জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী কর্তৃক একাধিক সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই কর্মী ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ও রফিক ভবনের সামনে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা নাগাদ দুই দফায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত গাজী মো. শামসুল হুদা নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একাউন্টিং অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে এক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাগবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দিতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী গাজী এক শিক্ষকের গায়ের ওপর এসে পড়েন। তখন কর্তব্যরত এক সাংবাদিক তাকে পরিচয় জানতে চেয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিককে মারতে উদ্যত হয়। পরবর্তীতে কামরুল হাসান রিপন ও অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দেয়।
পরে বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য অভিযুক্ত গাজী ও তার নেতা-কর্মীদের পাঠান। কিন্তু সমঝোতা করতে এসে গাজী এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩ তম আবর্তনের ফজলে রাব্বিসহ আরও একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের পরিচয় জানতে চান। প্রেসক্লাবের পরিচয় দিলে গাজী আক্রমণাত্মক হয়ে বলেন, ‘তোর প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের পু… মধ্যে ঢুকায় দিব।’ এ সময় রাব্বি প্রেসক্লাবের অন্য সাংবাদিকরা তার জুনিয়র হওয়ায় তাদের ওপরে চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী গাজী মো. শামসুল হুদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটা মিউচুয়াল হয়ে গেছে।’ এ সময় গালাগালির কোনো ভিডিও থাকলে সেটা দিয়ে কি করতে পারবা করে দেখাও বলে বারবার প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবর্ণ আসসাইফ বলেন, ‘প্রথমে ঘটনা ঘটার পর আমি শুনলাম আমার সহকর্মীকে মারার জন্য গাজী দাঁড়িয়ে আছে, এটা শোনার পর আমি আমার জায়গা থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজিকে ফোন দিয়ে জানাই। তিনি জানান বিষয়টি দেখছেন।
‘এর ৫ থেকে ১০ মিনিট পর গাজী এসে আবারও ওই সহকর্মীসহ অন্য সহকর্মীদের গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করেন।
আমার কথা হলো একজন সভাপতি নির্দেশ দেয়ার পরও তারা এমন ব্যবহার কিভাবে করে। আমাদের মনে প্রশ্ন তৈরিই হয় তিনি এমন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে কি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি। একাউন্টিং বিভাগের প্রোগ্রামে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছিল। পরে ঘটনাটি মিটমাট করতে গেছিল। কিন্তু এইরকম বাজে মন্তব্য সে করে থাকে তাহলে আমি নিজে এর বিচার করব এবং ব্যবস্থা নিব।’
জবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান বলেন, ‘এরকম ঘটনা একবার নয়, ইব্রাহীম-আকতার কমিটি আসার পরে বার বার ঘটছে। আজকের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সবচেয়ে বড় বিষয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে জানানোর পরও তিনি তার কর্মীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আমরা আশা করব সাংগঠনিকভাবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, ‘এমন কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি। দুজন সহকারী প্রক্টরকে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলাম। এ ধরনের কাজ কখনও সমীচীন নয়। লিখিত অভিযোগ দিলে, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাকিম ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্তা ও মারধরের ঘটনা ঘটে চলেছে। বারবার ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে। সেই সঙ্গে কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এর আগে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ইব্রাহিম-আকতার কমিটির সময়ে গত বছরের ৪ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেয়ার নজির রয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চার সাংবাদিকের ওপর অতর্কিত হামলাও চালায় তারা। এছাড়া সাংবাদিক হেনস্তা নিয়ে কোতোয়ালি থানায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে একাধিক জিডি করা আছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ে (শেকৃবি) প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ ইস্যুতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ দুটি পদে নিয়োগের জন্য পাঠানো সামারিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি হিসেবে উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. বেলাল হোসেন এবং ট্রেজারার হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রফেসর আবুল বাশারের নাম প্রস্তাব করে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর সামারি পাঠানো হয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবং ছাত্র কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা উল্লিখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে তাদেরকে নিয়োগে যোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছেন।
তারা বলছেন, ড. বেলাল হোসেন ও আবুল বাশার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষক। তার ওপর আবুল বাশারের কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই। তাছাড়া চাকরিতে যোগদানের সময় তার বয়স ৩০ বছরের বেশি থাকার অভিযোগ থাকায় বিষয়টি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংসের আওতায় ছিল।
এমন জুনিয়র শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেকৃবি এলামনাই সদস্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী পদে এমন জুনিয়র ও যথাযথ যোগ্যতাহীন শিক্ষক নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রেই অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।
‘অনেক যোগ্যতম শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও পিএইচডি না থাকা শিক্ষক বা এতটা জুনিয়র শিক্ষক তদবিরের জোরে এই সুযোগটা পাওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আশা করি এসব ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি বিবেচনায় নিয়ে যোগ্যতম ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
আরও পড়ুন:বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শাখা ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রাহাত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
দ্রুত কমিটি দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিটিতে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয় ২০২১ সালে। এর তিন বছর পর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করল সংগঠনটি।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে হলের কক্ষ দখল, ছাত্রলীগকে প্রশ্রয়সহ বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিতর্ক ও চাপের মুখে অবশেষে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে ছাত্রদলের প্রথম আংশিক কমিটি গঠিত হয় রেজা শরিফকে সভাপতি করে। পরে ২০২১ সালে রেজা শরিফ ও হাসান আল হাসিবকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছয়টি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
সোমবার থেকে আগামী সাতদিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই চেকপোস্টের কার্যক্রম চলবে।
চেকপোস্টগুলো হলো- নীলক্ষেত, পলাশী, শাহবাগ, বার্ন ইনস্টিটিউট, দোয়েল চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দুর্গোৎসব চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আতশবাজি না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আগত সব পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের নামে শের-এ-বাংলা হল প্রাঙ্গণে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১টায় এই স্মৃতিফলকের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. বদরুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আবরার ফাহাদের বাবা ও তার পরিবারবর্গের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি যে আপনারা সন্তানকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা তাকে রাখতে পারিনি। আল্লাহর কাছে একটিই দোয়া, ঘরে ঘরে যেন আবরার ফাহাদের মতো সন্তান আসে- যারা সত্য বলতে ভয় পাবে না, যারা দেশের জন্য লড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আবরারের জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষাই নেব। ভবিষ্যতে আর যেন কারও আবরারের মতো জীবন দিতে না হয়। এই স্মৃতিফলক তৈরি করতে যা কিছু প্রয়োজন শের-এ-বাংলা হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা কাজ করে যাব।’
দীর্ঘদিন ধরেই আবরার ফাহাদের নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্মৃতিফলকের নকশা নির্বাচন করে হল প্রাঙ্গণেই এই স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।
শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এ সময় বুয়েটের ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন দপ্তর-পরিদপ্তরের পরিচালকবৃন্দ, উপদেষ্টামণ্ডলী, হল প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ ও শের-এ-বাংলা হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ হলের ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ছাত্রলীগের মারধরে শহীদ হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর বলে উল্লেখ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট।
আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পলাশীর মোড়ে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
এর আগে ২০২০ সালে এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। সে সময় সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ।
সোমবার এই স্মৃতিস্তম্ভ পুনঃনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন আবরার ফাহাদ হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা হয়েছে- ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’।
উক্তিটি আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে ব্যবহার করেছিলেন।
সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা- এই আটটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে তারা আটটি স্তম্ভ বানিয়েছেন।
এর আগে স্মরণ সভায় উপস্থিত হয়ে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক।
‘আমাদের তরুণ সমাজ হাসিনার পতনের সংগ্রামে প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনও জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সংবিধান আমাদের ওপর চেপে বসেছিল, যে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যে সংবিধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, যে সংবিধান হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সেই সংবিধান এখনও বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমলারা জয়বাংলার স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক।’
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধা-বিপত্তিতেও টিকে থাকে।’
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনিদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। অতিদ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনিদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেয়া হবে না। ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নেবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসনবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে আবরার ফাহাদের সহপাঠী, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২৪-এর বাংলাদেশ পর্বের ঢাকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
এ হ্যাকাথন শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে একটানা ৩৬ ঘণ্টা চলার পর শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয়।
গতকাল রাতে রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) এবং অনলাইনে একসঙ্গে শুরু হওয়া নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ফলাফলে ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ‘কোয়ান্টাম ভয়েজার্স’ তাদের গৌরবগাঁথা সাফল্য রচনা করে।
টিমের সদস্যরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ রায়হান (টিম লিডার), ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জাহাঙ্গীর হোসেইন ও ফারহান মাসুদ সোহাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মুয়াম্মার তাজওয়ার আসফি এবং ইউসুফ হাসান সিফাত।
গত ১০ বছর বিশ্বব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় টানা তিনবারসহ সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করা হয়।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ১ কোটি শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ২ লাখ শিক্ষার্থীকে সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এবার বাংলাদেশের ৯টি শহর থেকে ৩ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নেন।
সর্বমোট ৫০০টি প্রকল্পের মধ্যে হাইব্রিড মডেলে বাছাইকৃত শীর্ষ ৫০টি নিয়ে এআইইউবিতে এবং বাকি ৪৫০টি প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪-এর দুই দিনব্যাপী নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন।
আরও পড়ুন:নবীন শিক্ষার্থী বরণে মেতেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। একইসঙ্গে প্রায় একশ’ দিন পর সশরীরে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে রোববার। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল বন্ধু-সহপাঠী হারানোর বেদনা। বিরাজ করছিল হৃদয় ও ফরহাদের শূন্যতা।
এদিন ক্লাসে যোগ দেয়ার আগে শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যরা।
রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমবেত হয়ে নিজ নিজ ধর্মমতে শহীদদের জন্য প্রার্থনা করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এ সময় ‘লাল ব্যাজ’ পরিধান করেন তারা।
দীর্ঘ ৯৭ দিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাস।
আন্দোলন-পরবর্তী ক্লাসে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়েছে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। ব্যতিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। এই বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। তাদের একজন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, অন্যজন মো. ফরহাদ হোসেন।
হৃদয় ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট মোড়ে আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন। আর ফরহাদ ৪ আগস্ট নিজ এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। হৃদয় ছিলেন ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ফরহাদ দ্বিতীয় বর্ষের।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য