরে।
কণা দূষণের একিউআই সূচক যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ফলে আজ সকালে রাজধানী ঢাকার বাতাস দূষণ থেকে দূরে এবং ‘ভালো’র একপ্রকার কাছাকাছি বলা চলে।
এই সময়ে ১৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহর ছিল পাকিস্তানের লাহোর। সূচক ১৫২, ১৩৯, ১৩৭ ও ১৩৫ নিয়ে তারপরই ছিল যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো, ফিলিপাইনের ম্যানিলা এবং কুয়েত সিটি।
এ ছাড়াও ৯৯ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শহর দিল্লি। তবে দূষণের মাত্রা কম থাকায় একই সময়ে ঢাকার অবস্থান ছিল অনেক নিচে; ৫৪ নম্বরে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে ঢাকা। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়। বর্ষার শুরুতেই অবশ্য এই আভাস মিলতে শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মানি এক্সচেঞ্জে ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর আসামিদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরেই অস্ত্রসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চক্রের হোতা মো. জলিল মোল্লা (৫২), মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), মো. সোহাগ হাসান (৩৪) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি মোটরসাইকেল, পিস্তল, গুলি, জাল টাকা ও লুণ্ঠিত টাকা-বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।
পেশাদার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে আসছিল। চক্রটি দীর্ঘদিন মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের ওপর নজরদারি করে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে ওত পেতে থাকা ৭ থেকে ৮ জন মুখোশধারী ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে। তাদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে আরেকজন গুলি ছোড়ে এবং একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ডাকাতরা চারটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় আহত জাহিদুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন। ঘটনার পরপরই ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির একাধিক টিম মাঠে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের চালক জাফরকে (৩৩) গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এ চক্র আগেও ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছিল। গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামিরা।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতি চালাতে এ চক্র আধুনিক প্রযুক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন ছদ্মবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
মন্তব্য