আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়ে গত ৩ মার্চ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পঞ্চগড়ের সহিংসতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দলের সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সোমবার তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পঞ্চগড়ে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিরীহ মানুষের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে তা সরকারের নিষ্ঠুরতার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের নির্বিচার গুলি ও হামলায় শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মানুষের ভোটের অধিকার পুণঃপ্রতিষ্ঠায় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে অবৈধ সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
‘সরকার বুঝে গেছে, তাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তাই নানা নাটক ঘটিয়ে জনগণের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেয়ার কূটকৌশল চালাচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের ভোট ও মত প্রকাশের অধিকার হরণকারী ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নিশিরাতের ভোটের সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। বর্তমানে দেশের মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই, নেই জানমালের নিরাপত্তা।’
তিনি বলেন, ‘যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিচ্ছে সরকার। সাধারণ মানুষের ওপরও গুলি চালাতে কুন্ঠাবোধ করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশে-বিদেশে ফায়দা লুটেছিল। এই ভোটারহীন সরকারও একই কায়দায় ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার নানা ধরনের অপকৌশল চালাচ্ছে।
‘জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসিত মিথ্যাচার, পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, নিপীড়ন, নেত্রকোণায় সাবেক এমপির বাড়িতে পুলিশি হামলা, সাবেক এমপি হারুন অর রশীদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে অশ্রাব্য মিথ্যাচারের ঘটনা সবই একই সূত্রে গাঁথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের মেসেজ পরিষ্কার। নানা কারসাজি করে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে নেয়া যাবে না। বাধা-বিপত্তি, হামলা-মামলা উপেক্ষা করে জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।’
আরও পড়ুন:ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আইনানুগভাবে নিবন্ধনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠকে এমন সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
বৈঠকে কমিটির সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সদস্য বেগম সিমিন হোসেন (রিমি), মুহম্মদ শফিকুর রহমান, মো. মুরাদ হাসান ও খ. মমতা হেনা লাভলী অংশ নেন।
কমিটির ১১তম বৈঠকের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ ও গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে প্রদর্শিত অডিও-ভিডিও প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সংগ্রহ করে সারাদেশে প্রচারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনলাইন/আইপি টেলিভিশন এবং অনলাইন রেডিও নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে কমিটি।
‘The Censorship of Films Act, 1963 (Amended 2006)’ যুগোপযোগী করার জন্য ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণয়নে কার্যক্রম গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের অর্গানোগ্রাম (পদ সৃজন) ফাইলটি দ্রুত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের যারা খারাপ ও কুকর্মে জড়িত তাদের সংগঠন থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘যারা খারাপ তাদের সংশোধন না করে বের করে দাও। যে কমিটি চাঁদাবাজি করে ওই কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই।’
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে কেউ অপকর্ম করলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর তা তুলেও নেয়া হয়। এদের শাস্তি হতে হবে স্থায়ী। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলে দিতে হবে।
‘অনেক দিনের পচা গলিত জিনিস এখনও রয়ে গেছে। এই অংশকে বাদ দিতে হবে। তাতে ছাত্রলীগের কোনো ক্ষতি হবে না। ভালো ছেলেমেয়ে থাকলে আরও অনেক ভালো ছেলেমেয়ে ছাত্রলীগে আকৃষ্ট হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোথাও কোথাও অনেকে লাগামছাড়া হয়ে গেছে। এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। অপকর্মকারী স্মার্ট কর্মীর দরকার নেই। ভালো কাজের স্মার্টনেস দরকার। আবেগের নয় চেতনার সৈনিক হতে হবে।’
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অনেক আশা করে অনেক যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। তোমরা তাকে হতাশ করো না। আমাদের আশার প্রদীপ যেন নিভে না যায়।’
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমি আশা করি অনতিবিলম্বে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে খারাপ ছেলেমেয়েদের আমাদের দরকার নেই। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক আর সিট বাণিজ্যের মানসিকতা যাদের আছে তারা যেই হোক পরিহার করতে হবে। অপকর্মে জড়িত কাউকে নেতা বানানো যাবে না।’
কাদের আরও বলেন, তোমাদের এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হলে ভালো হয়। একবার স্টেজ ভাঙছে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেছে। ভয় পাওয়ার দরকার নেই। স্টেজ ভেঙে আমার দুই পা রক্তাক্ত। তখনও কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে পুনরায় বক্তব্য দিয়েছি। কাউকে বুঝতে দেয়নি যে আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। পাঁচবার আমার ড্রেসিং করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে কেন ঘুরে বেড়াতে হবে? ছাত্রলীগের অফিস কি সভাপতির কার্যালয়ে? ছাত্রলীগের জায়গা ২৩ নম্বর আর মধুর ক্যান্টিনে।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শাওন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে অতিথি এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজিব আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বহিরাগতদের সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। বহিরাগতদের একজন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য দিব্য। তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলে নিয়ে যান হলের শিক্ষার্থীরা। অনিন্দ্য দিব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পূর্বপরিচিত।
বাগবিতণ্ডার ওই ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতারা। তারা দিব্য ও অন্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সজীবের কানে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকেন হাসান মাহমুদ ফরিদ। এতে সজীবের কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
আহত সজীবকে তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বাধা দেন। পরে সজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অতিথি কক্ষে আমাদের পাঁচজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে কানে থাপ্পড় মারতে থাকেন ভাইয়েরা। সজিবের কানে একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। থাপ্পড়ের কারণে তার কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘আমরা হলে প্রতি সপ্তাহে গেস্টরুম করি। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য সেখানে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকালও (মঙ্গলবার) তেমনটিই হয়েছিল।’
তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো মারা হয়নি। তার কানে আগে থেকেই একটু সমস্যা ছিল। ডাক্তার তাকে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। গেস্টরুমে একটু চিৎকার হয়েছিল, তাতেই তার কানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য আমরাই দায়িত্ব নিয়ে মেডিক্যালে পাঠিয়েছিলাম। সে আমাদের ছোট ভাই। তাকে কেন আটকে রাখব?’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ ফরিদ বলেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) রাতে গেস্টরুম হয়েছিল। সেখানে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কাউকে কানে থাপ্পড় দেয়া বা মারা হয়নি। ওই ছেলে গেস্টরুমে অসুস্থ বোধ করছিল। তাই তাকে আমরা তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
অতিথি কক্ষে এ ঘটনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও শাহ পরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার প্রমুখ।
তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘অতিথি কক্ষে নির্যাতন কিংবা মারধর হয়ে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার বাসভবনে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতারা এতে অংশ নেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ এ আরাফাত।
এ সময় দুই পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় ছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাউন্সিলর স্কট ব্রেন্ডন, রাজনৈতিক শাখা প্রধান আর্তুরো হাইনস, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির সুশাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে টিম লিডার মেধাউই গিরি এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা মেথিউ বেহ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করার হুশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। এ প্রসঙ্গে তিনি অনিয়মের কারণে বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
‘ভোটাররা কোনো ধরনের বাধা ছাড়া পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা বর্তমান কমিশন দিচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অনিয়মের কারণে গত বছরের ১২ অক্টোবর ভোটগ্রহণ চলার মধ্যেই গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরায় কেন্দ্রের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান কমিশন। পাশাপাশি ভোটে দায়িত্বরত ১৩৩ জনকে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের একটাই মেসেজ, জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে কোনোরকম বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারবেন। আমরা সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। অনিয়মের কারণে গাইবান্ধার উপনির্বাচনে যেমন ভোট বন্ধ করে দিয়েছি, জাতীয় নির্বাচনেও অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করে দেব।’
চলতি বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। জাতীয় নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনও রয়েছে। সামনে কী হবে তা এখনই বলতে পারব না। তবে আমাদের ইচ্ছা আছে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দাতা সংস্থাগুলোর কোনো সহায়তা কমিশন নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম যদি হয়, আমাদের তো নিতে অসুবিধা নেই। তবে কে কী দেবে বা কিভাবে হবে সেটা আগে দেখতে হবে।’
সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে কী পদক্ষেপ রয়েছে কমিশনের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা বলেন, ‘আস্থার বিষয়টি তো মানসিক। কে কিভাবে আস্থা পাবে, তা তো আমরা বলতে পারব না। তবে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এমন কোনো কাজ করিনি যে কেউ কমিশনকে আস্থায় নেবে না। গাইবান্ধার উপনির্বাচনে আমরা সে প্রমাণ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত হই।’
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বুধবার এক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
দলের সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে লজ্জিত। দেশে এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা নেই। এটি প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের মতো করে বানিয়ে কথা বলছেন।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আওয়ামী লীগ একক ক্ষমতা, একক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পুরনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে।
‘আওয়ামী লীগ সবাইকে ছোট করে দেখাতে পছন্দ করে। দলটি কাউকে সম্মান দিতে জানে না। তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামও তারা মুখে নেয় না।’
গোটা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থেকে সরিয়ে ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রেখেছেন আজ তাদের স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি সৃষ্টি করছে। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা।
‘সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে আওয়ামী লীগ।’
আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘যুবকদের এখন লড়াই করার সময়। ছাত্রলীগের নেত্রীরা এখন গরু চোরের সরদার। ক্ষমতা মাটিতে পড়ে থাকবে, তবু আওয়ামী লীগকে থাকতে দেয়া হবে না।
‘এ লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের লড়াই। গণঅভ্যুত্থান, গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির একটা গঠনতন্ত্র আছে। সেখানে কোথায় আছে যে, ১২ বছর ধরে মহাসচিব থাকা যাবে? মির্জা ফখরুল যে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন, তার নিজেরইতো পদত্যাগ করা উচিত। কারণ বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি নিজেই অবৈধ।’
বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক-কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শাওন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
মন্তব্য