সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় ৪০০ বছরের পুরোনো একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে নতুন পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বন বিভাগ। এরইমধ্যে সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতের অনুমতিও দেয়া শুরু হয়েছে। তবে বনরক্ষী ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরটিতে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করে আসছে কয়েকটি বাঘ। আর পর্যটনকেন্দ্র চালু হলেও, বাঘেরা ওই এলাকাটি ছাড়তে চাইছে না।
খুলনা শহর থেকে নদী পথে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে শিবসা নদীর পূর্বের পাড়ে রয়েছে শেখের খাল। তার কিছুটা দূরে এগিয়ে কালির খাল। এই দুই খালের মধ্যেবর্তী স্থানটি শেখেরটেক নামে পরিচিত।
১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মুঘল আমলে ওই মন্দিরটিসহ শেখেরটেক এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছিল একাধিক স্থাপনা।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে অভ্যন্তরে বর্তমানে সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো- করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। এসব স্থানে প্রতি বছর প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে। একই স্থানে বেশি পর্যটকের ভিড়ে বনের সার্বিক পরিবেশ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই ২০২১ সালে নতুন করে আরও চারটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ।
এগুলো হলো-সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী, শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক। ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদি এসব প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন যে চারটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে তার মধ্যে শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। এরইমধ্যে আমরা সেখানে সীমিত পরিসরে পর্যটদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া শুরু করেছি। আগামীতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হবে।’
তবে বন গবেষকরা বলছেন, শেখেরটেকে নতুন পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য কোনো ধরনের গবেষণা করেনি বন বিভাগ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘শেখেরটেক এলাকায় ইকোট্যুরিজম বা যাই করা হোক না কেন একটা গবেষণা করে কাজ শুরু করা উচিত ছিল। তবে বন বিভাগ এটা করেনি। এরইমধ্যে সেখানে প্রচুর গাছপালা কেটে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। উচিত ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করার।’
বনরক্ষীরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর ধরে সেখানে কর্মযজ্ঞ চললেও বাঘেরা ওই স্থান ত্যাগ করছে না। শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে নির্মাণ কাজে সহায়তা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেখানে চারজন বনরক্ষীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সেখানে দায়িত্বরত বনরক্ষী দীপক কুমার দে বলেন, ‘মন্দিরের কাছে সব সময়ই বাঘ অবস্থান করে। কারণ মন্দিরের জায়গাটা বনের অন্যান্য স্থানের তুলনায় একটু উঁচু। এখানে তিনটি বাঘ রয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম রাতের বেলা আলো দেখলে বাঘ সেখানে আসে না। কিন্তু এখানের বাঘগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। প্রতিদিন রাতেই তারা নির্মাণ কাজের আশে পাশে আসছে, সকালে উঠে আমরা পায়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।’
দীপক কুমার বলেন, ‘নির্মাণ কাজের সময়ে মন্দিরের কাছে কিছু পাইপ ও পলিথিন রাখা হয়েছিল। বাঘেরা সেই পাইপ ভেঙে দূরে নিয়ে ফেলে দিয়েছে, পলিথিন কামড়ে ছিঁড়েছে। মন্দিরটি হয়তো তাদের বাচ্চা প্রসবের ভালো স্থান ছিল। তাদের আস্তানা সংস্কার করা হচ্ছে। তাই তারা অসন্তুষ্ট।’
বনকর্মী বাসার বলেন, ‘এখানে নির্মাণ কাজ চলায় বাঘেরা খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগে নির্মাণ কাজের জন্য কিছু পলিথিন রাখা হয়েছিল মন্দিরের কাছে। রাতে বাঘ সেই পলিথিন ছিঁড়ে খেয়েছে। পরে বাঘের পায়খানায় সেই পলিথিন দেখা গেছে। ’
ওই অঞ্চলের অন্তত ১০ জেলের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক, যারা ইতোপূর্বে বহুবার শেখেরটেক এলাকায় বনজ সম্পদ আহরণ করেছেন। সবাই জানিয়েছেন, ওই মন্দিরটি জেলেদের কাছে বাঘের বাড়ি নামে পরিচিত।
এছাড়া শতাধিক বছর আগে প্রকাশিত সতিশ চন্দ্র মিত্রের লেখা যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থেও শেখেরটেকে বেশি বাঘ থাকার কথা বলা হয়েছে। বইয়ে লেখা হয়েছে, ‘এখানে সুন্দরী গাছ যথেষ্ট, হরিণের সংখ্যা অত্যন্ত অধিক এবং ব্যাঘ্রাদি (বাঘ) হিংস্র জন্তুর আমদানিও বেশি। সুতরাং আমাদিগকে এক প্রকার প্রাণ হাতে করিয়া এ বনে ভ্রমন করিতে হইয়াছিল।’
সম্প্রতি ওই মন্দিরটি পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যায়, শেখেরটেক খাল থেকে মন্দির পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার কংক্রিটের ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ফুট ট্রেইলটি মন্দিরের চারপাশ দিয়ে ঘুরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের বনের উপরিভাগ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। বনের মধ্যে কিছু স্থানে ইটের রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি টয়লেটের ব্যবস্থাও আছে।’
ওই স্থানে আগ্নেয়াস্ত্রধারী বনরক্ষীদের নিয়ে বেশ কিছু এলাকাও পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা গেছে, মন্দিরের আশপাশে বাঘের তাজা পায়ের ছাপ।
এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘বন বিভাগের উচিত হবে, সেখানে সীমিত পরিসরে পর্যটক পাঠানোর। কারণ পর্যটনের জন্য বনের পরিবেশ নষ্ট বা বাঘদের যন্ত্রণা দেয়া ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি এক সময়ে বন বিভাগে চাকরি করতাম। তখন একটি বাঘ পলিথিন খেয়ে মারা গিয়েছিল। সেখানে পর্যটকরা গেলে বনে অনেক কিছুই ফেলে আসবে। তাই পর্যটক পাঠানোর আগে পরিপূর্ণ নির্দেশনা ছাড়া পাঠানো উচিত হবে না। আর কতজন পর্যটক শেখেরটেকে যেতে পারবে, তা নিয়ে গবেষণা করা জরুরি।’
প্রায় এক দশকের মধ্যে ব্রাজিলের আমাজনে বার্ষিক বন উজাড় সর্বনিম্ন পরিমাণে হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা সরকার স্থানীয় সময় বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্রাসিলিয়া থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের (আইএনপিই) প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এক বছর সময়কালে বন উজাড় ৩০.৬ শতাংশ কমেছে।
আইএনপিই পরিচালক গিলভান অলিভেরা জানান, ওই সময়ে ৬ হাজার ২৮৮ বর্গকিলোমিটার বন ধ্বংস করা হয়, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ জুড়ে থাকা আমাজন রেইনফরেস্ট গত শতাব্দীতে কৃষি ও গবাদি পশুপালন, জ্বালানি কাঠ এবং খনির বিস্তার এবং শহুরে বিস্তৃতির কারণে প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা হারিয়েছে।
লুলা ২০৩০ সালের মধ্যে আমাজনের অবৈধ বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি কিছু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বাধার মুখে পড়েছেন।
আইএনপিইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজন ছাড়াও মধ্য ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রজাতি-সমৃদ্ধ সাভানার সেরাডোর ২৫.৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ১৭৪ বর্গকিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের সন্তোষ বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়িকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জন ও মো. আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে, মো. আলিম, দীপক ও মো. রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তাঅধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের এ জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের পলিথিন বেচাকেনা না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর গঠিত মনিটরিং কমিটির উদ্যোগে তদারকি চালানো হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে শুক্রবার এ কার্যক্রম চালানো হয়।
মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয় এবং পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস ওই সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর হতে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
এ কর্মকর্তা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ওই সময় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্য হিসেবে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপসচিব রুবিনা ফেরদৌসী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম ও পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:গত দুই দশকে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে।
এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিপূরণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের ১২ জুলাই এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) দূষণের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেশের জলপথের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ একটি অ্যাকাডেমিক জার্নাল। এটি জার্মানিভিত্তিক স্প্রিংগার নেচারের শাখা স্প্রিংগার প্রকাশ করে।
দেবাশীষ পণ্ডিত ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হকসহ একদল বিশেষজ্ঞ প্রিজমা ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে পদ্ধতিগতভাবে ৫৫টি নথি পর্যালোচনা করেন।
গবেষণার ফলে দেখা যায়, ২০০১-২০১০ সালে যে পরিমাণ দূষণ হয়েছিল, সেই তুলনায় গত দশকের (২০১১-২০২০) দূষণের মাত্রা অনেক খারাপ ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো ঢাকার বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
গবেষণায় প্রধানত তিনটি বিভাগের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকার নদীগুলোর বেশির ভাগে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আর্সেনিক (এএস), সীসা (পিবি), ক্যাডমিয়াম (সিডি), ক্রোমিয়াম (সিআর), লোহা (এফই) ও ম্যাঙ্গানিজের (এমএন) গড় ঘনত্ব তিনটি ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সর্বাধিক দূষণ হয়।
ট্যানারি, টেক্সটাইল ও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং কারখানাসহ শিল্প কারখানার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা।
এসব শিল্প কারখানা ভারী ধাতুসম্পন্ন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। এটি পরিবেশগত মারাত্মক সংকট তৈরি করে এবং যা বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে চলেছে।
দূষণের প্রধান উৎস
গবেষণায় ভারী ধাতু দূষণের একাধিক উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলোর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, খনন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্রশিল্প, কয়লা খনি ও শিল্প বর্জ্য, যেমন ব্যাটারি ও রং নদীর পানির দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
এসব দূষক বাস্তুতন্ত্রে জমা হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।
জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান
গবেষণাটি দূষণ রোধে শক্তিশালী আইন এবং আরও কার্যকর প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
এসব দূষণ রোধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে পানিসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিল্প সংশ্লিষ্ট ও জনগণকে শিক্ষিত করতে অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, ব্যাপক গবেষণা এবং সচেতনতামূলক প্রচার।
বিশেষজ্ঞরা নদী অববাহিকা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন, যা টেকসই সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে।
দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নদীগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণার অন্যতম গবেষক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোতে বিশেষ করে ঢাকার মতো অঞ্চলে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ভারী ধাতু জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:বন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বন ভবনে বৃহস্পতিবার ‘নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক’ প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বন রক্ষায় বন কর্মকর্তাদের সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কাজের গতি বাড়াতে হবে এবং যেকোনো সমস্যা হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।’
তিনি জানান, বন কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য তার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
ওই সময় তিনি ঝুঁকি ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।
উপদেষ্টা বলেন, দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো বন বিভাগের প্রধান দায়িত্ব।
গাছ কাটার বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বনরক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডলফিনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের নদী ও জলাশয়ে মিঠাপানির ডলফিনের উপস্থিতি আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। ডলফিন টিকিয়ে রাখতে নদী ও জলাশয়ের দূষণ রোধ এবং পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ডলফিন রক্ষায় স্থানীয় জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে সাইটিস সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করার ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
তিনি ডলফিন জরিপের ফল ঘোষণা করেন।
এ সমীক্ষার ফলে প্রায় ৬৩৬টি দল বা ১ হাজার ৩৫২টি গাঙ্গেয় ডলফিনের উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন:পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-এ পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত চলার সঙ্গে সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলা আছে। একইসঙ্গে সাগরে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার ভোর থেকে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে দুপুরে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালী জেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। এ কারণে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান লেকের ওপর এবং তৎসংলগ্ন স্থানে নির্মিত অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বিশেষ নির্দেশনায় মঙ্গলবার এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে লেক দখলের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা, তৎসংলগ্ন নার্সারি, টিনশেড রুম ও লেকের মধ্যে জমি দখলের জন্য পুঁতে রাখা বাঁশ ও নেট উচ্ছেদ এবং ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষিত গুলশান-বারিধারা লেক দখলমুক্ত করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামান।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুন্নেছা আক্তারসহ পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগর কার্যালয় টিম, রাজউক টিম এবং গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য