টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটি ও কালিহাতী উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৪৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন এক লাখ দুই হাজার ৩৮১ জন।
কালিহাতী উপজেলার একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩২ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২২ হাজার ৪৫৫ জন।
নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ৬টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আজ বুধবার। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে একটানা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
উপনির্বাচনের ছয়টি আসন হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২।
নিজেদের প্রথম সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করলেও এ ভোটে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে জাতীয় নির্বাচনে ক্যামেরা ব্যবহারে আগ্রহ রয়েছে তাদের।
প্রচার-প্রচারণা চলাকালীন বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এক প্রার্থী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মনে করছেন, নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আত্মগোপনে আছেন।
এ নিয়ে ইসি আনিছ সাংবাদিকদের বলেন, 'সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ ভোটে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা নেই। ভোটকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।'
ইতোমধ্যে এসব নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় ভোটের দিন ট্রাক, পিকআপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে ইসির অনুমতি নিয়ে যেকোনো যান চলাচল করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ছয় আসনের ভোটে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ থেকে ১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ থেকে ১৮ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
আরও পড়ুন:ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমনটি বলেন
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ৬ আসনে উপনির্বাচন আগামী বুধবার। ভোটের এক দিন আগেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, শুক্রবার রাত থেকে আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, 'মনে হয়, এ রকম একটা পরিকল্পনা আগেই করা ছিল। অডিওতে তার স্ত্রীর কণ্ঠে একজন নির্দেশনা দিচ্ছিলেন কী নিয়ে যেতে হবে। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বন্ধ করে দিতে বলেছে। ১০ মিনিট পরে বের হয়ে গেলে চালু করতে তার মানে কী?'
নিখোঁজ প্রার্থীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ ছিল জানিয়ে ইসি আনিছ বলেন, গণমাধ্যমের সামনে এসে সে বলবে কোথায় কীভাবে গিয়েছিল। আমাদের কাছে এটুকু তথ্য আছে যে, সরকারি কোনো বাহিনী এ কাজটি করেনি।
আনিছুর রহমান বলেন, একটা লোক যদি কেউ লুকিয়ে থাকে ইচ্ছা করে তাহলে তাকে খুঁজে বের করা একটু কঠিন।
প্রার্থী খুজে না পাওয়ায় ভোটের মাঠে প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,' আমার মনে হয় না তেমন কিছু হবে। খুব বেশি যে প্রভাব পড়বে এরকম কিছু না। কারণ তার স্ত্রী তার পক্ষে সব কাজ করে যাচ্ছেন।'
ছয় আসনে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি আনিছ বলেন, ' যথারীতি সব প্রস্তুতি আছে। সিসি ক্যামেরা থাকছে না। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।'
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে আইনের বেশ কয়েকটি ধারা ও অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার ফলে সংরক্ষিত নারী প্রার্থীদের জামানত বেড়েছে দ্বিগুণ।
আগে ১০ হাজার টাকা জামানত নিলেও এখন তা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে শূন্য আাসনে নির্বাচনের সময় ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করা হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনি আইনের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও ধারায় সংশোধনের প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সংবিধানে নারী আসন ৪৫টি থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। নির্বাচনি আইনে এখনও ৪৫টি আছে। তাই আইনের ৪৫ থেকে ৫০টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘এ ছাড়া বিদ্যমান আইনে সময় নির্বাচনের সময় ছিল ৪৫ দিন। সাধারণ আসনে নির্বাচনের সময় ৯০দিন। সেটার অনুরুপ করা হয়েছে। অন্যদিকে নারী আসনে প্রার্থীদের ১০ হাজার টাকা জামানত ছিল। সাধারণ আসনের মতো ২০ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বাধীন আইন সংস্কার কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন সভায় বিষয়গুলো অনুমোদন হয়েছে। এখন এটা আইন মন্ত্রণালয়ে এখন পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা কেবিনেটে পাঠাবেন। তারপর সংসদে যাবে। এরপর পাশ হবে। আইনটি পাশ না হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নির্বাচন হবে।’
এক প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘আলাচ্যসূচির বিবিধ বিষয়ে ইভিএম বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্পিকারের সঙ্গে সিইসির বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করবো।’
আরও পড়ুন:ব্যালট থেকে সরে এসে সর্বাধিক দেড়শ আসনে ইলেকট্রানিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা এখনও অনেকটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। ১৫ জানুযারির মধ্যে প্রকল্প পাস না হলে দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলে কমিশনাররা এর আগে একাধিকবার ঘোষণা দিলেও এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘১৫ তারিখ বলা মানেই তো ১৫ তারিখ নয়। দু’এক দিন এদিক-সেদিকও হতে পারে।’
১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে দেড়শ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলেছিলেন, এখন আপনাদের কী অবস্থান-এই প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আলমগীর বলেন,‘ আমরা তো বলেছিলাম সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব। এটা একজাক্ট বলা যায়নি কারণ কতটা ট্রেনিং দিয়ে প্রস্তুত করতে পারব। ’
নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন,‘ ইভিএম কেনার বিষয় আছে, সফটওয়্যার ইনস্টল করার ব্যাপার আছে। তারপর সেটা চেকিং, ট্রেনিং, ভোটার এডুকেশন; সবকিছু মিলিয়েই আমরা বলেছি জানুয়ারির মধ্যে না হলে দেড়শ আসনে করা সম্ভব না। এখনো আমরা সেই অবস্থানেই আছি। কারণ এটা তো একটা হিউজ কাজ। নানা রকম ব্যাকআপ সার্ভিস তৈরি করার জন্য অনেক সময় লাগবে।’
ইভিএম কেনার জন্য কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন যে প্রকল্প নেয় তাতে ২ লাখ ইভিএম কেনাসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কেটি ৪৪ লাখ টাকা।
দুই লাখ না হয়ে আরো কম হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ হয়ত এক লাখ হতে পারে। কমও তো হতে পারে। তবে পরিকল্পনা কমিশন এখনো ইয়েস বা নো কোনোটাই তো বলেনি। চূড়ান্তভাবে তারা কিছু বললে আমরাও বলতে পারব।’
ছয় সংসদীয় উপ-নির্বাচনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার অর্থাভাবে বন্ধ হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কী করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অর্থটা তো বাৎসরিক ভিত্তিতে দেয়া হয়। বর্তমান অর্থ বছরে যে টাকা দেয়া আছে, যেসব নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছি সেগুলোর ব্যয় কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যেই। এটা জন্য কিন্তু আমরা সরকারের কাছে আমরা অতিরিক্ত বাজেট চাইনি। এই আর্থিক মন্দার মধ্যে আমাদের চাওয়াও যুক্তিযুক্ত না।
জাতীয় নির্বাচনে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট থেকে ব্যয় হবে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, ‘তখন কী লাগবে না লাগবে সেটা ধরে আমরা বাজেট করব। তখন বাজেট দিলে, সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ওইটার সঙ্গে এইটার কোনো সম্পর্ক নেই।’
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে বিএনপিসহ সমমনা বেশ কয়েকটি দল ভোটে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। তবে বর্তমান কমিশন ভোটের দেড় বছর আগেই কমপক্ষে দেড়শ আসনে ইভিএম ভোট করার সিদ্ধান্ত জানায় সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
আরও পড়ুন:নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের মনোনয়নের বৈধতা পেয়েছেন। তবে এ দুই আসন থেকেই মনোনয়ন তুলে আলোচনায় আসা আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম একটিতেও প্রার্থীতা ফিরে পাননি।
এছাড়া যাচাই বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ১১ প্রার্থীর কেউই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার বিকেলে বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন বগুড়া অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, আপিলে প্রার্থীতা ফেরত পাওয়া দুজন হলেন বগুড়া-৪ আসনের কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল এবং বগুড়া-৬ আসনের আব্দুল মান্নান আকন্দ। বগুড়ার দুটি আসনে মোট ১৩ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে পাঁচ জন প্রার্থী। আর বগুড়া-৬ আসনে আটজন সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গত ৮ জানুয়ারি উপনির্বাচনের প্রার্থী যাচাই-বাছাই ছিল। ওইদিন মনোনয়নে দেয়া ভোটার তালিকার তথ্যে নানা রকম গড়মিল থাকায় দুই আসনের মোট ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। পরে এই ১১ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। রোববার সেই আপিলের শুনানি ছিল। এতে আব্দুল মান্নান আকন্দ ও কামরুল হাসান সিদ্দিকী প্রার্থীতা ফিরে পান।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়া আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, ‘গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলাম। রোববার শুনানির পর আমার প্রার্থীতা ফিরে দেয়া হয়েছে।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকীও জানিয়েছেন একই কথা।
এদিকে হিরো আলম বলেন, ‘আপিল শুনানিতে প্রার্থীতা দেয়নি আমাকে। আমি সোমবার হাইকোর্টে আপিল করবো। কাগজপত্র রেডি করছি।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুস সোবাহান মিয়ার (গোলাপ) বিরুদ্ধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান তিনি।
এমপি গোলাপের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন- এ প্রশ্নে ইসি আলমগীর বলেন, ‘হলফনামা আমাদের একটা জমা দেবে প্রার্থীরা। কিন্তু সেই হলফনামার সত্য-অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কোনো কিছু করার আইনের ভিত্তি নাই। হলফনামা যেটা দেবে, সেটা এক ধরনের তথ্য। জাতিকে জানানোর দায়িত্ব আমাদের।’
যথাসময়ে দেশে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন হবে এবং সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে জানান এই কমিশনার।
মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সস্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
সম্প্রতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন এমপি গোলাপ। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।
কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘এই সংসদ সদদ্যের (গোলাপ) বিরুদ্ধে দুর্নীতির যদি কিছু থাকে তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন দেখবে। তারা মামলা করবে। রাজস্ব বোর্ড এনবিআর মামলা করতে পারবে। পরবর্তীতে আইনে যেটা আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। একজন সংসদ সদস্যদের পদ হারানোর জন্য যেসব বিষয় আছে সেটা কর্তৃপক্ষ দেখবে।’
তিনি বলেন, ‘উনি (এমপি গোলাপ) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তার ভোটারদের জানিয়েছেন ওনার নাম কি, শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে। কি সম্পদ আছে। আমাদের এখানে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নাই।’
দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘দুই দেশের নাগরিকরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। তাদের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব দেখে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দেখবে। তারা আমাদের বললে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
প্রার্থী ভুল তথ্য দিলে তিনি কোয়ালিফাইড হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি চ্যালেঞ্জ না করে, তাহলে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যান। উনি ভুল তথ্য দিয়েছেন এটা বললে হবে না, প্রমাণ করাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’
এ ব্যাপারে কমিশনের সীমাবদ্ধতা আছে কি না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা না। উনি হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে নমিনেশন সাবমিটের আগে জানালে ব্যবস্থা নেব।’
হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের আগে তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য মানেই প্রতারণা। প্রতারণার মামলা আছে আলাদা৷ কোর্ট শাস্তি দিয়ে আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। যথা সময়ে নির্বাচন হবে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। পার্লামেন্টে স্পিকারের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আলাপ হবে। তারপর দিন-তারিখ ঠিক হবে।’
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খসড়া দেয়া হলো। প্রতিবছর মার্চ মাসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করি। এবারও তাই হবে। যদি কারো কোনো আপত্তি থাকে। তারা আপত্তি দেবেন। ত্রুটি থাকে তাহল সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন। পরে আমরা চূড়ান্ত করে ভোটার দিবসে প্রকাশ করবো।’
ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া অপরাধ জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘শাস্তি, অনেক কঠিন শাস্তি। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে। ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে, পাশাপাশি জেল খাটতে হবে।’
আরও পড়ুন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী, নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৭ জন। বাতিল হয়েছেন ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জন। সবমিলিয়ে ভোটার বেড়েছে ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৮ জন।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম। আগামী ২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই তালিকা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন ভোটাররা।
সব মিলিয়ে ১১ কোটি ৯০ লাখ ভোটার রয়েছে ২০২৩ সালে। এবার গত জুন থেকে নভেম্বর পযন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাযক্রম চলে। আর ২০১৬ ও ২০১৯ সাল থেকে তিন বছর পর পর (১৫-১৭ বছর বয়সী ও ভোটারযোগ্যদের) বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ চলে।
হালনাগাদের তথ্য তুলে ধরে সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভোট দেয়ার যোগ্য হয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৩ লাখ ২৭৭ জন। ২০২২ সালে ভোটার ছিল ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন।’
সচিব বলেন, ‘সব মিলিয়ে মৃতদের বাদ ও নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে এ বছরের খসড়া ভোটার তালিকা নতুন অন্তর্ভুক্তযোগ্য ভোটারের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৮ জন, যা ৫.১০%।’
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর নাম বা অন্য তথ্য সংশোধনের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা। দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এখন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন এমন ভোটারের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন।
২ মার্চ ২০২২ ভোটার ছিল-১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন, নারী ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন এবং হিজড়া ৪৫৪ জন। হালনাগাদে যুক্ত ২০২২ সালে ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৭ জন। পুরুষ ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৪৫৫ জন, নারী ৩৯ লাখ ১০ হাজার ৪৩৯ জন এবং হিজড়া ৩৮৩ জন। মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জন।
খসড়া তালিকার ভোটারসহ মোট ভোটার এখন ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১১২ জন, নারী ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭৭ হাজার ২০৯ জন এবং হিজড়া ৮৩৭ জন। ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে, এসব ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
এ বছর ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে চার ধাপে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ চলে। এ সময় বর্তমান ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে মৃতদের তথ্য সংগ্রহও করা হয়েছে; এবার মৃত ভোটারের তথ্যও নেয়া হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদে ১৫-১৭ বছর বয়সী এবং ভোটারযোগ্য বাদ পড়া নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে নতুন যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হচ্ছেন, তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
তারা জানান, বাকিরা ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালানাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে পাঁচবার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য