নওগাঁ সদর উপজেলার কির্ত্তিপুর ইউনিয়ন বিনে ফতেপুর গ্রামের সাগর আলী। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। আবাদের জন্য তেমন কৃষি জমি নেই। গত ১৪-১৫ বছর যাবৎ নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে বাজারে সবজি বিক্রি করে আসছেন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউটিউবে মাশরুম চাষের একটি ভিডিও দেখে সিন্ধান্ত নেন তিনি মাশরুম চাষ করবেন। এর পর মার্চ মাসের শুরুর দিকে যশোর ডিএম সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চারদিনের একটি কোর্স করেন মাশরুম চাষের ওপর।
এরপর অক্টোবর মাসে সেখান থেকে কিছু বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়ির পাশের জায়গায় শুরু করেন মাশরুম চাষ। তার খামারে বর্তমানে দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট করা ৩০০টি মাশরুমের স্পন রয়েছে।
খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভুসি, বীজ, ছাঁউনিসহ সবমিলে খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকার মতো। ইতোমধ্যে তিনি মাশরুম বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। আগামী তিন মাস যাবৎ তিনি তার খামার থেকে মাশরুম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
প্রতিদিনই সাগরের মাসরুমের খামার দেখতে আসছেন অনেকই আবার কেউবা মাশরুম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা তার এই সফলতা দেখে আগামীতে এমন উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান।
স্থানীয় বিনে ফতেপুর গ্রামের বুলবুলি বেগম বলেন, ‘সাগর চাচার মাশরুম খামার দেখে খুবই ভালো লাগছে। একবার বীজ ৩০ থেকে নাকি ৩৫ বার ফলন পাওয়া যায়। আমরাও বাড়ির ফাঁকা জায়গায় এমন মাশরুম চাষ করার পরিকল্পনা করছি।’
সাজ্জাত হোসেন নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সাগর চারমাস আগে থেকে এখানে মাশরুম চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি সফল একজন চাষি। সবজি বিক্রির পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে থাকেন। প্রথম মাসেই তিনি মাশরুম চাষে লাভবান হয়েছেন। কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব, আমরা এমন উদ্যোগ নিব বলে ভাবছি।’
নওগাঁ শহরের থানার মোড় এলাকা থেকে মাশরুম কিনতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মুসাব্বের। তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে মাশরুম কিনলে অনেক সময় কীটনাশক যুক্ত হয়। যার কারণে ফ্রেস ও টাটকা মাশরুম যাতে পাই, সেজন্য সাগর ভাইয়ের এখানে এসেছি। মাশরুম খামার থেকে সংগ্রহ করে ৩০০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি কিনলাম।’
মাশরুম চাষি সাগর আলী বলেন, ‘খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভুসি, ইত্যাদি দিয়ে ওয়েষ্টার জাতের মাসরুমের খামার গড়ে তুলেছি। প্রথম স্পন প্যাকেট থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় দুই কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি মাশরুম বিক্রি করে থাকি। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম পাইকারি ২৫০ এবং খুচরা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকি। যশোরে চার দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।
‘গত বছরের শেষের দিকে মাশরুম খামার গড়ে তুলি। সবমিলে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। খরচের টাকা উঠে কিছু লাভও হয়েছে। বর্তমানে খামারে মাশরুম বীজ আছে তা থেকে আগামী তিন মাস বিক্রি করা যাবে মাশরুম। আশা করছি তিন মাস মাশরুম বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকার আয় করতে পারব।’
সাগর আরও বলেন, ‘খামারে প্রতিদিন তিন বেলা পানি দিয়ে স্প্রে করতে হয়। আমার কাজে আমার মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করে থাকেন। যদি কৃষি অফিস থেকে সহায়তা পেতাম তবে আগামীতে আরও বড় পরিসরে মাশরুমের আবাদ করতাম।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ওষধি গুণসম্পন্ন খাবার। ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। দিন দিন নওগাঁতেও মাশরুম চাষের আগ্রহ বাড়ছে। মাশরুম চাষ বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষি সাগর আলী বর্তমান এটি চাষে সফল হয়েছেন। যদি কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অবশ্যই তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জমি না থাকলেও বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। সহজেই মাশরুমের বীজতলা তৈরি করা যায়।’
আরও পড়ুন:‘কাইলগো বিয়ালে যেইরহম কলসের কান্দায় দেওই বরছে এই রহম যদি আবারো দেওই নামে তয় মোগো খ্যাতের তরমুজ সব পইচ্যা যাইবে। এই তিনডা মাস দিনেরে দিন রাইতেরে রাইত কই নায়, খালি খ্যাতের পিছে খাটছি। আর কয়ডা দিন গ্যালেও তরমুজ কাইট্টা আডে উডাইতে পারতাম। হঠাত দেওইডা নাইম্মা মোগে সাড়ে সর্বনাশ করছে। এই ক্ষতি ক্যামনে কাডাইয়া উডমু মোরা।’
ভারি বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমার পর বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী এলাকার তরমুজ চাষী ফজলুল হক এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বরগুনাসহ উপকূলে টানা তিন ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয়। এতে জেলার সব তরমুজ ক্ষেতেই পানি জমে যায়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমলে আটঘাঁট বেঁধে ক্ষেতে নামেন চাষিরা। সেচ পাম্প দিয়ে রাতভর প্রচেষ্টায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের চেষ্টা চালান তারা।
বুধবার সকালে বরগুনা সদরের হেউলীবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টানা ভারি বর্ষণে তরমুজের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এতে পচন ধরার পাশাপাশি তরমুজ পরিপক্ব হওয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তরমুজ চাষী রেজাউল করিম বলেন, ‘মুই প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ লাগাইছি। দেওইতে সব খ্যাতই তলাইয়া গ্যাছে। কেবল তরমুজটা পোক্ত অইয়া ওডা শুরু হরছেলে। বেডের মাডি ভিজা, এই তরমুজে পঁচন ধইর্যা নষ্ট অইয়া যাইতে।’
রেজাউল জানান, ভারী বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যে ক্ষেতের ২৫ ভাগ তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। আরও দু-একদিন বৃষ্টি থাকলে দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। একই অবস্থা এই এলাকার হাজার হাজার চাষির তরমুজ ক্ষেতের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বরগুনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশাবাদ ছিল হেক্টরপ্রতি ৪০ টন ফলন হবে।
কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা অনুসারে বরগুনায় তরমুজের ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী, বুড়িরচর, নলটোনা ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে।
এছাড়া আমতলী উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে ওইসব এলাকার তরমুজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘ভারী বর্ষণে বরগুনার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্রায় শত কোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি না বেশিরভাগ তরমুজ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমরা কৃষকদের সেচে সহযোগিতাসহ এ অবস্থায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:একরাতের বৃষ্টি আর্শীবাদ হয়েই এসেছিল আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রোববার রাতে হওয়া বৃষ্টিতে আম বাগানগুলোর ধুলাবালি, শুকনো মুকুল, সবই ধুয়ে গেছে। আম বাগানগুলোতে যেন ফিরেছে সজীবতা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর আম বাগানে এবছর মুকুল এসেছে প্রায় ৯৫ ভাগ। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলনের আশা করছেন আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ বৃষ্টিপাত তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়কই হবে বলছেন তারা।
কৃষক ও আম উদ্যোক্তারা জানান, ৫ থেকে ৬ মাসের ব্যবধানে অনেকদিন পর দীর্ঘ সময় ধরে হওয়া এ বৃষ্টিপাতের ফলে, সার্বিকভাবে কৃষির জন্য উপকার বয়ে এনেছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি রিচার্জ হবে, যা খুবই দরকার ছিল। অন্যদিকে এ বৃষ্টিতে আমের গুটিগুলো বড় হবে, সেই সঙ্গে পোক্ত হবে।
বৃষ্টিপাতের পর আম বাগানে সজীবতা ফিরে এসেছে জানিয়ে শিবগঞ্জের আম উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল। বৃষ্টি হলেও ঝড়ো হাওয়া তেমন ছিল না। ফলে আম বাগানের কোনো ক্ষতি হয়নি বরং বৃষ্টির কারণে সেচের কাজ হয়ে গেছে।’
শুধু শামীমই নয় অন্য আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা বেশ উৎফুল্ল বৃষ্টির পর বাগানগুলোর সজীব চেহারা দেখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে সদরে ৪০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জে ৩০ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১০ মিলিমিটার, নাচোলে ৪৫ মিলিমিটার, ভোলাহাটে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যার গড় প্রায় ২৯.৪ মিলিমিটার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, আম বাগানগুলোতে এ সময় সেচের প্রয়োজন ছিল, আবার অনেক বাগানে সেচ দেয়ার সুবিধা নাই, বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই সেচের কাজটি হয়ে গেল। এতে করে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচলেন বাগান মালিকরা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বৃষ্টির পানিতে আম গাছের ধুলাবালি, পোকামাকড় সবকিছুই ধুয়েমুছে গেছে, সেই সঙ্গে গাছে থাকা গুটিগুলো বড় হওয়া ও পোক্ত হওয়ার জন্য এ একটা বৃষ্টিই অনেক কার্যকর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোববার যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে আমাদের মাঠের বোরো ধান ও আমের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনবে। এ সময় যে সেচ দিতে হতো সেটা দেয়া থেকে বেঁচে যাবেন কৃষকরা। সার্বিকভাবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিপাতের ফলে মাটিতে যে পানি সঞ্চয় হলো, বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকার মাটি যে রিচার্জ হলো তা সার্বিকভাবে কৃষির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে দমকা বাতাস আর শিলা বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে কাঁচা-পাকা গম ও ভুট্টা ক্ষেত। বৃষ্টির সঙ্গে শিলা থাকায় গমের দানা কালচে হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে আকাশ মেঘাছন্ন হয়ে শুরু হয় দমকা বাতাস আর ছোট ছোট শিলার সঙ্গে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি যা শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হয়। গত দুইদিনের ঘণ্টা চারেক বাতাস আর বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে কাঁচা-পাকা গম ও ভুট্টা ক্ষেত। গম নুয়ে পড়ে অল্প ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও শিলাবৃষ্টির কারণে গমের রং কালচে আকার ধারণ করতে পারে।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে গম ও ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
নিশিপুর গ্রামের কৃষক সোহেল বলেন, ‘যে বাতাস আর বৃষ্টি হয়েছে তাতে গম সব নুয়ে পড়েছে। গম কাটা যাবে বলে ভরসা পাচ্ছি না।’
করমদি গ্রামের ভুট্টা চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমির ভুট্টা কেটে মাড়াইয়ের জন্য খোলাই এনে রাখার পর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। ভুট্টা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পর গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছে। ভুট্টার রং কেমন হয়ে গেছে।’
একই এলাকার চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘মাঠে থাকা ভুট্টা অর্ধেক কাটা হয়েছিল আর অর্ধেক মাঠে ছিল। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। নিচু জমি হওয়ার কারণে আবার পানি জমে গেছে। এখন গাছ থেকে ফসল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যাবে।’
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘দমকা বাতাসের সঙ্গে শিলা বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠে থাকা উঠতি ফসল বিশেষ করে গম, ভুট্টা, মসুরি নুয়ে পড়েছে। সেগুলোর কিছুটা ক্ষতি হবে এটা সঠিক, তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও সঠিক নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর ফলে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া জানান, ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে এসআরও (স্ট্যাটুটারি রুলস অ্যান্ড অর্ডার)-এর মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করত। তবে সেটা ১৫ মার্চের পর থেকে আর কার্যকর নয়। এখন ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট জোগাড় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইলে করতে পারবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানির জন্য মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) মেয়াদ থাকে। সরকার নতুন করে আইপি না দেয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি জানান, দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দেশের কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের সঠিক বাজার মূল্য পায় সে লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপে দেশীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যটির সঠিক মূল্য পাবে।’
বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে।
এদিকে অন্যান্য বছরের মতো এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যটির দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকারকে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তবে প্রতিবার রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন। তাই সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে।
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শামিম হোসেন বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় এবার রোজার আগে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা নেই। তবে দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানি নিষিদ্ধ না করে কোটা নির্ধারণ করলে ভালো হতো।’
চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৯ হাজার ৮৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন ও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকায় গত ২ মাস ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির পরিমাণ অনেকাংশেই কমেছে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর এলাকার খোলা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:হিমালয়ের সমতল অঞ্চল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষকেরা এবার বোরো আবাদের পরিবর্তে গম আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। চাষিরা বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কমে যাবার আশংকায় তারা গম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তারা
বলছেন, গম আবাদে সেচ খরচ কম। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারণে এবার ব্যাপক ফলনও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে এবার গমের দামও ভালো পাবার আশা করছেন তারা।
বিস্তীর্ণ মাঠ, যতদূর চোখ যায় দুলছে গমের শিষ। এরপর চারপাশে চোখ ঘোরালেও একই চিত্র চোখে পড়বে। প্রতি বছর এই জমিগুলোতে বোরোর আবাদ করা হলেও এ বছর চাষিরা চাষ করছেন গম। তারা বলছেন গমের আবাদে খরচ কম। খুব বেশি সেচের প্রয়োজন পড়েনা। গমেরগঞ্জপরে পাট, পাটের পরে তারা আমন আবাদ করবেন। এতে গম আবাদ করলে লাভের পরিমাণটা বেশি। তাই এবার অনেক চাষিই গমের আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
চাষিরা বলছে, গমের ফলনও ব্যাপক আবহাওয়াও অনুকূলে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম ঘরে তুলবেন তারা। তাদের আশা সঠিকভাবে গমের ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণ করবেন সরকার । তবে চাষিদের সহযোগিতা করছেন না কৃষি সম্পধসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও করেছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গধামের ফারুক হোসেন জানান, এবার দুই একর জমিতে গম লাগিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তিনবার সার এবং তিনবার সেচ দিতে হয়েছে। বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম পাব আশা করি।
সদর উপজেলার সীতাগধামের সলেমান আলী বলেন, ‘গমের ফলন এবার ভালো হয়ছে। সরকার যদি ন্যায্যমূল্য দেয়, তবে চাষিরা ভালো লাভবান হবেন। তবে কৃষি অফিস আমাদের খোঁজ নেয়না। তিন বিঘা গমের আবাদ করেছি একদিনও অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। ধনীলোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার বীজ দিয়ে আসে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজউদ্দিন জানান, এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে গম পাঁকা শুরু হয়েছে। আর এক দু সপ্তাহের মধ্যে গম কাটা শুরু হবে। এবার কৃষকরা গম আবাদে লাভবান হবে।
এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। ৮৩ হাজার ৫০০ টন গম উৎপাদনের আশা করছেন বলে জানালেন তিনি।
খরার তীব্রতায় বোরো ধানের গাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে। নলকূপের মাধ্যমে সেচ দেয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় বছরের পর বছর পানিতে ডুবে ফসলহানির হাওরাঞ্চলে এবার বৃষ্টি কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরে লম্বাবাক ফুটবল খেলার মাঠে সোমবার দুপুরে কয়েক শ’ কৃষক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন। দোয়া পরিচালনা করেন লম্বাবাক জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া আহমদ জুয়েল।
দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়া গ্রামের মুরব্বি মো. সবর আলী জানান, অন্য বছর এমন সময় বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির খবর নেই। খরা ও তাপদাহে হাওরের বুকে ধানি জমি খা খা করছে।
কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ফাল্গুনে বৃষ্টি কম হলেও আগে কখনও প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ দেখা যায়নি। এ বছর এমনিতেই খরার ভাব। হাওরের কোথাও পানি নেই। নদী থেকে শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিলেও তা কিছুক্ষণ পরই শুকিয়ে যায়। এখন ধানের থোড় গজানোর সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে থোড় অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির জন্য আমরা হাওরে দোয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’
উপজেলার ৬টি ছোট-বড় হাওরে ৪৫০টি পুকুর এবং সুরমা, পিয়াইন ও কাইল্লানী নদীর অংশবিশেষ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মৌসুমের এই সময়টাতে দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট।
হাওরের কৃষক শাহেদ আলী তালুকদার বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। জমি তৈরি, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার এবং এক দফা সার ও কীটনাশক দিয়েছি। ধান গাছগুলো ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিল।
‘আশা ছিল প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ ধান হবে। কিন্তু বৃষ্টি ও পানির অভাবে গাছগুলো বেড়ে উঠছে না। এই সময়ে জমিতে হাল্কা বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় নদী থেকে অনেক টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। ৩/৪ দিন পর পর পানি দিয়েও জমি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না।’
জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে জামালগঞ্জে মোট ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু পানি না থাকায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পানির ঘাটতি পূরণে নতুন কিছু পাম্প বসাতে এবং সার ব্যবহার করতে।
‘এবার ধান ক্ষেত দেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যাচ্ছে যে কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। আর বৃষ্টি হলে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।’
সরল ও একক আকৃতির পাট পাতা দেখেই যারা এতদিন অভ্যস্ত; পাট নিয়ে তাদের বোধহয় এবার নতুন করে পাঠের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সোনালি আঁশের পাতা বলে ব্যবহার করা একটি ছবি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এসেছে নানা তথ্য।
পাট পাতা আসলে কেমন তা নিয়েও এখন চলছে আলোচনা। জাতীয় পাট দিবসের প্রচারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাট পাতা বলে প্রকাশ করা পাতার ওই ছবি ব্যবহার নিয়ে দুদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। তবে কৃষি গবেষকরা বলছেন, ওই পাতা কোনোভাবেই পাটের পাতা নয়।
সামাজিক যোগাযোগাধ্যম ফেসবুকে হচ্ছে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। পাট পাতার ছবি ও সেই ফেস্টুনের ছবি পাশাপাশি পোস্ট করে অনেকেই লিখেছেন, এটা পাট পাতা না। কেউ লিখেছেন, এটা গাঁজার পাতা।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা মোটেই পাটের পাতা না। যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটির মতো এক ধরনের পাট পাতা আছে ঠিক, তবে এটি সেই পাতা না।’
পাট পাতা চেনার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাটের পাতা সরল প্রকৃতির। যে কয় ধরনের পাতা আছে, এরকমই। এক ধরনের পাটের পাতা আছে যেটি কিছুটা আঙ্গুলের মতো। তবে ফেস্টুনের দেয়া ছবির সঙ্গে এর মিল নেই।’
সোমবার একটি নিউজ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালনের দিন রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সৌজন্যে একটি ফেস্টুনে পাটজাত পণ্যের সঙ্গে সবুজ পাতার ছবি দেয়া হয়। খাঁজ কাটা ওই সবুজ পাতা দেখে অনেকেই এটা পাট পাতা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কয়েকজন পথচারী মন্তব্য করেন, এটা পাটের পাতা না কি গাঁজা গাছের পাতা?
একজন কৃষি গবেষক জানান, কেনাফ পাতার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে ছাপা হওয়া ছবিটার। এটিও পাটের মতো পরিবেশবান্ধব আঁশ জাতীয় ফসল।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাধারণত দুু ধরনের পাট চাষ হয়। একটি হলো সাদা বা তিতা পাট আর অন্যটি হলো তোষা বা মিঠা পাট। এছাড়া আরও একটি উদ্ভিদ থেকেও পাটের মত তন্তু পাওয়া যায় যার নাম মেস্তা। কিছু কিছু দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চাষ হয় কেনাফ।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকেও আছে পাট পাতার আকৃতি। ভাসমান একটি শাপলা, শাপলার দুই পাশে ধানের শীষবেষ্টিত পাট পাতা ও চারটি তারকা সেঁটে দিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতীক। জাতীয় প্রতীকে যে পাট পাতা, সে পাট পাতাও সরল ও একক আকৃতির।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য