‘আগে আমরা চার পাঁচজন সরিষা আবাদ করতাম। এখন অনেক মানুষ সরিষা চাষ করছে, প্রায় দেড়শ জনের মতো। আরও যারা আছেন এখন তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন সরিষা আবাদে।’
এমনটাই জানালেন নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কাচারি পাড়ার সরিষা চাষি হারুন উর রশিদ।
তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গতবার যেখানে করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে।
কৃষক হারুন বলেন, ‘সরিষাতে খরচ চার হাজার টাকার মতো বিঘা প্রতি। ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি সরিষার টাকা দিয়ে বোরো আবাদ উঠি যায়। সরিষার কোনো কিছু ফেলানি যায় না, গাছ খড়ি এবং খৈল গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেক লাভ সরিষাত।’
আরেক কৃষক আলমগীর ইসলাম বলেন, ‘আমন ও বোরো দুটি ধানই আমরা আবাদ করতাম বছরে। এখন তিনটি ফসল ফলাচ্ছি বছরে। আমন এবং বোরোর মাঝখানের তিন মাস জমি পতিত থাকত। কোনো আবাদ করতাম না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সময়ে সরিষা করছি।
‘সরিষায় খরচ কম। সেচ দিতে হয় না। সার কীটনাশকও তেমন প্রয়োজন হয় না। সরিষা এখন আমাদের পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে। এবার যারা আবাদ করেননি তারাও আগামীতে সরিষা আবাদ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
আব্দুস ছামাদ নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সরিষা গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছে। এলাকা পরিদর্শনে আসছেন কর্মকর্তাগণ। অনেকে আসছেন ছবি তুলতে।
‘আর ১৫ দিন পরই সরিষা কাটাই মাড়াই শুরু হবে। গতবার আবাদ একটু কম হলেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারও ভালো।’
সরেজমিনে কাচারি পাড়া এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, ১৪০ জন কৃষক ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। দুই বিঘা থেকে শুরু করে পাঁচ বিঘা পর্যন্ত সরিষা লাগিয়েছেন জমিতে।
সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় অনেকে পেয়েছেন সার ও বীজ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরিষা করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ কর্মকর্তারা বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় কৃষকদের।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘বিঘা প্রতি ৫ মণ উৎপাদন হবে সরিষা, যেখানে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হবে। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা খরচ হয় একজন কৃষকের। বিপরীতে একজন কৃষকের ধানে বিঘা প্রতি লাভ আসে তিন হাজার টাকার মতো।’
কাচারী পাড়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে এবং পরামর্শ দিয়ে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে আস্তে আস্তে চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন ১৪০ জন কৃষক সরিষা করছেন। এই গ্রাম এখন সরিষা গ্রামে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে সরিষা আবাদের কোনো বিকল্প নেই এবং কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা সফল হয়েছি নীলফামারীতে।’
কুন্দপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইউনিয়নের প্রতি পাড়া মহল্লায় আবাদ হয়েছে সরিষার। সরকারের প্রণোদনা সফল হয়েছে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দিন দিন চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছেন এ এলাকার কৃষকরা। এখন আর পতিত থাকছে না কোনো জমি।’
আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের দেয়া ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ ভাগ পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭৭৭ হেক্টর জমিতে ৯১০০ টন সরিষায় ৩৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:একরাতের বৃষ্টি আর্শীবাদ হয়েই এসেছিল আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রোববার রাতে হওয়া বৃষ্টিতে আম বাগানগুলোর ধুলাবালি, শুকনো মুকুল, সবই ধুয়ে গেছে। আম বাগানগুলোতে যেন ফিরেছে সজীবতা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর আম বাগানে এবছর মুকুল এসেছে প্রায় ৯৫ ভাগ। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলনের আশা করছেন আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ বৃষ্টিপাত তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়কই হবে বলছেন তারা।
কৃষক ও আম উদ্যোক্তারা জানান, ৫ থেকে ৬ মাসের ব্যবধানে অনেকদিন পর দীর্ঘ সময় ধরে হওয়া এ বৃষ্টিপাতের ফলে, সার্বিকভাবে কৃষির জন্য উপকার বয়ে এনেছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি রিচার্জ হবে, যা খুবই দরকার ছিল। অন্যদিকে এ বৃষ্টিতে আমের গুটিগুলো বড় হবে, সেই সঙ্গে পোক্ত হবে।
বৃষ্টিপাতের পর আম বাগানে সজীবতা ফিরে এসেছে জানিয়ে শিবগঞ্জের আম উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল। বৃষ্টি হলেও ঝড়ো হাওয়া তেমন ছিল না। ফলে আম বাগানের কোনো ক্ষতি হয়নি বরং বৃষ্টির কারণে সেচের কাজ হয়ে গেছে।’
শুধু শামীমই নয় অন্য আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা বেশ উৎফুল্ল বৃষ্টির পর বাগানগুলোর সজীব চেহারা দেখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে সদরে ৪০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জে ৩০ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১০ মিলিমিটার, নাচোলে ৪৫ মিলিমিটার, ভোলাহাটে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যার গড় প্রায় ২৯.৪ মিলিমিটার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, আম বাগানগুলোতে এ সময় সেচের প্রয়োজন ছিল, আবার অনেক বাগানে সেচ দেয়ার সুবিধা নাই, বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই সেচের কাজটি হয়ে গেল। এতে করে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচলেন বাগান মালিকরা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বৃষ্টির পানিতে আম গাছের ধুলাবালি, পোকামাকড় সবকিছুই ধুয়েমুছে গেছে, সেই সঙ্গে গাছে থাকা গুটিগুলো বড় হওয়া ও পোক্ত হওয়ার জন্য এ একটা বৃষ্টিই অনেক কার্যকর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোববার যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে আমাদের মাঠের বোরো ধান ও আমের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনবে। এ সময় যে সেচ দিতে হতো সেটা দেয়া থেকে বেঁচে যাবেন কৃষকরা। সার্বিকভাবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটিতে যে পানি সঞ্চয় হলো, বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকার মাটি যে রিচার্জ হলো তা সার্বিকভাবে কৃষির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে দমকা বাতাস আর শিলা বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে কাঁচা-পাকা গম ও ভুট্টা ক্ষেত। বৃষ্টির সঙ্গে শিলা থাকায় গমের দানা কালচে হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে আকাশ মেঘাছন্ন হয়ে শুরু হয় দমকা বাতাস আর ছোট ছোট শিলার সঙ্গে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি যা শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হয়। গত দুইদিনের ঘণ্টা চারেক বাতাস আর বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে কাঁচা-পাকা গম ও ভুট্টা ক্ষেত। গম নুয়ে পড়ে অল্প ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও শিলাবৃষ্টির কারণে গমের রং কালচে আকার ধারণ করতে পারে।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে গম ও ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
নিশিপুর গ্রামের কৃষক সোহেল বলেন, ‘যে বাতাস আর বৃষ্টি হয়েছে তাতে গম সব নুয়ে পড়েছে। গম কাটা যাবে বলে ভরসা পাচ্ছি না।’
করমদি গ্রামের ভুট্টা চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমির ভুট্টা কেটে মাড়াইয়ের জন্য খোলাই এনে রাখার পর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। ভুট্টা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পর গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছে। ভুট্টার রং কেমন হয়ে গেছে।’
একই এলাকার চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘মাঠে থাকা ভুট্টা অর্ধেক কাটা হয়েছিল আর অর্ধেক মাঠে ছিল। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। নিচু জমি হওয়ার কারণে আবার পানি জমে গেছে। এখন গাছ থেকে ফসল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যাবে।’
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘দমকা বাতাসের সঙ্গে শিলা বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠে থাকা উঠতি ফসল বিশেষ করে গম, ভুট্টা, মসুরি নুয়ে পড়েছে। সেগুলোর কিছুটা ক্ষতি হবে এটা সঠিক, তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও সঠিক নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর ফলে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া জানান, ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে এসআরও (স্ট্যাটুটারি রুলস অ্যান্ড অর্ডার)-এর মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করত। তবে সেটা ১৫ মার্চের পর থেকে আর কার্যকর নয়। এখন ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট জোগাড় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইলে করতে পারবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানির জন্য মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) মেয়াদ থাকে। সরকার নতুন করে আইপি না দেয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি জানান, দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দেশের কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের সঠিক বাজার মূল্য পায় সে লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপে দেশীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যটির সঠিক মূল্য পাবে।’
বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে।
এদিকে অন্যান্য বছরের মতো এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যটির দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকারকে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তবে প্রতিবার রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন। তাই সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে।
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শামিম হোসেন বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় এবার রোজার আগে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা নেই। তবে দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানি নিষিদ্ধ না করে কোটা নির্ধারণ করলে ভালো হতো।’
চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৯ হাজার ৮৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন ও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকায় গত ২ মাস ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির পরিমাণ অনেকাংশেই কমেছে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর এলাকার খোলা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:হিমালয়ের সমতল অঞ্চল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষকেরা এবার বোরো আবাদের পরিবর্তে গম আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। চাষিরা বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কমে যাবার আশংকায় তারা গম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তারা
বলছেন, গম আবাদে সেচ খরচ কম। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে এবার ব্যাপক ফলনও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে এবার গমের দামও ভালো পাবার আশা করছেন তারা।
বিস্তীর্ণ মাঠ, যতদূর চোখ যায় দুলছে গমের শিষ। এরপর চারপাশে চোখ ঘোরালেও একই চিত্র চোখে পড়বে। প্রতি বছর এই জমিগুলোতে বোরোর আবাদ করা হলেও এ বছর চাষিরা চাষ করছেন গম। তারা বলছেন গমের আবাদে খরচ কম। খুব বেশি সেচের প্রয়োজন পড়েনা। গমেরগঞ্জপরে পাট, পাটের পরে তারা আমন আবাদ করবেন। এতে গম আবাদ করলে লাভের পরিমাণটা বেশি। তাই এবার অনেক চাষিই গমের আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
চাষিরা বলছে, গমের ফলনও ব্যাপক আবহাওয়াও অনুকূলে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম ঘরে তুলবেন তারা। তাদের আশা সঠিকভাবে গমের ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণ করবেন সরকার । তবে চাষিদের সহযোগিতা করছেন না কৃষি সম্পধসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও করেছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গধামের ফারুক হোসেন জানান, এবার দুই একর জমিতে গম লাগিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তিনবার সার এবং তিনবার সেচ দিতে হয়েছে। বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম পাব আশা করি।
সদর উপজেলার সীতাগধামের সলেমান আলী বলেন, ‘গমের ফলন এবার ভালো হয়ছে। সরকার যদি ন্যায্যমূল্য দেয়, তবে চাষিরা ভালো লাভবান হবেন। তবে কৃষি অফিস আমাদের খোঁজ নেয়না। তিন বিঘা গমের আবাদ করেছি একদিনও অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। ধনীলোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার বীজ দিয়ে আসে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজউদ্দিন জানান, এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে গম পাঁকা শুরু হয়েছে। আর এক দু সপ্তাহের মধ্যে গম কাটা শুরু হবে। এবার কৃষকরা গম আবাদে লাভবান হবে।
এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। ৮৩ হাজার ৫০০ টন গম উৎপাদনের আশা করছেন বলে জানালেন তিনি।
খরার তীব্রতায় বোরো ধানের গাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে। নলকূপের মাধ্যমে সেচ দেয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় বছরের পর বছর পানিতে ডুবে ফসলহানির হাওরাঞ্চলে এবার বৃষ্টি কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরে লম্বাবাক ফুটবল খেলার মাঠে সোমবার দুপুরে কয়েক শ’ কৃষক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন। দোয়া পরিচালনা করেন লম্বাবাক জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া আহমদ জুয়েল।
দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়া গ্রামের মুরব্বি মো. সবর আলী জানান, অন্য বছর এমন সময় বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির খবর নেই। খরা ও তাপদাহে হাওরের বুকে ধানি জমি খা খা করছে।
কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ফাল্গুনে বৃষ্টি কম হলেও আগে কখনও প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ দেখা যায়নি। এ বছর এমনিতেই খরার ভাব। হাওরের কোথাও পানি নেই। নদী থেকে শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিলেও তা কিছুক্ষণ পরই শুকিয়ে যায়। এখন ধানের থোড় গজানোর সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে থোড় অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির জন্য আমরা হাওরে দোয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’
উপজেলার ৬টি ছোট-বড় হাওরে ৪৫০টি পুকুর এবং সুরমা, পিয়াইন ও কাইল্লানী নদীর অংশবিশেষ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মৌসুমের এই সময়টাতে দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট।
হাওরের কৃষক শাহেদ আলী তালুকদার বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। জমি তৈরি, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার এবং এক দফা সার ও কীটনাশক দিয়েছি। ধান গাছগুলো ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিল।
‘আশা ছিল প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ ধান হবে। কিন্তু বৃষ্টি ও পানির অভাবে গাছগুলো বেড়ে উঠছে না। এই সময়ে জমিতে হাল্কা বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় নদী থেকে অনেক টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। ৩/৪ দিন পর পর পানি দিয়েও জমি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না।’
জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে জামালগঞ্জে মোট ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু পানি না থাকায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পানির ঘাটতি পূরণে নতুন কিছু পাম্প বসাতে এবং সার ব্যবহার করতে।
‘এবার ধান ক্ষেত দেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যাচ্ছে যে কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। আর বৃষ্টি হলে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।’
সরল ও একক আকৃতির পাট পাতা দেখেই যারা এতদিন অভ্যস্ত; পাট নিয়ে তাদের বোধহয় এবার নতুন করে পাঠের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সোনালি আঁশের পাতা বলে ব্যবহার করা একটি ছবি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এসেছে নানা তথ্য।
পাট পাতা আসলে কেমন তা নিয়েও এখন চলছে আলোচনা। জাতীয় পাট দিবসের প্রচারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাট পাতা বলে প্রকাশ করা পাতার ওই ছবি ব্যবহার নিয়ে দুদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। তবে কৃষি গবেষকরা বলছেন, ওই পাতা কোনোভাবেই পাটের পাতা নয়।
সামাজিক যোগাযোগাধ্যম ফেসবুকে হচ্ছে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। পাট পাতার ছবি ও সেই ফেস্টুনের ছবি পাশাপাশি পোস্ট করে অনেকেই লিখেছেন, এটা পাট পাতা না। কেউ লিখেছেন, এটা গাঁজার পাতা।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা মোটেই পাটের পাতা না। যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটির মতো এক ধরনের পাট পাতা আছে ঠিক, তবে এটি সেই পাতা না।’
পাট পাতা চেনার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাটের পাতা সরল প্রকৃতির। যে কয় ধরনের পাতা আছে, এরকমই। এক ধরনের পাটের পাতা আছে যেটি কিছুটা আঙ্গুলের মতো। তবে ফেস্টুনের দেয়া ছবির সঙ্গে এর মিল নেই।’
সোমবার একটি নিউজ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালনের দিন রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সৌজন্যে একটি ফেস্টুনে পাটজাত পণ্যের সঙ্গে সবুজ পাতার ছবি দেয়া হয়। খাঁজ কাটা ওই সবুজ পাতা দেখে অনেকেই এটা পাট পাতা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কয়েকজন পথচারী মন্তব্য করেন, এটা পাটের পাতা না কি গাঁজা গাছের পাতা?
একজন কৃষি গবেষক জানান, কেনাফ পাতার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে ছাপা হওয়া ছবিটার। এটিও পাটের মতো পরিবেশবান্ধব আঁশ জাতীয় ফসল।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাধারণত দুু ধরনের পাট চাষ হয়। একটি হলো সাদা বা তিতা পাট আর অন্যটি হলো তোষা বা মিঠা পাট। এছাড়া আরও একটি উদ্ভিদ থেকেও পাটের মত তন্তু পাওয়া যায় যার নাম মেস্তা। কিছু কিছু দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চাষ হয় কেনাফ।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকেও আছে পাট পাতার আকৃতি। ভাসমান একটি শাপলা, শাপলার দুই পাশে ধানের শীষবেষ্টিত পাট পাতা ও চারটি তারকা সেঁটে দিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতীক। জাতীয় প্রতীকে যে পাট পাতা, সে পাট পাতাও সরল ও একক আকৃতির।
আরও পড়ুন:পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে অবদান রাখায় ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেবে সরকার।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী রোববার সচিবালায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ৬ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে এদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেবেন। এ ছাড়া মতিঝিলের করিম চেম্বারে বহুমুখী পাট পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী।
এবারের জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- পাট শিল্পের অবদান- স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। আগামী ১২ থেকে ১৬ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে ৫ দিনব্যাপী বহুমুখী পাট পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান পাটমন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, পাটবীজ, পাট ও পাটজাত পণ্যের গবেষণায় সেরা গবেষক শ্রেণিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদ আল হোসেন, সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষি শ্রেণিতে কিশোরগঞ্জের আবু হানিফ, সেরা পাট উৎপাদনকারী চাষি হিসেবে পাবনার মো. এনামুল হক, পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা প্রতিষ্ঠান (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) শ্রেণিতে উত্তরা জুট ফাইবার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) শ্রেণিতে জোবাইদা করিম জুট মিল মিলস লিমিটেড, পাটের সুতা উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসাবে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড, পাটের সূতা রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জনতা জুট মিলস লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসাবে সোনালি আঁশ লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্রিয়েশন (প্রা.) লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা মহিলা উদ্যোক্তা হিসাবে তরঙ্গ এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা পুরুষ উদ্যোক্তা হিসাবে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টকে পুরস্কার দেয়া হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ পাট চাষি সমিতি, বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লেমিনেটিং জুট ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি, বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজেজিইএ), বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন (বিজেএ), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিজেএসএ) জাতীয় পাট দিবসে সম্মাননা দেয়া হবে বলে জানান পাটমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য