মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে মো. মোস্তফা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং মো. ইসমাইল হোসেন ইসরাফিল যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।
সোমবার দুপুরে র্যাব-১৪-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এসব তথ্য জানান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোস্তফার বিষয়ে র্যাব কমান্ডার জানান, ২০১১ সালের ২০ মে বিকেলে বকশীগঞ্জের নিজ বাড়িতে স্ত্রী রুজিনার সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় ঝগড়া হয় মোস্তফার। এ সময় রুজিনার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান মোস্তফা।
একপর্যায়ে পাঁচ মাস বয়সী সন্তান আসিফকে দুই পা ধরে ঘরে থাকা ঢেঁকির সঙ্গে সজোরে পরপর তিনবার আছাড় মারেন মোস্তফা। এতে ছটফট করতে করতে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আসিফ।
ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজন মোস্তফাকে আটক করে বকশীগঞ্জ থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান সেই সময়ের ২৮ বছর বয়সী মোস্তফা। পালিয়ে থাকা অবস্থায় কুদ্দুস, রজব আলী, ইয়াসিন আলী, সজিবসহ বিভিন্ন পরিচয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অটোচালক হিসেবে বসবাস করছিলেন।
এ অবস্থায় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর পলাতক মোস্তফার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আদালত।
গত রোববার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হাজির মোড় এলাকা থেকে মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ইসরাফিলের বিষয়ে র্যাব কমান্ডার জানান, ১৯৯৮ সালের ৭ জুলাই শেরপুর সদর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে ১১ বছর বয়সী কন্যাকে বাড়িতে রেখে ভিক্ষার উদ্দেশে পাশের গ্রামে যান তার মা।
বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে একই গ্রামের ইসমাইল হোসেন ইসরাফিলসহ দুজন ওই শিশুটিকে অপহরণ করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় নিয়ে ধর্ষণ করে।
ঘটনাটি জানাজানির পর ভিক্ষুক মা মধুপুর থানায় হাজির হয়ে মামলা করেন। এর পর থেকেই আসামি ইসরাফিল আত্মগোপনে চলে যান।
পরবর্তী সময়ে ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২ জুলাই ইসরাফিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয় টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক ও দিনমজুর হিসেবে আত্মগোপন করেছিলেন ইসরাফিল। এ অবস্থায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আসামির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে রোববার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার কুসুমপুর মোড় থেকে ইসরাফিলকে আটক করে জামালপুর র্যাব ক্যাম্পের একটি দল। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন:আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গাজীপুরসহ সারা দেশে শনিবার থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে যৌথ বাহিনী, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে শনিবার একটি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শুক্রবার রাতে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সভা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে। শনিবার থেকেই গাজীপুর এলাকাসহ সারা দেশে এই অভিযান শুরু হবে।
এ বিষয়ে রবিবার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে গাজীপুরে মারধরে আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন:বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা।
তিনটি দিবসকে সামনে রেখে নিজেদের খেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
চাষিদের আশা, সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হতে পারবেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এ অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১৩ ধরনের ফুল।
গদখালীতে বৃহস্পতিবার সকালে ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত বাহারি সব ফুল নিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছেন। হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল ফুটে যাওয়া বাজারে ফুলের জোগানও বেশি। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। যে গোলাপ আগে বিক্রি হয়েছে পাঁচ টাকা দরে, গত বৃহস্পতিবার সে গোলাপ বিক্রি হয় আট থেকে ১০ টাকা দরে।
ফুল চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনের তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
গত বৃহস্পতিবার বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ টাকা। এ ছাড়া জারবেরা প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, জিপসি আঁটির প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাধা প্রতি হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রংভেদে ৮ থেকে ১২ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎসব যত ঘনিয়ে আসছে, ফুলের দাম ততই বাড়ছে।
ফুলচাষি পলাশ হোসেন বলেন, ‘১০ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। গত দুই দিন আগে গোলাপের দাম ছিল পাঁচ টাকা। আজ আট থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
‘আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং আমরা লাভবান হতে পারব।’
ফুলচাষি সোহান হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছি। এ বছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এখন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
‘আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনের দিবসগুলোতে দাম আরও বাড়বে এবং লাভবান হতে পারব।’
কুষ্টিয়া থেকে ফুল কিনতে আসা ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৫ হাজার টাকার ফুল কিনেছি। গোলাপ ফুলটা বেশি কিনেছি। অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।’
গদখালী ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুল বেচাকেনা বেশি হয়। তিন দিবসকে ঘিরে গদখালী বাজারে ফুলের বেচাকেনা জমে উঠেছে।
তিনি জানান, উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ফুলের দামও ততই বাড়ছে। বাজারদর ভালো পেয়ে ফুলচাষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা খুশি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গদখালী অঞ্চলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করেন চাষিরা। প্রায় ছয় হাজার চাষি এ ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।
অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’
অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’
দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’
সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’
নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।
‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’
ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।
তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’
‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’
উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’
এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’
অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।
এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।
‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’
‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’
যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা
ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’
‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’
এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।
‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত কমিটি।
এতে কমিটির কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর, তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্টের ১৫ বছরের অন্যতম সহযোগী। হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন, হত্যা করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া, আয়নাঘরে বন্দি করেছেন, বনবাসে পাঠিয়েছেন, পাচার করেছেন, নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার যতটুকু দায় রয়েছে, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল)-এর সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুরও ততটুকু দায় রয়েছে।
‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী চুন্নুর বিরুদ্ধেও কিশোরগঞ্জের ছাত্রসমাজ অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে। সে যে স্পর্ধা দেখাচ্ছে, সে যে মাঠে আসতে চাচ্ছে, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, তাকে ছাত্রসমাজ রুখে দেবে।’
দুপুরে জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন হয়।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ৩২১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন। এতে ইকরাম হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক ও ফয়সাল প্রিন্সকে সদস্য সচিব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উদ্দেশে ইকরাম হোসেন বলেন, ‘দিল্লিতে বসে আপনি যদি কোনো ধরনের চক্রান্ত করেন, ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে লক্ষ করেছেন, এই তরুণ বিপ্লবীরা ঘুমিয়ে যায় নাই। আপনি যে স্পর্ধা দেখিয়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুন্ডা বাহিনী, তারা দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে শহীদ করার পরও ন্যূনতম তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।
‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যাদের হাতে দুই হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত লেগে আছে, যারা ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু করেছে, নিঃস্ব করেছে, তাদের আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের ব্যানারে কোনো রাজনীতি চলবে না। যারাই স্পর্ধা দেখাবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক জয়, মুখপাত্র সাব্বিরুল হক তন্ময়, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান রনি, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসীম, যুগ্ম সদস্য সচিব আদিফুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক রহমত উল্লাহ চৌধুরী হাসিনসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের একজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে ফ্যাসিস্টরা। এলজিইডি, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীরা টাকার পাহাড় গড়েছে।
‘আন্দোলনে নিহত ও আহতদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬ মাস পরে কমিটি হইছে। কমিটি দরকার তাই হইছে। আমাদের দরকার দেশকে সংস্কার করা। ৫ আগস্টের পর কারা বাসস্ট্যান্ড দখল করছে, তা কি আমরা জানি না? যতদিন পর্যন্ত দেশটাকে সুন্দর করতে না পারি, ততদিন পর্যন্ত থাকব।
‘আমরা ক্ষমতার জন্য এখানে আসিনি। চাকরির বাজারও দখল করে রেখেছে। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবে, এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা করে শহরের এক গডফাদার নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফুট লম্বা ব্যানার টানিয়েছিলেন।
‘ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পতিত আওয়ামী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘গডফাদার আজ কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই। এত অহংকার, দাম্ভিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনও প্রশ্রয় দিতে হয় না। না হলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইনসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন হোসাইনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ফতুল্লার রেললাইন এলাকায় মামুনের ইট-বালুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মামুন হোসাইন ফতুল্লার পূর্ব লালপুর রেললাইন এলাকার প্রয়াত সমন আলী বেপারীর ছেলে।
নিহতের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আজাদ মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে ইট, বালু, সিমেন্ট লোড-আনলোড শেষে বাসায় চলে যান মামুন। শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে তাকে বাসা থেকে মোবাইলে কে বা কারা প্রতিষ্ঠানের সামনে ডেকে আনে। ওই সময় হঠাৎ তাকে গুলি করে দুই যুবক পালিয়ে যান। চোখে গুলিবিদ্ধ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মামুন।
পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে খানপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল মিয়া বলেন, ‘নিহত মামুন হোসাইন ইট, বালু, সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। শুক্রবার ভোরে তাকে বাসা থেকে ফোন করে ডেকে এনে গুলি করা হয়।
‘তার ডান চোখে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের ডান চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
‘হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
একই সময় পার্শ্ববর্তী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
হামলার ঘটনাগুলো বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুইটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার রাতে শতাধিক কিশোর ও যুবক লাঠিসোটা নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাবেক সেনাপ্রধানের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান এবং ড্রইংরুমের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন।
একই সময় তারা পাশের চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সলের বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক ছিল। হামলা, ভাঙচুরকালে উভয় বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতে পাহারাদার যিনি ছিলেন, তিনি ভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এ হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চৌমুহনীর ঘটনাটি সেখানকার রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ছাত্রদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও জানান, তাদের যে কর্মসূচি ছিল, সেটি ছিল বৃহস্পতিবার দিনের বেলায়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বাড়িতে তার ছোট ভাই জাবেদ উ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই সময় তাদের ভবনে কেউ ছিল না।
‘হামলাকারীরা ওই সময় নিচ তলার সোফায় আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য