দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন। এ লক্ষ্যে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার ও তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধনকালে এ কথা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বঙ্গভবনের ভেতরে সাধারণ মানুষ আসতে পারে না। এটার ভেতরে কী আছে না আছে তারা জানতে পারে না।
‘বঙ্গভবনের তোশাখানা জাদুঘর শতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ আগন্তুকরা পরিদর্শনকালে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন। বঙ্গভবনের অনেক স্থাপনা দেখে মোটামুটিভাবে তারাও আকৃষ্ট হবেন এবং আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মনোভাব অনেক উঁচু হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
বিকেলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নবনির্মিত তোশাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।
বঙ্গভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এ তোশাখানাকে একটি আধুনিক মানসম্পন্ন জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।
তোশাখানায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী এবং ঐতিহাসিক ছবি সংরক্ষিত রয়েছে।
দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য এটি সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত থাকবে। আবার বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে অনলাইনেও যে কেউ তোশাখানাটি যাতে পরিদর্শন করতে পারেন এবং বঙ্গভবন সম্পর্কে জানতে পারেন সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।
রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মাদ তৌফিকসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
যেভাবে বঙ্গভবন
মুক্ত আকাশ, জলাধার আর অবারিত সবুজের সমাহারে গড়ে ওঠা এই স্থাপত্যের গোড়াপত্তন ঘটে ১৯০৫ সালে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার নবাব পরিবারের দিলকুশা বাগানবাড়ির দক্ষিণাংশে লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে অস্থায়ী লাটভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
গভর্নরের অফিস ও বসবাসের জন্য নির্মিত হয় একটি কাঠের প্রাসাদ। স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা হিসেবে ১৯০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত অস্থায়ী গভর্নমেন্ট হাউজে প্রবেশ করেন। মূলত এ দিন থেকেই বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু। অচিরেই ভবনটি ‘দিলকুশা গভর্নমেন্ট হাউজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এটি পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম গভর্নর ছিলেন স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন। এ সময় ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’-এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘গভর্নর হাউজ’।
১৯৬১ সালের ৯ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ফলে তৎকালীন গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আযম খান ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের পরিবর্তে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরের জুন মাসে তৎকালীন গণপূর্ত বিভাগ (সিএন্ডবি) ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ শুরু করে এবং গভর্নর আযম খান ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে এটি উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর দেশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্য ২৩ ডিসেম্বর গভর্নর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভা করেন। সেই সভায় গভর্নর হাউজকে নতুনভাবে ‘বঙ্গভবন’ নামে নামকরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হলে তিনি ১২ জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৮৫ সালে বেশ বড় পরিসরে বঙ্গভবন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও অলংকরণের কাজে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। অভ্যন্তরীণ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সংযোজন করা হয় দুর্লভ চিত্রকর্ম।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সময়ে ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক সুইমিংপুল কমপ্লেক্স। আবদুল হামিদের অভিপ্রায় অনুযায়ী ২০২১-২২ সালে বঙ্গভবনে ব্যাপক সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষ, হরিণ পুকুর, গ্যালারি হল, দরবার হল, ভিআইপি অপেক্ষাগার-১, এয়ার রেইড শেল্টার, কেবিনেট হল, বঙ্গভবন তোষাখানা যাদুঘর।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় গভর্নরের নিরাপত্তার জন্য একটি এয়ার রেইড শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর এয়ার রেইড শেল্টারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এটি সংস্কার করে পুনরায় ১৯৬৫ সালের আদলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বঙ্গভবনের প্রাচীন মানুক হাউসকে সংস্কারের মাধ্যমে ‘বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গভবনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। ১৫০ বছরেরও অধিক পুরনো মানুক হাউস এর আগে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে মানুক নামের এক আর্মেনিয় ব্যবসায়ী এখানে বসবাস করতেন।
বর্তমানে তোশাখানার বেশ কিছু উপহার সামগ্রী সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের দেখার জন্যবঙ্গবন্ধু সামরিক যাদুঘরের পাশে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মানুক হাউসকে তোশাখানা জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় এর দেয়ালে ছোটো ছোটো ইট অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় পাওয়া যায়, যার কিছু অংশ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তোশাখানার পাশেই প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। জার্মানির ট্রাস্কো ব্রেমেন কোম্পানি নির্মিত প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কারটি একটি অভিজাত এবং অতি-বিরল প্রসারিত লিমুজিন যা মূলত ডব্লিউ ১২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ ৫০০ এসইএল মডেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
বঙ্গভবনের অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সাধকের মাজার, দানা দীঘি, মাজার পুকুর, সিংহ পুকুর উল্লেখযোগ্য। সুদীর্ঘ ইতিহাস আর ইসলামি, ব্রিটিশ ও মোঘল স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠা এই ভবন তার স্থাপত্যশৈলীকে ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের এক অনন্য প্রতীক। দেশের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এই ভবন সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।
বঙ্গভবনকে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যেই তোশাখানা ও এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের আধুনিকায়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।
খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’
ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
‘আমার বয়স অনেক হয়েছে, তবুও আমি সুস্থ আছি নিয়মিত লাঠি খেলার কারণে। আমার যারা ওস্তাদ ছিল, সবাই মারা গেছে। তাদের শেখানো লাঠি খেলা দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকি।’
কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁ সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার। ৬০ বছর বয়সী এ ব্যক্তি শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের মুক্তির মোড়ে অংশ নেন লাঠি খেলায়।
বাউল আখড়া বাড়ির চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ খেলার আয়োজন করা হয়।
লাঠি খেলা দেখতে আসা ভীমপুর এলাকার বাসিন্দা মুমিন সরদার (৩৫) বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাটি এখন আর দেখতেই পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করে বলে আমরা যুবসমাজ দেখতে পারি।
‘গ্রামীণ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করা উচিত।’
শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার মীম বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ভিডিও গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। তাই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো দেখলে অন্যরকম ভালো লাগে।
‘বেড়াতে এসেছিলাম। ঢোলের শব্দ শুনে এসে দেখি লাঠি খেলা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে অনেক পুরোনো লাঠি খেলা দেখে।’
লাঠি খেলার দলের সদস্য আবদুস সামাদ (৫৫) বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমার বাবার কাছ থেকে লাঠি খেলা শিখেছি। একসময় প্রচুর খেলা দেখানোর জন্য দাওয়াত পেতাম।
‘এখন আর পাই না, তবে এটা ভেবে ভালো লাগে যে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এখনো লাঠি খেলাকে টিকিয়ে রেখেছেন।’
দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার (৬০) বলেন, ‘একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দাওয়াত পেতাম, তবে এখন আর আগের সময় নেই।
‘সবাই বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেইম নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামীণ খেলাগুলোর মাধ্যমে যুবসমাজ বিভিন্ন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকবে বলে আমি মনে করি।’
আয়োজনের বিষয়ে বাউল আখড়া বাড়ির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাঠি খেলা হলো গ্রামীণ ঐতিহ্য। এটি যেন বিলীন না হয়ে যায়, সে জন্য আমরা আয়োজন করেছি, যাতে মানুষেরা গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত এখানে বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু আমরা গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না। কারণ লাঠি খেলাও আমাদের ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর লাঠিখেলা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:খাগড়াছড়িতে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেঙ্গী, ফেনী ও মাইনী নদীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক ও প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। ফুল বিঝুকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে নদীর পাড়গুলো হাজারো তরুণ-তরুণীর মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে নদী-খালে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।
শুক্রবার চাকমা সম্প্রদায় ফুল বিজু পালন করছেন। শনিবার মূল বিজু আর পরেরদিন রোববার পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা পালন করবেন তারা। এ সময় ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। একইসঙ্গে শনিবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা ও বিচিকাতাল পার্বন পালিত হবে ফুল বিজু, মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামের নিজস্ব বৈশিষ্টে।
রোববার খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে বর্ষবরণের র্যালী। এসব উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়।
চেঙ্গী নদীতে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ফুল উৎসর্গে সামিল হয়েছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ। বৈসাবি উৎসব দেখতে এসেছেন অনেক পর্যটকও।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালিত হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে যথাক্রমে ‘বৈসু’, ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বিজু’ নামে এ উৎসব পালন করে থাকেন। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।
চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ ১৩ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্র্যময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে।
বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন এ ঈদগাহে এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত।
চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরু হওয়ার আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শটগান চালিয়ে জামাত শুরুর ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও দলে দলে মুসল্লি আসতে থাকেন। ময়দানে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতু, বহুতল ভবনের ছাদসহ অলি-গলিতে নামাজ আদায় করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন প্রায় চার লাখ মুসল্লি।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দুয়েকদিন আগেই এসে অবস্থান নেন শোলাকিয়া ঈদগাহের মিম্বর, আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ, হোটেল এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
দূরের যারা ঈদগাহের মিম্বরে এসে অবস্থান নেন, তাদেরকে ঈদের আগের দিন ইফতার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা হয়। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর দয়া কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, দেড় হাজার পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। প্রতিটি মুসল্লিকে তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।
ঈদগাহে অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটও মোতায়েন ছিল। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্কাউটস সদস্যরা।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এবার স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদজা মাত অনুষ্ঠিত হয়েছে শোলাকিয়ায়।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।
ওই হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে ঈদ কার্ড বানিয়ে ঈদের নতুন পোশাক পেয়েছে অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থীরা।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের মাঝে ঈদ কার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মন রঙের পাঠশালা’। পরে বিজয়ী ৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার ও আয়োজনে অংশগ্রহণ করা সকল শিশুদের হাতে পোশাক তুলে দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী।
মন রঙের পাঠশালার এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিশুদের অভিভাবকরাও।
বুধবার দুপুরে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে কোমলমতি শিশুদের হাতে পুরস্কারস্বরূপ ঈদের পোশাক তুলে দেয়া হয়।
জানা গেছে, মন রঙের পাঠশালার উদ্যোগে ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় ৭৫টি শিশু অংশগ্রহণ করে। সংগঠনটি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নিয়ে জেলার তিনটি উপজেলা ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীতে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে আসছে সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের আগে তারা শিশুদের মাঝে রঙপেন্সিল দিয়ে ঈদ কার্ড বানানোর আয়োজন করে।
ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিশু শিক্ষার্থী মো. ইকবাল অনিক বলে, ‘ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পুরস্কার পাবো, কখনও ভাবি নাই। সত্যি আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এ নতুন জামা পরে কাল ঈদ করব।’
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অন্তু চৌধুরী বলেন, ‘ত্রাণ নয়, বরং ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মানসিকতা তৈরি হোক নিজে কিছু করার, ইকোনোমিক্যাল ও স্বাবলম্বী হবার। এবার তাই আমরা ঈদ কার্ড বানানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। তারপর তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমরা তুলে ধরি এবং ঈদ কার্ডের ছবিগুলো থেকেই এলো তাদের ঈদের উপহার নতুন পোশাক।’
আরও পড়ুন:বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ দলবেঁধে নেমে পড়ে নদীর হাঁটুপানিতে। তাদের পলোর নিচে ধরা পড়ে নানা জাতের দেশীয় মাছ। এ সময় এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সে উৎসব দেখতে নদীরপাড়ে হাজির হয় অনেক মানুষ।
সীমান্তের নওগাঁ জেলায় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের চিত্র এটি।
চৈত্র মাস। খাল-বিল, নদী নালা ও ডোবার পানি কমতে শুরু করেছে। এসব জলাশয়ে এখন স্বল্প পানি। ইরি-বোরো ধান আধাপাকা অবস্থায়। এ সময়টাতে অনেকের হাতে তেমন একটা কাজ থাকে না। অবসর সময়ে সৌখির মাছ শিকারিরা তাই দলবদ্ধ হয়ে পলো/হাউরি (চাপিজ্বালা) নিয়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকারের জন্য বের হন।
মাছ পাওয়া বা না পাওয়া বড় কথা নয়। সবাই একসঙ্গে মাছ শিকার করতে বের হওয়াই আনন্দের ব্যাপার। প্রতিবছর এ অবসরে অল্প পানিতে মাছ শিকারের মহোৎসব মেতে ওঠে সবাই।
নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদী। এ নদীর কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক সমান। আবার কোথাও শুকিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ছোট যমুনা নদীর শীবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একদল সৌখিন শিকারি নদীতে নেমে মাছ শিকার করছে। মাথা ও কোমরে আঁটসাঁট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই প্রায় শতাধিক মানুষ শখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নদীতে নেমেছে। এদের অধিকাংশই যুবক। কেউ আবার উদাম শরীরেও পানিতে নেমেছেন; নেমেছেন মাছ ধরতে। পানিতে নেমে হৈ-হুল্লোড় করে সবাই চাপিজ্বালা দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত।
খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে পানি কমে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দলবেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দলবদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে, আবার কোথায় পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়। দিনে-রাতে সুতা-বড়শি দিয়ে নদী থেকে ধরা হচ্ছে বোয়াল মাছ।
বড়শিতে খাদ্য গেঁথে ছুড়ে ফেলা হয় নদীর পানিতে। রাতে বাতি জ্বেলে নদীর পাড়ে সুতার বড়শি দিয়েও মাছ ধরতে দেখা যায়। তবে সুতা-বড়শি দিয়ে মাছ ধরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
বিভিন্ন নদী ও জলাশয়গুলোতে দল বেধ সারিবদ্ধ হয়ে পানিতে ফেলা হয় চাপিজ্বালা। যেখানে ফাঁদে পড়ে শোল, টাকি ও বোয়াল।
তবে কবে কোথায় মাছ ধরা হবে, উপজেলার হাট ও বাজারে আগেই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়। অনেকে আবার মোবাইল ফোনে জেনে নেন। গ্রাম থেকে ৮-১০ কিলোমিটার বা আরও দূরে পায়ে হেঁটে দলবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়েন মাছ শিকারে।
সদর উপজেলার শীবপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল হোসেন বলেন, ‘বাপ-দাদার সময় থেকে আমরা প্রতি বছর পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব করে আসছি। কারও পলোতে মাছ ধরা পড়ে আবার কারও হয় না। মাছ পাওয়াটা বড় কথা নয়, বড় কথা সবাই আনন্দ করে একসঙ্গে মাছ ধরতে বের হয়। এটাই আনন্দ।’
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের নিপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘গ্রাম থেকে অন্তত ৬ কিলোমিটার দূরে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছি আমরা বেশ কয়েকজন। দলবদ্ধভাবে এভাবে মাছ ধরতে আমাদের খুব ভালো লাগে, অনেক আনন্দ পাই আমরা।’
সদর উপজেলার কুমাইগাড়ী এলাকার জাহিদুল হক বলেন, ‘ছোট বেলাতেও বাবার সঙ্গে পলো দিয়ে এভাবে নদীতে মাছ ধরতাম। এখন তো বয়স প্রায় ৬০ বছরের মতো। তবুও মাছ ধরা উৎসব হবে জানার পর না এসে আর থাকতে পারলাম না।
‘আগে তো নদীতে বড় বড় নানা জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন অনেক সময় নদীতে পানি থাকে না, মাছও তেমন পাওয়া যায়না আগের মতো। তবে আনন্দ করছি এটাই ভালো লাগা।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আমিমুল এহসান বলেন, ‘কৃষির জেলা নওগাঁয় ছোটবড় অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল রয়েছে। ছোট যমুনা নদী, পুনর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, তুলশীগঙ্গা, শিব নদী, ফকিরনি নদী এবং নাগর নদী। এছাড়া বিল মুসছুর, গুটার বিল, দীঘলির বিল, জবই বিলসহ অসংখ্য ছোট বিলও আছে এখানে।’
তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা গ্রামবাংলার প্রাচীন উৎসবের একটি অংশ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আবার এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। নদীপাড়ে অনেক মানুষ মাছ ধরা উৎসব দেখতে ভিড় জমায়।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের শতাধিক গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল বুধবার। সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা হানাফী মাযহাবের অনুসরণে ঈদ পালন করে থাকেন।
দরবার শরীফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাব মতে বিশ্বের যে কোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে প্রায় দুইশত বছর ধরে এভাবে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং চন্দ্র মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল অনুশাসনসমূহ পালন করে আসছেন।
দরবার সূত্র জানায়, মির্জাখীল দরবার শরীফের খানকাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। হজরত শাহ জাহাঁগীর শেখুল আরেফীন (ক.), হজরত শাহ জাহাঁগীর ফখরুল আরেফীন (ক.) ও হজরত শাহ জাহাঁগীর শমসুল আরেফীনের (ক.) পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সাজ্জাদানশীন হজরত শাহ জাহাঁগীর তাজুল আরেফীনের (ক.) তত্ত্বাবধানে তারই জানশীন হজরত ইমামুল আরেফীন ড. মৌলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন।
মির্জাখীল দরবার শরীফ সূত্র মতে, সাতকানিয়ার মির্জাখীল, এওচিয়ার গাটিয়াডেঙ্গা, আলীনগর, মাদার্শা, খাগরিয়া, মৈশামুড়া, পুরানগড়, বাজালিয়া, মনেয়াবাদ, চরতি, সুঁইপুরা, হালুয়াঘোনা, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, চরবরমা, কেশুয়া, কানাই মাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি, বাঁশখালীর কালিপুর, চাম্বল, ডোংরা, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুইছড়ি, আনোয়ারার বরুমছড়া, তৈলারদ্বীপ, বারখাইন, খাসকামা, কাঠাখালী, রায়পুর, গুজরা, লোহাগাড়ার পুঁটিবিলা, কলাউজান, চুনতী এবং সীতাকুন্ডের মাহমুদাবাদ, বারিয়াঢালা, বাঁশবাড়িয়া, সলিমপুর, মহালংকা, ফেনী, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ঢাকা, মুহাম্মদপুর, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মনোহরদী, মঠখোলা, বেলাব, আব্দুল্লাহনগর, কাপাসিয়া, চাঁদপুর জেলার মতলব, সিলেট, হবিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, ভোলা, মিরশরাই, পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, রাউজান ও ফটিকছড়ির কয়েকটি গ্রামসহ চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের শতাধিক গ্রামের বহুসংখ্যক অনুসারী পবিত্র সওম পালন শেষে বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
এছাড়া পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যাংছড়ি, কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার অনেক গ্রামে থাকা মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরাও এদিন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে মির্জাখীল দরবার শরীফের মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, ‘আমরা হানাফী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে আমাদের নিকটবর্তী সময়ের কম ব্যবধান এবং আমাদের পূর্বের দেশসমূহে চন্দ্র দর্শন বিবেচনায়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রাঘিমাংশ ও অক্ষাংশের হিসেবে চাঁদের অবস্থান এবং মক্কা ও মদীনা শরীফে তথা আরব বিশ্বের চাঁদ দেখার খবর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জ্ঞাত হয়ে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করব ইনশাআল্লাহ।’
মন্তব্য