ব্রয়লার মুরগির মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত গবেষণার ফল প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ওই সময় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও তার সঙ্গে ছিলেন।
গবেষণার ফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির মাংস, হাড় এবং কম্পোজিটে মূলত দুইটি অ্যান্টিবায়োটিক-অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং তিনটি হেভি মেটাল আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেডের সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রায় ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটালের পরিমাণ কম রয়েছে।
‘ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না, এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়।
‘ফলে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি তার নজির আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে। রোগটির প্রকোপের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ব্রয়লার মুরগি খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারলে দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো রয়েছে, তার পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহু গুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সে জন্য মানুষের কাছে মুরগির মাংস জনপ্রিয় করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটি করতে পারলে একদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠন সহজতর হবে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির বাজার দ্রুত বিকশিত হবে, মুরগীর মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।
‘এ ছাড়া সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে, আমিষের চাহিদা পূরণে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘পোল্ট্রি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় গ্রামে নিজস্ব আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন করা হতো। এখন এটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের আমিষের একটা বড় চাহিদা মেটায় এ খাত। ফলে নিজ উদ্যোগে অনেকেই এ খাতে এসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন, তবে কিছু ভুলভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
‘এ জন্য আমরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পোল্ট্রি খাত বড় ভূমিকা পালন করছে। তাই আমরা চেষ্টা করছি পোলট্রি খাতকে আরও আধুনিক করা এবং এ খাতের বিকাশকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে। এ লক্ষ্যে পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিতে শুল্কে রেয়াত দিতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছি। পোল্ট্রি খাতকে সামনে নিয়ে একটি কল্যাণকর মঙ্গলকর অধ্যায় রচনার জন্য কাজ করছি।’
গবেষণার প্রকাশিত ফলে বলা হয়, বাজার এবং খামার থেকে সংগৃহীত ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে গড়ে ১৯.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৪.১৯ পিপিবি টাইলোসিন, ৭.৬ পিপিবি আর্সেনিক, ২১৫৩.৩ পিপিবি ক্রোমিয়াম, ০.৮ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং ৪৭৮.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা আর্সেনিকের ক্ষেত্রে ১৮৪.২ গুণ, ক্রোমিয়ামের ক্ষেত্রে ৯.২ গুণ এবং লেডের ক্ষেত্রে ২০.৮ গুণ সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে নিচে রয়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশের জিডিপিতে পোল্ট্রি খাতের অবদান দেড় থেকে ১.৬ শতাংশ। এ ছাড়া এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ যুক্ত। মোট পোল্ট্রি শিল্পের ৪০ শতাংশ ব্রয়লার বা মাংস উৎপাদনকারী মুরগি। দেশে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলে পোল্ট্রি খামার রয়েছে (বাণিজ্যিক খামার) প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ২৩১টি। নিবন্ধিত পোল্ট্রি খামার ৮৭ হাজার ২৭৩টি।
দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ দশমিক ৪৪ লাখ টন পোল্ট্রি মাংস উৎপাদন হয়েছে (মোট মাংস উৎপাদন ৯২ দশমিক ৬৫ লাখ টন, যার মধ্যে গবাদিপশু থেকে উৎপাদন হয় ৫৪ দশমিক ২১ লাখ টন)।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ কি না, তা জানতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ গবেষণা চালানো হয়।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কম্পোজিটে (কলিজা, কিডনি ও গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে, তা নির্ণয় করা।
বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার থেকে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপার শপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
সংগৃহীত প্রায় ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য থেকে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিনটি ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুন:ওপারে ভারত। আর এপারে সীমান্ত সংলগ্ন ১১০ বিঘা জমি বছরের পর বছর পতিত পড়ে ছিল। দিগন্ত বিস্তৃত এই ফাঁকা জমিতে গরু-ছাগল চড়ত। চারণ ভূমিটি এখন কৃষকদের স্বপ্ন পূরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সর্তক দৃষ্টির মাঝে কৃষকদের হাতের ছোঁয়ায় সেই পতিত জমিতে এখন সরিষার হাসি। এই সরিষা গোলায় তোলার পর পর্যায়ক্রমে রোপণ করা হবে তিল, আউশ ও আমন ধান।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়পুর বেলবাড়ি এলাকার এই পতিত জমি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউটের কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারহানা ইয়াসমিন।
পতিত জমিতে সরিষা আবাদ সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকারী বুড়িচং উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিষার মাঠ ঘুরে দেখান। এ সময় স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শাহেদ হোসেনসহ সরিষা চাষী কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুল হালিম জানালেন, গত বছর খরিপ-২ মৌসুমে রোপা আমন চাষের পর পাহাড়পুর গ্রামের বেলবাড়ি মাঠের জমিগুলো পতিত থাকবে শুনে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সরিষা চাষের পরামর্শ দেয়। গত বছর ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হলেও এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছি ১১০ হেক্টর। বর্তমানে ফসলের পরিস্থিতি দেখে বিঘাপ্রতি ১২-১৪ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বৃহস্পতিবার বেলবাড়ি এলাকার সরিষা ক্ষেত পরিদর্শন করেন। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল আউশ মৌসুমে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ৭০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন তারা। আমন মৌসুমেও প্রচলিত ব্রি-৪৯ ও স্বর্ণমসুরি ধানের বিপরীতে স্বল্প জীবনকালীন ব্রি-৭১, ব্রি-৭৫ ও বিনা-১৭ ধানের আবাদ করা হয়। আর বর্তমান সরিষা মৌসুমে নতুন জাত হিসেবে বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-৪ ও বারি সরিষা-১৮ এর বীজ বিতরণ করে কৃষি বিভাগ।
পরিদর্শনকালে বিনার মহাপরিচারক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম সরিষা চাষীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি সরিষা চাষের সম্ভাবনার কথা কৃষকদের সামনে তুলে ধরেন। তাছাড়া তিনি সরিষা চাষের কিছু ব্যবস্থাপনা, বীজ সংগ্রহ ও বীজের সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, ‘পাহাড়পুরের বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো-পতিত-রোপা আমন শস্য বিন্যাসের পরিবর্তে সরিষা-তিল-রোপা আউশ-রোপা আমন ও সরিষা-আউশ-রোপা আমন শস্য বিন্যাস বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী মৌসুমগুলোতে নতুন নতুন জাত নিয়ে তিল, আউশ ও রোপা আমন আবাদে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দেশেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর বালুচরে যেদিকে চোখ যায় শুধুই পেঁয়াজের আবাদ। দাম বেশি পাওয়ার আশায় এবার কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগবালাই কম থাকায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চরাঞ্চলবাসী।
কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের সঙ্কট এবং দাম বেশি হওয়ায় এসব চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অন্যান্য বছরের মতো গম ও তামাক চাষ না করে এবার অধিকাংশ কৃষক পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপা খড়িবাড়ী, খগা খড়িবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চর ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন। এসব চর এলাকার কৃষকরা বন্যায় রোপা আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পেঁয়াজ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।
কৃষক নুর ইসলাম, হুকুম আলী, জুলহাস, আজাহার ও আবুল হোসেন জানান, তারা প্রত্যেকেই ৩/৪ বিঘা করে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ১৫শ’ টাকার বীজ কিনে রোপণ করে শতক প্রতি এক থেকে দেড় মণ করে পেঁয়াজ ফলনের স্বপ্ন তাদের।
হুকুম আলী বলেন, সব মিলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই ক্ষেতে। ৭০ শতক জমিতে ৭০ থেকে ৯০ মণ পেঁয়াজ পেলে বাজার অনুযায়ী মণ প্রতি ৫ থেকে ৬ শ’ টাকা দরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।
জুলহাস বলেন, ‘খরচ ও পরিশ্রম কম হয়ে ভালো ফলন হওয়ায় চরের অধিকাংশ কৃষকই এখন পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকছে। সহজ সেচ ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে চরে পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। তাতে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতিও পূরণ হবে।’
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘তিস্তায় জেগে ওঠা চরে এখন বিভিন্ন ধরনের ফসল হচ্ছে। তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা-পরবর্তী ফসল হিসেবে এবার ৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘মসলা জাতীয় এই ফসলে কৃষকরা সময় সময় লাভবান হন। চরের কৃষকদের ভালো ফলনের জন্য আমরা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক পরামর্শসহ বীজ থেকে শুরু করে অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁ সদর উপজেলার কির্ত্তিপুর ইউনিয়ন বিনে ফতেপুর গ্রামের সাগর আলী। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। আবাদের জন্য তেমন কৃষি জমি নেই। গত ১৪-১৫ বছর যাবৎ নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে বাজারে সবজি বিক্রি করে আসছেন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউটিউবে মাশরুম চাষের একটি ভিডিও দেখে সিন্ধান্ত নেন তিনি মাশরুম চাষ করবেন। এর পর মার্চ মাসের শুরুর দিকে যশোর ডিএম সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চারদিনের একটি কোর্স করেন মাশরুম চাষের ওপর।
এরপর অক্টোবর মাসে সেখান থেকে কিছু বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়ির পাশের জায়গায় শুরু করেন মাশরুম চাষ। তার খামারে বর্তমানে দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট করা ৩০০টি মাশরুমের স্পন রয়েছে।
খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভুসি, বীজ, ছাঁউনিসহ সবমিলে খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকার মতো। ইতোমধ্যে তিনি মাশরুম বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। আগামী তিন মাস যাবৎ তিনি তার খামার থেকে মাশরুম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
প্রতিদিনই সাগরের মাসরুমের খামার দেখতে আসছেন অনেকই আবার কেউবা মাশরুম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা তার এই সফলতা দেখে আগামীতে এমন উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান।
স্থানীয় বিনে ফতেপুর গ্রামের বুলবুলি বেগম বলেন, ‘সাগর চাচার মাশরুম খামার দেখে খুবই ভালো লাগছে। একবার বীজ ৩০ থেকে নাকি ৩৫ বার ফলন পাওয়া যায়। আমরাও বাড়ির ফাঁকা জায়গায় এমন মাশরুম চাষ করার পরিকল্পনা করছি।’
সাজ্জাত হোসেন নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সাগর চারমাস আগে থেকে এখানে মাশরুম চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি সফল একজন চাষি। সবজি বিক্রির পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে থাকেন। প্রথম মাসেই তিনি মাশরুম চাষে লাভবান হয়েছেন। কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব, আমরা এমন উদ্যোগ নিব বলে ভাবছি।’
নওগাঁ শহরের থানার মোড় এলাকা থেকে মাশরুম কিনতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মুসাব্বের। তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে মাশরুম কিনলে অনেক সময় কীটনাশক যুক্ত হয়। যার কারণে ফ্রেস ও টাটকা মাশরুম যাতে পাই, সেজন্য সাগর ভাইয়ের এখানে এসেছি। মাশরুম খামার থেকে সংগ্রহ করে ৩০০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি কিনলাম।’
মাশরুম চাষি সাগর আলী বলেন, ‘খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভুসি, ইত্যাদি দিয়ে ওয়েষ্টার জাতের মাসরুমের খামার গড়ে তুলেছি। প্রথম স্পন প্যাকেট থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় দুই কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি মাশরুম বিক্রি করে থাকি। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম পাইকারি ২৫০ এবং খুচরা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকি। যশোরে চার দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।
‘গত বছরের শেষের দিকে মাশরুম খামার গড়ে তুলি। সবমিলে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। খরচের টাকা উঠে কিছু লাভও হয়েছে। বর্তমানে খামারে মাশরুম বীজ আছে তা থেকে আগামী তিন মাস বিক্রি করা যাবে মাশরুম। আশা করছি তিন মাস মাশরুম বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকার আয় করতে পারব।’
সাগর আরও বলেন, ‘খামারে প্রতিদিন তিন বেলা পানি দিয়ে স্প্রে করতে হয়। আমার কাজে আমার মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করে থাকেন। যদি কৃষি অফিস থেকে সহায়তা পেতাম তবে আগামীতে আরও বড় পরিসরে মাশরুমের আবাদ করতাম।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ওষধি গুণসম্পন্ন খাবার। ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। দিন দিন নওগাঁতেও মাশরুম চাষের আগ্রহ বাড়ছে। মাশরুম চাষ বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষি সাগর আলী বর্তমান এটি চাষে সফল হয়েছেন। যদি কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অবশ্যই তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জমি না থাকলেও বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। সহজেই মাশরুমের বীজতলা তৈরি করা যায়।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে সফল হয়ে লাভবান হচ্ছেন জেলার স্থানীয় কৃষকরা।
একটা সময় ছিল পেঁয়াজের বীজ বপণের মৌসুম আসলেই আমদানি করা পেঁয়াজের বীজের জন্য অপেক্ষা করা লাগত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের বীজ কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ায় বির্পযয়ের মুখে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। আবার ভালো বীজের আশায় বীজ সংকটকের সময় অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে পেঁয়াজের বীজ।
কৃষকরা বলছেন, নিজেদের উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজে ঝুঁকি কম থাকে, ফলনও ভালো হয়। এতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা নিজ উদ্যোগে বীজ উৎপাদন করে সফল হওয়ায় আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। এতে উৎপাদন ব্যায়টাও কমে যাবে। নিজেদের বাড়ির বীজ হওয়াই সঠিক সময়ে বীজ বপণও করতে পারবে। তাই বীজ উৎপাদনে চাষিদেরকে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তাও করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৬০০ টন। এটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি করা হবে।
জেলার মুজিব নগর ও সদর উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার সদর ও মুজিব নগর উপজেলায় বিগত পাঁচ বছর যাবত সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ করছেন সেখানকার চাষিরা। অন্যান্য যেকোনো জাতের পেঁয়াজ চাষের তুলনায় কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজে। এই এলাকাগুলোতে আরও বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ চাষ ও বেশ জনপ্রিয় তাদের মধ্যে অন্যতম তাহেরপুরি, বারি ৪, নাসিকা রেড ও ফিপটি।
তবে আকারে বড় অধিক ফলন ও বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি পেঁয়াজ ও পাওয়ায় এক খরচে দুই ফলন। ফলে খরচের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়া যায় এ সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষে।
তাই বেশ কয়েক বছর এ জাতটি পেঁয়াজ চাষিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বীজটি যখন আমদানি নির্ভর ছিল। তখন ভরা মৌসুমে বীজ পেতে চাষিদের বেশ বেগ পেতে হতো। আবার বীজ সংকটের কারনে দ্বিগুন দাম দিয়ে কিনতে হতো।
শুধু বপনকালীন বীজ সংকট কিংবা বেশি মূল্য দিয়ে বীজ কেনা নয়। কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ীরা কৃষকদের চাহিদাকে পুঁজি করে ভেজাল বীজ বিক্রয়ের ফলে ফলন বিপর্যয়ে চাষিদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন হওয়াই চাষিদের আর এই সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলেও কৃষকরা মনে করেন।
মুজিব নগর গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়ে থাকে ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আবার বীজ সংকট দেখা দিলে এর চেয়ে বেশি দামেও কেনা লাগে। আর জমিতে বীজ ভালো হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৮০ থেকে ৯০ কেজি পযর্ন্ত বীজ পাওয়া সম্ভব।
একই এলাকার পেঁয়াজ চাষি রাজিবুল বলেন, ‘সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ আবাদ মানে একসঙ্গে দুই ফসল পাওয়ার মতো। শুধু বীজ নয়, ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করার পর গাছ থেকে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার পাশাপাশি ৬০ থেকে ৭০ মণ পযর্ন্ত বীজ পাওয়া সম্ভব।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক আরমান আলী বলেন, ‘আমাদের একটা সময় গেছে পেঁয়াজ চাষের ভরা মৌসুম আসলেই বীজের সংকট দেখা দিত। এতে আমরা অনেক সময়, সঠিক সময়ে বীজ বপণ করতে পারিনি। আবার বাজারে বীজ থাকলেও অধিক দামে কেনা লাগছে। আজ দুই বছর মত হবে নিজেদের বীজ থেকেই পেঁয়াজ চাষ করছি। ঘরের বীজ, তাই বীজ নিয়ে টেনশন করতে হয় না।’
একই এলাকার আরেক চাষি রশিদ বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে বাজার থেকে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের বীজ কিনে এনে প্রতারিত হয়েছি। মাঠে বীজ বপণের পরে অর্ধেকের কম হবে, কোনো ফলনি পাইনি।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘মেহেরপুরের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৬০০ টন। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি করা হবে এ পেঁয়াজ।’
সাধারণত বছরের নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ বীজ বপন করা হয়ে থাকে। জানুয়ারি মাসের দিকে পেঁয়াজ বাজারজাত করা হয়। আর বীজ উৎপাদন হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা দুই সুবিধা পাচ্ছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি বীজ পাওয়া যায়। ফলে প্রতিনিয়তই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছে। তাছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদন না বাড়ালে আমদানি নির্ভরতা থেকে বের হওয়া আসা সম্ভব হবে না। তাই কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শের পাশাপাশি প্রনোদণাও দেয়া হচ্ছে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মুগুজি গ্রামে ৬ কোটি টাকার বিষমুক্ত শসা বিক্রির আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। গত বছর এই গ্রামে সাড়ে চার কোটি টাকার শসা বিক্রি হয়। এবার কীটনাশকমুক্ত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চাষ করায় বেড়েছে শসার চাহিদা। কৃষকদের আশা তারা বেশি দাম পাবেন। আগামী দিন পনেরর মধ্যে এই গ্রামের শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্য প্রাচ্যের দেশ দুবাইতে যাবে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
মুগুজি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের ৩৫ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেখানে সবুজ আর সবুজ। কোথাও শসার হলুদ ফুল মাথা উঁকি দিয়ে আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। কোথাও বাতাসে দুলছে কচি শসা। পোকা দমনে ব্যবহার করা হয় পাতা-লতার রস।
মুগুজি গ্রামে বিষমুক্ত শসা ও সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক সমাবেশ ও মাঠ পরিদর্শন করেন কৃষি কর্মকর্তারা।
স্থানীয় কৃষক আমীর হোসেন বলেন, শসা চাষে ১০ গন্ডায় (২০ শতাংশ) এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হবে। বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করায় ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
মনির হোসেন, সাহাব উদ্দিন ও সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৬ গন্ডায় (১২ শতাংশ) খরচ হয়েছে ৭০ হাজার বিক্রি হবে দেড় লাখ টাকা। সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আয়ও বাড়বে। বিষমুক্ত শসার উৎপাদনে কৃষি অফিস উদ্বুদ্ধ করেছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’
মুগুজি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই এলাকার ৩৫ হেক্টর জমিতে শসা উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে ৯০০ মণ শসা হবে ৷ অন্তত ৩১ হাজার ৫০০ মণ শসা উৎপাদন হবে। গড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হলে ৬ কোটি টাকার বেশি শসা বিক্রি হবে।’
কুমিল্লা জেলার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এইখানে নিরাপদ শসা উৎপাদনে উদ্যোগ নিয়েছি। এখানের শসা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর সঙ্গে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।’
কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, ‘নিরাপদ সবজি চাষ বিষয়টি এখানে কৃষকরা প্রশংসনীয়ভাবে আত্মস্ত করেছেন। আমরা এই অগ্রগতি ধরে রাখবো। এটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।’
পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম দেশের ২০টি ইউনিয়নে এই বিষমুক্ত শসা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তার একটি বরুড়ার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন। কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য তাদের কিছু শর্ত থাকে। আমরা তা পূরণের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা আসা শুরু করেছেন।’
আরও পড়ুন:মাঝারি গাছের ডালে দোল খাচ্ছে বড় বড় সবুজ বেগুন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বেগুন গাছে লাউ ঝুলছে। এমন বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুমিল্লার কৃষকদের।
একটি বেগুনের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আকারে বড়, নরম ও স্বাদে পুষ্টিমানে অনন্য বারি বেগুনের বাজার চাহিদা অনেক।
সরেজমিনে কুমিল্লা্র চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর গিয়ে দেখা যায় বিস্তৃত জমিতে কাজ করছেন কৃষকরা। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। তার মাঝে লাউ বেগুনের জমিতে চোখ আটকে যায় সবার।
কৃষক আমির হোসেন জানান, কৃষি অফিস থেকে বারি-১২ জাতের বেগুনের বীজ এনেছেন তিনি। ৩০ শতক জমিতে প্রথমবারের মত লাউ বেগুন চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি বেগুন ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাজারে নিতে হয় না। গ্রাহকরা জমিতে এসেই বেগুন নিয়ে যায়৷’
লাউ বেগুন আকারে বড় এবং অনেক নরম। তাই পাখির প্রিয় খাবার এই লাউ বেগুন। এতে কৃষকরা চিন্তা করেন পাখির ঠোঁট থেকে কীভাবে তাদের লাউ বেগুনকে রক্ষা করবে।
কৃষক শাহজাহান ভূইয়া বলেন, ‘লাউ বেগুন খুব নরম বলে পাখি ও পোকামাকড়ের প্রিয় খাবার। তাই এ বেগুন রক্ষায় জাল দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিয়েছি। না হয় জমিতে বেগুন থাকবে না।’
চান্দিনা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘এই বেগুন প্রথমবার কুমিল্লায় চাষ শুরু হয়েছে। আমার এরিয়াতে কৃষকরা বেশ উদ্বুদ্ধ হয়েছে লাউ বেগুন চাষে। মাঠে এসে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিচ্ছি কীভাবে পাখি ও কীটপতঙ্গ থেকে বেগুন রক্ষা করা যায়।’
চান্দিনা উপজেলা কৃষি কমকর্তা মনিরুল হক রোমেল বলেন, ‘আমরা প্রথমে ২০ গ্রাম বীজ থেকে চারা উৎপাদন করি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকজন কৃষককে বাছাই করি। কৃষি অফিসার ও কৃষকদের আন্তরিকতায় প্রথম বছরই ভালো ফলন হয়েছে। আমরা আশাকরি আগামী বছর আমরা পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে বারি-১২ জাতের এই বেগুন।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, এ বছর পুরো জেলায় দেড় হেক্টর জমিতে বারি ১২ জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। এই বেগুন আকারে অনেক বড় হয়। প্রতিটা বেগুন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের হয়। এই বেগুনের টিস্যু অনেক নরম। খেতে সুস্বাদু। আশা করি আগামী বছর কুমিল্লায় সবজির একটা বড় অভাব পূরণ হবে বারি ১২ জাতের বেগুনে।
কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ কাঁচা বাজারের তরকারী ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, ‘এত বড় বেগুন আগে দেখি নাই। খুব বড় এবং নরম। এ বেগুনের প্রচুর চাহিদা আছে বাজারে।’
আরও পড়ুন:উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। জেলার অন্তবর্তী ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল নামে পরিচিত পোরশা উপজেলা। গত কয়েক বছর আগে যেখানে বৃষ্টিনির্ভর আমন ধান ছাড়া আর কিছুই উৎপাদন করা সম্ভব হতো না।
বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে আমের জন্য বিখ্যাত পোরশা উপজেলা। আমের জন্য বিখ্যাত হলেও উপজেলার বাগানে বাগানে আম গাছের ফাঁকে ফাঁকে শোভা ছড়াচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। একই জমিতে দুই ফসল হওয়ায় বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে কৃষকদের মাঝে। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে বাড়তি ফসল করে বাড়তি আয়ের আশা চাষিরা।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে চার হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। আমের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আম বাগানে চাষ হয়েছে এক হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে।
জেলার কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকল্প চাষ হিসেবে আম বাগানের ভেতর সরিষার চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
পোরশা উপজেলার সরাইগাছী গ্রামের চাষি জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর ১০ বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছি। এ ছাড়া এ বাগানের অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গায় সরিষার আবাদ করেছি। এর আগে কখনো এমনভাবে আবাদ করিনি। এই প্রথম আম বাগানে সরিষার আবাদ করলাম। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।’
একই এলাকার মেজবাউল হক নামের আরেক চাষি বলেন, ‘আমবাগানে সরিষার আবাদ এই প্রথম করলাম। সরিষার ফলনও ভালো হয়েছে। তেমন কোনো রোগবালাই নাই। আমি ১৫বিঘা জমিতে আম ও সরিষার আবাদ করেছি। পরীক্ষামূলকভাবেই এবার আম বাগানে সরিষার আবাদ করেছি। এর আগে এমন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। এবার সঙ্গে দুই ফসল পাচ্ছি। এতে আমরা বাড়তি আয় করতে পারব।’
উপজেলার নিতপুর গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে আমার পাঁচ বিঘা আমার বাগানের ফাঁকে সরিষার আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আমাদের এখানে বৃষ্টিনির্ভর আমান আবাদ ছাড়া তেমন কোনো ফসল হতো না। গত কয়েক বছর আমার আবাদ হচ্ছে। আর এইবার আমরা আমের পাশাপাশি বাগানে সরিষারও আবাদ করেছি। ফুল ধরেছে। রোগবালাই হয়নি। আম গাছেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। আশা করছি আম ও সরিষার দুই আবাদই ভালো হবে।’
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘এই প্রথম জেলার পোরশায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে চার হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আম বাগানে চাষ হয়েছে ১৭৭৫ হেক্টর জমিতে। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকদের আম বাগানের ফাঁকে জায়গাগুলোতে সরিষার আবাদ করতে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আমরা পরামর্শ ও সাধ্যমত সহায়তা করে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে আম বাগনে যেন সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পায় সেজন্য চাষিদের নিয়ে মাঠদিবস, উঠান বৈঠকসহ নানার ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য