গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নজরুল ইসলাম নামে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এক কয়েদি আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে হাই সিকিউরিটি কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে এক কারারক্ষীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারের ভেতরে আত্নহত্যার চেষ্টা করেন ওই কয়েদি। পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে মারা যান তিনি।
কয়েদি নজরুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পাবদা গ্রামে। স্ত্রী ও সন্তান হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া থানায় ২০১৭ সালে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নজরুলকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, নজরুল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কারাগারে তার চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে কারাগারের ভেতরে ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামে এক কারারক্ষীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও দুই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে ওই দুই কারারক্ষীর নাম জানাননি তিনি।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি।
এর আগে দুই দফায় চার দিন করে আট দিনের রিমান্ড শেষে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। এরপর নূরুল হুদা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মতি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
নূরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব এ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নূরুল হুদার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করেন পুলিশ। আমরা তার জামিনের দরখাস্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত হই। এরপর আদালতে এসে জানতে পারি তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিচ্ছেন।
গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। চার দিনের রিমান্ড শেষে একই মামলায় গত ২৭ জুন আবারও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
একই মামলায় গত ২৯ জুন তিন দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২২ জুন দশম থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা তিন সিইসি যথাক্রমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
সাবেক আমলা নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পক্ষপাতিত্বের সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এই কর্মকর্তারা বড় পরিসরে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এমন সব অভিযোগে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তারা হলেন— বড় করদাতা বিভাগের (ভ্যাট) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, সদস্য মো. লুৎফুর আজিম, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (সিআইআইডি) সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাসান।
এর আগে ২৯ জুন দুদক এনবিআরের আরও ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। যাদের বিরুদ্ধে কর্তৃত্বের অপব্যবহার ও গত দুই দশক ধরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ছয় কর্মকর্তা হলেন— আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য একেএম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপকর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অডিট-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর-ভ্যাটের ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাসান তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস-আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত কমিশনারসাধন কুমার কুন্ডু।
এই ছয় কর্মকর্তার মধ্যে হাসান তারেক এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বাধীন পরিষদটি রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে এর অভ্যন্তরে কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
দুদকের মুখপাত্র আক্তারুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কর দায় কমানোর বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছেন—যারা তাদের অবৈধ দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, করদাতাদের কর ফেরত ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে করদাতাদের তাদের পাওনা পেতে ঘুষ দিতে বা উপহার দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কখনো কখনো এই ঘুষের পরিমাণ ছিল করদাতাদের পাওনার অর্ধেকের সম পরিমাণ।
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলার আজ ধার্য তারিখ ছিল। পাঁচ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিরা পলাতক অবস্থায় রয়েছেন মর্মে প্রতিবেদন এসেছে। অপর এক মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জন আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। এদিন গেজেট প্রকাশ হয়ে আসেনি। আদালত ছয় মামলারই গেজেট প্রকাশের জন্য নির্দেশ দেন। ছয় মামলারই আগামী ২০ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব মামলায় চার্জশিট আমলে নিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি বলে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর আইনুযায়ী আসামিদেন আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন আদালত। গেজেট প্রকাশ হয়ে আসলে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।
মন্তব্য