ফেসবুকে ঘুরছেন কথাসাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম নক্ষত্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রীও। আধুনিক ও রুচিশীল পোশাকে যেন এক তারুণ্য ধরা দিয়েছে এই দম্পতির চোখে-মুখে।
গত কয়েকদিন ধরে ওয়ালীউল্লাহ ও তার স্ত্রী আন মারির তিনটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ছবি শেয়ার করে লেখকের প্রতি ভালোলাগা ও পোশাক নিয়ে তার আধুনিকতার প্রশংসা করছেন অনেকে।
তিনটি ছবি কোলাজ করে বানানো হয়েছে একটি ছবি। এর একটিতে চেয়ারে বসে আছেন লেখক। শার্ট-প্যান্টে ইন, পায়ে জুতা, বাঁম হাতে ঘড়ি আর পকেটে সানগ্লাস তার; চুল আঁচড়ানো পরিপাটি করে।
আরেক ছবিতে সাদা শার্ট আর প্যান্ট পরে ইন করে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছেন হ্যান্ডসাম ওয়ালীউল্লাহ। অন্য ছবিটাতে তাকে টাই পরে মাথায় ছাতা ধরে স্ত্রীকে এক হাতে জড়িয়ে ধরতে দেখা যাচ্ছে।
একাধিক ওয়েবসাইটে এ ছবিগুলোর খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে ঠিক এগুলো কোন সময়ের তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।
খোঁজ করে দেখা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন এই ছবি শেয়ার করেন বইপড়া সংক্রান্ত এক ফেসবুক গ্রুপে। ওই ছবির সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, চল্লিশ দশকের লেখক। লালসালু, বহ্নিপীর, চাঁদের অমাবস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো-এর জনক। ওয়ালীউল্লাহকে আপনি এমনিতে না চিনলেও পাঠ্যপুস্তকে লালসালুর নাম শোনেননি এমন হবে না। বিসিএস দিতে যান, তার লেখা প্রতিটা রচনা বিসিএসের পাঠ্য।’
পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘কি অসম্ভব রকম স্মার্ট ছিলেন এই মানুষটি দেখুন একটু। ওনার বেশিরভাগ উপন্যাস গ্রাম্য পটভূমিতে নাহয় মনস্তাত্ত্বিক। বিয়েও করেছিলেন একজন বিদেশিনীকে। সৃষ্টিকর্ম নিয়েই যার একগাদা কথা বলা যায়, সৃষ্টিকর্ম বাদেও সেই যুগে এমন হ্যান্ডসাম, স্মার্ট আর স্বাধীনচেতা মন মানসিকতার লেখক কল্পনা করা যায়?’
এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে ওয়ালীউল্লাহ ও তার স্ত্রীর ওই ছবি ও তাদের নিয়ে লেখাটি। অনেকেই সঙ্গে দু-এক লাইন যোগ করে নিজের ওয়ালে শেয়ার করছেন এই পোস্ট।লিখছেন তাদের ভালো লাগার কথা।
চিত্রনায়িকা জাহার মিতু পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, “প্রেমে পড়ে গেলাম।” সাংবাদিক ফারাহ জাবিন শাম্মী লিখেছেন, ‘ভাইরে আগে যদি জানতাম এই লেখক এমন হ্যান্ডসাম তাহলে আরও একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সারাজীবন ভেবে এসছি লাল সালুর লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পাঞ্জাবি পরা পাকা দাড়ির একজন বয়স্ক মানুষ।’
ব্যাংক কর্মকর্তা তাশফিয়া তাসনিম তিশা পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন,‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।’ আরেকজন ভাইরাল পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ভাবা যায়? উনি বিখ্যাত লালসালু উপন্যাসের লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ! সারা জীবন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের খোঁচা খোঁচা কাঁচা পাকা দাড়িগোঁফ!!খাদি পান্জাবি পরা কি চেহেরা মনে মনে ভাবলাম! আর আজ কি দেখলাম!’
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ জন্মেছিলেন চট্টগ্রামের ষোলশহরে, ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট। বাবা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা নাসিম আরা খাতুনও ছিলেন সমতুল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে উঠে আসা।
পূর্ববাংলা ও বাংলাদেশের সাহিত্যে পথ দেখিয়েছেন এই লেখক, গড়ে তুলেছেন স্বতন্ত্র এক ভাষারীতি। ধর্মীয় গোঁড়ামি, ভন্ডামি, কুসংস্কারকে ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি তার লেখায়। তার হাতে জন্ম নিয়েছে লালসালু, কাঁদো নদী কাঁদো, চাঁদের অমাবস্যার মতো উপন্যাস, নয়নচারা, দুই তীর ও অন্যান্য গল্প এর মতো গল্পগ্রন্থ কিংবা বহিপীর-এর মতো নাটকের।
বলা হয়ে থাকে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পাঠককে প্রভাবিত করেছিলেন তো বটেই, তার সাহিত্য দিয়েই প্রভাবিত করেছেন অসংখ্য সাহিত্যিককেও। অনেকে তাকে বলে থাকেন বাংলাদেশের সাহিত্য চর্চার ইন্সটিটিউট।
ছাত্র অবস্থাতেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কর্মজীবন শুরু হয় স্টেটসম্যান পত্রিকায়। সরকারি চাকরি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বদলি হন ১৯৫২-র শেষের দিকে। সিডনিতেই পরিচয় হয় ফরাসি আন্-মারি লুই রোজিতা মার্সেল তিবোর সঙ্গে। দেড়-দু বছরের সখ্যতা ও ঘনিষ্ঠতার পর ১৯৫৫ সালের ৩ অক্টোবর বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর মারির নতুন নাম হয় আজজা মোসাম্মত নাসরিন।
আরও পড়ুন:আগামী বছর অমর একুশে বইমেলা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সচিবালয়ে বুধবার গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ফারুকী বলেন, ‘আমরা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের সচিব আলোচনা করেছেন। বইমেলা আগের স্থানেই হবে। এ নিয়ে তিনটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাইরে থেকে মনে করতাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘুমিয়ে থাকে। এসে দেখছি অনেক কাজ করার সুযোগ আছে।’
এর আগে ৬ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেয়া হয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই আয়োজন করতে হবে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এ চিঠি প্রদানের পর আগামী বইমেলার স্থান ঠিক কোথায় হবে এ নিয়ে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ন পাঠক-প্রকাশকরা।
শুরু থেকেই বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হয়ে এলেও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এর পরিসর বেড়ে যাওয়ার জন্য ২০১৪ সাল থেকে বিপরীত পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। তারপর থেকে গত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমির পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও ব্যাপক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বইমেলা।
এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর জন্য আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ পাইনি, তবে আমরা চেষ্টা করব যেন সেখানেই বইমেলার আয়োজন করা যায়। কেননা গত এক দশক ধরে সেখানে বইমেলা করায় এখন সবার মনে একটি জনআকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে।’
আরও পড়ুন:প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ২-১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব-২০২৪’ আয়োজন করেছে।
যৌথভাবে শনিবার বেলা ১১টার দিকে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ ও তরুণ অনুবাদক মাহীন হক।
স্বাগত বক্তব্যে ঐতিহ্যর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ‘ঐতিহ্য দুই যুগ যাবৎ প্রকাশনা ক্ষেত্রে ধ্রুপদিয়ানা ও নতুনত্বের সমন্বয় সাধনের কাজ করে চলেছে। এবারের একক বই উৎসব লেখক-পাঠক-প্রকাশকের সংযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ করবে।’
তরুণ অনুবাদক মাহীন হক বলেন, ‘ঐতিহ্য প্রকাশনা জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে চলেছে। প্রবীণ ও নবীনের সৃজনশীল অভিযাত্রাকে ঐতিহ্য ধারণ করছে সাহসিকতার সঙ্গে।’
বিশিষ্ট গবেষক শারমিন আহমদ বলেন, ‘ঐতিহ্য প্রতিকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সত্য ইতিহাসের একের পর এক বই প্রকাশ করেছে। একজন প্রকৃত প্রকাশকের বৈশিষ্ট্য এমনই হওয়া উচিত।’
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঐতিহ্য আমার প্রকাশক, আমাদের প্রকাশক। ঐতিহ্য শুধু মুনাফার দিকে খেয়াল রাখেনি, প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বইয়ের ভবিষ্যৎ মানুষের ভবিষ্যতের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ। মুনাফাবাদী বিশ্বব্যবস্থা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে, স্বার্থপরে পরিণত করছে। মানুষ বই পড়ায় আগ্রহী না হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে।
‘এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাংলাদেশের মানুষ এবং সারা বিশ্বের মানুষকে বইয়ের অন্তর্গত মানবিক বাণী ধারণ করেই বেঁচে থাকার ও সুষম পৃথিবী গড়ার লড়াই করতে হবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যর ২৪ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত ২৪টি বাংলা ক্ল্যাসিক বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এরপর ফিতা কেটে ১০ দিনব্যাপী ঐতিহ্য বই উৎসব উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শারমিন আহমদ ও মাহীন হক।
ঐতিহ্য বই উৎসব চলবে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
উৎসবে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে পাঠক ঐতিহ্য প্রকাশিত দুই সহস্রাধিক বই থেকে তার পছন্দেরটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক ও বরেণ্য গবেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’-এর ধারা ৬(১), ধারা ৬(২) ও ধারা ৬(৩) অনুযায়ী এ নিয়োগ দিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিন বছরের জন্য তিনি এ নিয়োগ পেয়েছেন।
কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সভাপতির দায়িত্ব এবং অন্যান্য কার্যাবলি ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সম্প্রতি বাংলা একাডেমির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:সাহিত্যে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং।
সুইডেনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা একটা (বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক হ্যান্স এলেগ্রেন ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হানকে পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, তার ঐকান্তিক কাব্যিক গদ্য ঐতিহাসিক মর্মাঘাত সামনে নিয়ে আসে। এগুলো মানবজীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে।
হান ক্যাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিউল চলে আসেন।
সাহিত্যিক বেষ্টিত পরিবেশে জন্ম নেন হান। তার বাবাও নামী ঔপন্যাসিক।
আরও পড়ুন:সাম্যবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার।
তরুণ এ বিপ্লবী কবি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারণ ভট্টাচার্য ও মা সুনীতি দেবী।
‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘অভিযান’, ‘হরতাল’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তার রচিত কাব্যগুলো এখনও বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও কবির পূর্বপুরুষের নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে। বর্তমানে কবির পিতৃভিটায় তার নামে সরকারিভাবে একটি অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি করা হয়েছে। কবির পৈতৃক বাড়ি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।
এ ছাড়াও প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কবির পূর্বপুরুষের ভিটায় পাঁচ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবিপ্রেমীরা অংশ নেন, তবে কবির জন্ম ও মৃত্যুর দিনে এ উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।
কবি মিন্টু রায় বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। কবির স্মরণে প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কোটালীপাড়ায় সুকান্ত মেলা হয়।
‘বছরে একটি মেলার আয়োজন করে কবি সুকান্তকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি চাইব জাতীয়ভাবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যেন পালন করা হয়।’
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কর্মকার বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির জন্ম ও মৃত্যুদিনে তার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকি। এ বছর দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন রয়েছে। তাই কয়েক দিন পরে আমরা কবির জন্মদিন পালন করব।’
কবি সুকান্ত সেবা সংঘের সভাপতি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘সুকান্তের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য মাদারীপুরে চাকরি করতেন। দেশ বিভক্তের আগেই তিনি কোটালীপাড়ার পৈতৃক ভিটা ফেলে রেখে কলকাতা চলে যান। পরে আমরা মামলা করে কবির পৈতৃক ভিটামাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করি।
‘কবির স্মৃতি ধরে রাখতে কবির পৈতৃক ভিটায় অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি নির্মাণ করেছে সরকার। এখানে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। আগামী প্রজন্মের কাছে কবির বিপ্লবী চেতনাকে তুলে ধরতে হবে। তা হলেই নতুন প্রজন্ম কবির জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে।’
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ১৩ মে ২১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন:বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগের ২৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ আসকারী। গত ১৮ জুলাই বাংলা বাংলা একাডেমিতে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি।
শনিবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের উপ-পরিচালক নার্গিস সানজিদা সুলতানা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হন। আর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৪ জুলাই।
একুশে পদক ও বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়া কবি অসীম সাহা মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
জানা গেছে, কবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত কবি বিষণ্নতায়ও ভুগছিলেন। নিজে থেকে কোনোকিছু খেতে পারতেন না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মাসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কবি অসীম সাহা ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলায়।
অসীম সাহার বাবা অখিলবন্ধু সাহা ছিলেন একজন অধ্যাপক। কবি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৬৯ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কবি অসীম সাহার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘পূর্ব পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’, ‘কালো পালকের নিচে’, ‘পুনরুদ্ধার’, ‘উদ্বাস্তু’, ‘মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি’ ‘অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব’, ‘মুহূর্তের কবিতা’ ও ‘ম-বর্ণের শোভিত মুকুট’।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
এছাড়াও কবি অসীম সাহা আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩) ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ (২০১২) আরও বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন।
মন্তব্য