সরকার মিথ্যা ইতিহাস লিখে স্কুলে পাঠদানের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এটা প্রতিহত করতে হবে।
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক মতবিনিয় সভায় তিনি একথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বরিশাল বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মতবিনিময় সভা হয়। সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা।
সভায় উপস্থিত স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানিদের ভয় পাননি। এই কথাগুলো নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই দায়িত্ব আপনারা সচেতনভাবে পালন করবেন।
‘চলমান আন্দোলন কীভাবে সফল করা যায় সে বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতামত দেবেন। আর আপনারা মতামত দেবেন কীভাবে আমরা দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
মতবিনিয় সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
বিএনপিকে নির্বাচনে এসে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচনী খেলায় আওয়ামী লীগ খেলে গোল দিতে চায়। কিন্তু বিএনপি চায় খেলা থেকে পালিয়ে যেতে।’
শনিবার চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও বোয়ালখালী উপজেলার প্রয়াত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল আলম স্মরণে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দয়া করে নির্বাচনের খেলা থেকে পালিয়ে যাবেন না। নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন, ১০ শতাংশ ভোট পান কিনা সেটি পরখ করে দেখুন। আগামী নির্বাচনে আমরা ওয়াকওভার চাই না। আপনারা নির্বাচনী খেলায় আসুন, আমরা খেলে বিজয় লাভ করতে চাই।’
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির এখন দুই ভীতি। একটি হচ্ছে নির্বাচন, আরেকটি হচ্ছে জনগণ। সেজন্য বিএনপি মহাসচিবসহ তাদের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
‘বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিএনপির মাথা আরও বেশি খারাপ হয়েছে। কারণ এখন বিএনপি আর নির্বাচন প্রতিহত এবং বর্জন করার কথা বলতে পারবে না। তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না। বাস্তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে তারাই ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আবার বের হয়ে জনগণের ওপর হামলা পরিচালনা করবে। তারা জানে নির্বাচনে জিতবে না, এখন তারা গণ্ডগোল লাগিয়ে দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করবে। কিন্তু জনগণ তাদেরকে সেই সুযোগ আর দেবে না।’
ড. হাছান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও নূরুল আলমের জীবন নিয়ে আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই। এখন অনেকেই রেডিমেড নেতা হতে চান, টাকা দিয়ে রাজনীতি কিনতে চান।
‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি কখনও টাকার কাছে বিক্রি হয় না, হবে না এবং বিক্রি হতে দেব না। রেডিমেড নেতা হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নয়। সেখানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির পার্থক্য।’
এলাকা নিয়ে প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদের অনেক স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার মধ্যে অন্যতম কালুরঘাট সেতু ইতোমধ্যে নীতিগতভাবে একনেকের প্রাথমিক স্তর অনুমোদিত হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদনও হবে। সড়ক এবং রেল দুটি মিলেই একটি সেতু হবে। এই সেতুর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।’
বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সহ-সভাপতি এস. এম. আবুল কালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া বলেছিলাম। তখন সারা বিশ্বের মতোই আমরা শ্রীলঙ্কা নিয়ে চিন্তিত হয়েছিলাম। এখন তো আমাদের অবস্থাও তাই।’
শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিনের পরিচালনায় সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে। তখন শ্রীলঙ্কা তেল ও কয়লা কিনতে পারেনি, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারেনি। আমদানি করতে পারেনি, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের জিনিসপত্রের দাম হুহু করে বেড়েছিল। ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এখন আমাদের অবস্থাও তাই।
‘বিদ্যুৎ নেই, জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চেয়ে অনেক কম। এখন শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। সবার আয় কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, এটাই শ্রীলঙ্কা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বলে, ঋণ পরিশোধে আমরা ব্যর্থ হইনি। যদি আপনারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হন, তাহলে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস কেন বলে বাংলাদেশে ঋণ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে? বাকিতে মালামাল কিনে সরকার দেশের মানুষের মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা আর আমাদের মধ্যে তফাত হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি, বিক্ষোভ করেনি। কারণ, শ্রীলঙ্কার পুলিশ আন্দোলনকারীদের গুম করেনি, লাঠিচার্জ করেনি এবং গুলিও করেনি। সে দেশের পুলিশ আন্দোলনকারীদের দেশের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে সে দেশের পুলিশ।
‘বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি দুটি কারণে। এক, তারা জানে না যে দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে। দুই, রাস্তায় নামলে তাদের কী হবে তা কেউ জানে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে পুড়ছে। শারীরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। রিজার্ভ নেই তাই বিদেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ডলার তুলতে পারে না। অপরদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, তিন থেকে চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে সমস্যা নাও থাকতে পারে, কিন্তু দেশবাসী বিরাট সমস্যায় পড়েছে। টাকা থাকলে তেল, কয়লা কিনছেন না কেন? সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না কেন? কলকারখানা কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি করতে দিচ্ছেন না কেন? তিন-চার মাসের রিজার্ভ থাকলে এমন অবস্থা হবে কেন?’
‘ঋণনির্ভর বাজেট করার কারণে একদিকে দেশের মানুষকে ট্যাক্সের (করের) ফাঁদে ফেলে শোষণ করা হচ্ছে। অপরদিকে সারা বিশ্ব থেকে ঋণ এনে সেই টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে’, বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা, বিশৃঙ্খলা, হামলায় বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে শুরুতে এ দাবি করলেও দলের নেতাদের মুক্তির দাবিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য শেষ করেছেন জামায়াতের এই নেতা।
শনিবার তিন দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম পরিপূর্ণভাবে শান্তি ও সমাধানের জীবন বিধান। আমরা সেই আলোকেই নিজেদেরকে গড়ে তুলি; সেভাবেই দলকে, কর্মীদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের ডিকশনারিতে নাশকতার কোনো স্থান নেই।’
জামায়াতকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ‘সুশৃঙ্খল আইডোলজি বেইজড’ ইসলামী দল বলে দাবি করেন তিনি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চলবে। সংবিধান প্রয়োজনে সংশোধন হবে। পরিবর্তিত সংবিধানের ভেতর দিয়েই সমস্যার সমাধান করতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন ওনারাই (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) বেশি চান। আমরাও চাই। তাহলে অসুবিধা কোথায়?’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা ক্ষমতায় থেকে কেন নির্বাচন করতে চান? তাহলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো না। আপনারা সরে যান, আমরাও থাকব না। মাঝখানে একটা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) হবে, যেটা নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকার।
‘নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি চান, তাহলে আসুন আমরা সকলে মিলে কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করি। আমার বিশ্বাস তাতে সমস্যার সমাধান হবে।’
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘এবার আমাদের নির্বাচন হবে একমাত্র কেয়ারটেকার, কেয়ারটেকার, কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমেই। সে দাবি আদায় করার জন্য যে আন্দোলন করা দরকার, তা আমরা করব।’
আটক জামায়াত নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের নেতৃবৃন্দকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তাদের মুক্তি চাই না, আমরা চাই মুক্ত করে নিতে। আপনারা যদি সহসা এই অন্যায় থেকে বিরত থেকে নেতাদের মুক্তি দেন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্। নাহলে পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
সমাবেশে জামায়াতের পূর্বঘোষিত ১০ দফা দাবি আবারও উত্থাপন করেন জামায়াত নেতারা।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির নেতৃবৃন্দ ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত।
আরও পড়ুন:বর্তমান সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ও ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ’-এর সমন্বয়ক শেখ ছালাউদ্দিন ছালু এই ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি লক্ষ্য নিয়ে। তা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। জোট সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।’
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। বাংলার মেহনতি মানুষের জন্য এই ভিসা নীতি কোনো কার্যকর প্রভাব ফেলবে না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং অসৎ রাজনীতিবিদরাই এ নিয়ে আতঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘অস্থির ও সংঘাতময় রাজনীতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছে।
‘আমাদেরও প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- এনপিপি’র সিনিয়ার প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল হাই মণ্ডল, মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী, জাগপা সভাপতি ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের সদস্য সচিব এ কে এম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ (বাবলু), এনপিপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আবুল কালাম, আশা সিদ্দিকা, সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট সভাপতি মাওলানা মুফতি মো. শাহাদাৎ হুসাইন।
আরও বক্তব্য দেন ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশর (ডিপিবি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন খান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (বিজিএ) চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলনের সভাপতি খাজা মহিবউল্যাহ শান্তিপুরী, বাংলাদেশ নাগরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শহীদুন্নবী ডাবলু, বাংলাদেশ কনজারভেটিভ পার্টির (বিসিপি) চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান দেশ, ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি-ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস শ্রমিক পার্টির সভাপতি আবুল কালাম জুয়েল, ন্যাশনাল পিপলস ওলামা পার্টির সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ লোকমান সাইফী প্রমুখ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোসহ ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার নগরীর গণকপাড়ায় মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন লাঙ্গল প্রতীকের এই মেয়র প্রার্থী।
এ সময় অন্যদের উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি অধ্যাপক আবুল হোসেন, সদস্য সচিব সামসুদ্দিন রেন্টু এবং মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মিন্টু।
সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির শাসনামলে রাজশাহীবাসী ব্যাপক উন্নয়ন দেখেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী সিটিকে দেশের মধ্যে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তোলা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। নতুন সব স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নগরবাসীর দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট প্রার্থনা করছি।’
নেতার পদবি ঘোষণা নিয়ে হট্টগোল
এদিকে ইশতেহার ঘোষণা শেষে উপস্থিত নেতাদের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় একে অপরের ওপর চড়াও হয়। এই হট্টগোলের মাঝেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী স্বপন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক আবুল হোসেনের পরিচয় তুলে ধরার সময় তাকে পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিচয় দেয়া হয়নি। এ নিয়ে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং অনুষ্ঠানের পরিচালক মহানগর জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মিন্টুর ওপর চড়াও হন। এ সময় সালাউদ্দিন মিন্টু বলে ওঠেন, ‘আপনি যে উপদেষ্টা তার কোনো কাগজ আছে? কাগজ দেখান।’
এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্বপন।
হট্টগোল সম্পর্কে চানতে চাইলে সালাউদ্দিন মিন্টু বলেন, ‘জেলার সভাপতি আবুল হোসেন নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা দাবি করেন। তিন্তু তার কোনো কাগজ নেই। তাহলে তাকে কেন আমরা উপদেষ্টা বলব?
‘অনুষ্ঠানটি আমি উপস্থাপনা করছিলাম। তিনি তার পদবি দাবি করছিলেন। অন্য কিছু না। এখন চিঠি ছাড়া আমরা তো কাউকে উপদেষ্টা বলতে পারি না। এ নিয়েই হট্টগোল।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘ইশতেহার ঘোষণার সময় কিছু হয়নি। ইশতেহার ঘোষণার পর আমাদের জেলা সভাপতির সঙ্গে পইব নিয়ে আমাদের এক কর্মীর গ্যানজাম হয়। যা হয়েছে এটা বড় কিছু না।’
বিএনপি অগ্নি-সন্ত্রাস করতে জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে তাদের আসল মুরব্বি বিএনপি। এর মানে তারা আবারও অগ্নি-সন্ত্রাস ও ভাঙচুরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নিকুঞ্জ খেলার মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম অবান্তর কথা বলে যাচ্ছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা তো তাদের ডাকছি না। তত্ত্বাবধায়ক মানলে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করলে তারা কার সঙ্গে বসবে? তারা বাতাসের সঙ্গে সংলাপ করবে?
‘দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পার্লামেন্টের বিলুপ্তি- বিএনপির মাথা থেকে এই তিন ভূত নামাতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে আওয়ামী লীগ সরকার ভয় পায় না মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। অপকর্ম করলে বিএনপিকে এর মূল্য দিতে হবে।
বিএনপি সমাবেশের নামে পিকনিক পার্টি করে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবার পদযাত্রা করবে। তাদের শরিক হলো ৫২ দল। ভেতরে ভেতরে অনেকেই ভেগে গেছে। এখন কত দলের জগাখিচুড়ি ঐক্য। যে ঐক্যে নেতা নেই, মানুষ নেই- সে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেবে না।
‘আন্দোলনে নেতা লাগে। বিএনপির দুই নেতাই দণ্ডিত। তাদের একজন হাসপাতালে, অন্যজন পালিয়ে লন্ডনে। প্রতিদিন সেখান থেকে অনলাইনে ফরমায়েশ দিচ্ছে। আদালতের রায় না মেনে টেমস নদীর ওপার থেকে ফরমায়েশ পাঠাচ্ছে।’
তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণআন্দোলন চাইলে সৎ সাহস থাকলে আসুন, রাজপথে আসুন, মোকাবিলা হবে- কে হারে, কে জেতে। আমরা মাঠে থাকব, মোকাবিলা করব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে আওয়ামী লীগ ১০ ভাগ ভোটও পাবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তারা বলেছিল- আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না। সে নির্বাচনে তারাই ৩০টি আসন পেয়েছে।’
বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বুকে যদি এতোই বল থাকে তাহলে নির্বাচনে আসেন, খেলা হবে। আসেন খেলার মাঠে। খেলার মাঠে না এসে ফাউল শুরু করেছেন। লাফালাফি বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ খেলার মতো খেলতে নামলে আপনাদের পালানোর পথ থাকবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গত বছরও ডেকেছে সংলাপের জন্য। ভেবেছি ভালো কিছু একটা হবে। দুইবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। তাদের কথা আর কেউ শুনবে না। কারণ অতীতে কথা দিয়ে কথা রাখেনি।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শনিবার দুপুরে এক স্মরণসভায় ওই কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দুইবার পাতানো নির্বাচন হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো আর ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সংসদে ১০ শতাংশ আসনও পাবে না। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।’
মন্তব্য