দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন। আর রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
তানিয়া আমীর বলেন, ‘মামলাটি শুনানি করার জন্য আমরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। আদালত তাদের (জামায়াত) অনেকবার সময় দিয়েছে। তারা গড়িমসি করে রেডি করছে না। আজকে ফাইনাল আদেশ দিল আদালত। যদি আট সপ্তাহের মধ্যে ফাইল (আপিলের সার সংক্ষেপ) শুনানির জন্য রেডি না করে তাহলে ডিফল্ট (খারিজ) হয়ে যাবে।’
জামায়াতের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আজকে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় বিষয়টি ছিল। আদালত আগামী দুই মাসের জন্য সময় দিয়েছে। এ দুই মাসের মধ্যে কনসাইজ স্টেটমেন্ট (আপিলের সার সংক্ষেপ) জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আর কোনো সময় দেবে না বলে উল্লেখ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুসারে মামলার শুনানিতে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে। আশা করি জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে। আর দুই মাসের মধ্যে সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে পারব।
‘আমাদের প্রধান আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও এহসান সিদ্দিক আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তারা এ মামলাটি পরিচালনা করবেন।’
জামায়াতকে দেয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছিল, এ নিবন্ধন দেয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দেয়।
তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
এর আগে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
এ রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১২ জুন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আদালত। পরে ওই বছরের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেয়া হয়। সে সময় সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের কথা ছিল।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করে।
রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
ভোলার তজুমদ্দিনে স্থানীয়দের সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন।
সোনাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়িতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
পিটুনিতে প্রাণ হারানো দুজন হলেন তজুমদ্দিনের বালিয়াকান্দি গ্রামের মো. নয়ন (৩০) ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার খাসমহল এলাকার আমির হোসেন (২৮)। তারা নিয়মিত গরু চুরি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পিটুনিতে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভূঁইয়া বাড়িতে একদল ব্যক্তির গরু চুরি করতে ঢোকেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চিৎকার করলে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে চোরদের ধাওয়া করেন। এর একপর্যায়ে জনতার হাতে দুই যুবক ধরা পড়ে, যাদের সংঘবদ্ধভাবে পেটানো হয়।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন দুজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গণপিটুনির শিকার দুই যুবককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি জানান, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মরদেহ ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতীতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ বছরে এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
‘সে টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। এই মর্মেও তদন্তে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।
‘১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই গায়েব হয়ে গেছে। তবে সবকিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।’
সাংবাদিক রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব, যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেসব কথাবার্তা বলেছেন, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কারও বেডরুমের পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না।
‘এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি যে, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখন যেহেতু সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখন কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন তো দেখতেছি ওরা কাজ করতেছে। একটু হইলেও আমরা হোপফুল। আশা করা যাচ্ছে পজেটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।’
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে ব্যর্থতার একপর্যায়ে ডিবি থেকে র্যাবকে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কথার ফানুস হয়েই নিষ্ফল হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ স্টলে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলমান অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর দশম দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর সব্যসাচী স্টলে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বাংলা একাডেমি প্রেসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে সদস্য সচিব করা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধি মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ এবং শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
মেহেরপুরে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা এবং পরিবেশ দূষণের ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালত চারটি ইটভাটাকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের শুকুরকান্দি গ্রামে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত চারটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানটি পরিচালনা করেন গাংনী উপজেলা (ভূমি) সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন ।
অভিযানে দেখা যায়, ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছিল। এর ফলে পরিবেশের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ছিল।
ইটভাটাগুলোর মধ্যে থ্রি স্টারকে ১ লাখ টাকা, জনতা ব্রিকসকে ১ লাখ, রুপসা ব্রিকসকে ১ লাখ এবং সমতা ব্রিকসকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতায় ইটভাটাগুলোর চুলা পানি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাঁচা ইটগুলো পানি দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়।
ভ্রাম্যমান আদালত জানিয়েছে, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলার একটি বুক স্টলে বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোলের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একুশে বইমেলা হলো দেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা। এটি বাংলাদেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনস্থল। এই মেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা শুধু বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ণ করে না, বরং ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দেশে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:চলমান অভিযান ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে, সে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এ দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, দলীয় বাহিনীর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে।
‘গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেণি তৈরি করে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এককথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। আর এখন অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এ সকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ, জেলা ম্যাজিস্ট্রটরা, স্পেশাল আদালতের বিচারকগণ, আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবীগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলব।
‘অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে আমি বলব, কোনো শয়তান যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে না যেতে পারে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনজীবীদের আমি বলব, কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সবোর্চ্চ সতর্ক থাকুন।’
আরও পড়ুন:বিচার বিবেচনা ছাড়া হুটহাট কাউকে জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর রাজারবাগে মঙ্গলবার দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার এজাহার সুন্দর করে লিখেন, তথ্য দিন। গত ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। তা না হলে এ পদে থাকার কোনো মানে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পতিত সরকার ও তার দোসররা লাখ লাখ টাকায় দেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মবতন্ত্র ভয়াবহ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সব বিভাগ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
মন্তব্য