কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট । একই সঙ্গে হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
বহিষ্কারের আদেশ পাওয়া ছাত্রীরা হলেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা (পরিসংখ্যান বিভাগ, সেশন: ২০১৭-২০১৮), হালিমা আক্তার ঊর্মি (চারুকলা বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), ইসরাত জাহান মিম (আইন বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), তাবাসসুম ইসলাম (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১) ও মুয়াবিয়া জাহান (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১)। তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে।
আদালত আদেশে আরও বলেছে, ভুক্তভোগী ফুলপরীকে তিন দিনের মধ্যে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এ ঘটনায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো.মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
প্রেক্ষাপট
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।
তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ ঘটনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার ছাত্রলীগের তদন্ত প্রতিবেদনেও ফুলপরীকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:শিক্ষার্থীদের সামনেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শার্টের কলার চেপে ধরে কিল-ঘুষি মেরেছেন যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী। বুধবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
লাঞ্ছনার শিকার প্রধান শিক্ষকের নাম রবিউল ইসলাম খান। আর অভিযুক্ত সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবি জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মহিলা প্যানেল মেয়র।
লাঞ্ছনার শিকার প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বলেন, ‘আজ (বুধবার) বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা ছিল।
‘অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলায় সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। তাই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তাদের মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্কও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে আসতেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দিকে নিয়ে যান সামশাদ রানু। একইসঙ্গে আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় পায়ের জুতা খুলেও তিনি আমাকে মারধর করতে যান। অন্য শিক্ষকরা এগিয়ে আসায় তিনি জুতা দিয়ে আমাকে মারতে পারেননি।
‘সামশাদ রানু বিদ্যালয়ে সবার সামনে আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। আকষ্মিক এ ঘটনায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিষয়টি মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি।’
অভিযুক্ত সামশাদ রানু এ বিষয়ে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলেসহ প্রায় ৮শ’ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তীব্র তাপদাহের মধ্যে বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে আমি তাকে শ্রেণিকক্ষের তালা খোলার কথা বলি। ‘তিনি বলেন- এই দায়িত্ব আমার না, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারী সিদ্দীকের। তিনি আমাকে উল্টো বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আপনাকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে।’
রানু বলেন, “প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্যের জবাবে তাকে আমি বললাম, আমি এখানে কোনো নেত্রী হিসেবে না, অভিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে ‘তালা খোল’ বলে কক্ষের তালা খুলিয়েছি। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে।”
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গার ইউএনও রনি আলম নূর বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি তাকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। অভিযোগ পেলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁ ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিনের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণপত্রে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়ের নাম পাওয়া গেছে। সুলতানার হাতে লেখা প্রমাণপত্রগুলো তার স্বজনরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির হাতে তুলে দিয়েছেন।
৪৬ পাতা প্রমাণপত্রের মধ্যে একটি পাতায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি নম্বর, অংকে ও কথায় লেখা ৫০ হাজার টাকা, ০৫/০১/২০২৩ তারিখ (বৃহস্পতিবার) ও এডিসি মিল্টনের নাম লেখা আছে। সবই সুলতানার হাতে লেখা বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন।
সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমূল হক মন্টু জানান, নওগাঁ শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তার ভাগ্নী। সম্প্রতি সেই বাসা থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে গিয়ে আর্থিক লেনদেনের ৪৬ পাতার পত্রগুলো পাওয়া যায়।
পত্রগুলোতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে সাম্প্রতিক সময়ে সুলতানা বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা পাঠানোর কথা লিখে রেখেছিলেন। প্রমাণপত্রগুলো হাইকোর্টের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
৪৬ পাতা প্রমাণপত্রের একটিতে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়ের নাম লেখা আছে। সেই কাগজে একটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর ও ৫০ হাজার টাকা দেনদেনের কথাও উল্লেখ করা আছে।
সুলতানার হাতে লেখা এসব প্রমাণপত্রের সূত্র ধরে অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এনামূল হকের দায়ের করা মামলা ও সুলতানার মৃত্যুর ঘটনার অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে উল্লেখ করেন মন্টু।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু ও তার বিরুদ্ধে এনামূল হকের করা মামলার বিষয়টি তদন্ত করছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি নওগাঁ সার্কিট হাউসে সুলতানার স্বজনদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে কমিটি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, খুঁটিনাটি সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই তদন্ত করছেন তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সুলতানার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণপত্রে নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সুলতানা জেসমিনকে আমি চিনতাম না। তার সঙ্গে আমার পরিবারের কারও কোনো সম্পর্কও ছিলো না।’
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ আদালতের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপার মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গত, র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল চলতি বছরের ২২ মার্চ রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সঙ্গে নিয়েই নওগাঁ পৌরসভার চণ্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। আটক অবস্থায়ই ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান।
আরও পড়ুন:নওগাঁ শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পিত্তথলির পাথর সরাতে গিয়ে ভুল করে নাড়ি কাটায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা।
মারা যাওয়া ৪৮ বছর বয়সী নারীর নাম মিলি বেগম। বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে তার অস্ত্রোপচার করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আবদুল বারী খন্দকার।
স্বজনরা জানান, এক মাস আগে মিলি বেগমের পিত্তথলিতে পাথর আছে বলে জানান চিকিৎসক। সে পাথর অপসারণে বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ২০৩ নম্বর শয্যায় সোমবার বিকেলে ভর্তি হন।
ওই দিন সাড়ে ৫টার দিকে তার অস্ত্রোপচার করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় ভুল করে চিকিৎসক ওই নারীর বেশ কয়েকটি নাড়ি কেটে ফেলেন। এতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক আবদুল বারী খন্দকার পালিয়ে যান।
মিলি বেগমের ছোট ছেলে তায়েব হাসান বলেন, ‘অপারেশনের পর বেডে নেয়ার ৫০ মিনিটের মধ্যে মা মারা যান। ওরা ভুল করে পেটের নাড়ি কেটে মাকে মেরে ফেলেছে।
ভাতিজা আশফাকুর রহমান বলেন, ‘ওই ক্লিনিকে এর আগেও অনেক মানুষকে ভুল অপারেশনে মরতে দেখেছি। এরপরেও ক্লিনিক বন্ধ হচ্ছে না।’
বড় ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাকে দাফনের পর আমরা শোকে কাতর। এটা হত্যাকাণ্ড। ডা. বারী এবং ক্লিনিক মালিক এনামুলের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করব। মোটা অংকের টাকায় সমঝোতার লোভ দেখিয়েছিল। আমার মায়ের মতো আর কোনো মা যেন ভুল অপারেশনে মারা না যান, সে জন্য আমরা লড়াই করে যাব।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল বারী খন্দকার বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে রোগীর সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। অপারেশন শুরুর পর সব প্রক্রিয়া ডিসপ্লেতে দেখানো হয়। এরপর তাকে শয্যায় নেয়া হলে সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। ভুল অপারেশনে মৃত্যুর অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘মিলি বেগমের অপারেশন অভিজ্ঞ সার্জন দিয়েই করানো হয়। সেটা ঠিক না ভুল আমি বলতে পারব না। রোগীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। মৃত্যুর পর সমঝোতার চেষ্টার অভিযোগটি সঠিক নয়।’
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘বলাকা ক্লিনিকে রাতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছিল। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পিকআপে ট্রাকের ধাক্কার ঘটনায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান জানান, বুধবার দুপুরে নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়।
এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেন।
বুধবার ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কুতুবপুর এলাকায় বালুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবহনকারী পিকআপের সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য জানালেও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ জনের মরদেহ পাওয়ার কথা জানায়।
দুপুরে ওই ১৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। হতাহতদের সবাই নির্মাণশ্রমিক।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হিমঘরের পাশে মাটিতে বসে আহাজহারি করছেন নিহত মেহের মিয়ার স্ত্রী চাঁদনী বেগম। তিনি বলেন, ‘সকালে ডিম রান্না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি না খেয়েই চলে যান। এখন আমার বাচ্চাগুলো এতিম হয়ে গেল। আমি টাকা চাই না। বাচ্চাদের বাবাকে চাই।’
আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকটি আমাদের পিকআপে ধাক্কা দিলে উল্টে যায়।’
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিলেটের পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘পিকআপে করে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। তারপরও মহাসড়কে পিকআপে করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা যাতে আর না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।’
আরও পড়ুন:ভারতে পাচারকালে যশোরের শার্শা সীমান্তের রুদ্রপুর থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের ১২টি স্বর্ণ বারসহ দুই পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি।
বুধবার ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের টহল দলের সদস্যরা স্বর্ণবারসহ এই দু’জনকে আটক করেন। তারা হলেন- বেনাপোল বন্দর থানার পুটখালী গ্রামের মিন্টু হালদারের ছেলে দেব হালদার ও শফিকুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর রহমান জানান, সীমান্ত পথে একটি স্বর্ণের চালান ভারতে পাচার হবে এমন সংবাদে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি নজরদারি বাড়ায়।
বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে রুদ্রপুর গ্রামের বিলপাড়া এলাকার মেইন পিলার ২২-এর পাশ দিয়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি সীমান্তের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে আটক করা হয়। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়, যার ওজন এক কেজি ৪০০ গ্রাম। উদ্ধার এই স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
আটক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে স্বর্ণপাচার আইনে মামলা হবে বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা।
প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের বিয়ে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয়।
রায়ের ফলে আঞ্জু কাপুরকে উইল করা বাড়িটি তার অধীনে থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
আদালতে জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, উইলকৃত সেই বাড়িতে বসবাসকারী জগলুল ওয়াহিদের মেয়েরা মুসলিম আইন অনুযায়ী তাদের সম্পত্তির অধিকার পাবেন।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা জেনেছি আঞ্জু কাপুর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গৃহকর্তা জগলুল ওয়াহিদের মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত আদেশ দেয়।
আদেশের পর দুই নারীকে তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২-এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফায় হাইকোর্টে শুনানি হয় এবং হাইকোর্ট রুল জারি করে। একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক ও হিন্দু নারী আঞ্জু কাপুরের সঙ্গে জগলুল ওয়াহিদের বিয়ে ও বাড়ি উইল করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চারজন সিনিয়র আইনজীবীর (অ্যামিকাস কিউরি) অভিমত শোনে হাইকোর্ট। অবশেষে আইনজীবীদের অভিমত বিবেচনায় নিয়ে এবং এর আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আজ রায় দিল উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন:মানহানির অভিযোগে দৈনিক পত্রিকা ডেইলি স্টারের কাছে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি বুধবার জানান তাপসের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
তিনি জানান, গত ৫ জুন রেজিস্ট্রি ডাকে ওই নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশটি ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও লেখক নাজিবা বাশারকে পাঠানো হয়।
নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে থাকা প্রতিবেদন অপসারণ এবং সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘ডেইলি স্টারের পত্রিকা এবং অনলাইন ভার্সনে প্রতিবেদন বা কলাম প্রকাশ করা হয়। কলামের লেখা ছিল ‘বাতাস প্রবাহের জন্য গাছ কর্তন’, আরেকটি টাইটেল ছিল যেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নামকে বিকৃত করে লেখা হয় ‘ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন পরিবেশবাদীর চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে’। শুধু তাই নয় মেয়র তাপসের নাম বিকৃত করে লেখা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। এ ধরণের বক্তব্য আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি আইন অনুযায়ী মানহানির পর্যায়ে পড়ে। প্রতিবেদন দেখে মেয়র তাপস আমাকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।’
সাত দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ না নিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওই আইনজীবী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য