কুমিল্লা শহরে গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে গরম পানি ঢেলে পা ঝলসে দেয়ার অভিযোগ করেছে গৃহকর্মী শিশু।
ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার একটি বাসায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী নির্যাতন করে বলে জানায় ওই গৃহকর্মী।
জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে পুলিশ।
১২ বছর বয়সী গৃহকর্মীর বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে।
এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
গৃহকর্মীর অভিযোগ, আবু তাহেরের কুমিল্লার বাসা এবং তারা মেয়ে ফাহমিদা তিমুরের ঢাকার বাসায় চার বছর ধরে কাজ করছে সে। কাজে দেরি হলে তাহমিনা ও ফাহমিদা জালি বেত দিয়ে মারধর করতেন; শরীরে ঢালতেন গরম পানি। সোমবারও একইভাবে গরম পানি ঢেলে তার পা ঝলসে দেয়। মঙ্গলবার ফের মারের পর গরম পানি ঢালতে চাইলে দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে দৌড়ে পাশের মেয়েদের হোস্টেলে আশ্রয় নেয় সে।
হোস্টেলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা ওপরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাই। পরে দেখি ছোট একটি মেয়ে আমাদের রুমে এসে আশ্রয় চাইছে। তার পা ঝলসে গিয়েছিল।
‘পরে আমরা পুলিশকে জানাই। আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন মেয়েটিকে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। স্থানীয়দের বাধায় পারেননি।’
অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ। কিছুদিন আগেও আইসিইউতে ছিলাম। আজ আমি বাইরে ছিলাম।
‘আমার স্ত্রী জানিয়েছে, শিশুটিকে সে মারধর করেননি। পাপোসে পা পিছলে পড়ে পায়ে একটু গরম পানি পড়েছে। পাশের হোস্টেলের একটি মেয়ে বিষয়টিকে বড় করেছে।’
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে এসেছি। মেয়েটির পা ঝলসে গেছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতির নিচে লেখা ছিল- ‘বার্তা প্রেরক, সমন্বয়কবৃন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকায় আহসান লাবিবকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল থাকবে।
তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বান জানাচ্ছে।’
আহসান লাবিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন:
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী একটি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে, তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওই শিক্ষকের দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
অভিযুক্ত এ শিক্ষকের নাম বিপদ ভঞ্জন বণিক। তিনি কিশোরগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীরা বিপদ ভঞ্জনের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে।
এর আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, শুধু চলতি শিক্ষাবর্ষেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম বাবদ প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং একই সময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নরসুন্দা নামের নতুন শাখা খুলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে সেন্ট্রাল রসিদের মাধ্যমে আদায় করা প্রায় ১২ লাখ টাকা, যা ব্যাংকে জমা দেননি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিজনিত জরিমানার টাকা প্রধান শিক্ষক নিজেই নিয়ে গেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, স্কুলের জায়গায় দোকানপাট নির্মাণ করে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়েও টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া ৫০ লাখ টাকার ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের লভ্যাংশ ২০১৬ সাল থেকে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ এর সুফল পায়নি।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট উদ্ধৃত করে স্কুলের একটি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে তুলেছেন তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা ছাড়া বাকি টাকা তিনি কী করেছেন, সে বিষয়ে শিক্ষকদের কেউ কিছু জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, প্রায় সব খাত থেকেই প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয়, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমেও অনেক টাকা তিনি পকেটস্থ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক শুধু দুর্নীতিই করেননি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণও করেন। এ অবস্থায় তাকে আর কেউ চায় না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিপদ ভঞ্জন বণিকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ও সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর ১১ জুলাইয়ের হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া মো. সাখাওয়াত হোসেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় এই মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হুকুমমতে বেআইনি জনতাবদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে সাধারণ জখম করা এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির অপরাধে এই মামলা করা হয়েছে।
এই মামলায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট চারজন শিক্ষকের নাম রয়েছে। তারা হলেন- সাবেক প্রক্টর ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী, আইকিউএসি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ, সহকারী প্রক্টর ও মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু উবাইদা রাহিদ এবং সহকারী প্রক্টর ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অমিত দত্ত। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ ১১ জুলাই ভারতে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামও রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাকির হোসেন, সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ, বিল্লাল হোসেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর মো মহসিন, আইকিউএসি’র অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর মো. জসিম, হিসাব বিভাগের অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর মো. ফখরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকেও বিবাদী করা হয়েছে।
বাদী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তক্রমে আমি মামলা দায়ের করেছি।’
এ ব্যাপারে সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এ মামলা দেয়া হয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানীত শিক্ষকদের নামও রয়েছে। আমাদের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত করা হবে।’
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোনকলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। তারা শুক্রবার সকালে প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রক্টর বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে চারজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তদন্ত কমিটি মনে করে আরও কিছু দুষ্কৃতকারী রয়েছে। তাই কমিটি আমাদের কাছে আজ রাত পর্যন্ত সময় চেয়েছে। তাই আমরা কমিটিকে বলেছি, বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা আজ রাত পর্যন্ত কাজ করেন, যেন সব দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়। আমরা আশা করি কালকে ওনারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন।’
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট। এ ধরনের ঘটনায় এত দ্রুত মামলা হয়েছে এমন নজির আমার মনে হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল। আমাদের শিক্ষার্থী এবং পুলিশ প্রশাসনের অভূতপূর্ব সহযোগিতায় আমরা চারজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। কোন দুষ্কৃতকারী ছাড়া পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘যাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে তাদের ব্যাপার আমাদের ভিডিও ফুটেজ আছে। তারা যখন হল প্রাধ্যক্ষের রুমে নিজেদের জবানবন্দি দিতে আসে তখন তারা নিজেরাই নিশ্চিত করেছে যে ফুটেজের ছবিটি তাদের। তারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল- এ ধরনের ফুটেজও আমাদের কাছে আছে।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘এই ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের যে গ্রোমিংটা হয় এটি তো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় এসে আমরা তো তাদেরকে শিশুদের মতো তৈরি করতে পারি না। তারা তো অলরেডি তৈরি হয়েই আসে।
‘যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাদের মধ্যে দীর্ঘ ১৫ বছরের একটি চর্চা আছে। তাদের মধ্যে একটা উন্মাদনা-উন্মত্ততা আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যে কিছু বিপথগামী রয়েছে সেটি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ হলো।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শনাক্ত তিনজনকে থানায় সোপর্দ করেছে হল প্রশাসন। পরে বুয়েটের শহীদ মিনার এলাকা থেকে অভিযুক্ত আরও একজনকে ধরে থানা পুলিশে দেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসন থেকে থানায় দেয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- জালাল, সুমন ও সাজ্জাদ। আর মুত্তাকীন সাকিন নামে একজনকে ধরে থানায় দেয় শিক্ষার্থীরা।
এদের মধ্যে জালাল হল ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার পর তিনি ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এর আগে এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে পুলিশ এই অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। আটক চারজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে হত্যার অভিযোগ এনে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মিছিলটি শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। তা হলো- শামীম মোল্লা হত্যায় জড়িতদের বিচার করতে হবে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৫ ও ১৭ জুলাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ‘শামীম মোল্লা সন্ত্রাসী ছিলেন। ১৫ জুলাই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে মারধর করার জন্য আমার ভাইয়েরা-বোনেরা জীবন দেয় নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (শামীম) মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তার সাথে জড়িত ক্যাম্পাসের কিছু নাম তিনি বলেছেন। তাকে মারলে কার লাভ হতো, কার ক্ষতি হতো– এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে। আমরা এর সাথে জড়িত সবার শাস্তির দাবি করছি।’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যারা লাশের রাজনীতির সাথে জড়িত তারা গতকাল (বুধবার) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গত ১৫ জুলাই ও ১৭ জুলাই হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার ফল গতকালের হত্যাকাণ্ড। বর্তমান প্রশাসনের দূর্বলতাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘শামীম মোল্লাকে আটক ও মারধরের ঘটনায় একটি বিশেষ দলের লোকজনকে দেখা গেছে৷ প্রক্টর অফিস কেন তাদেরকে ঢুকতে দেয়া হলো? কেন এই অছাত্ররা এখনও ক্যাম্পাসে আসে? নতুন প্রশাসনকে এর জবাবদিহি করতে হবে। সেই সাথে এর পেছনে বৃহৎ কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
এর আগে শামীম মোল্লার মৃত্যুকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যায়। সেখানে উপাচার্যের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সেখানে অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুদফায় গণপিটুনি দেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেয়া হোক।’
বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করেন। শামীম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ীর ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকেলে শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে মারধর করেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে আশুলিয়া থানা-পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে। এ সময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে আশুলিয়া থানা-পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
আহত শামীমকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুধবার রাত ১০টার দিকে সেখানে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক মো. আবু বকর সিদ্দিক।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘তাকে পৌনে ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে জানতে পারি, উনি মারা গেছেন। মূলত উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাকে আশঙ্কাজনক মনে হয়নি। এমনকি তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন। এরকম আসামিকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক।’
আরও পড়ুন:মামলায় ঢালাওভাবে আসামি না করে সম্ভাব্য প্রকৃত অপরাধীদের নাম দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরে বৃহস্পতিবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আহ্বান জানান।
নামে-বেনামে মামলা করে হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে পুলিশ মামলায় ১০ জনের নাম দিয়ে ১০০ জনের নাম দিত অজ্ঞাত, কিন্তু এখন পুলিশ মামলা দিচ্ছে না। এটা সাধারণ পাবলিকরা দিচ্ছে। এখন যারা মামলা দিচ্ছে, এটা তো সাধারণ জনগণ।
‘আমার অনুরোধ, শুধু যারা দোষী, তাদেরই নাম দেন। অন্য কাউকে নাম দিয়েন না। অন্য নাম দিলে এটা তদন্ত করতে সময়ও বেশি যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় নিরীহ লোকও যেন হেনস্তা না হয়, এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য আমরা কিন্তু বলে দিয়েছি যে, সাধারণ লোক যেন হেনস্তা না হয়। তদন্ত ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা হবে না।
‘আমি ডিবিকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিয়েছি। পরিচয় তারা নিজেরা দেবে। তারপর ধরবে।’
ট্রাফিক সমস্যা ও চাঁদাবাজি বন্ধে ডিএমপিকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের মনকে উজ্জীবিত করে কীভাবে তাদের পুরোনো গৌরব ফিরে পাবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জনবান্ধব পুলিশ, এটা যেন বাস্তবে হয়। থানা পর্যায়ে লোকজনকে অনেক সময় বিভিন্ন কাজের জন্য গিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারে না। সবসময় সমাধান সম্ভবও নয়, কিন্তু তারপরও তাদের যেন একটা প্যাশেন্ট হিয়ারিং দেয়া হয়। তাদের কাজগুলো কীভাবে সমাধান করা যায় এটা বলা হয়েছে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ট্রাফিকে যে একটা সমস্যা হচ্ছে, এই ট্রাফিকটা কীভাবে উন্নত করা যায়, এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজি কীভাবে বন্ধ করা যায়, এই সস্পর্কে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজিটা যদি বন্ধ হয়, জিনিসপত্রের দাম একটু সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
‘এই চাঁদাবাজি যেন না হয়। এ ছাড়া ঘুষ এবং দুর্নীতি সমাজটাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এটাকে কীভাবে বন্ধ করা যায়, এগুলো সমন্ধে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
মব জাস্টিসের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাটা একটু বাড়াতে হবে। কাল দেখলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে…তারা তো সবচেয়ে শিক্ষিত। তাদের ক্ষেত্রে তো এই সচেতনতাটা আসতে হবে। একজন অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন। কিন্তু আইন তো হাতে তুলে নেয়ার কারও অধিকার নেই। আইনের হাতে তাকে সোপর্দ করতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে আপনারাও (সাংবাদিকরা) একটু আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইনোসেন্ট লোকের যেন কোনো অবস্থায়ই কোনো হেনস্তা না হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য