ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্ত কুমার রায় নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নবীনগর উপজেলা থেকে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছেন।
শান্ত কুমার রায় নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ তরুণ মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগে এমনটা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন পাওনাদারের বক্তব্য অনুযায়ী, ধার ও সংগঠনে পদ দেয়ার নাম করে শান্ত রায় হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অভিযোগকারীরা হলেন- বাড়াইল গ্রামের শ্যামল চন্দ্র দাস, হক সাব, আব্বাস উদ্দিন, সুজন মিয়া ও অক্লান্ত দেবনাথ, নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলম এবং বড়িকান্দি গ্রামের ছগির আহমেদ।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার হিসেবে শান্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল টাকা। ধার নেয়ার সময় তিনি প্রত্যেককে এক বা দুই মাসের মধ্যে পুরো টাকা ফেরত অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কারও টাকাই ফেরত দেননি তিনি।
তাদের মধ্যে শ্যামলের কাছ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ লাখ ৯০ হাজার, গত বছরের ১৬ জুলাই ছগিরের কাছ থেকে ১২ লাখ, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হক সাবের কাছ থেকে ৪০ লাখ, ২১ নভেম্বর আব্বাস উদ্দিনের কাছ থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ধার হিসেবে নেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া গত জানুয়ারিতে সুজন মিয়ার কাছ থেকে ২০ লাখ, ৫ জানুয়ারি অক্লান্ত দেবনাথের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও খোরশেদ আলমের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নেন শান্ত।
তারা টাকা ফেরত চাইলে শান্ত টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আর তিন/চারদিন আগে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায় আত্মগোপনে চলে যান।
শান্ত রায়ের পাওনাদারের তালিকা আরও দীর্ঘ। তাদের মধ্যে বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ, আতিকুর রহমানের ৩ লাখ, মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালালের ৫৩ লাখ, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়ার ১১ লাখ, বাড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ৩ লাখ ও নরসিংদীর মুরাদনগরের বাদল মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায় লাপাত্তা।
ধার হিসেবে টাকা দিয়ে এসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি শান্ত ও তার বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে রিফাত আহম্মেদ থেকে ৮ লাখ ও বড়িকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ নিয়েছেন শান্ত। মোজাম্মেল হক নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। এসব হিসাব করলে শান্ত কমপক্ষে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে এলাকায় নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে জাহির করতেন শান্ত। শনিবার ও রোববার অনেককে টাকা পরিশোধের কথা ছিল। তা না দিয়ে তিনি তার বাবাকে নিয়ে আত্মগোপন করেছেন। অনেকের ধারণা তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
সলিমগঞ্জ বাজারের ঢাকা কনফেকশনারির স্বত্বাধিকারী বাবলু মিয়া বলেন, ‘শান্ত আমার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন। দোকান বাকি হিসেবে পাওনা রয়েছে আরও ২০ হাজার টাকা।
অভিযোগকারী মো. হক, সুজন মিয়া ও শ্যামল দাস বলেন, ‘শান্ত আমাদের বন্ধু। বিশ্বাস করতাম বলেই তাকে টাকা ধার দিয়েছিলাম।’
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘ছয়জন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শান্ত রায়ের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বসতঘরে আটকে রেখে এক যুবতীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঢাকা থেকে গর্ভপাত করতে আসা টিমের এক নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রিপন শেখ চারদিন আগে ঢাকার মিরপুর থেকে এক যুবতীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই যুবতীকে রিপন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।
বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে তাদের শারীরিক সম্পর্ক এবং এক পর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় চারদিন আগে ওই নারীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন রিপন।
তারা জানান, দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে মঙ্গলবার দুপুরে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে ঢাকা থেকে একটি টিম নিয়ে আসেন রিপন। এ সময় তিনি গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।
এসময় ওই যুবতীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে যুবতীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এছাড়া ওই সময় গর্ভপাত ঘটানোর টিমের আম্বিয়া নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রিপন শেখ পালিয়ে যান।
রিপনের প্রথম স্ত্রী তানিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিপন ওই নারীকে ঘরে আটকে রেখে অজ্ঞাত দুই নারীর সহায়তায় জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়।’
প্রতিবেশী মো. মামুন জানান, রিপন স্ত্রী পরিচয়ে যে নারীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি দুই মাসের গর্ভবতী। রিপন লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাতের চেষ্টার পাশাপাশি ওই নারীকে অমানবিক নির্যাতন করেছে।’
তন্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘রিপন ওই যুবতীকে হাতুড়িপেটা করেছে। পরে যুবতীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. কাশফি জানান, নির্যাতনের কারণে ওই নারী স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তার হাত ও পায়ের হাড় ভাঙা। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
শ্রীনগর থানার ওসি মো. ইয়াসিন মুন্সী বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক নারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। এনেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আরাকান আর্মি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ওপারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটলো।
মঙ্গলবার দুপুরে ১৬ বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ।
টেকনাফ বিজিবির সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে ১৬ জন মাঝি-মাল্লা ‘এফবি মা-বাবার দোয়া’ নামে একটি ট্রলারযোগে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়। ৫ অক্টোবর সাগরে তারা একদল ডাকাতের কবলে পড়ে।
ডাকাত দল সবকিছু ছিনিয়ে নেয়ার পর তাদেরকে মারধর করে ট্রলারে বরফ কল স্টোরে আটকে ট্রলারটি সাগরে ছেড়ে দেয়। এক পর্যায়ে ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার উপকূলে চলে যায়। পরে আরাকান আর্মি তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।’
বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলেদের হেফাজতে নেয়ার পর তাদেরকে ফেরত দিতে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলোচনা শেষে সোমবার রাতে তাদেরকে ফেরত আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন টেকনাফের। বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।’
ফেরত আসা জেলে আব্দুল হাফেজ বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমরা ১৬ জন মাঝিমাল্লা মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার থেকে সাগরে যাই। ৪ অক্টোবর কক্সবাজারের পাটোয়ারটেক বরাবর সাগরে ডাকাতদল আমাদের ট্রলারটি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে ওরা আমাদের আটক করে।’
তিনি বলেন, ‘আটক করার পর ডাকাতরা আমাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমাকে অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং মাঝির হাতে গুলি করে। ট্রলারে থাকা জাল ও মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
‘ডাকাতরা ট্রলারে মাছ-বরফের কল স্টোরের ভেতরে আমাদের আটকে দিয়ে বাইরে থেকে পেরেক ঠুকে দরোজা আটকে মিয়ানমারের সীমানায় একটি চরে রেখে চলে যায়। পরে আমাদের নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। বিজিবির সহায়তায় অবশেষে ১৫ দিন পর দেশে ফেরত আসতে পেরেছি।’
ডাকাতের কবলে পড়া ট্রলারটির মালিক মো. আয়ুব বলেন, ‘আমার ট্রলার নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ওরা সাগরে মাছ শিকারে যায়। তাদের সঙ্গে কয়েকদিন যোগাযোগ হয়েছিল। এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন ট্রলার থেকে তাদের খোঁজখবর নিয়েছি।
‘অবশেষে গতকাল (সোমবার) বিজিবির পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয় যে তারা মিয়ানমার থেকে আমার ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের ফেরত এনেছে। আর আজ জানলাম তারা ডাকাত দলের কবলে পড়েছিল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তারা প্রাণে বেঁচে ফেরত এসেছে। কিন্তু আমার ট্রলার এখনও ফেরত পাইনি।’
এর আগে মাছ ধরতে গিয়ে নাফ নদে অপহৃত বাংলাদেশি পাঁচ জেলেকে ৯ অক্টোবর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে একটি ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মা ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়ার খৈয়াছড়া ঝর্না রাস্তা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মীরসরাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি অটোরিকশাকে ভুট্টা বোঝাই একটি ট্রাক পেছন থেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মা ও দুই সন্তান নিহত হন।
তারা হলেন- সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ বগা চত্বর এলাকার আবুল কালএমর স্ত্রী নুরজাহান বেগম, তার মেয়ে কাজল রেখা ও ছয় মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মদ আনাস।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল সরকার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (মস্তাননগর হাসপাতালে) নেয়া হয়েছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা এলে মরদেহ তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নেয়া হয়েছে।
মকবুল নামে এক বিএনপিকর্মী হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানকে দুদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এর আগে সোমবার রাতে ঢাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফারুক খানকে মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাচান তাকে দশদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন।
অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশের নেতাকর্মীরা যখন নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন তখন আসামিরা বিএনপির সমাবেশ বানচালের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা ৫০০-৬০০ জন আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। আসামিরা বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন।
আসামিরা বিএনপি কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি করেন। এ সময় মকবুল নামে এক বিএনপিকর্মী আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অপরদিকে আসামি পক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটন থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
ঢাকার সাভারে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দিন থেকেই নিখোঁজ কিশোর জিহাদ। পরিবারের পক্ষ থেকে ভেবেই নেয়া হয়েছে, আন্দোলনের সময় কোনোভাবে হয়তো মৃত্যু হয়েছে জিহাদের।
পুলিশের প্রচেষ্টায় দুই মাস পর নিখোঁজ জিহাদের সন্ধান পেয়ে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে সোমবার রাতে জিহাদকে উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন তার ছেলে জিহাদ নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর রাতে জিহাদ বাড়ির পাশে থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর অনেক জায়গায় মাইকিং করেছি। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারও লাগিয়েও তার সন্ধান পাইনি। পরে গত ১৮ আগস্ট আমরা আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
‘একপর্যায়ে কোথাও কোনো সন্ধান না পেয়ে ভেবেছিলাম জিহাদ আর কোনো দিনও ফিরবে না। ও হয়তো মারা গেছে। ছাত্র আন্দোলনের কারণে হাসিনা সরকার পতনের পর হয়তো কোনো বিপদে পড়ে জিহাদ মারা গেছে, এ রকম ধারণা করেছিলাম আমরা, তবে শেষ ইচ্ছা ছিল, কোনোভাবে যাতে ছেলের লাশটা অন্তত পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবশেষ গতকাল রাতে জিহাদকে টঙ্গী থেকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন এসআই অলোক। আমরা তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, জিহাদকে জীবিত ফিরে পেয়েছি।
‘ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার ছেলেকে উদ্ধারে অনেক কষ্ট করেছেন। এ ঘটনার পর পুলিশের প্রতি আমার ধারণা পাল্টে গেছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের কার্যক্রম যেভাবে চলছে, তাতে পুলিশের ওপর মানুষের ভরসা এক প্রকার উঠেই গিয়েছিল।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলোক কুমার দে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে জিহাদ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত শুরু করি। প্রযুক্তির সহায়তা ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জিহাদকে টঙ্গী এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়।
‘সে ওই আবাসিক হোটেলে তার বাবা-মা নেই, এই পরিচয়ে হোটেল বয়ের চাকরি নিয়েছিল। জিহাদ মূলত এতদিন আত্মগোপনেই ছিল। পরিবারের সাথে অভিমান করেই গত ৫ আগস্ট সে বাড়ি থেকে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় জিহাদ একটি মোবাইল ব্যবহার করলেও পরে আর সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই প্রযুক্তির সহায়তায় জিহাদকে নিখোঁজের ৭০ দিন পর উদ্ধার করতে সক্ষম হই। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে আজ জিহাদকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচারিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ অপর দুই সদস্য মঙ্গলবার ট্র্যাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ট্রাইব্যুনালে আসেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য কর্মকর্তা তাদের অভ্যর্থনা জানান।
চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের একথা জানান।
হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ নেয়া মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
প্রসিকিউশন টিমের অপর পাঁচ প্রসিকিউটর হলেন মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মো. সাইমুম রেজা তালুকদার।
অন্যদিকে ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হক (এডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) ও কো-কোঅর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তদন্ত সংস্থার অপর কর্মকর্তারা হলেন- মো. আলমগীর, মোহা. মনিরুল ইসলাম, মো. জানে আলম, সৈয়দ আবদুর রউফ, মো. ইউনুছ, মো. মাসুদ পারভেজ, মুহাম্মদ আলমগীর সরকার ও মো. মশিউর রহমান।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র-জনতা। তাদের অনেকে এখনও চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য