ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে সরকারি সাক্ষীদের যাতায়াত ভাড়াসহ প্রয়োজনীয় খরচ দিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
নির্দেশনায় আদালতকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে- ফৌজদারি মামলায় সরকারি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ভাতা প্রদানে নতুন অর্থনৈতিক কোড/খাত সৃজন এবং এই খাতে অর্থ বরাদ্দে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। ৩১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে মো. মামুন নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে এই ঘটনার পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মামুন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
নিহতের পরিবারের দাবি, চোর ভেবে শিশু হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্য এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপারেরা মিলে মামুনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
নিহতের বড় ভাই মাসুদ রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুন সকালে মা ও তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আসে। অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর পর পরিবারের সদস্যদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
‘দুপুরের দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে জানায় যে আমার ভাই খুন হয়েছে। হাসপাতালে এসে জানলাম আনসার সদস্য ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেসের চালক ও হেলপাররা চোর বলে ধাওয়া দিয়ে ধরে পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিচারের জন্য দেশে আইন আছে। একজন মানুষকে এভাবে কেন ওরা পিটিয়ে মারবে। এখন ওর বউ-বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
হাসপাতালের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানের জুতা বিক্রেতা আল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরে দেখি একজন দৌড় দিছে। তার পিছে কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে হাসপালের ভেতরে চলে যায়। পরে ভেতরে গিয়ে দেখি সে মারা গেছে।’
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘শুনেছি জনতা গণধোলাই দিয়েছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’
নির্দিষ্ট করে আনসার সদস্য ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নিহতের মরদেহ উদ্ধারকারী শেরে বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এএসএম আল মামুন সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
বিকেল ৪টার দিকে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মামুন পেশায় একজন চা বিক্রেতা। শিশু হাসপাতালের সামনে ঘোরাফেরার সময় তাকে চোর সন্দেহে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে অভিযোগ দিয়েছেন।’
শেরে বাংলা নগর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজাহান মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা করেছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তার নাম-ঠিকানা এখনও জানতে পারিনি। তাকে ঢাকায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
মারধর করে হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্য সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকা মহানগর আনসারের জোন কমান্ডার মো. আম্বার হোসেনের কাছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে একজনকে ঢাকার বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করছে পুলিশ।
‘আনসার সদস্য মারেনি। ফুটেজে আনসার সদস্যদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এটা ভুল তথ্য। মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্তে ৭টি স্বর্ণের বারসহ এক চোরাকারবারিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর-৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সকালে জীবননগর উপজেলার মোল্লাবাড়ীর মোড় এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এসময় এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ৮২৯ দশমিক ২৭ গ্রাম (৭১ ভরি ৪ রতি)। আটক চোরাকারবারি জুয়েল হোসেন দর্শনার দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
মহেশপুর-৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, স্বর্ণের বারগুলো শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন জুয়েল।
রাজধানীর উত্তরায় ট্রেনে কাটা পড়ে আহমেদ সানি ওরফে হানিফ নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আজমপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানু মং মারমা জানান, আহমেদ সানির বাসা মোল্লারটেক এলাকায়। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়েন। খবর পেয়ে কনস্টেবল আজিম হোসেনের মাধ্যমে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
এক যুগ আগে সাদিয়া জাহান প্রভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় অভিনেত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন কুমিল্লার এক আইনজীবী।
অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মাযহারী কুমিল্লা শহরের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী।
নোটিশে ওই আইনজীবী উল্লেখ করেন, যে ‘স্ক্যান্ডাল’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সে বিষয়ে যদি জনসমক্ষে ক্ষমা না চান, তাহলে প্রভার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রভাকে পাঠানো নোটিশে আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী উল্লেখ করেন, ‘আপনি লিগ্যাল নোটিশগ্রহীতা, আপনার কিছু কর্মকাণ্ডকে ধর্ম এবং প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তরুণ প্রজন্মকে গণউৎপাত হেতুতে বিপদগামী করবে বলে আমার বিশ্বাস জন্মানোর কারণে জনস্বার্থে এবং নিজে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপনাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালাম।
‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, কয়েক বছর আগে আপনার একটি স্ক্যান্ডাল ভাইরাল হয়েছে। মিডিয়া জগতে কাজ করলে সত্য-মিথ্যা অনেক স্ক্যান্ডাল ভাইরাল হয়ে থাকে। আপনার স্ক্যান্ডালের বিষয়ে আমরা সেই ঘটনা রটনা হিসেবে গণ্য করায় তা আমাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘উক্ত বিষয়ে আপনার (প্রভা) নৈতিক ভিত্তির জবাব আপনার বিবেকের কাছে দেবেন বলে বিশ্বাস করি, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জাতীয় কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত আপনার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে জানতে পেরেছি আপনার ২০১০ সালে ২২ বছর বয়স ছিল। সে সময় জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে আপনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের একপর্যায়ে আপনারা বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, যা পরবর্তীতে আপনার পার্টনার দ্বারা পাবলিক হয়।’
২০১০ সালের ভিডিওকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালে কেন অভিনেত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠানো হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী বলেন, ‘তারকাদের নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ে, যার অধিকাংশই মিথ্যা। পার্টনারের সঙ্গে প্রভার যে ভিডিওটি ২০১০ সালে আলোচনায় আসে, সেটি নিয়ে আমার সংশয় ছিল।
‘সম্প্রতি অভিনেত্রী প্রভা তার স্ক্যান্ডালটি নিয়ে তার পার্টনারকে দোষারোপ করেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয়ে এটা কোনো সাজানো স্ক্যান্ডাল নয়। পরোক্ষভাবে প্রভা তা স্বীকার করে নিয়েছেন। এ ধরনের স্ক্যান্ডালের কারণে সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে। যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে। তাই পাবলিকলি ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাকে এই উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’
এটি নিয়ে প্রভা আগেও মুখ খুলেছেন, নতুন করে কেন মুখ খুলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রভা আগে এটি নিয়ে কথা বলেছেন, এটা আমার জানা নেই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার ডাক বিভাগের রেজিস্ট্রি ৫১৪ নম্বর রসিদের মাধ্যমে এডি তথা প্রাপ্তিস্বীকারসহ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশটি অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা, প্রযত্নে আহসান হাবীব নাসিম, অভিনয়শিল্পী সংঘ কার্যালয় ১০/এ, ব্লক-এ রোড নম্বর ২, নিকেতন, গুলশান-১ ঢাকা ঠিকানায় পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:দেশে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় কমিউনিটি পুলিশ ও বিট পুলিশের সক্ষমতা জোরদার করতে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ইউএনওডিসি।
এ উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘প্রজেক্ট ইনসেপশন এবং ব্রিফিং মিটিং’-এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে এটিইউ ও ইউএনওডিসি’র যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটি পুলিশ সফলভাবে কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এটাকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা বিট পুলিশিং সামনে নিয়ে এসেছি। বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং একে অপরের পরিপূরক।
‘সন্ত্রাসবাদ দমনে ইউএনওডিসি রুট লেভেলে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এজন্য তারা আমাদের টুলসগুলো ব্যবহার করতে চায়। সে লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই মিলে আমরা সফলভাবে কাজ করছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আমাদের দেশে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগামী দিনে এটা যেন সাসটেইনেবল হয় তা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। আমরা সব সময় চাই সন্ত্রাসবাদ যেন দেশে মাথাচাড়া দিতে না পারে।’
এটিইউ ও ইউএনওডিসির যৌথ উদ্যোগ সারাদেশে সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশ প্রধান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কানাডা পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এটিইউ-এর অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন। তিনি তার বক্তব্যে অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে কমিউনিটি ও বিট পুলিশের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐকান্তিক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ইউএনওডিসি’র দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইন্টেলিজেন্স সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন শান্তিবাহিনী ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। দুই যুগের কালো অধ্যায় শেষে আলো ফেরে পাহাড়ে।
পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে আবার সবচেয়ে শান্ত ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত বান্দরবান। কিন্তু গত বছর থেকে এই জনপদ পুনরায় অশান্ত হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সংগঠনের সশস্ত্র কর্মকান্ড, জঙ্গিদের অভয়ারণ্য, হত্যা, প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলি, অপহরণের ঘটনায় শান্তিচুক্তির পূর্বাবস্থায় ফিরছে না তো পাহাড়?- এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
সূত্রে জানা যায়, ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র তৎপরতা চালানো কেএনএফ মনে করে, পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদিম নিবাস। দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে তাদের ভূমি দখল করে নেয় এবং কোটাসহ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো তাদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে বিভিন্ন অপরাধ করছে।
এসব থেকে মুক্তির যুক্তি তুলেই গড়ে তোলা হয় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ।
পাহাড়ে ২০১৭ সালে কেএনভি নামে একটি সামাজিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে এটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ নামে সশস্ত্র সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। সশস্ত্র এই সংগঠনের নেতারা শতাধিক সক্রিয় সদস্যকে প্রতিবেশী দেশের কাচিন, কারেন প্রদেশ ও মনিপুর রাজ্যে প্রশিক্ষণে পাঠায়। সেসব স্থানে কমান্ডো প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৯ সালে তারা সশস্ত্র অবস্থায় ফিরে আসে বান্দরবানে।
দেশের রুমা সীমান্ত ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত এই সংগঠনের সশস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে ৬ শতাধিক সদস্য রয়েছে।
কেএনএফ-এর সশস্ত্র সদস্যরা বর্তমানে বান্দরবান ও রাঙামাটির অন্তত ৫টি উপজেলায় ঘাঁটি গেড়ে এসবিবিএল, একে-৪৭, এসএমজি, পিস্তল ও নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
পর্যটন শিল্পে ধস
বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি সংগঠন ও কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে। ১৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই অভিযানের কারণে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পর্যটক-শূন্যতায় জেলার দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল কার্যত পথে বসার যোগাড়। অনেক হোটেল-মোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ কর্মচারী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।
অন্যদিকে জেলার থানচি ও রুমা উপজেলার ২ শতাধিক নৌযান, জেলার পর্যটক বহনকারী ৩ শতাধিক চাঁদের গাড়ি ও ৩শ’ জন ট্যুরিস্ট গাইড বেকার সময় কাটাচ্ছে। জুম চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় পাহাড়িরা নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকট পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
থমকে গেছে উন্নয়ন কার্যক্রম
বান্দরবানের তিন উপজেলায় অপহরণ, গুলি, হত্যা ও অপহরণ-বন্দিত্বের বাস্তবতায় ব্যহত হচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রম। সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ, ব্রিজ, কালভার্ট ও স্কুল ভবন নির্মাণে কাজ করা শ্রমিকরা তিন উপজেলা ছেড়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় অপহরণের শিকার হতে পারে এমন ভাবনায় তারা জেলা সদরে ফিরছে। অন্যদিকে জেলা থেকে শ্রমিকরা উপজেলায় উন্নয়ন কাজ করতে যেতে চাচ্ছে না। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।
শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
কেএনএফ ও জঙ্গিবিরোধী যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে গত জানুয়ারি থেকে রুমার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেড় শতাধিক শিশুর শিক্ষা জীবন অনিয়শ্চতার মধ্যে পড়েছে।
বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরথাহ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসতলাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুননুয়াম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেসপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যান ও জনচলাচলে বাধা
রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে চলাচল করা পরিবহনের মালিক সমিতিকে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে গাড়ি না পাঠানোর জন্য ‘নিষেধাজ্ঞা জারি করে’ কেএনএফ। ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের এই ‘নিষেধাজ্ঞা জারির’ পর গাড়িচালকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও দু’দফায় অপহরণের ঘটনা ঘটে।
১৫ মার্চ রাত ৭টার পর থেকে বান্দরবান-রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছিসহ চিম্বুক সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে ওই তিন উপজেলা সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অপহরণ, গুলি, জিম্মি
যৌথ অভিযানের সময় ২ কেএনএফ সদস্য ও কেএনএফ-এর গুলিতে মগ পার্টির ৩ জন নিহত হয় এবং ১১ মার্চ থানচি থেকে কেএনএফ ১২ জন নির্মাণ শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং ৪ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়।
১২ মার্চ দুপুরে কেএনএফ-এর গুলিতে সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হন। আহত হন আরও দুই সেনা সদস্য।
১৫ মার্চ রুমার লংথাসি ঝিরি এলাকায় সড়কে কাজ করতে গিয়ে কেএনএফ সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আনোয়ারসহ ৯ জনকে ধরে নিয়ে যায়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বম সম্প্রদায়ের ৩০ জনকে যৌথ বাহিনী আটক করার দাবি জানিয়ে গত ১৮ মার্চ এক বার্তায় কেএনএফ তাদের মুক্তির দাবি জানায়। অন্যথায় আনোয়ার হোসেনকে হত্যার হুমকি দেয়। তারা দাবি করে, তাদের দাবিকৃত জায়গায় ল্যান্ড মাইন এবং বোমা ফাঁদ পাতা হয়েছে।
অন্যদিকে যৌথ বাহিনী জানায়, এই সময়ে পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জঙ্গি ও কেএনএফ-এর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
এলাকাছাড়া ১৩২ পরিবার
গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর বান্দরবানের ১৩২টি পরিবারের ৫৪৮ জন মানুষ মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি মুলপিপাড়া থেকে রুমা সদরে ১৪০ মারমা নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিলেও তারা ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
১০ মার্চ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ৪ নং বড়থলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩টি পাড়া থেকে ৫৬ পরিবারের ২২০জন তংচঙ্গ্যা রেইছা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় নেয়।
আসাম রাইফেলসের হাত ফসকে পালিয়েছে কেএনএফ প্রধান
সূত্রে জানা যায়, কেএনএফ-এর সহায়তায় বম সম্প্রদায়ের অনেকে মিজোরামে আশ্রয় নিলেও তাদের অনেকে চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরুর বিভিন্ন হোটেলে কাজ করতে পাড়ি জমান। তারা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয় কেএনএফ।
এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সংগঠনটির চিফ অফ স্টাফ পানতালা হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভানচুন লিয়ান মাস্টারের উপস্থিতিতে মিজোরামের লংতালাই জেলার হুমুনুয়াম গ্রামে এই ১০ মার্চ বৈঠক ডাকা হয়।
আসাম রাইফেলস ওই বৈঠক থেকে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেসিএনএ) দুই ক্যাডার রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সালাপি পাড়ার নাথান বমের সহকারী জিংরামলিয়ান বম ও রোয়াংছড়ির অবিচলিত পাড়ার (গিলগার) কেএনএফ কমান্ডো পাজাউ বমকে গ্রেপ্তার করে। আসাম রাইফেলস দাবি করে, তারা মিয়ানমারে অস্ত্র পাচার করছে। এ সময় নাথান ও ভানচুন লিয়ান মাস্টার পালিয়ে যায়।
দ্রুত অবস্থার উন্নতি চান ব্যবসায়ীরা
জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়িতে রং-এর কাজ করতে যাওয়া ঠিকাদার আশিষ দেবনাথ বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা কাজ ফেলে শ্রমিকদের নিয়ে জেলা সদরে চলে এসেছি।’
বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রাজিব বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের পর্যটন ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা কতটা বিপাকে পড়েছি তা বলে বুঝাতে পারব না। আমরা এসব থেকে দ্রুত পরিত্রাণ কামনা করছি।‘
বান্দরবান জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মো. মুসা বলেন, ‘আগে কখনও কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গাড়ি চালকদের আক্রমণ করতো না। এখন যেভাবে আক্রমণ ও অপহরণ হচ্ছে তাতে আমার উদ্বিগ্ন। আশা করি সবার প্রচেষ্টায় এসব বন্ধ হবে।’
এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, ‘এলাকার সব সম্প্রদায়ের শান্তির জন্য তাদের সব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর অস্ত্র সমর্পণ করা উচিত। তাহলে এই এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায় মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে এক উপপরিদর্শক (এসআই) আহত হওয়ার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তুরাগ থানা পুলিশ শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তার করে।
ওই থানা ভবনের কনফারেন্স রুমে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার তুরাগ থানার ফুলবাড়ীয়ার টেকপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে কারবারিরা মাদক কেনাবেচা করছেন বলে খবর পায় পুলিশ। সেই খবরের ভিত্তিতে তুরাগ থানার এসআই শাহিনুর রহমান খান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাত ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আবদুর রউফ নামের একজন বাদে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। ওই ব্যক্তি ছাদের পানির ট্যাংকের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন।
মোর্শেদ আলম বলেন, ‘রউফ পানির ট্যাংকের আড়াল থেকে বের হয়ে এসআই শাহিনুরকে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকে জখম করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসআই শাহিনুরকে জরুরি ভিত্তিতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
‘এই ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত তিন মাদক কারবারি আবদুর রউফ, মো. রাজু ও ফারুক মিয়া ওরফে টুলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনসহ অন্যান্য পলাতক অভিযুক্তরা পেশাদার মাদক কারবারি। তারা দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে তুরাগ এলাকাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য