‘কহর দরিয়া’ খ্যাত গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার জন্য ময়দান পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধের পর আসন্ন ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় ধর্মীয় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব, তবে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, ১৬০ একর জায়গার বিশাল ময়দানে শামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। বৈদ্যুতিক বাতি, মাইক, জেনারেটর সংযোগ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ সব আনুষঙ্গিক কাজও শেষ হয়েছে।
ইজতেমা মাঠে প্রবেশের জন্য ১৩টি প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মূল প্রবেশপথের পাশাপাশি তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছেন ৫টি পন্টুন ব্রিজ, যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন।
আয়োজকরা আরও জানান, বুধবার থেকে মুসল্লিদের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা। চার দিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন।
ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ে নামাজের মিম্বার এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে মূল বয়ান মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া শামিয়ানা টানানো, বিদ্যুৎ ও প্রচারযন্ত্র সংযোগের জন্য তার টানানোসহ তাশকিল কামরা, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, প্রতিবন্ধীদের বয়ান শোনার আলাদা কামরা তৈরি করা হয়েছে।
ময়দানের ভেতরের প্রবেশপথগুলো ইট-বালি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। দলে দলে টুপি-পাঞ্জাবি পরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিভিন্ন খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।
জামালপুর থেকে এক শ জনের জামাত নিয়ে ময়দানে আসা আলহাজ আকরাম হোসেন বলেন, ‘ইজতেমার শুরু থেকে প্রতি বছরই আসতাম। গত দুই বছর করোনার জন্য ইজতেমায় আসা হয়নি।
‘ময়দানে জায়গা পেতে সমস্যা হয় বলে এবার আগেই চলে এসেছি। ইজতেমা শুরুর আগে ময়দানেই আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করব এবং ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজে শরিক হব।’
খিত্তা অনুযায়ী মুসল্লিদের অবস্থান
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্বের ইজতেমায় মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২, ৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫ থেকে ১৮ ও ২১, ২২, ২৫, ২৭, ২৮, ৩০), রাজশাহী (খিত্তা-১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-২০), নাটোর (খিত্তা-২৩), নওগাঁ (খিত্তা-২৪), নড়াইল (খিত্তা-২৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৯), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩২),গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৩), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৪), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা-৩৫), যশোর (খিত্তা-৩৬), নীলফামারী (খিত্তা-৩৭), বগুড়া (খিত্তা-৩৮), জয়পুরহাট (খিত্তা-৩৯), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৪০), ফরিদপুর (খিত্তা-৪১), ভোলা (খিত্তা-৪২), নরসিংদী (খিত্তা-৪৩), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৪), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৫), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৪৬), মেহেরপুর (খিত্তা-৪৭), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৪৮), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৪৯, ৫১) ও শেরপুর (খিত্তা-৫০)।
এ ছাড়া জামালপুর (খিত্তা-৫২), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৩), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৫), ঝালকাঠি (খিত্তা-৫৬), বান্দরবান (খিত্তা-৫৭), বরিশাল (খিত্তা-৫৮), পিরোজপুর (খিত্তা-৫৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৬০), কক্সবাজার (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৬৩), ফেনী (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৬), চাঁদপুর (খিত্তা-৬৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৬৮), খুলনা (খিত্তা-৬৯), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭০), বরগুনা (খিত্তা-৭১), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৪), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৫), তুরাগ নদের পশ্চিমপাড় কাঁচাবাজারে মৌলভীবাজার (খিত্তা-৭৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৭৭), মাদারীপুর (খিত্তা-৭৮), শরীয়তপুর (খিত্তা-৭৯), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-৮০, সাফা টাওয়ার), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৮১), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৮২), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৩), পাবনা (খিত্তা-৮৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৫), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৮৭), মাগুরা (খিত্তা-৮৮), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৮৯, কামারপাড়া বেড়িবাঁধ বঙ্গবন্ধু মাঠ) ও পঞ্চগড়ের (খিত্তা-৯০ কামারপাড়া হাইস্কুল মাঠ-বধির স্কুল ভবন) মুসল্লিরা নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।
এ ছাড়া ময়দানের চারপাশে ১১ ও ১২ নম্বর খিত্তার কিছু অংশ, ৩২ ও ৩৭ নম্বর খিত্তার মাঝামাঝি ১২ নম্বর, ৭২, ৭৩, ৮৬ ও ৯১ নম্বর খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে।
ইজতেমায় চলবে ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন
বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইজতেমার প্রথম পর্বে শুক্রবার থেকে আখেরি মোনাজাত ও দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার থেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে এ সেবা চালু হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম জানান, ইজতেমার দুই পর্বে ঢাকা থেকে পাঁচ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। এ ছাড়াও জামালপুর থেকে স্পেশাল ট্রেন চলবে এবং ময়মনসিংহে আখেরি মোনাজাতের দিন দুইটি স্পেশাল ট্রেন যাবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতকরণ, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে টঙ্গী, বিমানবন্দর, তেজগাঁও, কমলাপুর, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি অফিসারসহ প্রয়োজনীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল
ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে ১২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়া হবে। হোন্ডা কারখানার গেইট, বাটা সু গেইট, মুন্নু নগর, বিদেশি তাঁবু এবং টঙ্গী জংশন এলাকায় এসব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা
ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে প্রায় ৩০০ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও এবারের ইজতেমায় সাইবার নিরাপত্তা দেয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া স্পেশালাইজড টিম, প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজ করবে।
প্রতি খিত্তায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা রান্নার কাজে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন। তাই সিলিন্ডার সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো মানের সিলিন্ডার সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আগুন নেভানোর জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা হবে। ময়দানে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি আগুন নেভানোর গাড়ি ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। তুরাগ নদীতেও নৌ টহল থাকবে।
গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান জানান, ইজতেমা উপলক্ষে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ এবং ২৫টি ফগার মেশিনে মশা নিধনেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেয়া, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বর্জ্য অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, দুই পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্ততি সভা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষে আয়োজকরা মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন। পরে দ্বিতীয় পক্ষকে মাঠে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। এ ছাড়াও ইজতেমা মাঠ ও চারপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদসহ তাদের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতে যারা সহযোগিতা ও উৎসাহিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা করার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
কমিশনার বলেন, খাস ও ব্যক্তিগত পাহাড়ের কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না। অবৈধ বসতি উচ্ছেদসহ স্থায়ীভাবে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে।
এজন্য জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে আন্তঃদপ্তর আলোচনা করে উচ্ছেদ-পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের নির্দেশনা দেন তিনি।
তোফায়েল ইসলাম বলেন, সরকারি, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংস্থার পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পাহাড় মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার পর যাতে বেদখল না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিছিন্নকরণ কার্যক্রমের অগ্রগতি কতটুকু তা ১৫ দিন পর পর প্রতিবেদন আকারে জানাতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেন বিভাগীয় কমিশনার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে শাস্তি পাওয়া প্রবাসীদের মধ্যে আরও ১০ জন দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২২ প্রবাসী দেশে ফিরলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা করে দেয় সে দেশের সরকার। ক্ষমা পাওয়া এসব প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে আমিরাত সরকার।
সোমবার সন্ধ্যা ও রাতে পৃথক দু’টি বিমানে করে তারা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, বিমানবন্দরে আসা শ্রমিকদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল বলেন, সোমবার বিকেলে ও রাতে পৃথক বিমানে করে মোট ১০ জন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। এর আগে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ১২ জন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান।
পূর্ববিরোধের জের ধরে বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় লেদু নামে এক যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে গণপিটুনি দিলে তিনিও মারা যান।
সোমবার রাত ৯টার দিকে বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বগুড়া সদর থানা পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর রহমান নেতাকর্মী নিয়ে রাত ৯টার দিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে কথা বলছিলেন। ওই সময় বিদ্যুৎ ছিল না। এ সুযোগে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলযোগে এসে মিজানুর ও তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা মিজানুরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে চলে যায়।
স্থানীয়রা আহত মিজানুরকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে।
এ ঘটনার পরপরই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গোকুল মধ্যপাড়া এলাকার বুলু মিয়ার পুত্র সালমান হোসেনে লেদুকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত লেদুকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তির আগেই উপস্থিত বিক্ষুব্ধ কয়েকজন তাকে আবারও মারধর করে। এরপর রাত আনুমানিক ১১টায় লেদু মারা যান।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তথ্যে স্থানীয়রা জানান।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই মিজানুর মারা যান। অপরদিকে হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যান লেদু।
সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, ‘দুজনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে চেষ্টা করছে পুলিশ।’
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ড তদন্তের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে মিজানুর নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে যান।
পাইপলাইন স্থানান্তরের কাজের জন্য বুধবার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে নরসিংদীর কিছু এলাকায়। তিতাসের জরুরি গ্যাস শাটডাউন বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নন্দীপাড়া জামে মসজিদ, ভেলানগর, নরসিংদী হতে ভেলানগর বাজার জামে মসজিদ পর্যন্ত বিদ্যমান পাইপলাইন স্থানন্তর কাজের জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকা হতে রাত ১০ ঘটিকা পর্যন্ত (১২ ঘণ্টা) চিনিশপুর, আবেদ টেক্সটাইল ঘোড়াদিয়া নরসিংদী, থার্মেক্স গ্রুপ, বৈশাখ স্পিনিং, কারার চর, শিবপুর, নরসিংদী ও তদসংলগ্ন এলাকায় বিদ্যমান সকল শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
“এ ছাড়া আশপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দের সাময়িক অসুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয় (২৪) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোণার আদালতে সোপর্দ করেছে কেন্দুয়া থানা পুলিশ।
নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারোবাড়ি গ্রাম থেকে রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয় নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারোবাড়ি গ্রামের সামছুজ্জামান তাওহীদের ছেলে ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠ্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক।
নেত্রকোণার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হন ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেন্দুয়া থানা পুলিশের একটি টিম রোববার রাতে হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি বাদে আঠারবাড়ি থেকে তাকে আটক করে।
তিনি আরও জানান, আটক হৃদয়কে কেন্দুয়া থানার নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার বিকেলে হৃদয়কে নেত্রকোণা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন নাকচ করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তুচ্ছ ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শেরপুর সদরে দুই এলাকার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
৭ নম্বর ওয়ার্ডে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন গৌরীপুর এলাকার ট্রলিচালক মিজানুর রহমান ও একই এলাকার শ্রাবণ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর মোড়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু ছেলের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। ওই ঘটনা ও আধিপত্যকে বিস্তারকে কেন্দ্র করে খোয়ারপাড় ও গৌরীপুর এলাকার লোকজনের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত তিন দিন ধরে দুই এলাকার লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল, যার ফলে উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়।
তিনি জানান, সোমবার রাতে দুই পক্ষই খোয়ারপাড় মোড়ে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েক দফা সংঘর্ষে খোয়ারপাড় মোড়ে দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে উভয় এলাকার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে রাতেই মিজানুর রহমান নামের একজন নিহত হন। সে সময় শ্রাবণসহ আরও ১০ জন আহত হন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, আহত শ্রাবণকে শুরুতে শেরপুর সদর হাসপাতাল এবং অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু যায়।
সংঘর্ষে আহত লোকজনকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন:খুলনা নগরে মঙ্গলবার নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে তিনজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
বয়রা মহিলা কলেজের বিপরীত পাশে নির্মাণাধীন কর ভবন থেকে পড়ে সকালে তাদের মৃত্যু হয়।
প্রাণ হারানো তিন শ্রমিক হলেন রাব্বি, আশরাফুল ও মামুন।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুনেছি বয়রা মহিলা কলেজের বিপরীত পাশে কর ভবনের নির্মাণকাজ করছিল রডমিস্ত্রিরা। অসাবধানতাবশত পাঁচ তলা থেকে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়, তবে ঘটনাটি সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকার।’
মন্তব্য