ক্রয় বা উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম দিতে হবে বলে ব্যবসায়ীদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ভর্তুকির টাকা জনগণের ভাগ থেকে গেলেও এর সীমা আছে। ব্যবসায়ীদেরকে এই বিষয়টি বুঝতে হবে।
বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর পর খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়ানোর ইঙ্গিতের মধ্যে রোববার রাজধানীর পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে জ্বালানির আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশে দেশেই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। তবে কঠিন এই সময়ে এই দর বৃদ্ধি চলমান মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করে ব্যবসায়ীরা সরকারকে এই সময়ে এই সিদ্ধান্ত না নেয়ার অনুরোধ করছেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি নিরবিচ্ছিন্ন চান তাহলে এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা তো দিতে হবে।’
কত আর ভর্তুকি দেয়া যাবে?- এই প্রশ্ন রেখে ‘ভর্তুকি তো জনগণের টাকায় এত দেয়াও যায় না। ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের এ দিকটাতে একটু নজর দিতে হবে।’
বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে বাজার সৃষ্টির তাগিদও দেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা রপ্তানি যেমন করব আবার নিজের দেশের বাজারও যেন সৃষ্টি হয়, মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও যেন বাড়ে সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরও কার্যকর হবে, উৎপাদন বাড়বে, সে ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।
‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা কার্যকর করার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কমিটি করে কোন খাতে কী কী করণীয়, সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে আমরা পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের তাগিদ
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদও দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘মাঝখানে আমাদের সমস্যা হয়েছিল। সারা বিশ্বে ইউক্রেন যুদ্ধ আর স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের কারণে গ্যাস ক্রয় করতে হয় এলএনজি, ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, গম, ভুট্টা, চিনি…প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, পরিবহনের খরচও বেড়ে গেছে।
‘এ কারণে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য লোডশেডিং দিতে। এখন এটা কমে গেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় আট শ মেগাওয়াট বিদ্যুত এখন ঢাকার গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এরপরও আমি বলব, যে যা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, সবাই একটু সাশ্রয় করবেন। এতে সবাই ভালো থাকবেন।’
ভারত থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল আমদানির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে শুধু জাহাজে করে যেত। এখন আমরা আসামের লুমানিঘর থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আ্মদানি করছি। এটা আমাদের উত্তরবঙ্গের কাজে লাগবে।’
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর
অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দেয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোভিডের পর আসলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। স্যংশন পাল্টা স্যাংশন, যার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা। অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। যার কারণে নিজেদের মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করছে। আমরা কিন্তু বাংলাদেশ, এখনও সেই পর্যায়ে যাই নাই। আমরা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।
‘সকল দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি। অর্থাৎ প্রত্যেকটা দূতাবাস ব্যবসা বাণিজ্য রপ্তানি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, বা আমরা কী রপ্তানি করতে পারি, কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ পেতে পারি, সে দিকে দৃষ্টি দিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি। সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত যারা তাদের ডেকে সেভাবেই ব্রিফ করেছি, বলেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক দূতাবাস সে চেষ্টা করবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা আমরা আমাদের দেশে উৎপাদন করব এবং রপ্তানি করব। এভাবেই আমরা আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।’
পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যের তাগিদ
রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কিছু পণ্যের উপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটাকে বহুমুখীকরণ করার কথা আমি বার বার বলেছি, এখনও বলছি। যত বেশি আমরা বহুমুখীকরণ করতে পারব, আর যত বেশি নতুন বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারব। আর বাণিজ্য মানেই লক্ষ্মী। এ কথাটা আদিকাল থেকেই শুনে আসছি। এভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
সেবা খাতের বিকাশেরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক তরুণরা অনেক শক্তিশালী। তাদের যদি প্রয়োজন মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা তৈরি করতে পারি, তাহলে সেবা খাতে অনেক কাজ পাব, দেশে বিদেশে অনেক কাজ আমরা করতে পারব।’
এক শটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি।’
এই অঞ্চলগুলোতে ফাইভ জি চালু করার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবায় গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। গত বছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে পৌঁছেছেন।
সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি বাকুতে অবতরণ করে।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। আগামী ১৪ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন করে শপথ নেয়া উপদেষ্টাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছেন উল্লেখ করে তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিপ্লবের চেতনা নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদের রক্তের অবমাননার প্রতিবাদে’ আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এই দাবি জানান।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যাদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস আমরা জানতে চাই। যদি কোনো সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে তাহলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাজা রক্ত দিয়ে অভ্যুত্থান করেছেন। আপনারা তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থী, নাগরিক, শ্রমিক-জনতার সঙ্গে মশকরা বন্ধ করুন।
‘আপনারা বিপদে পড়বেন। আর তারপর ছাত্রদের রাস্তায় নামতে বলবেন। এভাবে আর বেশিদিন চলবে না। ফ্যাসিবাদের নুন যারা খেয়েছে, আমরা কোনো ফর্মেটেই তাদের পুনর্বাসন দেখতে চাই না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘গতকাল (রোববার) আমাদের অবহিত না করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নতুন সরকার গঠন করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান রক্ষা করতে আমরা রক্ত দিয়ে মাঠে থাকব।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ইঙ্গিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, ‘যারা ফ্যাসিবাদের নুন খেয়েছে তাদের রাখার পক্ষে আমরা নই। যে লোক ২০১৩ সালে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হেফাজত ইসলামের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছে, এমনকি ৫ আগস্টের পরও ৩২ নম্বর বাড়ি সংস্কারের কথা বলেছে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, তাদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘কথা ছিল আবু সাইদ, ওয়াসিম, মুগ্ধরা জীবন দিলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হবে। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদ বিলোপের স্টেকহোল্ডার, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
‘আপনারা যদি মনে করেন যে বিপ্লবীরা ঘুমিয়ে গেছে, তাহলে বলবো আপনারা ভুলের মধ্যে আছেন। ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপে আমরা আবারও নামতে প্রস্তুত আছি।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন কানিস ফাতেমা, রাফিদ হাসান সাফওয়ান, রিফাদ রশীদ, তরিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, রোববার উপদেষ্টা হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
নতুন এই উপদেষ্টাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসর আছেন দাবি করে সেদিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) সপ্তম সেনাপ্রধান হিসেবে গৌরবমণ্ডিত ‘হল অব ফেম’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সোমবার ভাটিয়ারিতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধানের সহধর্মিণীও উপস্থিত ছিলেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ১৩ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে কোর অফ ইনফ্যান্ট্রিতে কমিশন লাভ করেন।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত ২৩ জুন দেশের ১৮তম সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জিওসি, আর্টডক; কমান্ড্যান্ট, ইবিআরসি; জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন; অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল; কমান্ড্যান্ট, বিএমএ এবং সামরিক সচিবসহ সেনা সদর, চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং বিএমএর ঊর্ধ্বতন ও বিভিন্ন পদবির সেনা কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে দেয়া ৭০০ একর বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেয়া কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ২৫০০১ নম্বর দাগের ‘পাহাড়’ শ্রেণির ৪০০ একর ও বিএস ২৫০১০ নম্বর দাগের ‘ছড়া’ শ্রেণির ৩০০ একর মোট ৭০০ একর জমি রক্ষিত বনের গেজেটভুক্ত হওয়ায় ওই বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।’
গত ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে আধা সরকারি পত্র দেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তাতে বলা হয়, বন্দোবস্ত করা এলাকা ১৯৩৫ সাল থেকে বন আইন ১৯২৭-এর ২৯ ধারার আওতায় রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষিত। এই ২১৪৫.০২ একর ভূমির অংশে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং হাতি, বানর, বন্য শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ সালে এই বনভূমিতে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রেকর্ডে ‘রক্ষিত বন’ উল্লেখ না থাকায় বন বিভাগ এ বিষয়ে মামলা করে। পাশাপাশি, ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে একটি রিট মামলাও হাইকোর্টে করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ এই বন্দোবস্তের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন, যা আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় এই বন্দোবস্ত জনস্বার্থবিরোধী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং তাদের ওপর কোনো দমন অভিযানের ঘটনাও ঘটেনি।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাসস।
প্রেস উইং জানায়, রাজধানীতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগে দেশে গণহত্যা, দুর্নীতি ও কোটি কোটি ডলার পাচারের জন্য অভিযুক্ত এবং গণভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতাকর্মী, কর্মকর্তা ও সদস্যকে রোববার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা তার সমর্থকদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টার বহন এবং গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়ার কারণে তারা সেগুলো বহন করছিল।
আটককৃতরা পুলিশকে বলেছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অনুসরণ করেন না। শুধু হাসিনার নির্দেশে তারা ট্রাম্পের পোস্টার বহন করেছিলেন।
আগস্টে অভূতপূর্ব বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কিছু ভারতীয় সংবাদপত্র ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আক্রমণাত্মকভাবে ভুল তথ্য প্রচার করছে।
তারা বিপ্লব-উত্তর দিনগুলোতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কথিত সহিংসতার ঘটনাগুলোকে ব্যাপকভাবে অতিরঞ্জিত করেছে। রোববার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও তারা একইভাবে অতিরঞ্জিত করেছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৬৪ কর্মকর্তাকে বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে সোমবার পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপ-সচিব আবু সাঈদ।
একটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, আটজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৩৯ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১০ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নয়, বরং বর্তমান সিস্টেমকেই কার্যকর করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা। তার মতে, এজন্য কমিশনে যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।
সোমবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আবু হেনা বলেন, ‘কমিশনের আমন্ত্রণে এসেছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এই সুযোগে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমার সুপারিশ কিছু আছে। আমি তাদের বলেছি, আশা করি তারা বিবেচনা করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আমি চাই, আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেগুলো সাধারণ বা অন্যান্য নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের যেন কল্যাণ হয়।’
সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যত ভালো আইনই হোক না কেন, প্রয়োগ না হলে সুফল আসে না। যত রিফর্ম করেন না কেন, নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার, যোগ্য কমিশন দরকার।
‘যোগ্য সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া দরকার। উপর থেকে আরোপ করা নয়। নিচে থেকে উঠে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। এটা যদি সবগু দল বাস্তবায়ন করে তবে দেশের জন্য কল্যাণ হবে।’
আবু হেনা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না। যেসব দেশে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আছে সেসব দেশে যে এটা ভালোভাবে চলছে এটা মনে করবেন না। এটা আমি জানি।
‘আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত- এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। আর সংসদ কয় কক্ষের হবে সেটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়া ভালো।’
নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘উনি যা বলেছেন আমরা তাতে উৎসাহিত হয়েছি। উনি বলেছেন যে আমরা সঠিক পথেই আছি। ওনার অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক আছে।
‘আমরা আইনকানুন গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। ১৭ থেকে ১৮টি মিটিং করেছি। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। দলগুলোর কিছু মতামত পেয়েছি। গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের মতামত আছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য