বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয় আসনের উপনির্বাচনে তিনটিতেই নৌকা প্রতীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এর বাইরে বিএনপির সাবেক এক আলোচিত সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির হয়ে একজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের হয়ে ভোটের লড়াইয়ে জিতেছেন একজন।
বুধবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। রাতে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ছয় আসনের ভোটে অনিয়ম বা কারচুপির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট সহিসংতার খবর পাওয়া গেলেও সিইসি বলেছেন, ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনের ভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘৬টি আসনে ৪০ জন প্রার্থী ছিল। ভোটকেন্দ্র ৮৬৭ ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হয়েছে। সবকটি আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ জন।’
এই উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জয় পেয়েছেন কলার ছড়া প্রতীকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ ও বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু জয়ী হয়েছেন।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা একেএম রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীকে আর ঠাকুরগাঁও-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জয় পেয়েছেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
আওয়ামী লীগের ৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিয়াউর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৯২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩৯৯ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের আব্দুল ওদুদ পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৬৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন আপেল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৯৮০ ভোট।
বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সংগঠনটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক মার্কা আবদুল মান্নান আকন্দ পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৬৪ ভোট। মান্নান আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দলছুট সাত্তার
জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটের আমেজ সবচেয়ে বেশি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে। নানা কারণেই এ আসনে বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জয়ী হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অবশেষে জয় পেলেন তিনিই।
বুধবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস। কলার ছড়া প্রতীকে ৪৪ হাজার ৮১৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আবদুস সাত্তার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ পেয়েছেন ৯৫৮১ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ পেয়েছেন ৩২৫৮ ভোট।
বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পদত্যাগ করেও এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ ছাড়েননি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি লড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বতন্ত্রসহ তিনি ওই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।
ছয়বার নির্বাচন করে তিনি মাত্র একবার পরাজিত হন। তবে তার আবার নির্বচনে লড়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিস্মিত হন, ক্ষুব্ধ হন। তারা এই পদক্ষেপকে দেখছেন দলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে।
তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন সংগ্রহ থেকে শুরু করে সোমবার দুপুর ১২টা প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্ত সাত্তারের নির্বাচন করাকে কেন্দ্র করে নানা চমক দেখেছে সাধারণ ভোটাররা। বিএনপির সাবেক এই নেতার পক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ায় ভোটারদের মনে জেগে ওঠে নানা প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগ আসনটিতে নৌকার প্রার্থী দেয়নি। তবে দলটি সমর্থিত তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির সাবেক এই নেতাকে জেতাতে সেই তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আবার প্রত্যাহার না করেও সাবেক সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা এক বিবৃতিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরে দাঁড়ানোয় উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার জয়ের বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিতই হয়ে যায়। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুল হামিদ ভাসানী, গোলাপফুল মার্কা পাওয়া জহিরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ।
নির্বাচনী সমীকরণ মিলিয়ে যখন ভোটাররা সাত্তারের বিপক্ষে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী পাচ্ছিলেন না তখনই প্রচার ও প্রসারে আলোচনায় আসেন আবু আসিফ। সাত্তারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রচারণা চালালেও বিএনপির সাবেক নেতা আবু আসিফের প্রচারণায় দলের কোনো প্রভাবশালী নেতা ছিলেন না। অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সাত্তারের বিপক্ষে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসেন তিনি।
তবে সেখানে ছিল আরেক চমক। হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ। নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষসহ স্বজনরাও জানেন না তিনি কোথায় আছেন। প্রথমে কোনো অভিযোগ না দিলেও মঙ্গলবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা মেহরিন। এ ঘটনায় নতুন করে বিরূপ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
আবু আসিফ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন দলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। তারা বলছে, উকিল সাত্তারের জয় নিশ্চিতে আসিফের ওপর চাপ ছিলো। তাই আসিফকে সরিয়ে ফেলে সাত্তারের পথ পরিষ্কার করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আবু আসিফ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন-এমন প্রচারও আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিফের স্ত্রী ও বাসার দারোয়ানের একটি অডিও কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে, যা এমন প্রচারের পক্ষে হাওয়া দিচ্ছে। যদিও ওই অডিও টেপের বক্তাদের পরিচয় নিয়ে পুলিশও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, দলছুট নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জেতাতে আওয়ামী লীগের এমন মরিয়া হওয়ার কারণ বিএনপি ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিএনপিকে জনগণের কাছে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগের এমন প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। তাছাড়া ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রেখেই সাত্তারের পক্ষে মরিয়া হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামেন।
জাসদের তানসেন জয়ী
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা একেএম রেজাউল করিম তানসেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। ৮৩৪ ভোটে হেরে যান হিরো আলম।
ঠাকুরগাঁওয়ে জাপার হাফিজ উদ্দিন
ঠাকুরগাঁও-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন হাফিজ উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একতারা প্রতীকের গোপাল চন্দ্র রায় (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট।
একটিতে দ্বিতীয়, আরেকটিতে জামানত হারালেন হিরো আলম
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের উপনির্বাচনে অল্পের জন্য হেরে গেছেন আলোচিত হিরো আলম। এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তানসেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। মাত্র ৮৩৪ ভোটের জন্য এই আসনের এমপি হতে পারেননি তিনি।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট বৈধ ভোটের (কাস্টিং ভোট) আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে। তবে এই আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭৪ ভোট। জামানত রক্ষার জন্য দরকার ছিল ১১ হাজার ৪৬৮ ভোট।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জাকির হোসেন (বগুড়ার উপনির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা) বলেন, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে কাস্টিং ভোটের ৮ শতাংশ থেকে একটি ভোট বেশি পেতে হবে। এর কম ভোট পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
বগুড়ার উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের সই করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মান্নান ২১ হাজার ৮৬৪ ভোট পেয়েছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিউজবাংলার ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি
আরও পড়ুন:সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
মন্তব্য