সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার ও সংবাদকর্মী ইলিয়াস হোসাইনসহ চারজনের নামে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে আদালত।
মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ঠিক করা ছিল বৃহস্পতিবার, কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় নতুন তারিখ ঠিক করে ঢাকার মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ওই মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে হাবিবুর রহমান লাবু ও আবদুল ওয়াদুদ মিয়াকে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে বনজ কুমার বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে তদন্ত সংস্থা পিবিআই চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্ত করছে। তদন্তকালে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার প্রধান আসামি হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘জেলহাজতে থাকা বাবুল ও বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াসসহ বাকি আসামিরা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইছেন। তারা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন।’
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ইলিয়াস গত ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন। এর আগেও মিতু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে ইলিয়াস তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ইলিয়াসের ভিডিওতে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ দেয়া হয় ও বাবুলকে রিমান্ডে নির্যাতন করার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে মিতু হত্যা মামলায় হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয়জনের নামে মামলার আবেদন করেছিলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
আবেদনে বনজ কুমার মজুমদার ছাড়া যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির।
গত ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছার আদালতে আবেদনটি করা হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর তার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে এরই মধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
আরও পড়ুন:ছাগলের মাংসের মধ্যে কীটনাশক (বিষ) মিশিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুন্দরবনে। বাঘের বিচরণ এলাকার আশপাশে রেখে আসা হয় সেই মাংস। এক পর্যায়ে বাঘ ওই মাংস খেয়ে মারা গেলে সেটির চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আসা হয়। পরে এক শ্রেণির সৌখিন মানুষের কাছে তা বিক্রি করা হয় প্রায় কোটি টাকা দামে।
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার এভাবেই সুন্দরবন থেকে শিকার করে আসছিল একটি চক্র। এদের মধ্যে দুইজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার বিকেলে আটক করা ওই দুজন হলেন মো. হাফিজুর শেখ ও মো. ইসমাইল শেখ। তাদের বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধলপাড়া গ্রামে।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে আমারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এই বাঘ শিখার চক্রটি সম্পর্কে তথ্য পাই। পরে বাঘের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যক্ষের ক্রেতা সেজে তাদেরকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বাঘের চামড়া লবণ মাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৭ জানুয়ারি ওরা শ্যামনগর উপজেলা সংলগ্ন সুন্দরবন থেকে বাঘটি শিকার করেছিলেন। পরে সৌখিন মানুষদের খুঁজছিলেন, যারা প্রায় কোটি টাকা মূল্য দিয়ে একেকটি বাঘের চামড়া কিনে থাকে।
‘যারা এসব বাঘের চামড়া কেনে তারাও আমাদের নজরদারিতে আছে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিকারিরা জানিয়েছেন, তারা মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বাঘ শিকার করতেন। সুযোগ বুঝে বনের অন্যান্য প্রাণিও শিকার করতেন তারা।
অধিনায়ক বলেন, আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে এই মামলার তদন্তভার আমাদের দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। তাহলে এই সিন্ডেকেটে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে এবার স্থায়ী জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়।
আদালতে বিএনপির দুই নেতার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন আসাদুজ্জামান, সগীর হোসেন লিয়ন ও আনিছুর রহমান রায়হান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি দুই নেতাকে জামিন দিয়ে রুল জারি করেছিল একই আদালত।
এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করলে আপিল বিভাগ দুজনের জামিন বহাল রেখে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
আপিল বিভাগের এ নির্দেশের আলোকে রুল শুনানি শেষ করে আদালত বিএনপির দুই নেতাকে স্থায়ী জামিন নিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে দেয়।
এ মামলায় এক মাস কারাভোগের পর গত ৯ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক ও নাজির মমিনুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে কোর্ট বর্জন করছে আইনজীবীরা। এতে অচল হয়ে পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার ব্যবস্থা। জেলা ও দায়রা জজ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত ব্যতীত সব আদালতে গিয়েছে আইনজীবীরা ।
দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে আবারও সব আদালত বর্জন করেছে আইনজীবী সমিতি। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বুধবার থেকে আরও বাড়বে বলে মনে আদালত-সংশ্লিষ্টরা।
আদালতে ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের সমাগম থাকলেও আইনজীবী দেখা যায় নি। তবে বিচার প্রার্থীরা জানতেন না বুধবার থেকে আবারও আদালত করবেন না আইনজীবীরা । বিষয়টি জেনে অনেক বিচারপ্রার্থী হতাশাগ্রস্থ হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে ঘুরে আবারও ফিরে যাচ্ছেন।
বিচার প্রার্থীরা ইচ্ছেকৃতভাবে ফিরে যাচ্ছে না, আইনজীবীরা আদালতের প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে আদালত থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিচার প্রার্থীদের।
তেমনটি অভিযোগ করেন সরাইল উপজেলা অরুয়াইল থেকে আসা সালমা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, স্বামীর জামিনের আবেদন করতে আসলে আদালতে ভিতর ঢুকতেই ধমকিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে। চার শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দেড় মাস যাবত এই আদালতে চত্বরে ঘুরছেন স্বামী কাউসারকে জামিন করানোর জন্য। তবে আইনজীবী ও বিচারকদের দ্বন্ধে স্বামীর জামিন না করাতে পেরে শিশু সন্তান নিয়ে পথে বসার মত অবস্থা তাদের।
সালমা বেগম বলেন, ‘৬ মাস আগে প্রতিবেশী এক মহিলা তার স্বামী কাউসারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আর সেই মামলায় জেল খাটছে তার স্বামী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় স্বামীকে জামিন করানো জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে আদালতে।
‘গত ৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। মামলায় প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে আপোষ করা হলেও সেদিন আইনজীবী না থাকায় তার স্বামীর জামিন হয় নি। তবে আদালতের বিচারক বলেছিলেন পিপি সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে আসলে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু সেদিন ৫০০০ হাজার টাকা দিয়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে তিনি স্বাক্ষর দেননি। বুধবার তার স্বামীর মামলা শুনানি ছিল। কিন্তু সকালে আদালতে প্রবেশ দ্বারে ঢুকতে গেলেই কয়েকজন আইনজীবী আদালতের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে সালামকে ধমকিয়ে আদালত ভবন থেকে বের করে দেয়। এ সময় সাথে ছিল তার চার শিশু সন্তান।’
শুধু সালমা নয়, সরাইল রসূলপুরের মুমিনুল হক, কসবা উপজেলা শাহাদৎ মিয়া, আখাউড়া উপজেলা মনোয়ারা বেগম, বাঞ্ছারাপুরের ইলিয়াস মিয়া, নবীরনগর উপজেলা কৃষ্ণনগর গ্রামের ইছা মিয়া সহ আরও বেশ কয়েকজনকে আইনজীবীদের পথ আটকে দেয়ার কারণে আদালত থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
আদালত থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের দাবি অনুযায়ী আদালত বর্জন চলছে। কার্যক্রম যেন না নিতে পারে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনজীবী ছাড়া সরাসরি যেন কোনো পিটিশন না নেয় সেই বিষয়ে আমরা প্রয়োজন ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আদালতে বিচারক, কর্মকর্তা ও কার্মচারীগণ উপস্থিত রয়েছেন। বিচারকার্যের জন্য সবাই প্রস্তুত রয়েছেন। বিচার চেয়ে আদালতের কাছে দারস্থ হওয়া আইনগত অধিকার। তবে বিচারপ্রার্থীদের আদালতে আসতে না দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।’
অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি দুবাইয়ে ঢুকেছে। করোনার আগে ও পরে এসব বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় সেখানে পৌঁছেছে। আর দুবাইকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে তারা অবৈধভাবে পাড়ি দিচ্ছে ইতালি, স্পেন, গ্রিস, ফ্রান্স, তুরস্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
বাস্তবতা হলো, এই মানুষগুলোর অধিকাংশই বিপদসংকুল এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন, দেশে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়, পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে বিদেশবিভূঁইয়ের রাস্তায় ছেড়ে দেয়া, আটক করে জেল বন্দি জীবন কাটানো, সবশেষে সর্বস্ব খুইয়ে দেশে ফেরত আসার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
তবু থেমে নেই উন্নত-সচ্ছল জীবনের আশায় অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমানোর এই চেষ্টা। বেপরোয়া মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে প্রতিনিয়ত পা রাখছে অসংখ্য তরুণ-যুবক।
বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে দুবাই হয়ে ইউরোপ যাওয়ার আগে মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, ইরান ও আলবেনিয়ার মতো দেশগুলোতে ঢুকছে তারা। আর ভয়ঙ্কর ঝুঁকির এই যাত্রাপথে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট, টাকাপয়সা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। শিকার হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতনের। অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে জিম্মি করে দেশে স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ।
ভয়ঙ্কর এসব ফাঁদ থেকে কোনোমতে মুক্তি মিললেও তাদের দেশে ফেরার পথ আর সেভাবে খোলা থাকে না। সব হারিয়ে ফেরার কোনো উপায় না দেখে আবার পা পাড়াচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছাচ্ছে গ্রিস, স্পেন, ইতালি ও তুরস্কের মতো দেশে।
অভিবাসন বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করার জন্য ১৮টির মতো পথ ব্যবহার হয়। দুর্গম মরুভূমি ও গভীর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে প্রতিবছর বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে অনেককে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখের বেশি মানুষ ভিজিট ভিসায় দুবাই গেছে। তাদের লক্ষ্য দালালদের মাধ্যমে ইউরোপের কোনো একটি দেশে পৌঁছানো। তবে এদের মধ্যে ঠিক কতজন ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছে বা পারছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বাহিনীটির কাছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিডের আগে-পরে আমাদের দেশ থেকে প্রায় দুই লাখ লোক ভিজিট ভিসায় দুবাই গেছে। তাদের একটা বড় অংশই সেখানে কাজ পায়নি। সে সময়ই আমরা শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম- এই যে লোকজন দুবাইয়ে যাচ্ছে, তারা পরবর্তীতে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করবে।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে ২২ হাজারের বেশি মানুষ আটক হয়েছে। দুবাইয়ে ভিজিট ভিসায় যারা গেছে তারা এখন ইরান, গ্রিস, তুরস্ক হয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে করে শুধু তারা নিজেরাই যে বিপদে পড়ছে তা নয়, আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’
উন্নত-সচ্ছল জীবনের আশায় অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমানো প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি গত এক বছরে দেশে ফিরেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির মানবপাচার প্রতিরোধ টিমের তথ্য অনুযায়ী, মানব পাচারের শিকারদের একটা বড় অংশই দুবাই হয়ে অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।
সম্প্রতি মানবপাচার মামলায় একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ। চক্রটি ইউরোপে পাঠানোর নাম করে ভিজিট ভিসায় এক ভুক্তভোগীকে দুবাইয়ে পাঠায়। সেখানে তার পাসপোর্টসহ সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পাঠায় ইরানে। সেখান থেকে পাঠানো হয় তুরস্কে।
তুরস্কে যাওয়ার পর সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল খাটার পর আইওএম এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।
ভুক্তভোগীকে ভিজিট ভিসায় দুবাই এবং পরবর্তীতে ইরান ও তুরস্কে পাঠানো মানব পাচারকারী চক্রটির সঙ্গে সিভিল অ্যাভিয়েশনের একজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- মাহামুদুল হাছান, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, সালামত উল্লাহ ও রাশিয়া বেগম।
তাদের মধ্যে মাহামুদুল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের এয়ার কন্ডিশন সার্ভিসে এবং জাহাঙ্গীর সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত বলে জানিয়েছে সিআইডি।
তুরস্ক ফেরত এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘পাচারকারীরা জানিয়েছিল যে বিমানে করে আমাকে তুরস্কে পৌঁছানো হবে। সে জন্য প্রথমে যেতে হবে দুবাইয়ে। সেখান থেকে তুরস্কের ভিসা দেয়া হবে। কিন্তু তাদের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। পুরোটাই ছিল ফাঁদ।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে দুবাই পাঠানো হয় ভিজিট ভিসায়। দুবাইতে যাওয়ার পরই আমার সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা, পাসপোর্টসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যায় দালালেরা। কাগজ ছাড়া আমার কোথাও যাওয়ারও উপায় ছিল না।
‘তুরস্ক পাঠাবে বলে দুবাইতে আমার কাছ থেকে নেয়া হয় এক লাখ টাকা। তারা ট্রলার ও স্পিডবোটে করে আমাকে ইরানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে ওরা আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়ে দেশে আমার পরিবার থেকে দফায় দফায় ওরা ৮ লাখ টাকা আদায় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অনেক টাকার বিনিময়ে আমি ইরান থেকে কোনো কাগজপত্র ছাড়া তুরস্কে পৌঁছাই। সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটি। এরপর বাংলাদেশ থেকে আউটপাস নিয়ে তুরস্কে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি ও আইএম-এর সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।
‘সব হারিয়ে আমি ও আমার পরিবার এখন সর্বস্বান্ত, বিপর্যস্ত। আমি চাই না এমন ফাঁদে পড়ে কেউ অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করুক।’
মানবপাচার ঠেকাতে সিআইডির টিম কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৯ সালে ৭২টি মানবপাচার মামলার তদন্তভার পেয়েছি আমরা। এর মধ্যে ৬৭টির তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
‘২০২০ সালে আমাদের কাছে এসেছে ৬৩টি মামলা আর প্রতিবেদন দিয়েছি ৫১টির। ২০২১ সালে তদন্তভার পেয়েছি ৫১টি মামলার, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি ৬০টির। আর ২০২২ সালে তদন্তভার পেয়েছি ৩০টির এবং তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৪৫টি মামলার।’
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লিবিয়া, মরক্কো, ইরান, তুরস্ক ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে মানবপাচার হচ্ছে। দুবাইকে বিশেষ করে ট্রানজিট শহর হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।
‘মানুষ উন্নত জীবন ও উপার্জনের জন্য ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে যেতে প্রলুব্ধ হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা ভিজিট ভিসার মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর সেনবাগে বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় এক ইউপি সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
নোয়াখালী মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক ইকবাল হোসাইনের আদালত মঙ্গলবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
এর আগে দুপুরে তাকে উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়ন থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ৪৮ বছর বয়সী আলেক হোসেন উপজেলার কেশারপাড় ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বরাতে তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে সোমবার রাতে উপজেলার কেশারপাড় ইউপি আবদুস সাত্তার মেম্বারের বাড়িতে আলেক মেম্বারের নেতৃত্বে ১৪/১৫ জন দুর্বৃত্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও দা-ছেনী, লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ভুক্তভোগী ফারুক হোসাইন বাদী হয়ে ইউপি সদস্য আলেক হোসেনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের নামে থানায় মামলার পর পুলিশ দুপুরে ইউপি সদস্য আলেক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার আলেককে নোয়াখালী মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
আরও পড়ুন:ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের রসুলপুরে এক মাদ্রাসা ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় তার পায়ুপথে অস্বাভাবিকতার চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। এই শিশু শিক্ষার্থী কারও দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।
সোমবার রাতে তাকে ঘরের ভেতর ঝুলন্ত অবস্থায় পায় পরিবারের সদস্যরা। পরে মধ্যরাতে তার মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত ১৪ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতেন কামরাঙ্গীর চরে নুরিয়া মাদ্রাসায়। এই মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়ে গত শুক্রবার ওয়াজ মাহফিলে পাগড়ি পান। পাগড়ি গ্রহণ শেষে সে বাসায় ফেরে। এরপর থেকে ওই শিক্ষার্থী বাসাতেই ছিল।
কামরাঙ্গীর চর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, গতকাল ওর মাদ্রাসার যাওয়ার কথা। কিন্তু যেতে চাইনি। রাতে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ ভেতরে থাকলে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। ভেতরে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
শিশু শিক্ষার্থীর পায়ুপথে অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, আত্মহত্যা করলে পায়ুপথে বীর্য ও মল আসে। এই ভিকটিমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এর বাইরে তার পায়ুপথ স্ফিত ছিল। যেটা দেখে আমাদের সন্দেহ হয়েছে। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্ত করিয়েছি। ডাক্তার কোনো কিছু জানাননি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
এ ঘটনায় এরইমধ্যে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে, তবে তদন্তে যৌন নির্যাতন বা অন্য কিছু পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি মোস্তাফিজুর।
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও আদালত বর্জন শুরু করেছেন আইনজীবীরা। দুইজন বিচারককে প্রত্যাহারের দাবি পূরণ না হওয়ায় এবার দুটি নয়, সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির এক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারের আদালত বর্জনের সময়সীমা দেয়া হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করছেন আইনজীবীরা।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা আদালত বর্জনের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারকের আদালত ও ৫ জানুয়ারি থেকে সব আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা। এতে জেলার বিচার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।
রাজধানীতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৫ জানুয়ারি থেকে আইনজীবীরা জেলা ও দায়র জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ব্যতীত অন্যান্য আদালত বর্জন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তবে ওই দুই আদালতের বিচারককে অপসারণে দাবিতে তারা ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষে আইজীবী সমিতির সভায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মন্তব্য