নানা কারণে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা সে দেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় তাদেরকে এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের রেকর্ড নেই এমন কর্মীরা এই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বাজারে আমাদের নতুন কর্মী প্রবেশ করছেন। পাশাপাশি দেশটিতে আনডকুমেন্টেড অবস্থায় রয়েছেন এমন কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটা দারুণ খবর। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ বলে মনে করছি।’
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এক দিন আগে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম পুনরায় চালুর কথা জানানো হয়েছে। তবে অবৈধ হয়ে পড়া সেসব শ্রমিকই কেবল এই সুযোগ পাবেন যাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই।’
‘কোন কোন খাত এবং কোন দেশের কর্মীরা এর আওতায় আসবেন সে বিষয়ে আমরা এখনও বিস্তারিত জানতে পারিনি। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সেটি নির্ধারণ করে। বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
এই প্রোগ্রামের ঘোষণায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে কর্মরত অবৈধ শ্রমিকদের যাতে তাদের মালিকেরা বৈধভাবে নিয়োগ দিতে পারেন সেটাই এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য। বিদেশি কর্মী আনার জন্য বিভিন্ন দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে অর্থ দেয়ার চেয়ে এ দেশে থাকা অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নিয়োগ দেয়ার খরচ কম।
‘এই প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ফি ধরা হয়েছে ১৫০০ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। তার সঙ্গে মেডিকেল ও অন্যান্য ফি মিলিয়ে মোট খরচ হবে তিন হাজার রিঙ্গিতের মতো।’
গত বছর এই কর্মসূচির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ৭০০ মিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি রাজস্ব আয় রেকর্ড করেছে বলে জানান তিনি।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে দূতাবাসের একটি সূত্র বলছে, এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখের মতো হতে পারে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ ধাপে এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করেন বলে মালয়েশিয়ার সরকার জানায়।
কর্মী বৈধ করার প্রক্রিয়া
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কালো তালিকাভুক্ত অর্থাৎ ইমিগ্রেশনে অভিযোগ রয়েছে এমন শ্রমিক এবং অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এমন অভিবাসী ছাড়া যে কেউ এই লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।
উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান এবং গৃহকর্মী- এই আটটি খাতে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধভাবে নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এসব কাজের জন্য ১৫টি ‘সোর্স কান্ট্রির’ কথা উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়া, যার অন্যতম বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন কিন্তু সঠিক কাগজপত্র নেই এমন বিদেশি কর্মীরা এ কর্মসূচির আওতায় অর্থের বিনিময়ে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন অথবা দেশে ফেরত যেতে পারবেন। মূলত নিয়োগকর্তারা ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) ২.০’-এর মাধ্যমে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু করেছেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্টরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে মাত্র এক দিন। তারপর হবে বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যা পরিচালনা করবে ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিক্যাল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সি।
পরবর্তী প্রক্রিয়ায় রয়েছে রিক্যালিব্রেশন ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস, প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং শুল্ক প্রদান। সব নথি সম্পূর্ণ হওয়ার পর নিয়োগকর্তারা কাজের অনুমতিপত্র ইস্যু করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে শ্রমশক্তি রপ্তানি গুরুত্ব পাবে
বাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেটসহ নানা জটিলতায় মালয়েশিয়াতে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি চলছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে এই প্রক্রিয়া কীভাবে গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়েই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বিদেশ সফর করছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে সর্বোচ্চসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীর বৈধ করাসহ কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা কম খরচে বেশিসংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চাই।’
ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন সরকার এলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এবং এ দেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে আমাদের নীতি একই। বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে আরও সহজে মালয়েশিয়া যেতে পারে এবং তাদের থেকে যাতে দুই দেশই উপকৃত হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করে যাব।’
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। সে অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে ৫ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।
সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মাত্র ২৫টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অবধি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল মালয়েশিয়া।
এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হয় সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। বর্তমানে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। তবে বায়রা তার সব সদস্যকে এই সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
এর আগে বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করেছে। এ কারণেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরে মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
আরও পড়ুন:চলমান সংস্কার কার্যক্রমে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে জাপানি রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক- এই তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে জাপান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবে। আমরা এই তিনটি স্তম্ভের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনি ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমে টোকিওর দৃঢ় সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখায় জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, ‘এই সম্পর্ক সবসময় খুব শক্তিশালী ছিল।’
সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি আমাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেয়।
জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ থেকে জাপানি কোনো কোম্পানি চলে যায়নি। তারা এখানে থাকতে আগ্রহী।’
নিক্কেইয়ের বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রদূত। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ওই সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস জাপানের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন এবং তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাতে পারবেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, টোকিও এই বৈঠককে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
অধ্যাপক ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের গ্যারান্টিযুক্ত একটি নিরাপদ এলাকা তৈরির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, যেখানে সংঘাত শেষ হওয়ার পর বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে তাদের বাড়িতে ফেরার আগে সাময়িকভাবে পুনর্বাসিত করা যেতে পারে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনপ্রত্যাশার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান দুদকের শীর্ষ অবস্থানের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের স্বার্থে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশের আহ্বান জানাই।’
ইফতেখারুজ্জামান দুদকের দুই কমিশনার ও চেয়ারম্যানের নিজের এবং নিকট পরিবারের নামে-বেনামে অর্জিত আয় ও সম্পদের তথ্য, আয়ের বৈধ সূত্রের সঙ্গে অর্জিত আয় ও সম্পদের সামঞ্জস্যতার তথ্য, নিরপেক্ষ নিরীক্ষক কর্তৃক আয় ও সম্পদ বিবরণীর যথার্থতা, পর্যাপ্ততা ও সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, পেশাগত জীবনের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্যের তথ্য চেয়েছেন।
পাশাপাশি উল্লিখিত বিষয়ে কোনো প্রকার অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্তসাপেক্ষে জবাবদিহি করতে প্রস্তুত মর্মে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা এবং ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্টের প্রতি অনড় থাকার পাশাপাশি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকারের আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:তালিকা থেকে স্বেচ্ছায় নাম প্রত্যাহার করলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেছেন, ‘যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, তারা স্বেচ্ছায় এসে স্বীকার করলে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। নয়তো প্রতারণার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সেই পরিচয়ে সুবিধা নেয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণা। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। যাচাই-বাছাইয়ের পর যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দেশে রাজাকারের তালিকা তৈরি করা কঠিন- এ কাজের অগ্রগতি শূন্যের কোটায় বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘জামুকা গঠিত হয়েছে, জামুকার সভা হয়েছে। সেখানে অনেক ফাইন্ডিং বেরিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আসতে পারে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে মূল্যায়ন হয়, যারা মাঠে যুদ্ধ করেছেন এবং যারা নানা আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে সমান আঙ্গিকে সম্মান দিতে হবে। এটার বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা ছিল। তার মধ্যে যেটি যৌক্তিক সেটি আমরা চূড়ান্ত করব।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জামুকা গঠিত হয়েছে আইনের ধারায়। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, কার কাছে কে দায়ী হবে- এটার জন্য বিধি হওয়ার কথা। অথচ এত বছর হলেও এটার কোনো বিধি রচিত হয়নি। ফলে একটা তুঘলকি কারবার হয়েছে।’
আরও পড়ুন:বিগত সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে যে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ছিল, তা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে এসেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থ কম্প্রোমাইজ (আপস) করে আমরা কোনো পররাষ্ট্র সম্পর্ককে বিশ্বাস করি না। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে। জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে পরবর্তী সম্পর্কগুলো চলমান থাকবে।’
কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি তথা বার্ডের লালমাই অডিটোরিয়ামে বুধবার অনুষ্ঠিত ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশনবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের কর্মশালায় সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাজ পরিচালনা করা অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে স্থানীয় সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের কাজ শেষ হলে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতকে যথাযথভাবে আইনগত আহ্বান জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি আরও বলেন, ‘ভারত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং প্রত্যর্পণের একটি আইনগতভাবে বৈধ এবং যথাযথ অনুরোধের সম্মান করে থাকলে, আমরা অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য আহ্বান জানাব।’
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা জানি যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি বিদ্যমান। এ বিষয়ে এরই মধ্যে যা কিছুই বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি এবং সচেতন রয়েছি। এ বিষয়ে ভারত আগামীতে কী করতে যাচ্ছে, তার কোনো প্রাক-বিচার এখনই আমরা করতে চাই না।
‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ আনা এবং তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ভারতকে জানানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখন এই ট্রাইব্যুনালের এবং এর চিফ প্রসিকিউটরের।’
কোনো কারণে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যায় কি না কিংবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা নেয়া যায় কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে জানান ক্যাডম্যান।
তিনি বলেন, ‘বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন প্রয়োজন। আমি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইইউ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি।
‘যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি, সেহেতু এখানে অনেকের সমর্থন পাওয়ার সুযোগই আমাদের রয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন:সমতলের সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের ভেদাভেদ থাকলে তা দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে আয়োজিত আলোচনা সভায় যমুনা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বনজ ও প্রাকৃতিক যে সম্ভার ও সুযোগ আছে, সেটা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত জায়গা হওয়ার কথা। অথচ হয়েছে বিপরীত। এটা মানা যায় না।
‘আমরা চাই কীভাবে অনিয়ম কমিয়ে আনা যায়। বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার প্রযুক্তি ও শিক্ষার ওপর। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী মাসে হবে তারুণ্যের উৎসব। এটা সবার উৎসব হোক। আমি যেন দেখি পার্বত্য জেলাগুলো এখানে ওপরে থাকে এ উৎসবে। এটা বরাবরের মতোই করব।
‘এবার প্রথমবারের মতো হবে। নিজেরাই উৎসাহের সঙ্গে এ উৎসব করবেন। অন্য তরুণদের চেয়ে পার্বত্য এলাকার তরুণরাও পিছিয়ে নেই, এটা প্রমাণ করার সুযোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন, আমি দূর করার চেষ্টা করব। আমরা দেশও বদলাতে চাই, আমরা আমাদের কাজ দিয়ে পৃথিবীও বদলাতে চাই।’
পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন সংকটে আছে। আপনাদের অঞ্চলে এটা আরও বেশি কঠিন। শিক্ষকদের কষ্ট হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট হয়। আপনাদের পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হতে হবে।
‘আমরাও চেষ্টা করব রাষ্ট্রীয় দিক থেকে কীভাবে কী করা যায়। পার্বত্য জেলার তরুণরা দুর্গম অঞ্চলে আছে বলে বড় শহর থেকে লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকবে, সেটা হতে দেয়া যাবে না। লেখাপড়ায় তাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রাখাইনের সঙ্গে শেয়ার করছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা বা প্রস্তুতি রয়েছে কিনা?- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতি আমরা খুবই গভীরভাবে মনিটর করছি। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা উচ্চপদস্থ একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে এটা মনিটর করবেন। যারা যারা অংশীজন আছেন তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আগামী বছর আমাদের একটা বড় কাজ হবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা। এর ভেন্যু ও অন্যান্য বিষয় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ঠিক করে ফেলব। আশা করছি, এই সম্মেলনটা হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে।’
বিশ্বের সব দেশ এতে অংশ নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা খুবই আগ্রহী তারা সবাই থাকবে।’
জাতিসংঘের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্পর্কিত ঘটনায় মোট ৮৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওইসব জায়গায় নতুন কিছু ঘটনা ঘটলে গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা বাড়বে। এসব মামলার বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য