আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে না আসবে, কিন্তু নির্বাচনে বাধা দিতে এলে খবর আছে। তাদেরকে দেখিয়ে দেয়া হবে- কত ধানে কত চাল।
রোববার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে আপনারা না এলে আমরা জোর করে আনতে যাব না। তবে যদি মনে করেন যে নির্বাচন হতে দেবেন না, তাহলে আমরা দেখিয়ে দেব কত ধানে কত চাল।
‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালে আপনারা বয়কট করেছেন। তাই বলে কি নির্বাচন হয়নি? কী দিয়ে নির্বাচন প্রতিরোধ করবেন? আগুন সন্ত্রাস? যে হাতে আগুন নিয়ে আসবেন সেই হাত আমরা পুড়িয়ে দেব। ভোট কেন্দ্র ভাঙতে এলে সেই হাত ভেঙে দেব।’
নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে শাসক দলের দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘ওদের মতিগতি খারাপ। এজন্য উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করেছে। তাদের আন্দোলনের গতি যত কমছে অভিযোগ তত বাড়ছে।
‘পাবলিক নেই, নেতাকর্মীও কমছে। ফখরুল সাহেব যাদেরকে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যে স্বপ্ন দেখিয়ে হাঁড়ি-পাতিল-কম্বল নিয়ে সভা-সমাবেশস্থলে ৭ দিন আগে থেকে হাজির। কেউ লাল কার্ড, কেউ হলুদ কার্ড দেখায়। কেউ বলে ১০ তারিখে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়, কেউ বলে ১১ তারিখে এয়ারপোর্টে ছুটে যেতে। সেদিন নাকি বিদেশে পালিয়ে যাওয়া তারেক রহমান ফিরে আসবে। এ দেশে হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়া কঠিন।’
বিএনপি আন্দোলন এখন খরার কবলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি অসুস্থ হয়ে অচিরেই হাসপাতালে যাবে। আর নির্বাচনে না গেলে আইসিইউতে যাবে। মির্জা ফখরুল আবার লাফাতে শুরু করেছেন। জনগণ নেই, ঢাল-তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরকার।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার ঈঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশি-বিদেশি যত চাপই আসুক না কেন, ওই চাপের কাছে বাঙালি মাথা নত করে না। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষিত করব। আমরাই আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। এই গণতন্ত্রিক অধিকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। মানুষ ভোটাধিকার পেয়েছে। আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকারের সুরক্ষা দেবে। মানুষ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কখনও পরাজিত হয় না। কেউ ভোটাধিকার কেড়ে নিলে জনগণ ছেড়ে দেয় না, খালেদা জিয়া তার প্রমাণ।’
বিএনপি শুধু ভোট চোর নয়, ভোট ডাকাত বলে এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতা দিতে পারে একমাত্র এদেশের জনগণ। জনগণের এই অধিকার, সচেতনতা আমরা দিতে পেরেছি, এটা এ দেশের মানুষ জানে।’
বিএনপিকে কেউ নাগরদোলায় বসিয়ে ক্ষমতা দিয়ে যাবে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতায় তারা বিশ্বাস রাখে না। তারা মনে করে অন্য কোথাও থেকে এসে নাগরদোলায় চাপিয়ে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসাবে। কেউ দেবে না; দেয় না। ব্যবহার করে; ব্যবহার করবে; কিন্তু, দেবে না ক্ষমতা।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেয় তখন আমি একটা কথা বলেছিলাম, আল্লাহতালা জন বুঝে ধন দেয়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে গ্যাস একটুও পাবে না, দিতেও পারবে না। সত্যিই কিন্তু দিতে পারে নাই। যে ক’টা কূপ খনন করছে, সবগুলো শুকনা। কোনো গ্যাস পায়নি, যারা কিনতে চেয়েছিল তারাও নিতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করতে চাইলে করুক। আমরা কিছু বলব না। তবে আমাদের নজর রাখতে হবে, তারা অগ্নি সন্ত্রাস করেছে কিনা, মানুষকে পুড়িয়ে, হাত পা কেটেছে কিনা। সেটা যেন করতে না পারে। নিজের চোখ-ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও করে অগ্নি সন্ত্রাস করলে বিএনপি মার্কিন ভিসা পাবে না।’
বাজেট বাস্তবায়ন
বাজেট প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী আছেন, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। বুদ্ধিজীবী। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি, তারা এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে বক্তৃতা দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নেন।
‘প্রাইভেট টেলিভিশনও আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। সেই টেলিভিশনের টক শোতে এসে আলোচনা করে- এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনোদিনও কার্যকর করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, করতে পারব সেটা বুঝে-শুনেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমরা যা দিয়েছি আমরা তা করতে পারব।’
দুই দিনের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুতের কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছে সরকার। দুই দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ১০-১৫ দিনের মধ্যে (বিদ্যুৎ) পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অতিরিক্ত গরমে মানুষের কষ্ট বুঝতে পারছি আমরা। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।
‘দুর্ভাগ্য আমাদের। এক গেল করোনাভাইরাসের তিনটা বছর। সবকিছু চলাচল বন্ধ। অর্থনীতি একেবারে স্থবির। উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি। এরপরও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন। সবকিছুর দাম এত বেড়ে গেছে যে, পণ্য ক্রয় ও পরিবহন দুদিকেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
এসময় খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে পারব। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র গার্মেন্টসের ওপর নির্ভর করে থাকব না। আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এই ডিজিটাল ডিভাইস, আমরা এগুলো তৈরি করব। ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগ আসছে। একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি, সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আসছে। আইসিটি, ডিজিটাল ডিভাইস- এগুলো উত্পাদন করে আমরা রপ্তানি করব।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাহজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ।
আরও পড়ুন:জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। তারা তাদের মতামত প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক।
‘কিন্তু, জামায়াত বর্তমানে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত নয়। তাই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ডিএমপি কমিশনার।’
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা ভাঙচুরের সম্ভাবনার মতো বিষয়গুলো ডিএমপি কমিশনারকে বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের আলোচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
রাষ্ট্রদূতরা কূটনৈতিক প্রোটোকল মেনে চলবেন এবং তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে গণবিরোধী ও বাস্তবায়ন অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই বাজেট সরকারের দুর্নীতির ধারাবাহিকতার ঘোষণাপত্র। এটি স্রেফ দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থ লুটেরাদের বাজেট।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এমন বক্তব্য তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে যাওয়া, বেপরোয়া অর্থপাচার, জনগণের কাঁধে রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা একবারের জন্যও স্বীকার করা হয়নি। পরিত্রাণের উপায়ও বলা হয়নি। তেমনিভাবে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের ধারণাকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাজেট পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং উন্নয়ন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এই অর্থের সংস্থান হবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আয় থেকে। আর ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা আসবে ঋণ থেকে।
‘রাজস্ব আয়ের ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ পরোক্ষ কর (ভ্যাট) এবং ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর। এরই সঙ্গে সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রত্যাশা করছে। এই বাজেট জনকল্যাণের নয়। এটি বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোক দেখানো বাজেট।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা অর্জনযোগ্য নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও তা কীভাবে অর্জন হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেটে নেই।
‘চলতি অর্থবছরেও ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সংশোধনী বাজেটে তা পরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবারও এই প্রবৃদ্ধির টার্গেট অর্জন সম্ভব হবে না। কেননা অর্থনীতি এমনিতেই চাপে আছে।’
মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
‘অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বাস্তবে এই মূল্যস্ফীতি ১৮ থেকে ২০ শতাংশের উপরে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন এবং খাদ্যের পাশাপাশি তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’
‘দেশের অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ে’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ে রয়েছে। ডলারের সংকট প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে প্রায় সব ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। আইএমএফের হিসাব বলছে, প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।’
ফখরুল বলেন, ‘২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। পুনঃতফসিলকৃত ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আর গত ৩ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। দেশে এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।’
তিনি বলেন, ‘গত ৬ বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে নেয়া কঠিন শর্তের ঋণ শোধ করা শুরু হলে ২০২৪ সাল থেকেই বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
‘মধ্যবিত্তের ওপর জুলুম চলছে’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘করযোগ্য আয় না থাকা মানুষেরও ৪৪ ধরনের সেবা নিতে কর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা মধ্যবিত্তের ওপর জুলুম। প্রশ্ন হলো, যার আয় কম তিনি কি ওইসব রাষ্ট্রীয় সেবা পাবেন না?
‘একদিকে ন্যূনতম আয়কর সীমা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রস্তাব করেছে, অপরদিকে আয় না থাকলেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা সাংঘর্ষিক, ন্যায়নীতি বর্জিত এবং আয়ের ওপর করনীতির পরিপন্থি।’
পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো আশার আলো নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেয়ার বাজারে সর্বস্বান্ত হাজার হাজার মানুষের আহাজারি সরকারের কানে পৌঁছায় না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে শেয়ার বাজারের সংকট দূর হবে বলে কেউ বিশ্বাসও করে না। শেয়ার বাজার বিপর্যয়ের ওপরে গঠিত তদন্ত রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি।’
‘সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে এবার সরকার স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। তারা চুরিতে স্মার্ট। ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থপাচার- এসব কিছুতেই। স্মার্টলি লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, জনগণের সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছে এই বাজেটে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দেশের প্রধান জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে সরকারের জাবাবদিহিতা থাকে না। দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধমূলক নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ।
আরও পড়ুন:বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর দেয়া বক্তব্য তার ব্যক্তিগত অভিমত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘দলের ও সরকারের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও নয়।’
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘প্রয়োজনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক, আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন করার বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্যটি দিয়েছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কাগজ বা গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি চমৎকার নির্বাচন হোক।’
বিএনপির নির্বাচন ভাবনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তারা আসলে নির্বাচন প্রতিহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং সেই কথাটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবার বলেছেন। কিন্তু এবার আর তাদের পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করা কিংবা বর্জন করা সম্ভব হবে না।’
আরও পড়ুন:সংসদে বিদ্যুৎ ‘ফেরি করা’ নিয়ে তার দেয়া বক্তব্য ঘিরে অসাধু লোকজন ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করছেন জাতীয় সংসদে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।
মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন তিনি। একই সঙ্গে দেশবাসী বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানান এই সংসদ সদস্য।
মমতাজ বলেন, আমি সংসদে দু একটি কথা বলেছি। সেই সুবাদেই দু একটি কথা ধরে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন কেউ কেউ, এই কষ্টের মধ্য দিয়ে। বিদ্যুৎ থাকেছে না। সবাই এই কষ্ট পাচ্ছে। আপনারা জানেন সারা বিশ্বের কী অবস্থা, যুদ্ধ গেল। এটা আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। বড় বড় দেশই হিমশিম খাচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে, আমরা করছি।
এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি কেন বলেছিলাম সংসদে, আপনারা তো জানেন এটা মিথ্য কথা নয়। বিদ্যুৎ যে হারে সরকার উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের লাইন দিয়েছে; সেই প্রশংসাই করেছি। আমার নির্বাচনি এলাকায় আগে ৩০ ভাগ ঘরে বিদ্যুৎ ছিল আমি দায়িত্ব নেয়ার পর শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি।
তিনি বলেন, সে জন্য কিন্তু সংসদে বলেছিলাম। যেভাবে লাইন দিয়েছি, বিদ্যুৎ দিয়েছি। সেটাই সংসদে বলা হয়েছিল। সেটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুলভাবে উপস্থাপন করে অনেকেই অসাধু কিছু লোকজন খামাখাই দুটি বাজে কথা ফেসবুক ইউটিউবে বলার চেষ্টা করছেন।
মমতাজ বলেন, আমি বলব, আপনার যারা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা দেন; আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এই সমস্যার কথা কেউ কিন্তু জানতাম না। সারা বিশ্বের অবস্থার কারণে আমরা সমস্যায় পড়ে গেছি।
তিনি বলেন, সরকার কিন্তু চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংসদে আলোচনা হচ্ছে। যে সমস্যাটা এ মুহূর্তে আছে, এটা সাময়িক। সরকার চেষ্টা করছে সাময়িক এ সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন আগামীতে বিদ্যুতের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি।
মমতাজ বলেন, একসময় এলাকায় গেলে গ্রামের মা-বোনেরা এসে বলতেন- আপা, কিছু চাই না। আমাদের বিদ্যুতের লাইন দেন, মিটার দেন। মিটারের অভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। এই যে একটা সংকট ছিল তখন, সেটা কিন্তু আমরা সমাধান করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ তখন খুশি হয়েছিল। সেজন্য সংসদে বলেছিলাম, মানুষ বিদ্যুৎ চাইতো। একসময় এ চাওয়ার ব্যাপারটা আর থাকবে না। সরকার যেভাবে বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে, উৎপাদন করছে, ঘরে ঘরে মিটার পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন কিন্তু সত্যিকার অর্থে গ্রামে গেলে কেউ বলেন না আপা, দুইটা মিটার দেন, পাঁচটা মিটার দেন। মিটার দেওয়ার জায়গা আসলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই কিন্তু বাস্তব। আর সেই কথাটাই সংসদে আমি বলেছিলাম।
মমতাজ বলেন, আমি বিনীতভাবে বলবো- আপনারা জ্ঞানী মানুষ হয়েও ভুল ব্যাখ্যা দেন, বাজেভাবে উত্থাপন করেন, দেখেন আমার কথার সত্যতা আছে কি না? আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এ সমস্যা হবে এটা আপনি-আমি কেউ জানতাম না।
তিনি বলেন, আমরা কি জানতাম পাকিস্তান শ্রীলঙ্কায় আজ এই অবস্থা হবে?আমরা জানতাম না। আমরা অনেক কিছুই জানতাম না। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আমরা কী জানি। যখন আমি বলেছি তখন বিদ্যুতের অবস্থা এত ভালো ছিল। মানুষ খুশি ছিল। এখন এই সমায়িক সমস্যাকে ধৈর্যর সাতে মোকাবিলা করতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। কীভাবে বিদ্যুতের খরচ কমানো যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।
মমতাজ বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি করে লাভ নেই। অশান্তিই বাড়বে। ফেসবুকে একজন বলছে, মমতাতের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। এগুলো মিথ্যাচার প্রোপাগান্ডা। শুধু শুধু মানুষকে হয়রানি, ছোট করা। অনুরোধ করব, মিথ্যার আশ্রয়-প্রশয় কেউ দেবেন না। ধৈর্য ধরুন। নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি এই কষ্টের থেকে মুক্তি পাব।
সম্প্রতি দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং। তীব্র তাপপ্রবাহ এই দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়েছে। এ অবস্থাতে সংসদে এক সময় দেয়া মমতাজের বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা।
মমতাজ সংসদে দাঁড়িয়ে ওই বক্তব্যে বলেছিলেন, আমি যখন সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলাম। সে সময় এতগুলো কাগজ চলে আসতো যে বিদ্যুৎ চাই বিদ্যুৎ চাই। আমি সে সময় বলতাম, বিদ্যুতের একদিন এমন অবস্থা শেখ হাসিনা করবেন, ফেরিওয়ালারা যেমন ঘুরে আর বলে চুড়িয়ালা রাখবেন নাকি ভাই, ওইরকম বিদ্যতের অবস্থা আমাদের হবে, ঘুরতে হবে; বিুদ্যৎ রাখবেন নাকি বিদ্যুৎ। তবু কাস্টামার খুঁজে পাব না, গ্রাহক খুঁজে পাব না। আজ কিন্তু তাই হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতা করার মতো সংকট দেশে নেই।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মঙ্গলবার ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। বিএনপির সাথে যেকোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্ততায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।’
এর এক দিন পর কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে, এমন কোনো সংকটও দেশে নেই।’
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের বিষয়, নিজেরাই সমাধান করব।’
বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করতে যাবে, এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে এই রকম কোনো সংকট স্বাধীন বাংলাদেশে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন আরও গণতান্ত্রিক হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা আরও গণতান্ত্রিক হয়েছে। গণতন্ত্র হঠাৎ করে রাতারাতি প্রতিষ্ঠা পায় না। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সময় লাগে। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র এখন অনেক পরিপূর্ণ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে চলছে। কাজেই এখানে বাইরের কোনো মধ্যস্থতা, বাইরের কোনো হস্তক্ষেপের দরকার নেই। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করব। ‘সময় বলে দেবে কখন কী হবে। আপাতত আলাপ-আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) আমাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমরা কী আলোচনা করব? তারা আজ নালিশের রাজনীতি করছে। কী পেয়েছে?
‘তারা আমেরিকায় নালিশ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নালিশ করে তারা কী পেয়েছে? পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। এখন তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান চায়। এই তত্ত্বাবধানে আবার নতুন সূত্র তুলে ধরছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সংকটে সমাধান হলো আমাদের সংবিধান। সংকটে আর কোনো সমাধান নেই। সংবিধানই যদি কোনো দেশের সমাধান না দিতে পারে, তাহলে সে দেশে গণতন্ত্র হবে কী করে?’
আরও পড়ুন:আজ বুধবার ৭ জুন, ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলি চালায়।
ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ৬ দফা আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনতা। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।
পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওই সম্মেলন।
পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ৬ দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ।
৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার জনগণ। সূচনা হয় গণআন্দোলনের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদিন হরতাল পালিত হয়। সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১ জন শহীদ হলে দিনটি ৬ দফা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে একচেটিয়া রায় প্রদান করে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রতিবছরের মতো এবারও দিনটি যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবে জাতি। দিবসটি স্মরণে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাসক দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল দিনটি পালনে যথাযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দল ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে ৬ দফা দিবসের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য