দীর্ঘ এক মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক ও নাজির মমিনুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে কোর্ট বর্জন করছে আইনজীবীরা। এতে অচল হয়ে পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার ব্যবস্থা। জেলা ও দায়রা জজ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত ব্যতীত সব আদালতে গিয়েছে আইনজীবীরা ।
দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে আবারও সব আদালত বর্জন করেছে আইনজীবী সমিতি। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বুধবার থেকে আরও বাড়বে বলে মনে আদালত-সংশ্লিষ্টরা।
আদালতে ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের সমাগম থাকলেও আইনজীবী দেখা যায় নি। তবে বিচার প্রার্থীরা জানতেন না বুধবার থেকে আবারও আদালত করবেন না আইনজীবীরা । বিষয়টি জেনে অনেক বিচারপ্রার্থী হতাশাগ্রস্থ হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে ঘুরে আবারও ফিরে যাচ্ছেন।
বিচার প্রার্থীরা ইচ্ছেকৃতভাবে ফিরে যাচ্ছে না, আইনজীবীরা আদালতের প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে আদালত থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিচার প্রার্থীদের।
তেমনটি অভিযোগ করেন সরাইল উপজেলা অরুয়াইল থেকে আসা সালমা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, স্বামীর জামিনের আবেদন করতে আসলে আদালতে ভিতর ঢুকতেই ধমকিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে। চার শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দেড় মাস যাবত এই আদালতে চত্বরে ঘুরছেন স্বামী কাউসারকে জামিন করানোর জন্য। তবে আইনজীবী ও বিচারকদের দ্বন্ধে স্বামীর জামিন না করাতে পেরে শিশু সন্তান নিয়ে পথে বসার মত অবস্থা তাদের।
সালমা বেগম বলেন, ‘৬ মাস আগে প্রতিবেশী এক মহিলা তার স্বামী কাউসারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আর সেই মামলায় জেল খাটছে তার স্বামী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় স্বামীকে জামিন করানো জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে আদালতে।
‘গত ৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। মামলায় প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে আপোষ করা হলেও সেদিন আইনজীবী না থাকায় তার স্বামীর জামিন হয় নি। তবে আদালতের বিচারক বলেছিলেন পিপি সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে আসলে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু সেদিন ৫০০০ হাজার টাকা দিয়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে তিনি স্বাক্ষর দেননি। বুধবার তার স্বামীর মামলা শুনানি ছিল। কিন্তু সকালে আদালতে প্রবেশ দ্বারে ঢুকতে গেলেই কয়েকজন আইনজীবী আদালতের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে সালামকে ধমকিয়ে আদালত ভবন থেকে বের করে দেয়। এ সময় সাথে ছিল তার চার শিশু সন্তান।’
শুধু সালমা নয়, সরাইল রসূলপুরের মুমিনুল হক, কসবা উপজেলা শাহাদৎ মিয়া, আখাউড়া উপজেলা মনোয়ারা বেগম, বাঞ্ছারাপুরের ইলিয়াস মিয়া, নবীরনগর উপজেলা কৃষ্ণনগর গ্রামের ইছা মিয়া সহ আরও বেশ কয়েকজনকে আইনজীবীদের পথ আটকে দেয়ার কারণে আদালত থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
আদালত থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের দাবি অনুযায়ী আদালত বর্জন চলছে। কার্যক্রম যেন না নিতে পারে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনজীবী ছাড়া সরাসরি যেন কোনো পিটিশন না নেয় সেই বিষয়ে আমরা প্রয়োজন ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আদালতে বিচারক, কর্মকর্তা ও কার্মচারীগণ উপস্থিত রয়েছেন। বিচারকার্যের জন্য সবাই প্রস্তুত রয়েছেন। বিচার চেয়ে আদালতের কাছে দারস্থ হওয়া আইনগত অধিকার। তবে বিচারপ্রার্থীদের আদালতে আসতে না দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।’
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নিরীহ কৃষককে পুলিশের বুটের লাথি ও লাঠিপেটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরী বাজারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে কুমরী গ্রামের শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
এ ঘটনায় আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষবেড় এলাকার নলা বিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হন সিরাজ উদ্দিন। পুলিশের বুটের লাথি ও লাঠিপেটায় তার বাম পায়ের ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। এছাড়াও তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এক পর্যায়ে চিৎকার শুনে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।
গুরুতর আহত ৪৫ বছর বয়সী কৃষক সিরাজ উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা আশ্রাব আলী এই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
সিরাজের ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন জানান, নলা বিলে মাছের খাদ পাহারা দিয়ে তার ভাই বাড়ি ফেরার পথে এএসআই নুরুল হকসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা জুয়াড়ি অপবাদ দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে এএসআই নুরুল হক তার বাম উরুতে লাথি মারেন। এতে তার উরুর হাড় ভেঙে যায়। পরে মাটিতে পড়ে থাকা সিরাজে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরেন ওই এএসআই। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরাও সিরাজকে মারধর করেন। সিরাজের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পুলিশের ওই সদস্যরা সটকে পড়েন। সিরাজ ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রিয়াজ উদ্দিন আরও জানান, এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। পরে বুধবার দুপুরে তিনি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক জানিয়েছেন যে তার আঘাতগুলো গুরুতর। অপারেশন লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তিনটা কন্যা সন্তান নিয়ে এমনিতেই ভালভাবে চলতে পারছি না। যে মানুষটার উপার্জনে সংসার চলে তাকে পুলিশ অযথা মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। এমন বর্বরোচিত হামলার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মস্তুফা বলেন, ‘সিরাজ উদ্দিন খুব ভালো লোক। আর কেউ কোনো অপরাধ করলে পুলিশ তাকে আটক করতে পারে। কিন্তু তার শরীরে এভাবে আঘাত করতে পারে না। আমি ঘটনাটি শুনে ওই পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ফোন করি। ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ফোন কেটে দেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, তিনি সেখানে যাননি।
মামলার আইনজীবী মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় সিরাজ উদ্দিনের ছোট ভাই আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচজনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জের ৩ নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক পার্থ ভদ্র মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, মামলা হওয়ার পর তিনি বিষয়টি জেনেছেন। এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটারসাইকেল চলাচলক করতে পারবে না কি না, সে বিষয়ে রিটের ওপর হাইকোর্ট আদেশ দেবে আরও চার সপ্তাহ পর।
বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রিটের শুনানি আগামী চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করে।
আদালত জানিয়েছে, এ সময়ের মধ্যে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখে পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার ও আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ওই রিটের শুনানি আট সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছি হাইকোর্ট।
আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এ রিটটি করার পর আদালত প্রথমে সরকারকে আট সপ্তাহ সময় দিয়েছিল, সরকার এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা দেখোর জন্য। কিন্তু সেই সময় শেষ হওয়ার পরে আজকে মামলাটি আবার কার্যতালিকায় আসে।
তিনি বলেন, এখানে একটা ডেভেলপমেন্ট (উন্নতি) আছে। সেটা হলো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সেতু বিভাগে একটা চিঠি দিয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, রিট আবেদনের ছায়ালিপি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হলো। অর্থাৎ আমাদের আবেদনটি মহাসড়ক বিভাগ সেতু বিভাগের কাছে পাঠিয়েছে।
আইনজীবী তৈমুর আলম বলেন, এটা আদালতের নজরে আসার পর আদালত বলেছে, সরকার যেহেতু এটা টেকআপ করেছে অতএব সময় দেয়া হোক। এরপর চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে, সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা আশা করি সরকার চার সপ্তাহের মধ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৩৮ লাখ মোটরবাইকের চালক আছেন। তাদের অধিকার সমন্নুত থাকবে বলে আশা করছি।
গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পরে দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আবু হানিফ হৃদয় নামের যাত্রাবাড়ীর এক বাসিন্দা রিট করেন।
আরও পড়ুন:বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙতে অভিযান চালিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনটি নির্মানের অভিযোগে বুধবার এই অভিযান চালানো হয়। ভবন মালিকের দাবি, বিনা নোটিশে সিটি করপোরেশন বুলডোজার নিয়ে ভবনটি ভাঙতে এসেছে।
এদিকে ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রোড ইন্সপেক্টরের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রুঢ় আচরণেরও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নগরীর নতুন বাজারের টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় ভবনটি ভাঙতে আসে সিটি করপোরেশন। তবে ভবন মালিককে কিছু সময় দিয়ে বুলডোজার তার ভবনের সামনেই রেখে দেন করপোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা।
রোড ইন্সপেক্টর রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ভবনটির প্ল্যান রয়েছে ছয়তলার। প্ল্যানে গ্যারেজও রয়েছে। কিন্তু ভবনটি অনিয়মের মাধ্যমে সাততলা করা হয়েছে এবং গ্যারেজ রাখা হয়নি। এ কারণে ভবন মালিককে একাধিক বার নোটিশ দিলেও কোনো জবাব মেলেনি।
‘সবশেষ বুধবার এই বাড়িতে এসে নোটিশ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া নেয়া হয়। ভবন মালিক আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজারের বাসিন্দা এবং বরিশাল পৌরসভার টানা ১৮ বছর কমিশনার পদে দায়িত্বে থাকা শাহজাহান হাওলাদারকে ভবনটির ব্যাপারে গত ৬, ২০ ও ২৭ মার্চ চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি করপোরেশনকে। তাছাড়া নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদিত প্ল্যান করপোরেশনে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি তা করেননি।
ভবনটির মালিক বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা আগে কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি। এখানে বুলডোজার নিয়ে আসার ৩০ মিনিট আগে প্ল্যান বহির্ভূতভাবে ভবন তৈরির কথা জানিয়ে আমাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে।’
এদিকে বুধবার বিকেলে শ্রমিক লীগ নেতার ভবন ভাঙার প্রস্তুতির আগেই নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে গুপ্ত কর্নার মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়া অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
ভবন ভাঙার কার্যক্রম না করে বুলডোজার শাহজাহান হাওলাদারের বাড়ির সামনে রেখে দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে বুলডোজারটিও সরিয়ে নেয়া হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি, বরিশাল নগরী থেকে বিভিন্ন রুটে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা চলাচলে চাঁদাবাজি নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা শাহজাহান হাওলাদারের সঙ্গে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বন্দ্ব হয়। মেয়র নিজ ফেসবুক পেজে লাইভে এসেও শাহজাহান হাওলাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কথা বলেন থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের সঙ্গে নিজ বাসায় আলোচনার সময়। ওই বিষয়কে কেন্দ্র করেই শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া নেয় সিটি করপোরেশন।
সাভারে কর্মরত দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে তুলে নেয়ার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। সরকার তার প্রয়োজনের সময় অসৎ উদ্দেশ্যে এই আইন ব্যবহার করছে। নিকৃষ্ট উপায়ে সাদা পোশাকে এসে রাষ্ট্রীয় গুণ্ডা বাহিনী সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে গেছে।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে বলেন, ‘কোনো সংবাদে আপত্তি থাকলে তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু এখানে অন্যায়ভাবে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক।’
চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার উদ্ধার হয়েছে শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ। আর বস্তাবন্দি এই মরদেহ প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসত অভিযুক্ত রুবেল। লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে সে খড়কুটো দিয়ে ওই বস্তা ঢেকে রাখত নিয়মিত।
বুধবার দুপুরে ডবলমুরিং এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার (এসপি, চট্টগ্রাম মেট্রো) নাঈমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন (২১ মার্চ) রাত ৯টার পর আখির মরদেহ বস্তাবন্দি করে সবজির ভ্যানে করে ত্রিফল দিয়ে ঢেকে মুরগি ফার্ম এলাকার ডোবায় ফেলে আসে রুবেল। রাত ১০টার দিকে আঁখির পরিহিত স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালায় ফেলে দেয় সে। ডোবায় মরদেহ ফেলে আসার পর থেকে রুবেল প্রতিদিন মরদেহের অবস্থা দেখে আসত এবং লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে খড়কুটো দিয়ে ঢেকে দিত।’
২১ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার বাসা থেকে আরবি পড়তে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনি। নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার ভোরে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকার একটি জলাশয় থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে সবজি বিক্রেতা রুবেলকে আটক করে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে নাঈমা সুলতানা জানান, পাহাড়তলী থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি ও আঁখি মনির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৩ মার্চ ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। সিসিটিভি ফুটেজ ও শিশুটির স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রুবেলকে শনাক্ত করে তারা৷
‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুবেলকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল আঁখি মনিকে বিড়ালছানার প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খালি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতেই মঙ্গলবার ভোরে আঁখি মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আটক রুবেলের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে পাহাড়তলী থানার মুরগি ফার্ম বাজারের পাশে আলমতারা পুকুর এলাকার ডোবার আবর্জনায় চটের বস্তায় বাঁধা অবস্থায় শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহে কালো রঙের একটি গেঞ্জি ছাড়া আর কোনো কাপড় ছিল না। পরবর্তীতে আটক রুবেলের তথ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলীর পোর্ট কানেকটিং রোডে কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালা থেকে শিশুটির স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব উদ্ধার করা হয়।
‘তিন মাস আগে স্বামী আবুল হাশেমের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ হওয়ায় আঁখি মনিকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে মায়ের বাসায় ওঠেন বিবি ফাতেমা। মেয়েকে স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তিনি।’
পিবিআই এসপি জানান, সবজি বিক্রির সুবাদে আঁখি মনির নানী বিবি খাদিজার সঙ্গে পরিচয় ছিল রুবেলের। মাস তিনেক আগে একটি বিড়ালছানা ধরতে গিয়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে আঁখি মনির। তখন শিশুটির সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। সব সময় রুবেলের কাছে বিড়ালছানা চাইতো আঁখি, রুবেলও বোনের বাসা থেকে আঁখিকে বিড়ালছানা এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ঘটনার আগের দিন, ২০ মার্চ এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ালছানা আনতে রুবেলের বাসায় যায় আঁখি। ওইদিন বেলা ১১টায় সবজি বিক্রির সময় নিজেদের বাসার নিচে রুবেলের সঙ্গে কথা হয় আঁখির। সে সময় বিকেলে বিড়ালছানা দেয়ার কথা বলে আঁখিকে পার্শ্ববর্তী একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলে রুবেল।
বিকেলে আঁখি ওই নির্দিষ্ট স্থানে গেলেও রুবেলের দেখা না পেয়ে ফিরে আসে সে। পরদিন স্কুলের সামনে রুবেলকে দেখে বিড়ালছানার কথা জিজ্ঞেস করে সে। ওই সময় স্কুল শেষে আঁখিকে আগের নির্ধারিত স্থানে যেতে বলে রুবেল। স্কুল শেষে আঁখি পোশাক পরিবর্তন করে হিজাব পরে নির্ধারিত স্থানে যায়। হিজাব পরায় শুরুতে রুবেল চিনতে না পারলেও আঁখির ডাকে চিনতে পারে৷ তখন আঁখিকে কৌশলে রুবেল তার ফুফুর ভবনের চতুর্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আঁখি চিৎকার করলে গলাটিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে রুবেল।
রুবেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
আয়নী হত্যার ঘটনায় আটক সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নূর ই খোদা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর পিবিআই রুবেলকে আদালতে হাজির করলে তিনি শিশুটিকে হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
আঁখি হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সহপাঠীদের মানববন্ধন
চট্টগ্রামে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তের বিচার দাবিতে বুধবার মানববন্ধন করেছে ওর সহপাঠীরা। আয়নীর স্কুল সরাইপাড়া হাজি আব্দুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানববন্ধনে যোগ দেন অভিভাবকরাও।
বুধবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সাগরিকা মোড় এলাকায় এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত রুবেলের ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের অভিবাবক এবং শিক্ষকরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত সবজি বিক্রেতা রুবেলের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আঁখি মনির সহপাঠী সুমাইয়া আক্তার সানজিদার বাবা মো. সেলিম বলেন, ‘এক সময় আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিল। কিছুদিন আগে আমরা বাসা চেঞ্জ করে একটু দূরে চলে গেছি। বাচ্চাটি আমার মেয়ের সঙ্গে হাজী আব্দুল আলী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। দুজনের বন্ধুত্বও ছিল। ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।’
বর্ষা ও আয়াতের পথ ধরে আয়নী আঁখি
আবিদা সুলতানা আয়নী হত্যাকাণ্ডের আগে চট্টগ্রামে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে নিখোঁজের পর দুটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হয় ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিন দিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়। সে সময় আয়াতের ওই মৃত্যুর ঘটনাও নাড়া দেয় সবাইকে।
ধর্ষণ মামলার বাদীকে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে সংসার শুরু করায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে ধর্ষণের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার বুধবার এই অব্যাহতির আদেশ দেন।
এর আগে ১৩ মার্চ একই আদালত বাদীকে বিয়ের শর্তে আরজুকে জামিন দিয়েছিল। সে অনুযায়ী বাদীকে বিয়ে করেন আসামি।
গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর সঙ্গে প্রথম স্বামীর বিয়েবিচ্ছেদ হয়। সে সময় ওই নারী একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। স্বজনরা তাকে ফের বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে চাচার মাধ্যমে আসামি আরজুর সঙ্গে পরিচয় হয় বাদীর। আরজু নিয়মিত ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে একপর্যায়ে সফল হন। আরজু তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। একাকীত্বের অবসান ঘটাতে নতুন সংসার শুরু করতে চান তিনি। ওই নারী আরজুর প্রেমে পড়ে তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই দম্পতির একটি মেয়ে সন্তান হয়। এ সন্তান গর্ভে আসার সময় থেকে আরজু বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে ভ্রূণ নষ্ট করার চেষ্টা করেন। ওই নারীর দৃঢ়তায় তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, সন্তান হওয়ার পর আরজুর আচার-আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি ওই নারীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার কথা বলে ওই নারীর বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং নারীর জমানো ৮ লাখ টাকা নিলেও ফ্ল্যাট কিনে দেননি আরজু। তিনি টাকাও ফেরত দেননি।
পরে খোঁজ নিয়ে ওই নারী জানতে পারেন, আরজুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। তার ঘরে মেয়েসন্তান আছে এবং স্ত্রীর সঙ্গেই থাকেন তিনি।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসামি বাদীর কাছে ফারুক হোসেন নামে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন তিনি। আরজু কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। একপর্যায়ে বাদীর সঙ্গে বিয়ে এবং তার ঔরসের সন্তানকে সরাসরি অস্বীকার করেন তিনি।
মামলার তদন্তে বাদীর মেয়ে সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে ওই সন্তান বাদীর গর্ভজাত এবং আরজু তার জন্মদাতা বলে তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে।
আরও পড়ুন:প্রথম আলোর সাংবাদিক মো. শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া নামে একজন বুধবার এ মামলা করেন।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গোলাম কিবরিয়া একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মামলাটি করেছেন। এই মামলায় তাকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করেছে। মামলাটির তদন্তও সিআইডি করছে।’
মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া ঢাকা উত্তর মহানগর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক।
মামলা করা প্রসঙ্গে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হইছে, এই সংবাদপত্রটা মিথ্যা এবং আমাদের দেশের বিরুদ্ধে হয়ে গেছে। এ কারণে আমরা মামলাটা করছি, আর কিছু না।’
যুবলীগের এই নেতা বলেন, ‘মামলা করার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। আমি একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা করছি। আমি দলীয় পরিচয় বা হাইলাইট হওয়ার জন্য এটা করি নাই।’
মো. শামসুজ্জামান সাভারে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত এসপি রবিউল ইসলামের ভাই তিনি। এই সাংবাদিক সাভারের আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় একাই থাকেন।
শামসুজ্জামান যে বাসায় থাকেন সে বাড়ির মালিক ফেরদৌস আলম কবির বলেন, ‘রাতে সিআইডি পরিচয়ে ৫-৭ জন বাসায় এসেছিল। তাদের আচরণ পেশাদার ছিল। শামসুজ্জামানকে নিয়ে তারা ভোর ৪টার দিকে বের হয়ে যায়, এক সাথে সেহরি খাওয়ার কথা বলে। পরে তাকে নিয়ে তারা আবার আসছে।
‘কাপড়চোপর আর ফোন ও ল্যাপটপজাতীয় ডিভাইসগুলো নিয়ে গেছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, আসলে কী ব্যাপার। তারা বলেছে, উনি একটা নিউজ করেছিল। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে একটা মামলা হয়েছে।’
এদিকে সচিবালয়ে বুধবার এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আইন নিজস্ব গতিতে চলে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রসহ সব চলে। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায়, থানায় মামলা করে, সে অনুযায়ী পুলিশ কিন্তু ব্যবস্থা নিতেই পারে, আমি যতটুকু জানি, একটা মামলা রুজু হয়েছে। সেই জন্য সিআইডি...।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে সব রিপোর্ট আসেনি। আমি যতটুকু অবগত হয়েছি, এই মামলাকে কেন্দ্র করে খুব সম্ভব কিছু একটা ঘটেছে, এখনও পরিষ্কার নই।’
স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে প্রথম আলোর সাংবাদিক সাহেব যেটা করেছেন, এটা সঠিক ছিল না, যেটা নাকি একাত্তর টিভির মাধ্যমে আপনারাই প্রচার করেছেন।
‘আপনারাই সাংবাদিক ভাইরা সংক্ষুব্ধ হয়ে একাত্তর টিভির মাধ্যমে এই সংবাদটা যে ভিত্তিহীন, মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা ছাপানো হয়েছে, একাত্তর টিভিতে এটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
মন্তব্য