১০ দফা দাবি আদায়ে ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, নেয়া হয়েছে প্রস্তুতিও। তবে এখনও এই সমাবেশের অনুমতি মেলেনি। কোথায় সমাবেশ হবে তা-ও ঠিক হয়নি।
নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বর অথবা হাদিস পার্কে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সমাবেশের স্থান বা অনুমতির ব্যপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কেসিসি বা কেএমপি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেছেন, খুলনায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
আর বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা আশা করছেন সমাবেশ হবে। অনুমতিও মিলবে। তবে ইতোমধ্যে পুলিশ গিয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোয় সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে কি না তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।
এই সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে খুলনা বিএনপি। এ জন্য দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্ধডজন নেতাসহ বিভাগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
নেতারা জানান, বিভাগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা কারাগারে বন্দি থাকলেও খুলনায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতারা বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ঘটিয়ে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিতে চায়।
৪ ফেব্রুয়ারির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান বলেন, ‘চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। বিএনপির কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
‘হামলা হলে পাল্টা হামলার মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রাজপথ দখলে রাখার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে নেতা-কর্মীরা প্রস্তত আছেন।’
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বিএনপির সমাবেশের অনুমতি চেয়ে কেসিসি ও কেএমপিকে চিঠি দিয়েছি। সোনালী ব্যাংক চত্বর অথবা শহীদ হাদিস পার্কে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসতে যাতে বাধা দেয়া না হয় সে বিষয়ে কেএমপি কমিশনারকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হবে, কোনো ধরনের বিশৃংখলা হবে না। তারা বলেছেন, আলোচনা করে পরে আমাদের জানাবেন। পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে।
‘আমাদের আগের বিভাগীয় গণসমাবেশের সময় সব গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই আমরা বলেছি, এভাবে পরিবহন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের সমাবেশে যারা আসবে তাদের যেন বাধা না দেয়া হয় এবং তাদের ওপর যেন কোনো আক্রমণ না করা হয়।’
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল বলেন, ‘খুলনার সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চাই। আমরা চাই না এই সমাবেশের আগে সরকার বা আওয়ামী লীগ বাধা সৃষ্টি করুক বা কোনো ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করুক।’
তিনি আরও বলেন ‘৪ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সফল করতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। আশা করছি অন্যান্য বিভাগের মতো খুলনার সমাবেশ সফল করার মধ্য দিয়ে সরকারকে আমরা বার্তা দিতে পারব, অবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিন। তা না হলে দুর্বার আন্দোলনে এ সরকারের পতন হবে।’
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জুলাই মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শুরু করে বিএনপি। ৫ম দফায় ৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের বিভাগীয় সদরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
আরও পড়ুন:বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন বাঘ, চিত্রা হরিণ, কুমিরসহ নানা প্রজাতির মাছ, সরীসৃপ ও পাখির আবাসস্থল। সম্প্রতি এ বনে গাছকাটা প্রায় শূন্যের কোটায় নামলেও থেমে নেই বেশকিছু অনিয়ম।
হরিণের মাংস ও বাঘের চামড়া পাচার চলছে এখনও। নদ ও খালে অসাধু জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় নষ্ট হচ্ছে জলজ পরিবেশ। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব পর্যটন না হওয়ায় বনে বাড়ছে দূষণও।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে একটি বাঘের চামড়াসহ দুজনকে আটক করে র্যাব। ওই ব্যক্তিরা বনের মধ্যে ছাগলের মাংসের মধ্যে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে বাঘ শিকার করেছিলেন।
র্যাব-৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, ‘এ শিকার তারা প্রায় কোটি টাকা মূল্য বিক্রি করার জন্য শৌখিন মানুষ খুঁজছিলেন গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাদের আটক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘কারা এই পাচার দলের সঙ্গে সংযুক্ত ও কারা এর ক্রেতা, তার কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তদন্তাধীন।’
বিভিন্ন হিসেবে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জরিপ অনুয়ায়ী, বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা আছে ১১৪টি। তবে ২০০৪ সালের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। অর্থ্যাৎ ১৫ বছরে বন থেকে ৩২৬ টি বাঘ কমে গেছে।
বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছে ৮টি, শিকারিদের হাতে মারা গেছে ১৩টি, লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে ৫টি, দুর্বৃ্ত্তদের হাতে মারা যাওয়া বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে ১৯টি ও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা গেছে একটি। বাকি বাঘগুলি কোথায় গেল তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
বন বিভাগের দাবি, সম্প্রতি সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নতুন করে শুরু হয়েছে বাঘ জরিপ। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের মার্চ মাসে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করবে বন বিভাগ।’
বাঘের পাশাপাশি সুন্দরবনে থেমে নেই হরিণ শিকারও। বন বিভাগ ও স্থানীর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন শিকারিকে হরিণের মাংস ও চামড়াসহ আটক করা হয়েছে।
বনজীবীরা জানান, হরিণ শিকারের জন্য নাইলনের দড়ির ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ গহীন বনে বেশি হরিণ শিকার করা হয়। বাজারে প্রতি কেজি হরিণের মাংসের মূল্য ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধে অনেকে আটক হয়েছেন। এই চোরা শিকারিরা অনেক শক্তিশালী। এদের বিরুদ্ধে মানুষ সাক্ষ্য দিতেও ভয় পায়। তারা এই সুযোগ নিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে, আবারও অপরাধে লিপ্ত হয়। তবে ব্যাপকভাবে যে হরিণ শিকার হয়, তা নয়।’
তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব ডিভিশনে ৫১৬ জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৯০ জন। এত কম জনবল নিয়েও আমরা যথেষ্ট অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করছি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় অপরাধে জড়িতদের তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার করা হচ্ছে। তথ্য দিলে ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ফলে কেউ হরিণ শিকার করলে আমাদের কাছে তথ্য আসছে, আমরা আটক করতে পারছি।’
২০১৮ সালের জরিপ মতে, এক থেকে দেড় লাখ হরিণ রয়েছে। বাঘ জরিপের আওয়তায় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে হরিণের সংখ্যাও জানাবে বন বিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের ৮০ শতাংশ খাবার আসে হরিণ থেকে। তাই একই প্রকল্পের আওতায় বাঘের শিকার হরিণ ও বন্য শূকর-এ ধরনের প্রাণীর জরিপ করা হচ্ছে।'
সুন্দরবন বনদস্যুদের হাত থেকে বনজীবীরা মুক্তি পেলেও, বনজীবীদের বিষের উৎপাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সুন্দরবন। জেলেদের ভাষ্য মতে, বনে এখন অল্প সংখ্যক স্থানে অধিক পরিমাণে জেলে একত্রে মাছ শিকার করতে যান। ফলে অনেক সময়ে কোন কোন জেলে বেশি মাছ আহরণ করতে পারেন না। তবে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে একসঙ্গে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
জেলেরা জানান জানান, একবার কোনো খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে ১৫ দিনের মধ্যে ওই খালে কোনো মাছ তো পাওয়ায় যায় না। এমনকি মাছের ডিম বা পোনা পাওয়া যায় না।
বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, কিছু অসাধু জেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে জড়িত। কিন্তু তারা অল্পদিনে আইনের গণ্ডি পেরিয়ে আবারও বনে গিয়ে অপধার শুরু করে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে অভ্যন্তরে বর্তমানে সাতটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলে হলো, করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী। ওইসব স্থানে প্রতি বছর প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এ ছাড়াও নতুন করে আরও চারটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে বনবিভাগ পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করলেও, বাস্তবে তা হয়নি। তারা পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করছে এটা বলা যেতে পারে। আর আমাদের দেশে এটা বাস্তবায়ন হতে আরও অনেক দেরি লাগবে।
তিনি বলেন, ‘বনে পর্যটকরা পলিথিন নিয়ে যাচ্ছেন। খাবারের অংশসহ সেই পলিথিন ফেলে আসছে, এটা বন্যপ্রাণী খাচ্ছে। ফলে তাদের শরীরে এটি ইফেক্ট পড়বে। এখারে বন বিভাগের তদারকির অভাব আছে, কারণ বনে জনবল সংকট। আর আমাদের দেশের মানুষও পরিবেশ সম্পর্ক সচেতন নয়।’
নওগাঁয় গণধর্ষণের মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এক আইনজীবীর স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এই নির্দেশ দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মকবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কারাগারে যাওয়া ওই নারী নিজেকে বিধবা পরিচয় দিয়ে একই গ্রামের হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষনের অভিযোগ এনে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০১৩ সালে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি বছরের ৯ মার্চ ওই মামলাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে রায় দেয়া হয় এবং সব আসামি বেকসুর খালাস পান।
এরপর মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ আদালতে ওই নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই নারী আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মো. মেহেদী হাসান তালুকদার তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কলেজছাত্রীর পরিবারের লোকজনকে পেটানোর মামলায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায়মোহন কুমার রায়কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে ফরিদপুর র্যাব-৮ এর কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাবের ভাষ্য, সোমবার রাত ৮টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে রায়মোহনকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুরের সালথা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা রায়মোহনের সঙ্গে একটি মেয়ের চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত দুই মাস ধরে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ মার্চ দুই পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিস করেন। সেই শালিসে উভয়ের লোকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সালথা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ১০ মার্চ সালথায় ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় মেয়ের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায়মোহন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন ফরিদপুরের একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের ইভটিজিংয়ের শিকার ওই তরুণী।
গত ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ নেতা রায়মোহনকে দ্রুত বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী সেই কলেজ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। একই দিনে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রায়মোহন রায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীল সেনবাগে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করায় বাবাকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ খবর পেয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যায়নি বরপক্ষ।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরিয়া সরদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৩) বাল্যবিবাহের আয়োজন চলছিল। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক বিয়ে বন্ধ করে দিই। এসময় কনের বাবাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা নেয়া হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের খবর পেয়ে বরপক্ষ কনের বাড়িতে আসেনি।'
নওগাঁয় শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক ও আরও একজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
আদালতে হাজির হয়ে সোমবার ওই পাঁচজন জামিন আবেদন করলে আবেদন নাকচ করে সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমতিয়াজুল ইসলাম।
কারাগারে যাওয়া চার শিক্ষক হলেন সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৫৬ বছর বয়সী মো. আজাহারুল ইসলাম, ৪৩ বছরের সহকারী শিক্ষক মো. সাজেদুর রহমান সাজু, ৩৯ বছরের শ্রী সুবল মন্ডল, ৫১ বছেরের মো. নজরুল ইসলাম। বাকিজন দাসকান্দি গ্রামের মৃত হক সাহেবের ছেলে মিঠু।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ১ জুন কীটনাশক পানের পর মারা যায় ১৪ বছরের সিফাত হোসেন। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। তার বাবা মিজানুর রহমান এ ঘটনায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩১ মে সকালে স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাতকে নবম শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থী মারধর করে। ঘটনাটি ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারকে জানালে ওই দিনই তার বাবা প্রধান শিক্ষক আজহার আলীর কাছে অভিযোগ করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তবে প্রধান শিক্ষক বিষয়টিতে কর্ণপাত না করে উল্টো নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে মারপিট করতে বলেন, আর না হয় হাতে মেয়েদের চুড়ি পরে থাকতে বলেন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থীর বাবা সাজেদুর রহমান মারধরের শিকার শিক্ষার্থীকে গালিগালাজ করেন এবং বিদ্যালয় থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়ার হুমকি দেন।
এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবল মন্ডল ও নজরুল ইসলামও মারধরের শিকার শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। ন্যায়বিচার না পাওয়ায় বাড়ি ফিরে ওই দিন রাতে কীটনাশক খায় মারধরের শিকার সিফাত। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ১ জুন দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা মিজানুর বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে নওগাঁ আমলী আদালতে ওই বছরের ৯ জুন মামলা করেন। মামলার এজাহারে থাকা বাকি আসামিরা ওই বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন:মাদারীপুর সদরে রাজিব সরদার হত্যা মামলায় ২৩ জনকে ফাঁসি এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন-আব্দুল হাই হাওলাদার, আব্দুল হক হাওলাদার, জহিরুল হাওলাদার, রাসেল হাওলাদার, রাজা হাওলাদার, কালু হাওলাদার, সোবহান হাওলাদার, তুষার শরীফ, ইউসুপ হাওলাদার, আজিজুল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, রেজাউল হাওলাদার, শামিম হাওলাদার, আহাদ হাওলাদার, দলিলউদ্দিন হাওলাদার, অলিলউদ্দিন হাওলাদার, জসিম হাওলাদার, মনির হাওলাদার, সুমন শরীফ, সাগর শরীফ, হাফিজুল কাজী, কালু কাজী, আলাউদ্দিন কাজী।
যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিরা হলেন-সেকেন হাওলাদার, উজ্জ্বল হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার, নুরুল আমিন হাওলাদার, বাকিবিল্লা হাওলাদার।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, গত ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে মামা আলী হাওলাদারের নার্সারিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন রাজিব সরদার। এ সময় তিনি পৌর শহরের হরিকুমারিয়া এলাকায় পৌঁছালে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার তিন দিন পর নিহতের মামা আলী হাওলাদার বাদী হয়ে জামাল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, আছাদ হাওলাদারসহ ৪৭ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সদর থানার তৎকালীন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব হোসেন তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে বিচারিক আদালত দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তিতর্ক শেষে উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করে।
এদিকে এ রায় ঘোষণার সময় ২২ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। মামার সঙ্গে বিরোধের জেরে তার ভাগ্নেকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষরা। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে দুই রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে উখিয়ার বালুখালীর ১৩ নম্বর ক্যাম্পের জি ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-১৩নম্বর ক্যাম্পের জি ব্লকের বেচা মিয়ার ছেলে ৩০ বছরের মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ হোসেনের ছেলের ৩৪ বছরের মোহাম্মদ রফিক। এ ঘটনায় ২৮ বছরের মোহাম্মদ ইয়াছিন নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বালুখালীর ১৩ নম্বর ক্যাম্পে জি/ব্লকে ১৫-১৬ জনের একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যান। এতে ঘটনাস্থলে রফিক নামে এক যুবক নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে রফিক নামের আরও এক যুবক মারা যান। আহত যুবককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পরিচালক (এএসপি) ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি এপিবিএন ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মন্তব্য