কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফান্ডেশনের গরিবের সুপার সপে এক টাকায় তেল, চাল, লবণসহ প্রায় ১৫টি পণ্য কিনতে পারায় খুশি দেশের উত্তরের দারিদ্রতম জেলার মানুষ। মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারি দুপুরে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় মেয়েদের জন্য একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়। এই এতিমখানা এবং এক টাকা বাজারে কেনাকাটার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।
ধরলা নদী দ্বারা দ্বি খন্ডিত কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন। নদী ভাঙ্গন আর কর্মহীন হয়ে পড়া এসব বাসিন্দাদের পাশে এসে দাঁডিয়েছে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠণ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস। দিন এনে দিন খেটে খাওয়া মানুষের নুন আনতে পনতা ফুরানোর অবস্থা। সেসব মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটাতে বিদ্যানন্দ ফান্ডেশন এক টাকার বাজার কার্য়ক্রম শুরু করেছে।
এই বাজারে সুবিধাভোগীরা এক টাকা, চার টাকা এবং সাত টাকায় সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পেরে খুশি হতদরিদ্র এসব মানুষ। কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকার মধ্যে যেন কোন পণ্য কিনতে পারবেন। বাজারে এক টাকা চাল, সুজি, লবণ, অ্যাংকর ডাল, সবজি, নুডলস ও ডিম। দুই টাকাতে আটা, মসুর ডাল। চার টাকায় তেল, মুরগি, মাছ এবং সাত টাকায় একটি কম্বল কিনতে পারছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের তালিকাভুক্ত প্রায় ২৫০টি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ ১০ টাকার বিনিমিয়ে এসব দ্রব্যাদি ক্রয় করছেন।
দশ টাকায় এসব পণ্য বাইরে বাজার থেকে কিনতে গেলে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হতো। যা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
ক্রেতা রুবিনা বেগম বলেন, ‘এক টাকা দিয়ে এক কেজি করে চাল, সবজি, লবণ, সুজি, অ্যাংকর ডাল, এক হালি ডিম এবং এক প্যাকেট নুডলস কিনলাম। হামার মতো গরিব মানষের এটাই উপকার। বাইরের মানষে কয় হামরা খালি ত্রাণ খাই। কিন্তু হামরা টাকা দিয়ে কিনবার পাই এটাই হামার তৃপ্তি। এমন বাজার আরও হলে হামার এতি ক্যার গরিব মানষের ভাল হইল হয়।’
ক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, ‘কামলা দিয়া হাজিরা পাই ৩০০ টাকা। ত্যাল, নুন, মরিচ, চাল কিনতে সোগ শ্যাষ। যে টাকা আর করি তাতে জিনিস পাতির দামি গরিব মানষের বাচি থাকা ধইনশোন হয়া গেছে। এই এক টাকার বাজার আসিয়া ১০ টাকায় ম্যালা কিছু কিনবার পাইছি। হামার টাকাও থাকিল, প্যাটও বাচিল।’
ক্রেতা বুলবুলি আকতার বলেন, ‘একটা কম্বলও নাই। যে জার পড়ছে তাতে করিয়া ছোয়া পোয়া নিয়া খুব কষ্টে দিন কাটছে। খ্যাতা সিলাই করি তাকে দিয়ে শীত কাটাই। আজ এক টাকার বাজারে এসে সাত টাকা দিয়ে একটা কম্বল কিনছি। এটা বাজারত কিনবার গেলে নাই করি ৩০০ টাকা নাগিল হয়।’
এতিম কিশোরী সাদিয়া আকতার জানায়, এক বছর আগে মা মারা গেছে। সেই থেকে দাদীর কাছে আছি। অভাবের সংসারে তিন খাবার জোটে সেখানে ভালোমন্দ খাবার যে এক ধরনের স্বপ্ন তার কাছে। বিনামূল্যে এই এতিম খানায় থাকতে পেরে খুশি সে। পড়াশোন করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে এতিম শিশুদের পাশে দ্বাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অমিত বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে দেশের বৃহৎ রান্না করার পাতিল এখানে স্থাপন করা হয়েছে। এই পাতিলে এক সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষের রান্না করা সম্ভব। বন্যা কবলিত কুড়িগ্রাম জেলায় ইতোমধ্যে এই পাতিলে রান্না করে ঈদ, বন্যাতে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অফ কমিনিকেশন সালমান খান ইয়াসির বলেন, ‘কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭টি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানায় পিতা-মাতা হারা দরিদ্র মেয়েদের বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া এবং পড়াশোনা করানো হয়। কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় হজরত আয়েশা (রাঃ) এতিমখানা নির্মান করা হয়েছে। এই এতিম খানায় শতাধিক মেয়েরা বিনামূল্যে থাকতে পারবে।
‘বৈশিক মন্দায় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে গরিব অসহায় পরিবারগুলো একটু যেন পুষ্টিযুক্ত খাবার খায়। এছাড়াও টাকা দিয়ে কিনে মানুষ যে আনন্দটা পায় সেটা ত্রাণ দিলে পায় না। সেজন্য স্বল্প মূল্যে তারা যেন কেনাকাটার আনন্দ উপলব্ধি করতে পারে তার জন্যই এমন আয়োজন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, এক টাকার বাজার এই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষের জন্য উপকার হবে। এতে করে মানুষের পুষ্টির চাহিদা এবং ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
এক টাকার বাজার ও হজরত আয়েশা (রাঃ) এতিমখানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম, হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স-প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীরা।
আরও পড়ুন:নিয়মিত জিমে যাওয়া ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণসহ স্বাস্থ্য রক্ষার সব নিয়ম মানার পরও শুকিয়ে যাচ্ছিলেন আবিদ ও সেজান (ছদ্মনাম)। অথচ তাদের বয়স যথাক্রমে ২২ ও ২৫ বছর। এক পর্যায়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে তারা জানতে পারলেন কারণটা।
স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি মাসলম্যান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিয়মিত জিমে যাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হয়েছে। জিমে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে তারা লিভার এনজাইম ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স-এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
তাদের একজনের লিভার এনজাইমের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। আরেকজনের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত এই বয়সে এমন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।
জিমে গিয়ে স্টেরয়েড সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক বয়সে না নেয়ায় তাদের আচরণে অস্বাভাবিকতা চলে আসে। পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি ধরতে পারেন। কারণ জিম করেও তারা শুকিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে চিকিৎসার জন্য এই দুই তরুণকে ঢাকায় আনা হয়।
রাজধানীর গ্রীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, এই দুই তরুণ এখনও পুরোপুরি রিকভার করে উঠতে পারেনি। আর এই শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল।
ডা. রায়হান বলেন, ‘স্টেরয়েড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ বুঝে প্রেসক্রাইব করেন। আর জিমে যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় তা আর্টিফিসিয়াল বডি বিল্ডিংয়ের জন্য।
‘বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো এই স্টেরয়েড উৎপাদন করে না। এগুলোর বেশিরভাগই চীন থেকে আনা হয়। প্রতিবেশী ভারত থেকেও নিয়ে আসা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করার কোনো অথেনটিসিটি নেই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিমে সাপ্লিমেন্ট দেয়া যায়। তবে কোনো চিকিৎসকই বডি বিল্ডিংয়ের জন্য স্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করেন না। কারণ এর কোনো অনুমোদন নেই। এগুলোর বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রাগ।
‘কোনো ফার্মেসিতেও এটা পাবেন না। দুই-একটা পাওয়া গেলেও সেটা নির্দিষ্ট কোনো রোগ যেমন ব্রেইন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার- এসব ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। আবার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র কোনো ফার্মেসি বিক্রিও করবে না।’
পার্শপ্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েডের প্রধান কাজ হলো মাসল বৃদ্ধি। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করে এক বছরে যেটুকু মাসল বাড়ানো যায় সেটা স্টেরয়েড ব্যবহার করে দুই বা তিন মাসেই করা সম্ভব। এর বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে হরমোন তৈরি হয় সেটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা গেল, টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরিই বন্ধ হয়ে গেল। তখন নানাভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। যদি মেইল হরমোন অর্থাৎ ছেলেদের হরমোনই তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে তো ওই মানুষটি পুরুষের মতো আচরণই করবে না। তখন প্রজনন ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এছাড়া পরিমাণ না বুঝে স্টেরয়েড ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেখা যায়, অনেক বডি বিল্ডার কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে। স্টেরয়েডের অস্বাভাবিক ব্যবহার এর অন্যতম একটি কারণ।
তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না জেনেই কি জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ডা. রায়হান শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বছর দশেক আগেও মানুষ এ বিষয়ে তেমন একটা জানত না। অনেকে এগুলোকে সাপ্লিমেন্ট মনে করত। তিন/চার বছর ধরে মানুষ কিছুটা হলেও জানতে পারছে।
‘সঠিক নিয়মে জিম না করলে জয়েন্টে ইফেক্ট পড়তে পারে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমনকি অপারেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে।
‘তাই স্টেরয়েড নিলেও চার সপ্তাহ পর তা বন্ধ করে দিতে হবে। হরমোনাল ব্যালান্স আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য ‘Post Cycle Therapy’ দিতে হয়।
অলি-গলিতে জিম, নেই প্রশিক্ষক
রাজধানী ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভাগ, জেলা এমনকি উপজেলা সদর পর্যায়েও গড়িয়ে উঠেছে জিম। এর সঠিক পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও জানে না।
ফিটনেস সেন্টার হিসেবে পরিচালিত এসব জিমে নেই সার্টিফিকেটধারী কোনো প্রশিক্ষক। ফলে এসব জায়গায় স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য গিয়ে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পাচ্ছেন না। উপরন্তু মাত্রাজ্ঞান ছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহারে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন জটিল রোগে।
ট্রেনিং-এর বিষয়ে মিস্টার বাংলাদেশ এবং ফিটনেস কোচ সাকিব নাজমুস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়া থেকে ছয় মাসের একটি ট্রেনিং নিয়েছি। সব জিমে ট্রেনার নেই, আবার জিম করতে করতে অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে ট্রেনার হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তাদের নেই। এর অবশ্য একটি বড় কারণ, জিমে ট্রেনিং দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠানই দেশে নেই।’
তিনি বলেন, ‘স্টেরয়েড ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই থাকে। তবে সমস্যাটা হয় এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে। স্টেরয়েড ব্যবহার করতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। সর্বোচ্চ ৫ মাস এর ব্যবহার করা যেতে পারে। আর মঞ্চে পারফর্ম করার মতো কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে আমি সাজেস্ট করব স্টেরয়েড ব্যবহার থেকে দূরে থাকা। এর ব্যবহারকে আমি নিরুৎসাহিত করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই স্টেরয়েড ব্যবহারের সাজেস্ট করি না, যদি না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি প্রতিযোগিতায় যায়।
‘এটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিলে আবার রিমুভ করা যায়। এর জন্য কিছু মেডিসিন ও ইনজেকশন আছে। তবে সেটারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ওজন কমানো বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও স্টেরয়েড আসলে কোনোভাবেই অনুমোদিত নয়।’
প্রতিরোধ
ডা. রায়হান বলেন ‘প্রতিটি জিমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বডি বিল্ডিংয়ের প্রচলন বেড়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যগত সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। কারণ হুজুগে গা ভাসালে হবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও সবার জানা থাকা দরকার।
সবচেয়ে বড় কথা, যেহেতু স্টেরয়েডের ব্যবহার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাই জেনেশুনে কারও এটা ব্যবহার করা উচিত নয়। জিম চলবে শারীরিক সুস্থতার জন্য। মাসলম্যান বানানোটা এর উদ্দেশ্য হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া, অভিভাবক- সবাইকে বুঝতে হবে স্টেরয়েড ব্যবহার করলেই স্বাস্থ্যবান থাকা যাবে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে হেলদি মনে হবে এটুকুই। তাই এটার ব্যবহার থেকে দূরে থাকাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিমগুলোতে যথেচ্ছ ব্যবহার ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো খোঁজখবর রাখে না।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনটা জানা গেছে। একইসঙ্গে তারা বলেছেন, এখন থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিমে স্টেরয়েডের ব্যবহার হয় এটি আমি ভাবতেই পারি না। স্টেরয়েড সাধারণত চিকিৎসকরা বিশেষ কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য চিকিৎসককে যখন কোনো জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তখন রোগীকে বাঁচানোর জন্য স্টেরয়েড দেয়া হয়।
বিষয়টি জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমি জিমে খোঁজ নেব। এটি তো হতে পারে না। বডি বিল্ড ন্যাচারালি হয়। মাসল বিল্ড একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেটি তো হবেই, আর সেজন্য একটা নির্দিষ্ট টাইম লাগবে। তাড়াহুড়া করে বডি বিল্ড করার নামে ব্যবসা করবে, এটা তো মেনে নেয়া যাবে না। প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে আমি বিষয়টি দেখব।’
আইন মানছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বারাকা পাওয়ার লিমিটেড। শ্রম আইন অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, তবে আগের অর্থবছরে ফান্ড গঠন করা হলেও দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে কখনোই ডব্লিউপিপিএফ গঠন করা হয়নি।
এভাবে আইন না মেনে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে কোম্পানি। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানা গেছে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, প্রতি বছর নিট মুনাফার ৫ শতাংশ দিয়ে ডব্লিউপিপিএফ গঠন এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ বাধ্যতামূলক, কিন্তু বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ওই ফান্ড গঠন করেনি।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশেন (বিআইপিপিএ) ওই ফান্ড গঠনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সেই আবেদন মঞ্জুর না হতেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছে।
এমনিতেই বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি কর্ণফুলী পাওয়ার ও বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার ডব্লিউপিপিএফ গঠন না করে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এবার বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারও একই অনিয়ম করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো কয়েক কোটি টাকার নিট মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে।
যেভাবে অনিয়ম
২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করা বারাকা পতেঙ্গায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করা হয়েছিল, তবে ওই অর্থবছরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোসহ বারাকা পতেঙ্গার নিট মুনাফা হয়েছিল ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পুরোটার ওপর ফান্ড গঠন করলে হতো ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে সাবসিডিয়ারিসহ কোনো কোম্পানিতেই ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করেনি বারাকা পতেঙ্গা কর্তৃপক্ষ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে সমন্বিতভাবে (কনসোলিডেট) নিট মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর ওপরে ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন করলে হতো ২ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে সবকিছুই দেয়া আছে। সেটার বাইরে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানতে ফোন করবেন।’
২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উদ্যোক্তা বা পরিচালক ছাড়া অন্য বিনিয়োগকারীদের মালিকানায় রয়েছে ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার ইস্যুমূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। মঙ্গলবার শেয়ারটি ২৯ টাকা ৩০ পয়সায়, অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইসে বেচাকেনা হয়। অথচ কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস ছিল ৩২ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হওয়ার ৮ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ওই প্রাইসের নিচে নেমে আসে। গত বছরের ৬ মার্চ সর্বপ্রথম শেয়ারটি কাট-অফ প্রাইসের নিচে নামে।
তারপরেও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা কম থাকা এমন কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩২ টাকার কাট-অফ প্রাইসে খুশি হতে পারেননি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বুক বিল্ডিংয়ে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে নতুন কড়াকড়ি আরোপের কারণে ৩২ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস। অন্যথায় কারসাজির মাধ্যমে প্রাইস অনেক ওপরে নিয়ে যেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বারাকা পাওয়ারের জন্য গড় ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করে প্রতিটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯ টাকা করে ইস্যুর কারণে গড় প্রাইস ৩০ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে।
২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন। অর্থাৎ ৩০ টাকা ৫০ পয়সা বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তি ১ টাকা বা ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটের মুনাফা (এফডিআর) এর চেয়ে বেশি হয়।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে ই-টিকেটিং চালুর উদ্দেশ্য ছিল দূরত্ব অনুযায়ী বাস ভাড়া নিশ্চিত, নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানামা এবং এক বাসের সঙ্গে আরেকটির রেষারেষি বন্ধ করা।
ই-টিকেটিংয়ের আওতাধীন বিভিন্ন রুটে বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য কিছুটা কমেছে, তবে বাকি দুই সমস্যা থেকেই গেছে।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বাসে ই-টিকেটিং চালু করে। এর আওতায় চলাচল করা রুটে প্রথমে কাউন্টারে টিকিটের ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তী সময়ে কাউন্টার উঠিয়ে বাসে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়, তবে টিকিটের গায়ে দূরত্ব লেখা না থাকায় ন্যায্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে অনেক যাত্রীর।
কাউন্টার উঠিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জানায়, কাউন্টার থেকে পাওয়া টাকা ব্যানার মালিকরা বাসমালিকদের ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেন না। তাদের দুর্নীতির কারণে বাসমালিকরা লাভ পেতেন না। তাই বাসের মধ্যে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজধানীতে ৯৬টি বাস রুটের মধ্যে ৪৬টিতে চলছে ই-টিকেটিং। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে আরও ১৭ রুটকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে বাসমালিক সমিতি।
ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ঢাকার ৯৬ রুটকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
ই-টিকেটিংয়ের আওতায় চলাচল করা বেশ কয়েকটি রুটে ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের ই-টিকিট দিতে অনীহা কনডাক্টরদের। অনেক যাত্রীদের মধ্যেও উদাসীনতা আছে টিকিট নিয়ে। আবার অনেক যাত্রীকে চেয়ে চেয়ে টিকিট নিতে হয়েছে।
একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, না চাইলে কনডাক্টররা টিকিট দেন না। বাসের রেষারেষি রয়েই গেছে। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়। এমনকি চলন্ত রাস্তার মাঝখানে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী তোলা হয়।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, ‘আলিফ এবং শিকড় পরিবহনে আমি নিয়মিত চলাচল করি। ই-টিকেটিং চালু হওয়ার পরে এই দুই বাসের ভাড়া কমেছে, কিন্তু তারা টিকিট দিতে উদাসীন। অনেক সময় কনডাক্টর ইচ্ছা করে বাসের দরজা থেকে ভেতরে আসেন না। নামার সময় তাড়াহুড়ো করে টাকা রেখে দেন, কিন্তু টিকিট দেন না।’
‘শুধু ভাড়াই কমেছে, কিন্তু বাসে সেই আগের বিশৃঙ্খলা রয়েই গেছে।’
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে উত্তরা রুটে চলাচল করা প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনেও একই চিত্র দেখা যায়।
এ রুটে চলাচলকারী ইয়াসিন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই এই রুটে ই-টিকেটিং চালু হয়। প্রথম দিকে যখন কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতাম, তখন একটা শৃঙ্খলা ছিল। পরে ই-টিকিট বাসের ভেতরে কাটা শুরু হলে সেই আগের মতোই রেষারেষি শুরু হয়।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো ড্রাইভারের সঙ্গে চিল্লাপাল্লা করতে হয় নিয়মিত। তারা বাস থামিয়ে মিনিটের পর মিনিট বসে থাকে। যখন একই রুটে পেছনে আরেকটা বাস আসে, তখন শুরু হয় রেষারেষি।
‘মাঝে মাঝে এক বাসের চালক আরেক বাসকে ধাক্কাও দেয়। যে কারণে ই-টিকেটিং চালু করা, সেটা ফলপ্রসূ হয়নি।’
এই রেষারেষির কারণ অবশ্য বাসের মালিকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। অনেক রুটের বাসমালিক চুরি ঠেকাতে এখন চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনের অন্তত সাতজন বাসমালিকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। এই দুই পরিবহনের বাস চলে চুক্তিতে। এ ছাড়া অন্য রুটের অনেক বাসই চলে চুক্তিতে।
তাদের একজন বলেন, ‘যখন কাউন্টারে ই-টিকিট দেয়া হতো, তখন ব্যানার মালিকরা দুর্নীতি করে টাকা মেরে দিত। পরে বাসের ভেতরে টিকিট দেয়া শুরু হলে কনডাক্টর ভাড়ার টাকা নিয়ে টিকিট দিত না। আর টিকিট না দিলে মেশিনে টাকার পরিমাণ উঠত না। বেলা শেষে আমরা টাকা পেতাম না।
‘এখন প্রতিদিন আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে তাদের গাড়ি ভাড়া দিই। আমাদের বাসপ্রতি আড়াই হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে, সেটা ড্রাইভার ও কনডাক্টরের লাভ।’
অর্থাৎ বাস মালিকদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, টিকিট নামে মাত্র। বাকি সব আগের নিয়মেই চলছে।
সব বাস চুক্তিতে না চললেও চুরি ও নৈরাজ্য রয়েই গেছে। বিকাশ পরিবহনের তিনটি বাসের মালিক মো. কাওসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাস চুক্তিতে চলে না। আমাদের কোম্পানি থেকে বলা আছে সবাইকে টিকিট দিতে হবে, তবে তারা মাঝে মাঝে টিকিট দেয় না, এটা আমরা জানি। কয়েক দিন ই-টিকেটিং চালু হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিন গেলে ঝামেলা দূর হবে।’
যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের দায়িত্ব নিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিন দেড় শ টাকা মেশিন ভাড়া দিই। এটা তো আর এমনি এমনি দেব না।’
ভাড়ার বিষয়টা কিছুটা সমাধান হলেও বাকি দুই বিষয়ে এখনও বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে বলে স্বীকার করে নেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে যাত্রীদের থেকে অধিক ভাড়া আদায় করা হতো। ই-টিকেটিং চালু করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকানো। শতভাগ ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকানো না গেলেও ম্যাক্সিমাম নৈরাজ্য বন্ধ হয়েছে।’
বাসের রেষারেষি এখনও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে। এই ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ৯৭ রুটে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনার কাজ শেষ হবে। পরবর্তী সময়ে এই দুই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করব। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো চলাচল বন্ধ করব।’
কিছু কিছু রুটে চুক্তিতে বাস চলছে স্বীকার করে তিনি যাত্রীদের টিকিট নেয়ার বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
এসব বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের যে শর্ত আছে, সেই শর্তে না চলে যদি বাস চুক্তিতে চলে, তাহলে পরিবহনের শৃঙ্খলা, রেষারেষি এবং ভাড়ার নৈরাজ্য কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। তার আগে চালকের স্বচ্ছ নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে।
‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যেন তৃতীয় পক্ষের হাতে টাকা না যায়। ই-টিকেটিং তার অন্যতম একটা হাতিয়ার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে যদি নগদ লেনদেন বন্ধ না থাকে, ভাড়ার নৈরাজ্য কমবে না। দেশ উন্নত হচ্ছে, কিন্তু পরিবহন খাত উন্নত হচ্ছে না। ভাড়া আদায়ের পরে মালিকের পকেটে পৌঁছাবে কি না, এটা নিয়ে যদি চিন্তা করা লাগে, তাহলে র্যাপিড পাসের প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবহনে নগদ লেনদেন বন্ধ করা গেলে এ খাতের মানোন্নয়ন হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী।
ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গাজীপুর রুটে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরিবহন বন্ধ হলেও বাসগুলো বসে থাকেনি। রঙ ও পরিবহনের নাম পাল্টে সেগুলো সচল থাকে রাস্তায়। গাড়ির চালক-সহকারীও বদল হয়নি।
সবার চোখ ফাঁকি দিতে বাসগুলো ঢুকে যায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক, আকাশ, সম্রাট, ট্রান্সলাইন নামের পরিবহনগুলোতে। গণমাধ্যমে এই বিষয়ে তখন বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। নেয়া হয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও।
বাসগুলোর চালক-সহকারীরাও সংশোধন হয়নি। বাসের নাম পরিবর্তন করা হলেও সেই রেষারেষি, যত্রতত্র যাত্রী নামানো-উঠানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার রয়েই গেছে। চালকদের বেপরোয়া আচরণের কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি।
বাস মালিক সমিতির বক্তব্যও দায়সারা। তারা বলছেন, কিভাবে ব্যানার পরিবর্তন করে আরেক পরিবহনে বাসগুলো ঢুকে পড়েছে সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
সবশেষ রোববার প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে দুজন ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় ওই বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাণ নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া সুলতানা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা বাসটি আটক করতে সক্ষম হলেও পালিয়ে যান ওই ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক লিটন ও সহকারী আবুল খায়ের। পুলিশ সোমবার তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাদেরকে দুইদিনের রিমান্ডে পাঠায়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার দুপুরে রাজধানীর প্রগতি সরণির কাওলা মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় নাদিয়ার নামে বাস স্টপেজ, রাস্তায় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ করাসহ চারটি দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হলে ভিক্টর ক্লাসিকের বাস চলাচল বন্ধ হবে। প্রশ্ন উঠেছে, এবারও সুপ্রভাত পরিবহনের মতোই কেবল পরিবহনের নাম ও বাসের রঙ পরিবর্তন হবে? বাস্তবে বাসগুলোর চালক ও সহকারীরা কোনো জবাবদিহির আওতায় আসবে নাকি অতীতের মতোই দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চলবে?
এসব আশঙ্কাই সত্যি হবে বলে মনে করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের গাড়িগুলো গ্যারেজে গিয়ে তাতে নতুন রঙ চড়ানো হবে। এরপর লাগিয়ে দেয়া হবে নতুন কোনো পরিবহনের ব্যানার।
‘আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী নিয়ম-কানুন না মেনে যদি বাস চলে তাহলে শুধু বাসের ব্যানারই পরিবর্তন হবে। আর কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। আর যেহেতু বাসগুলোর চালকের আসনে বেপরোয়া মানসিকতার আনাড়ি লোকই থাকবে, তাই দুর্ঘটনার নামে প্রাণহানিও বন্ধ হবে না।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের নিয়ম হচ্ছে দৈনিক যে আয় হবে তা থেকে সব খরচ বাদে মালিক ১০ শতাংশ মুনাফা পাবেন। কিন্তু আয় কী হলো না হলো তা দেখেন না বাস মালিকরা। চালককে দৈনিক মালিককে তিন থেকে চার হাজার টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘চালক যখন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন তখন তার মাথায় থাকে মালিকের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সব খরচ বাদে তাকে আয় করতে হবে। এটাই নৈরাজ্যের মূল। অর্থাৎ আইন না মেনে উল্টো নিয়মে চলছে নগর পরিবহন খাত। এই উল্টো নিয়মে চলার কারণেই বাস পরিবহনে নৈরাজ্য চলছে, চলবে।
‘সড়ক পরিবহন আইন মানতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তা মানানো যাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত যে ব্যানারেই গাড়ি চলুক অনিয়ম-অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে না।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমানও স্বীকার করেন যে সড়ক পরিবহনে অনিয়ম হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, এই অনিয়ম রোধে সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহনে আমরাও অনেক অনিয়ম পেয়েছি। সড়কে নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা ই-টিকেটিং পদ্ধতি এনেছি। ই-টিকেটিং চালুর পর আমরা ভাড়ার নৈরাজ্য কিছুটা কমে এসেছে। অন্যান্য সমস্যা নিয়েও আমরা কাজ করছি।’
ই-টিকেটিং-এর আওতায় কয়েকটি রুটের বাস মালিকের কাছ থেকে চালকরা চুক্তিতে নিয়ে বাস চালাচ্ছে। তবে নগর পরিবহনের প্রায় সব রুটেই অনিয়ম-নৈরাজ্যের বরাবরের চিত্র রয়ে গেছে। ফলে ই-টিকেটিং থাকলেও তা সেভাবে ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে যাতে কেউ বাস চালাতে না পারে সে ব্যবস্থা আমরা নেব। কোনো গাড়ি চুক্তিতে চলতে পারবে না। কারণ এটা বন্ধ না হলে সড়কে গাড়ি চালানো নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা রয়েই যাবে।’
কোনো ঝামেলা হলেই সংশ্লিষ্ট পরিবহনের বাস আরেক ব্যানারে সড়কে নামছে। এটা রোধে কোনো উদ্যোগ আছে কী না- এমন প্রশ্নে মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যানার পরিবর্তনের বিষয়ে ওনারা (ব্যানার ও বাস মালিক) বলতে পারবেন। কিভাবে তারা ব্যানার পরিবর্তন করেন সেটা আমরা অবহিত নই।’
বাসের ব্যানার পরিবর্তনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে বিষয়টির উল্লেখ করে এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:কে কখন অসুস্থ হবে, কার জরুরি চিকিৎসা লাগবে, কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটবে, এসব আগাম বলার বিষয় নয়, তবে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা আগাম জানিয়ে দেয়, সপ্তাহের আর ছয় দিন অসুস্থ হলে সমস্যা নেই; শুক্রবার নয়। কারণ এই দিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা মিলবে না।
রাজধানীসহ সারা দেশের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার চিত্রই মোটামুটি একই। শুক্রবার হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে সেবা কার্যক্রম চললেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া দায়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দিনটিতে চিকিৎসকরা সবাই একসঙ্গে ছুটি কাটান।
বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারেও শুক্রবার চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সপ্তাহের ছয় দিন রোগী দেখার জন্য ডজন ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন, কিন্তু শুক্রবার এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে হাতেগোনা দুই-চারজন চিকিৎসক থাকলেও বিশেষজ্ঞের দেখা পাওয়া ভার।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে দেখা গেল গেট বন্ধ। শুক্রবার বলে জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে চিকিৎসক ছিল না।
জরুরি বিভাগে ঢুকে দেখা গেল ওয়ার্ডে ভর্তি ২ বছর ৩ মাস বয়সী তানজিম। হিমোগ্লোবিন ৫ দশমিক ৫ এবং হার্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে শিশুটি।
তাকে মামীর কাছে রেখে মা কোথাও গেছেন। মামী পাপিয়া বেবি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তানজিমকে রক্ত দেয়া হবে আজ, কিন্তু আজ শুক্রবার; তাই ডাক্তার নেই। ওর হার্টেরও সমস্যা আছে। ওকে দেখছেন একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এখন আমরা টেনশনে পড়ে গেছি।’
অনেক সময় রক্ত দেয়ার পর পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তেমনটা হলে কী করবেন, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হতেই পারে। কী করব, কারে বলব বুঝতে পারছি না। ডাক্তার নেই।
‘অগত্যা এখানে যারা ডিউটিতে আছেন তাদের ডাকতে হবে, কিন্তু ওকে যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখছেন, তাকে তো আজ পাওয়া যাবে না!’
তানজিমের পাশের বেডে ভর্তি করা হয় ৬ মাস বয়সের শিশু আলফিকে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুটিকে তিন দিন আগে সাভার থেকে এখানে আনা হয়েছে।
আলফির মা যুঁথি আক্তার বলেন, ‘তিন দিন ধরে ভর্তি করছি বাচ্চাকে। এখন কোনো সিরিয়াস কিছু হলে যার আওতায় ভর্তি সেই ডাক্তার নাই। তার মোবাইল নম্বরও আমাদের কাছে নাই। আমরা চাই শুক্রবারেও প্রয়োজন হলে যেন আমরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাই।’
শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাবাসসুম অবশ্য চিকিৎসা সেবার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ইমারজেন্সিতে আমরা থাকি। রোগীদের যেকোনো সমস্যা আমরা দেখি। এখানে তো সবাই এমবিবিএস।
‘কেউ চিকিৎসা দিতে পারবে না এমন তো না। তা ছাড়া ফোনেও নির্দেশনা নিয়ে চিকিৎসা দিই আমরা। দরকার হলে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ থাকেন। জরুরি হলে কল দিয়েও ডাকা যায়।’
রোগীর অবস্থা সিরিয়াস হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তো তাৎক্ষণিক আসতে পারবেন না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা তো আছিই। না হলে শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
কল্যাণপুরে ইবনে সিনাতেও দেখা যায় অন্য দিনের তুলনায় রোগীর ভিড় অনেক কম। কারণ ডাক্তার নেই। রিসিপশনে জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন বলেন, ‘বেশির ভাগ ডাক্তারই শুক্রবার থাকেন না। সুনির্দিষ্ট কয়েকজন বাদে। যেগুলো বেশি প্রয়োজন, যেমন: মেডিসিন, হার্ট, ডায়াবেটিসসহ কিছু ডাক্তার থাকেন।’
কার্ড হোল্ডার থেকে ডাক্তারদের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে দেখা যায়, বেশির ভাগই সপ্তাহে তিন দিন বা চার দিন বসেন। শুক্রবারে কেউ নেই বললেই চলে।
হাসপাতালে কথা হয় তাহেরা সুলতানার সঙ্গে, যিনি একসময় আইসিসিডিআর’বিতে চাকরি করতেন।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার জরুরি প্রয়োজন হলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এটা শুধু আমি ফেইস করেছি, তা না; সবার সমস্যা। রোগ তো আর বার বোঝে আসে না। সাপ্তাহিক ছুটিটা চিকিৎসকরা পালাক্রমে নিলে ভালো হয়।
‘ইমারজেন্সিতে যারা থাকেন, তারা তো হঠাৎ কোনো রোগীর অবস্থা সিরিয়াস হলে ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতো তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারবেন না। সেই চিকিৎসককে ফোন করে আনতেও সময় লাগবে। আমি নিজে কতবার এ রকম বিপাকে পড়েছি, ঠিক নেই।’
বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বারের সুযোগ
একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের বেতন ছাড়া চেম্বার করতে দেয়া হয়। এখানে আমরা যেভাবে ইচ্ছা যেদিন ইচ্ছা ছুটি কাটাতে পারি।’
এতে হাসপাতালের লাভ কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো চিকিৎসকদের প্রোফাইল দেখে রোগী আসে। তারা অন্য হাসপাতালে যেতে পারত, কিন্তু ভালো ডাক্তার হলে সেখানেই রোগী বেশি যায়। আর সেই হাসপাতালে ভর্তি লাগলে এবং পরীক্ষার জন্য যে অর্থ সেটা হাসপাতাল পায়।
‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো দুই-একজন চিকিৎসককে রাখে বেতন দিয়ে। তারা সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে রোগী দেখেন। আর ছোট বেসরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগই বেতন দিয়ে কোনো সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চেম্বার করার জন্য রাখে না। যাদের রাখে, তাদের অধিকাংশই মেডিক্যাল অফিসার।’
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের শুরুতেই অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে দেশের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে। নতুন বছরের গত ২০ দিনে অন্তত সাতটি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অপহৃতের সংখ্যা ১২ জন। এদের বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন। এসব ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
পুলিশের তথ্যমতে, ২০২২ সালেই অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যের ঘটনা ছিল ১৬টি। অপহৃত হয়েছিলেন রোহিঙ্গা, স্থানীয় মিলে অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে হঠাৎ করেই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যের কয়েকটি চক্র। তাদের নেতৃত্বে নাম এসেছে জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের।
৮ জানুয়ারি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় ভুট্টাখেত পাহারারত চার কৃষককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে তারা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ঘরে ফেরেন।
১৫ জানুয়ারি টেকনাফে অপহরণের শিকার ছয় রোহিঙ্গা নাগরিক ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় টেকনাফের চাকমারকুল পাহাড়ি এলাকায় তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ছয় রোহিঙ্গাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালাই। পরে তাদের ছেড়ে দেয়। ফেরত আসা অপহৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ছয়জনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে।’
অপহৃত আব্দুস সালামের ছোট ভাই মুন্সী রফিক বলেন, ‘অপহরণের ঘটনা পুলিশকে জানানোর পরও কোনো সুরাহা পাইনি আমরা। পরে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার পর ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। একটি স্বাধীন দেশে এভাবে ডাকাত বা প্রভাবশালী চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারছে না। এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।’
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘অপহরণের খবর প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। অপহরণের বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করছি। কিন্তু সবার মুক্তিপণ দিয়ে ফিরতে হয়েছে।’
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘অপহরণের খবর পেলে পাহাড়ে অভিযান শুরু করি। কিন্তু অতি দুর্গম পাহাড় হওয়ায় আমাদের আভিযানিক কার্যক্রমে সমস্যা হয়। এ ছাড়া কেউ লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব হয় না।’
গত ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ির ঢালা থেকে গরু ব্যবসায়ীসহ দুজনকে তুলে নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা হলেন আলীকদমের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান ও তার মোটরসাইকেলচালক। পরে তারাও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছে।
ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির জানান, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে জানার পর অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর কোনো হদিস পাননি। এমনকি কে বা কারা এ অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত, তাও জানতে পারেননি তারা।
কিন্তু স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঈদগড় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পানিশযাঘোনা এলাকার আবু শামার ছেলে ডাকাত অস্ত্র বাবুল, আকবর আহাম্মদ হারুন, আব্দুস সালামের ছেলে মুজিব, আলী হোসেন, নুরুল হকের ছেলে কলিম উল্লাহ এই অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান।
তবে এসব ডাকাতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ইউপি সদস্য মিজান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ডাকাতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমন কোনো কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেলে যা শাস্তি দেয় তা মেনে নেব।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকটি অপহরণের ঘটনায় ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি চালিয়েছি। চক্রগুলোর সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য নেয়া হচ্ছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
১৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, খুনসহ নানা অপরাধ দমনে আমরা কাজ করছি। যেকোনো ধরনের অপরাধ ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্তে চোরাচালান বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি যেভাবে আমরা মোকাবিলা করেছি, একইভাবে সব সংকট মোকাবিলা করব।’
আরও পড়ুন:মরণোত্তর অঙ্গ দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ২০ বছর বয়সী সারা ইসলাম। তার দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। আর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হবে আরও দুজনের চোখে। অবশ্য মৃত্যুর আগে মুহূর্তে সারা তার পুরোটাই দান করে দিতে তার মাকে বলে গেছেন।
সারার অঙ্গদানের অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএম) প্রক্টর ও ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল।
সারার মায়ের বরাত দিয়ে ডা. দুলাল জানান, জন্মের ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্কোলোরোসিস রোগে আক্রান্ত হন সারা। এ রোগের সঙ্গে তিনি লড়াই করে এসেছেন ১৯টি বছর। জীবনের সঙ্গে তার এই লড়াইয়ের মাঝেও কোনো কিছুই থেমে থাকেনি তার।
সারার মা শিক্ষক শবনম সুলতানা ও বাবা শহীদুল ইসলাম। তাদের বড় সন্তান সারা ইসলাম। সারার একটি ছোট ভাই আছে।
অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি ও হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি দুটিতেই ভালো রেজাল্ট করেন সারা। এরপর তিনি ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ ডেভলভমেন্ট অলটারনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে। তিনি ফাইন আর্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন ভালো চিত্রশিল্পী।
সারা ইসলামের দুটি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের শরীরে এবং আরেকটি কিডনি ফাউন্ডেশনে অন্য আরেকজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। কর্ণিয়া দুটিও প্রতিস্থাপন করা হবে।
বিএসএমএম প্রক্টর বলেন, ‘সারা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। চারদিন আগে ব্রেন অপারেশনের জন্য তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থা খারাপ হলে আবার আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়।
‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যখন সারা বুঝতে পারেন তার অবস্থা ভালো না, সেই মুহূর্তে মাকে বলে যান মৃত্যুর পর যেন তার অঙ্গ দান করা হয়। মৃত্যুর পর তার মা আমাদের বিষয়টি জানান। তার সম্মতিতেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
‘সারা তার পুরো অঙ্গটাই দান করে গেছেন। আমাদের দেশে হার্ট ও লিভার ট্রানপ্ল্যান্ট এখনও সেভাবে শুরু হয়নি বলে এ দুটি অঙ্গ নেয়া হয়নি। সেগুলোর ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এত অল্প বয়সে এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্তে অঙ্গদান করে নজির সৃষ্টি করে গেলেন সারা। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে যারা কোনো অঙ্গে ত্রুটি নিয়ে বেঁচে আছেন, তারা সুন্দরভাবে জীবন কাটাতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু বিএসএমএমইউ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রয়াত সারা ইসলামের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য