সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির নামে প্রতারণায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সদ্য সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। এস এম আনিস নামে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে উঠে এসেছে গোয়েন্দা তথ্যে।
সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন সে তথ্য এখনও জানা যায়নি। মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
আনিসের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘টাকা নেয়ার তথ্যটি মিথ্যা।’ আনিসের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও আমার কাছে আসতো।’ কী কাজে আসতে জিজ্ঞেস করা হলে কোনো উত্তর দেননি নিতিশ চন্দ্র।
বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সিট সংরক্ষণ করার আবেদন করতেন আনিস। আর এসব মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে বলে দিতেন নিতিশ। এই কাজটি করার জন্য আনিসের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন তিনি।
টাকা লেনদেন বিষয়ে জানতে চাইলে নিতিশ চন্দ্র বলেন, ‘ভর্তি কি হইছে? হয় নাই, তাইলে… এসব মিথ্যে কথা।’
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ জানিয়েছে, আনিস ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়া আরও একজন এই চক্রে কাজ করেন। তার নাম জাহিদ; যিনি দীর্ঘদিন ধরে মেডিক্যালে ভর্তির নামে প্রতারণা করে আসছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
শুক্রবার রাজধানীর মণিপুরিপাড়া থেকে আনিসকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। তার হেফাজত থেকে ২০২৩ সালের চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো অ্যাডমিট কার্ড, পূর্ববর্তী এমবিবিএস পরীক্ষার এডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থীর এডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এএসসি পাস করা আনিস এক সময় জুট মিলে কাজ করতেন। একসময় ফার্মগেট ও গ্রিনরোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি করতেন। এক পর্যায়ে তিনি জড়িয়ে যান মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রতারণায়।
মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশে সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালটেন্সি ফার্মও খুলে বসেন আনিস। আগে থেকে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছিলেন জাহিদ। এই জাহিদের মাধ্যমে আনিসের সঙ্গে সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
আনিসের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন আনিস। আর বেসরকারি মেডিক্যালগুলোতে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মেডিক্যালে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিক্যালের তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব।
অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন কাজে আনিস মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন আনিস। আর মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের জন্য আনিসকে পাসের ব্যবস্থাও করে দিতেন এই অতিরিক্ত সচিব।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসলে আনিসের নেতৃত্বাধীন এই চক্রে একজন সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারের একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।’
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি ও প্রতারণা বাণিজ্য করে আনিস ইতোমধ্যে দুইটি হোটেল এবং মনিপুরিপাড়ায় একটি বিলাসবহুল ফ্লাটের মালিক হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
তারা বলছেন, চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সক্ষমতা তার ছিল না কিন্তু এই পরীক্ষার নামে বিস্তর প্রতারণার জাল তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তার করেছেন।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘এই প্রতারণার সঙ্গে আরো কারা জড়িত আছে, তা আমরা তদন্ত করছি। সম্পৃক্ততা পাওয়া সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বক্তব্য দেন।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাড্ডা থানা এলাকায় রফিকুল নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
শাজাহান খানকে সোমবার কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
পরে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করা হয়। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রীর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজাহারুল ইসলাম জামিন আবেদন নাকচ করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেলের সামনের রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম (৩৭)। ওই সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ২৭ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় রফিকুলের মামা মুহাম্মদ লুৎফর রহমান বাড্ডা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রিমান্ডেও নেওয়া হয় একাধিক মামলায়।
আরও পড়ুন:সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলটি রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার প্রত্যাহারের আবেদন করে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ লিভ টু আপিলটি খারিজের আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও ব্যারিস্টার কামারুন মাহমুদ দীপা।
আজকের এ আদেশের ফলে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচারে বাধা রইল না বলে জানান ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম।
প্রেক্ষাপট
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে (২০) ধর্ষণের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যান। তবে তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব।
আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। তাদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করেন।
একই আদালতে ২০২২ সালের ১১ মে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
একপর্যায়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার চেয়ে বাদী হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের রুলের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক হাইকোর্ট বেঞ্চ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) নিবন্ধিত তালিকা থেকে ২০১৩ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকার নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানি চলাকালে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের এবং বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে কয়েক দশকের পুরোনো সাপ্তাহিকটি প্রকাশে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না।
রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, “২০১৩ সালে ডিএফপির তালিকাভুক্ত গণমাধ্যমের তালিকা থেকে সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকার নাম বাদ দেওয়া হয়। মূলত সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে অন্যায়ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।”
আইনজীবী আরও বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলে ডিএফপির ওই সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
‘রুল শুনানি চলাকালে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। এর ফলে সাপ্তাহিক একতা প্রকাশে বাধা কাটল।’
আরও পড়ুন:‘ধর্ষণকে’ নারী নির্যাতন কিংবা নিপীড়ন বলার পরামর্শ দেওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
ডিএমপি সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি কমিশনারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রসঙ্গে আলোচনাকালে ধর্ষণকে বৃহত্তর পরিসরে নির্যাতন হিসেবে অভিহিত করেছি। আমার বক্তব্যে কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হলে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।’
এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি। এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ।
‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা নারী নির্যাতন বা নিপীড়ন বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’
ডিএমপি কমিশনার ওই বক্তব্যের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষণকারীর পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তার ভাষ্য, ডিএমপি কমিশনার ধর্ষণকারীকে সুরক্ষার উপায় বের করার অপচষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন, যা অগ্রহণযোগ্য। তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত। একই সঙ্গে এটি প্রত্যাহার করা উচিত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করা বা নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ, বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন বলেন ‘ধর্ষণ’ শব্দটা ব্যবহার না করার জন্য, গণমাধ্যম আপনাদেরকে যখন অনুরোধ করে, তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়।”
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন চারজন, যারা হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।
সদর উপজেলার রুহিয়া থানা এলাকার পাটিয়াডাঙ্গী বাজারের খড়িবাড়ি হঠাৎপাড়া গ্রামে রবিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহত চারজন হলেন আবদুল জলিল, তার স্ত্রী পারুল বেগম এবং তাদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইউনুস আলী।
গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিকদের আবদুল জলিল বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাত থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বাড়িতে ভাড়া করা লোক এনে হামলা করা হয়েছিল। আমি তারাবির নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে আমার ছোট ভাইয়ের বউ খুব ডেঞ্জারাস। সে তার ভাইয়ের ছেলে এনে আমার বড় ছেলেকে মারধর করে। রাতে বিষয়টি কুলায়ে উঠতে পারিনি।
‘পরদিন সকালে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার ছোট ভাইয়ের ছেলেকে শাসন করি। লাঠি দিয়ে মারি। এরই মধ্যে আমার আরেক ভাতিজা সাদেকুল ইসলাম ছুরি দিয়ে আমাদের আঘাত করে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাদেকুলের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, ‘ছুরিকাঘাতে চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেছি। তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে।’
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম নাজমুল হুদা বলেন, ‘খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
‘স্থানীয়রা একজনকে আটক করেছে। তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), ঝালকাঠি বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান রসুলের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঝালকাঠি জজ আদালতে রবিবার সকালে হাজির হলে তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম।
ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতিতে হামলা, জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, আইনজীবী শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলাসহ ছয়টি মামলার আসামি আবদুল মান্নান। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে পলাতক ছিলেন আওয়মী লীগের এ নেতা।
চার মামলায় আসামির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আওয়ামী লীগ দলীয় আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই এবং মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন কবীর। আগামী ১৮ মার্চ একই আদালতে আসামির অন্য দুটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক পিপি আবদুল মান্নান রসুলের জামিন নাকচের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘মান্নান রসুল আইনজীবী হয়েও তিনি আইনজীবীদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলা করেছিল। তার পক্ষে আজ যে যে আইনজীবী দাঁড়িয়েছে, তারা নীতি নৈতিকতা হারিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের আইনজীবী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান রসুল ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ঝালকাঠিতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর একক সিদ্ধান্তে ঝালকাঠিতে এ পদে অন্য কেউ আসতে পারেননি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য