জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেও নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের আগামী সাত দিনের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ অফিস আদেশে এ তথ্য জানান।
অফিস আদেশে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, যেসব ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেও নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে অবস্থান করছেন তাদেরকে আগামী সাত দিনের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলো। উক্ত সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘আমরা আবাসিক সংকট সমাধানের জন্য কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে সব শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে সহযোগিতা করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। আসলে নতুন নতুন হল হওয়ার পরেও যদি আসন সংকট থাকে তাহলে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আসন সংকট সমাধানের জন্য কাজ করবেন। এরমধ্যে একটি কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করার জন্য, আরেকটি ছেলেদের আবাসিক হলগুলোর আসন সংকট সমাধানে এবং অন্যটি মেয়েদের হলের সংকট সমাধানে কাজ করবে।’
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে গণরুম সংস্কৃতি উচ্ছেদ করে সব বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শর্ত সাপেক্ষে অবরোধ তুলে নেয় তারা। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ অফিস আদেশ জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং পত্রিকাটির সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শনিবার রাতে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
তাতে বলা হয়, ‘সরকারের দুর্নীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তুলে ধরে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। হামলা-মামলাসহ নানামুখী নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে রুদ্ধ করা হচ্ছে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ বা ক্ষুধার কথাও জনগণ প্রকাশ্যে বলতে পারছে না।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র দেশের জনগণের পক্ষে স্বাধীনভাবে কথা বলবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক নানা আইন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এসব আইনের জেরে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং সাংবাদিক শামসকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা এর সর্বশেষ নজির।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের এহেন পদক্ষেপ দেশে মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ঐতিহ্যবাহী লালনক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সর্বোপরি বিবেকবান মানুষ হিসেবে এটি আমাদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
‘আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং এর প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনের স্বার্থে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর করা ‘মাছ মাংস আর চালের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদনকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা বলে অভিহিত করে এর নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সরকারের প্রতি শিক্ষক সমিতির দাবি, প্রথম আলোসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জিনাত হুদা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম আলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবিলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটিতে মূলত একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। অন্য একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে।’
প্রথম আলো পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থি। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
এতে বলা হয়, ‘এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি বলেছে, ‘এই সংবাদ তাদের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’
প্রথম আলোর নাম উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই সংবাদপত্র ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।’
আরও পড়ুন:সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো হলো- শামসুজ্জামানের নি:শর্তে মুক্তি, শামসুজ্জামান ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনকারী জাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণঅভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের সাংবাদিককে চোরের মত আটক করা হয়। এটি একটি লজ্জার কথা। আমরা যখন পুলিশ, সিআইডির কাছে থেকে জানতে চাই শামস ভাই কোথায় তারা কোন সদুত্তর দিতে পারে না। যদি সে রাষ্ট্রদোহী কোনো অপরাধ করে থাকত তাহলে কেন ওয়ারেন্ট দেখিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি? রোবববারের ভেতর শামস ভাইকে মুক্তি না দিলে আরও কঠোর কর্মসূচি গঠন করা হবে।’
জাবির প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছে। আমরা দ্রুত সেখানে গিয়েছি যাতে তাদের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। রমজানের দিনে মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা নিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে। অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে। আইনসম্মতভাবেই সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে সাভার সার্কেলের পুলিশের এএসপি শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছি। কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেটার দিকেও খেয়াল রাখছি।’
সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের শেকলবন্দি জনতন্ত্র’ প্রতিপাদ্যে পারফর্মিং আর্টস প্রদর্শন করেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদস্বরূপ পারফর্মিং আর্টস প্রদর্শনীর আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রদর্শনীতে দেখা যায়- দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে শেকলবন্দি প্রশাসন, হলুদ গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদসহ দেশের সাধারণ জনগণ। সিন্ডিকেট হাতে হাজার টাকার টাকার নোট দেখিয়ে লেলিয়ে রাখছে স্বায়ত্তশাসিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। টাকার লোভ দেখিয়ে বন্ধ রাখছে দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ হলুদ মিডিয়াকে।
প্রদর্শনীর একপাশে তারুণ্যের প্রতীক হয়ে কেউ কেউ লড়ে যাচ্ছেন দেশের চলমান সব অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। হাত তুলে গর্জে উঠে উচ্চারণ করছেন- ‘এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে উদ্ধার করবে কে? এই দুঃসময়ে দেশকে উদ্ধার করবে কে? দেশের পরাধীন গণমাধ্যমকে উদ্ধার করবে কে? স্বৈরাচারের পতন আনবে কে? এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমাবে কে?’
আর্টস প্রদর্শনীতে মূল ছয়টি চরিত্রে এই অভিনয় সম্পাদিত হয়। এর মধ্যে ‘দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী’ চরিত্রে অভিনয় করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। ‘তরুণ সমাজ’ চরিত্রে অভিনয় করেন আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এম এ সায়েদ। অন্য চরিত্রগুলো হলো- প্রশাসন, হলুদ গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ ও জনসাধারণ।
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সদরঘাট ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চাঁদা না দিলে তাদেরকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এমনটা উল্লেখ করে চাঁদাবাজি ও নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির ও সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান হকার্স ইউনিয়নের নেতারা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সদরঘাট ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে কিংবা খালি জায়গায় হকারি করে শতাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপ এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ পরিচয়ে পর্যায়ক্রমে দু’বার দল বেঁধে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
আরও বলা হয়েছে, কোনো হকার দাবিকৃত অংকের টাকা দিতে অপারগ হলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। চার মাস ধরে চলে আসা এই চাঁদাবাজি ও শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি বহু জায়গায় জানানোর পরও প্রতিকার মেলেনি।
সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে সদরঘাট এলাকায় আমরা একটি প্রোগ্রাম করতে যাই। সেখানে ওই এলাকার ভুক্তভোগী হকাররা আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়কে জানিয়েছি।’
হকার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফিরোজ বলেন, ‘আমরা বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি জমা দিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা ডিএমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠাব। এরপর তিন চারদিন অপেক্ষা করে দেখবো কী পদক্ষেপ নেয়া হয়। সমস্যার সমাধান না হলে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করব।’
চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বলেন, ‘কেউ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তুললে তার দায়ভার তো আমরা নেব না। ক্যাম্পাসের আশপাশে আমাদের কোনো কর্মী চাঁদাবাজি করে না। আর ছাত্রলীগে চাঁদাবাজের কোনো জায়গা নেই।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, ‘একটা অভিযোগ দিয়ে চিঠি দিয়ে দিলেই তো কোনো কিছু প্রমাণ হয়ে যায় না। চাঁদাবাজির কোনো ভিডিও, রেকর্ডিং তো নেই। তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শুধু ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছে। আর তারা আমাদের কারও চাঁদাবাজির প্রমাণ দিতে পারলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে জাকির-কাণ্ডের হুতা এবং গুজববাজ আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই অবরোধ কর্মসূচি চলে।
এ সম্পূর্ণ সময় শাহবাগ মোড়ের আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেককে হেঁটে মোড় পার হয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি হলেও কর্মসূচিতে উপস্থিত প্রায় সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসে তাদের অবরোধ থেকে সরিয়ে নেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক অমি বলেন, ‘১৯৭৪ সালের বাসন্তী-কাণ্ডের মতো জাকির-কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। প্রথম আলোর মতো যারা হলুদ সাংবাদিকতা করে তাদেরকে আমরা বয়কট করতে চাই। আমরা রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই, কেন তারা বার বার এটি করার পরও পার পেয়ে যাচ্ছে? কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।’
অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে প্রশ্ন করলে এক ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, ‘আমরা তো সাধারণ মানুষের ভালোর জন্য এই প্রোগ্রামটা করছি। তাদের যেন পরবর্তীতে ভুয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্যই আমাদের আজকের এই প্রোগ্রাম।
‘আমরা চাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি গণমাধ্যম আমাদের সামনে প্রকাশ করুক। কিন্তু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যদি কোনো গুজব ছড়ানো হয় তাহলে আমরা রুখে দিতে প্রস্তুত।’
অবরোধস্থলে উপস্থিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘এদেশে সাম্রাজ্যবাদের এশীয় দালাল যারা তারা বাসন্তি-কাণ্ডসহ নানা উপায়ে ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে হত্যার পরিবেশ তৈরি করেছে। সবশেষ স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রথম আলোর নিউজের মাধ্যমে আমরা একই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখলাম।
‘দশ টাকায় শিশুকে দিয়ে এ ধরনের মন্তব্য তৈরি করা সাংবাদিকতার নৈতিকতা পরিপন্থী। যারা এটি করেছে প্রথম আলোর সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ছাত্রদের এই দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রথম আলোর সাংবাদিক মো. শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আন্দোলনকারীরা ‘নজরদারি মুক্ত গণমাধ্যম চাই’; ‘সংবাদ প্রকাশ কোন অপরাধ নয়’; ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’; ‘ফ্রি শামস’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মিছিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকতাকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখাচ্ছে এবং সাংবাদিকতা করার কারণে জেলে দেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য