নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি দুপুর ২টা থেকে মিছিল শুরুর ঘোষণা দিলেও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হচ্ছেন সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই।
শুক্রবার সকাল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন দলটির কর্মী ও সমর্থকরা। হলুদ, লাল, বেগুনিসহ নানান সব রংর ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জাকজমকপূর্ণ এই শোডাউন করতে যাচ্ছে তারা।
বিএনপির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যারা যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নেতা-কর্মীরাও নগরীর অন্য এলাকায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
বিএনপির এই মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল মালিবাগ হয়ে যাবে মগবাজার মোড়ে। সেখান থেকে আবার ফিরতি পথে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দলটির বিভাগীয় সমাবেশে এই মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেদিন তারিখ ঠিক করা হয় ২৪ ডিসেম্বর। সেদিন সারা দেশে কর্মসূচি পালিত হলেও ঢাকারটা স্থগিত করা হয়।
একই দিন রাজধানীতে ছিল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। সেদিন সারা দেশ থেকে আসে নেতা-কর্মীরা। এই দিন ঢাকায় মিছিলের ডাক দেয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্ষমতাসীন দল। এরপর বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে দেয় ছয় দিন।
বিএনপির পর কর্মসূচি পেছায় তাদের সমমনা দলগুলোও।
নয়াপল্টনে আসা পল্টন থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মিজার হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা করেছে এই মাফিয়া সরকার। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা আজকের গণমিছিল করতে এসেছি। এই সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় যাব, ইনশাআল্লাহ।’
ফরিদপুর জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা নাসরিন আলম বলেন, ‘এই সরকারকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। তাহলে তাদেরই মঙ্গল।
‘পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়িয়েছে সরকার। খাবার মানুষের হাতের নাগালে নেই এখন। এই সরকারকে আর এ দেশের মানুষ চায় না। মানুষ চায় এখন বিএনপি সরকার।’
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিএনপির সদস্য খালেদ মোস্তফাও এসেছেন কর্মসূচিতে। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ খুবই কষ্টে আছে। এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ভয় পায়। দেশের স্বার্থে আমরা রাজপথে নেমেছি। তারা বলে খেলা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে তার পরে খেলায় নামুক।
‘আমরা জীবন দেব রাজপথে। রাতের আঁধারে তারা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনও অংশ নিয়েছেন কর্মসূচিতে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত। সারা বিশ্বের মানুষ আজ জানবে আর এই সরকারকে ধিক্কার জানাবে।
তারেক রহমান বিদেশে থেকেও দিনরাত খেটে যাচ্ছেন দেশের জন্য। শিক্ষক-ছাত্রসহ সব মানুষ আজ রাজপথে নেমে এসেছে এই সরকারকে হটানোর জন্য।’
তুরাগ থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আলমগীর হোসেন গায়ে বিএনপির পতাকা পড়ে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে, সরকারের পতন চেয়ে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের পতন হবেই। আমরা যতদিন আছি আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই।’
কুমিল্লাহ থেকে এসেছেন প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী। তাদের একজন আসাদ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দিদের মুক্তি চাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না, প্রয়োজনে জীবন দিব। বিএনপি মাঠের দল, আমরা মাঠে থাকব।’
বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে বিজয়নগরের নাইটিঙ্গেল ও ফরিকাপুল মোড়ে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে জোরদার কোনো অবস্থান চোখে পড়েনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি অনুমতি নিয়ে আজকে মিছিল করছে। তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে আমরা সহযোগিতা করব। আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সাপোর্ট থাকবে। তবে যদি কোনো ধরনের সংঘর্ষ ঘটায়, তখন অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গত মঙ্গলবারই এই কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
আরও পড়ুন:মদ কিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির দুই ছাত্রকে আটক করেছে বংশাল থানার টহল পুলিশ।
বংশাল থানা রোডে ঢাকা ব্যাংকের সামনে থেকে শনিবার রাতে জাবির ৪৩ ব্যাচের রিপন সাহা ও ৪৪ ব্যাচের জুয়েল আহমেদকে আটক করা হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা-রানি নির্বাচন ও র্যাগ ডে উপলক্ষে দুই শিক্ষার্থী নিজেরা চিল করার জন্য এদিকে মাদক কিনতে এসেছিলেন। তখন জনতা তাদের আটকিয়ে টহল পুলিশকে খবর দিলে টহল পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যেহেতু শিক্ষার্থী তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে আসতে বলেছি। তিনি আসলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যবস্থা আছে তারা সেই ব্যবস্থায় যাবে। অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
দুজনের কাছ থেকে কেরু কোম্পানির মদ পাওয়া গেছে বলে জানান বংশাল থানার ওসি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের চালক আব্দুল্লাহ দুলালকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাবির ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ ডে) উদযাপন উপলক্ষে বংশাল এলাকা থেকে মদ কেনার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোগী আনার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে মাদক কিনে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন দুই ছাত্র। পথে ঢাকা ব্যাংকের কাছে পৌঁছানোর পর পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি আটক করে।
আরও পড়ুন:বাতাসের নিম্নমানের দিক থেকে আইকিউএয়ারের তালিকায় নিয়মিত ওপরে থাকা ঢাকা ফের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানিটির র্যাঙ্কিংয়ে রোববার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে দূষিত বায়ুর দিক থেকে ১০০টি শহরের মধ্যে প্রথমে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী।
আগের দিন শনিবার সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে বাতাসের নিম্নমানে ১০০টি শহরের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল ঢাকা।
ওই র্যাঙ্কিংয়ে শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে দূষিত বাতাসে সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাতাসের নিম্নমানে শহরগুলোর মধ্যে ১১তম অবস্থানে ছিল ঢাকা।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ সকালের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি। আগের দিন কাছাকাছি সময়ে সেটি ছিল ২৭ গুণ বেশি। শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে সেটি ছিল ২১ দশমিক ২ গুণ বেশি।
র্যাঙ্কিংয়ে বাতাসের নিম্নমানের দিক থেকে আজ সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের মুম্বাই ও চীনের চেংদু। চতুর্থ অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ২৩০। এর মানে হলো সে সময়টাতে খুবই অস্বাস্থ্যকর বাতাসের মধ্যে বসবাস করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। আগের দিন কাছাকাছি সময়ে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৯২। এর অর্থ হলো গতকাল ওই সময়ে অস্বাস্থ্যকর বাতাসে ছিল রাজধানীবাসী।
শুক্র ও বৃহস্পতিবার কাছাকাছি সময়ে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৭৬ ও ১৬৩। এর অর্থ হলো দুই দিনই নির্দিষ্ট সময়ে অস্বাস্থ্যকর বাতাস নিতে হয়েছে ঢাকাবাসীকে।
আরও পড়ুন:বগুড়া-৪ ও ৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে পরাজিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের কাছে অসহায় হয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত ঢাকা বিভাগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এ সময় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ধাপের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘গণপদযাত্রা’।
সমাবেশে ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার হিরো আলমের কাছেও অসহায়। আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে নিজেদের প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের আন্দোলন। সেই লক্ষ্যেই আমরা দশ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। এর মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে তারা একটি দাবিকে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ। আমরা বলে আসছি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার টিকে আছে চাপার জোরে। গগ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারা একদিকে ঋণ করছে, আরেকদিকে জনগণের পকেট কাটছে। আজকে তারা জনগণের দিকে তাকায় না। দেশ এখন লুটেরাদের কবলে পড়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে হাজার হাজার ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষ্টি কালচার নষ্ট করছে। সরকার সংসদ থেকে শুরু করে সবকিছু ধ্বংস করে একটি ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায়। তারা প্রতিনিয়ত জনগণের ঘৃণা কুড়াচ্ছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:রোজাকে সামনে রেখে একটি চক্র প্রায় ২০০ কোটি টাকা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলেছে, দেশে সংকটের সুযোগ নিয়ে জাল ডলার বাজারে ছেড়েছিল চক্রের সদস্যরা, যা কম দামে কিনে প্রতারিত হন অনেকে।
জাল টাকা, রুপি ও ডলার তৈরি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার, আবদুর রশিদ, মমিনুল ইসলাম ও শাহ মো. তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল। তাদের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা মূল্যের জাল টাকা, ভারতীয় রুপি ও আমেরিকান ডলার, ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও জালনোট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, পয়লা ফেব্রুয়ারি দারুস সালাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকারী চক্রের হোতা উজ্জল দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দারুস সালামের একটি বাসা থেকে জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, চক্রটি মতিঝিল এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিটফোর্ড থেকে রং, ফয়েল সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশের জাল নোট ও স্ট্যাম্প তৈরি করে আসছিল। বর্তমান বিশ্ববাজারে ডলার সংকট হওয়ায় তারা আমেরিকান জাল ডলার তৈরি করে বিদেশেও পাচার করছিল। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় জাল রুপিও তৈরি করে।
ডিবি জানায়, সারা দেশে চক্রের এজেন্ট রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি টাকার জাল নোট ১০ লাখে, এরপর ২০ লাখে এবং সব শেষ ধাপে ৫০ লাখে বিক্রি করতেন এর সদস্যরা। এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণের জাল নোট প্রস্তুত করে দিতেন তারা। বাংলাদেশি মুদ্রার ক্ষেত্রে তারা কম মূল্যমানের নোটও (যেমন: ১০০ ও ২০০ টাকা) জাল করেছিলেন, যা খালি চোখে ধরা প্রায় অসম্ভব।
ডিবির প্রধান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৮-৯ বছর ধরে চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বল্পমেয়াদে বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট, ভারতীয় রুপি, আমেরিকান ডলারসহ রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুত করে আসছিল। তাদের কাছে যে পরিমাণ জাল টাকা তৈরির কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে আগামী রমজান-ঈদুল ফিতরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জাল নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বাজারে ছাড়তে পারত।’
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘সস্তায় পেয়ে বাইরে থেকে ডলার কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় যে কিনবে তারই। কারণ ডলার কেনা উচিত ব্যাংক অথবা কোনো অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ থেকে।
‘আমরা এই চক্রটিকে সেদিন গ্রেপ্তার না করলে পরদিনই জাল নোট আর স্ট্যাম্পগুলো বাজারে চলে যেত। তাদের কিছু এজেন্টের নাম পেয়েছি। আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:বাতাসের নিম্নমানের দিক থেকে আইকিউএয়ারের তালিকায় নিয়মিত ওপরে থাকা ঢাকার বায়ুর মানের আরও অবনতি হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানিটির র্যাঙ্কিংয়ে শনিবার সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে বাতাসের মানে ১০০টি শহরের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী।
ওই র্যাঙ্কিংয়ে শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বাতাসের মানে শহরগুলোর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে ছিল ঢাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাতাসের মানে শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১১তম।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, আজ সকালের ওই সময়ে ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অতি ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইও) আদর্শ মাত্রার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি। গতকাল সকাল সোয়া ৯টার দিকে সেটি ছিল ২১ দশমিক ২ গুণ বেশি।
র্যাঙ্কিংয়ে বাতাসের নিম্নমানের দিক থেকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শীর্ষে ছিল আফগানিস্তানের কাবুল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের মুম্বাই ও পাকিস্তানের করাচি।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার।
কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়।
১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৯২। এর মানে হলো সে সময়টাতে অস্বাস্থ্যকর বাতাসের মধ্যে বসবাস করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।
আগের দুই দিন কাছাকাছি সময়ে ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ১৭৬ ও ১৬৩।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দু দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম শুক্রবার রাজধানীতে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বলে বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের রাজস্ব ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নয়নে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি একই দিনে এনবিআর নতুন ভবনও উদ্বোধন করবেন।
মুনীম বলেন, সম্মেলনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), কাস্টমস ও আয় করের ওপর মোট তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকালে এ সব বিষয়ে পৃথক তথ্য কেন্দ্র থাকবে। জনগণ এসব কেন্দ্র থেকে ভ্যাট, কাস্টমস ও আয় কর সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বলেন, পযার্য়ক্রমে কর রেয়াত হ্রাস পেলে জিডিপিতে করের হার বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, কর রেয়াত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। গত দুই দশকে এই সুবিধা থেকে আমরা সুফল পেয়েছি।
তিনি জানান, আমাদের জিডিপি এখন ৪৭০ বিলিয়ন ডলার। সরকার কৃষি, বাণিজ্য এবং আরও অন্যান্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে কর রেয়াত দিয়েছে। সরকার যে সকল সেক্টরে প্রয়োজন, সেগুলোতে কর রেয়াত দিবে।
এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) আরোপিত শর্ত অনুযায়ি রাজস্ব বৃদ্ধিতে এনবিআর সঠিক পথেই রয়েছে। তিনি বলেন, কর পুন:নির্ধারন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাজেট প্রণয়নকালে এটি প্রতি বছর করা হয়।
আরও পড়ুন:উদ্বোধনের পর প্রথম ছুটির দিনেই জমে উঠেছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা।
উদ্বোধনের তৃতীয় দিনেই এত মানুষের উপস্থিতিকে অবিশ্বাস্য বলছেন অনেকেই। বিকেলে লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকতে দেখা যায় বইপ্রেমীদের। সব স্টলেই ছিল বেশ ভিড়।
এবারের মেলায় প্রথম শিশু প্রহর শুরু হয়েছে এদিন সকাল ১১টায়। পরে নির্ধারিত সময়ে প্রবেশ করতে থাকেন বড়রা।
অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, প্রথম ছুটির দিনে এত মানুষ আর কখনই হয়নি। অনেক মানুষ এসেছেন, বই দেখছেন, ক্যাটালগ কালেক্ট করছেন, বইও কিনছেন। তবে পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
মেলা ঘুরে দেখা যায় জনস্রোত। দেশের নানাপ্রান্থ থেকে পাঠকরা আসতে শুরু করেছেন প্রাণের মেলায়। স্টলগুলোও পুরোদমে শুরু করেছে বই বিক্রি কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থ উন্মোচন অংশের সামনে অবস্থিত লিটলম্যাগেও অনেকগুলো স্টলে বই বিক্রির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। যদিও প্রতিবছরই এখানে অনেকটাই দেরিতে বই বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়।
অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক মো. আফজাল হোসাইন বলেন, মেলা উদ্বোধনের পর আজ প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অনেক অনেক পাঠক আসছেন এবং বই কিনছেন। পরবর্তী দিনগুলোতেও আরো ভালো বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তবে আজ মেলার তৃতীয় দিনেও প্রস্তুতির অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে কোনো পানি ছেটানো হয়নি। এখনো স্টলগুলোর মাঝখানে হাঁটার জায়গায় ইট বসানো হয়নি। আর তা বসানো হবেও না বোধহয়।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এর বিক্রয়কর্মী কিবরিয়া বলেন, উদ্বোধনের মাত্র তৃতীয় দিন আজ। কিন্তু মেলায় প্রচুর মানুষজন আসছেন। অনেকেই বই কিনছেন। তবে পাঠকদের চেয়েও দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা এভাবে পুরো মাস জুড়ে বই বিক্রিতে ব্যস্ত থাকবো বলে প্রত্যাশা করছি।
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ পড়লো অন্যধারা প্রকাশনীর দিকে। সামনে গিয়ে দেখা যায় জনস্রোত। বোঝাই যাচ্ছিল হয়তো কোনো জনপ্রিয় লেখককে ঘিরে এই ভিড়।
স্টলের উপরিভাগের একটি বড় ব্যানারে চোখ পড়তেই দেখা যায়, সাদাত হোসাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি ‘’আমাকে হারাতে দিলে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর’। স্টলের চারপাশে জনপ্রিয় এই তরুণ লেখককে ঘিরে রেখেছেন প্রায় অর্ধশত পাঠক-দর্শনার্থী।
লেখকের ছদ্মবেশ বইটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মামুনুর রহমান। সাদাত হোসাইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার বইগুলো অনেক মর্মস্পর্শী। তার বইগুলোর লিখা অনেক গভীর অর্থবোধক। ওনার এমন কোনো বই নেই যা আমি পড়িনি। ওনার লিখায় আমি ডুবে যাই।’
বাংলা একাডেমির জানিয়েছ, বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা ও পাঠকেরা রাত সাড়ে আটটার পর মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য