মাথার ওপর দিয়ে এত্ত বড় ট্রেন কীভাবে যায়? ট্রেনের মধ্যে কি মানুষ থাকে! ট্রেন কি অনেক জোরে চলে যায়? চলতে চলতে আবার কি নিচে নামে!
৯ বছরের স্বপ্নিলের মনে এ রকম হাজারো প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই সন্তানকে নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।
উদ্বোধনের পর আগারগাঁও স্টেশনের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিল। পুরোটা সময়জুড়েই ওপরের দিকে তার কৌতূহলী চোখ। শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মেট্রোরেল নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওর জিজ্ঞাসা ছিল। শুধু প্রশ্ন করে, তাই নিজ চোখে দেখাতে নিয়ে এসেছি।'
হ্যাঁ, মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহলের শেষ নেই। বুধবার সকাল হতেই আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনের পর বাড়ে জটলা। প্রথম দিন ওঠা যাবে না জেনেও রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মানুষ, সঙ্গী হয়েছে স্বপ্ন-যাত্রার।
সকাল থেকেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের চোখ ছিল মেট্রোরেলে। স্টিল ছবি, ভিডিও, ফেসবুক-ইউটিউবে লাইভ, আলাদা কনটেন্ট তৈরি, সেলফি- আরও কত-কী! সময়কে ধরে রাখতে ছিল নানা চেষ্টা। শুরুর দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। তাদের কথা, এই দিনটি বারবার আসবে না। তাই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে চায় সবাই।
মিরপুরের মাজার রোড থেকে আসা তাসনুভা বলেন, ‘আধুনিক এমন সুবিধা উন্নত দেশে দেখা যায়। বাংলাদেশে এমন সেবা শুরু সত্যি বিস্ময়।’
শ্যামলী থেকে আসা রবিউল বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সেতু এলাকায় ছিলাম। আজও আগারগাঁও প্রান্তে আছি। দুটি ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী আমি। এ এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি।’
শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেলের পিলারের নিচে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন দুইজন। একজন বিপ্লব, অন্যজন নিঝুম। স্মৃতিটুকু ধরে রাখতেই আসা।
বিপ্লব বলেন, ‘আজ থেকে ২০-৩০ বছর পর এমন দৃশ্য দেখলে আবেগতাড়িত হব। নিশ্চয়ই তখন চোখে জল চলে আসবে।’
পঞ্চাশোর্ধ্ব আবু মুসা দূর থেকে দেখছেন ট্রেন কীভাবে যায়। বলেন, ‘চড়তে পারব কি না, জানি না। তবে দেখে বুকটা ভরে গেল।’
নানান ভঙ্গিমায় মেট্রোরেলের পোস্টার ধরে ছবি তুলছেন কলেজপড়ুয়া স্মৃতি। বলেন, ‘আগামীকালই ট্রেনে চেপে বসতে পারি। উত্তরায় গিয়ে আবার ফিরে আসব।’
মেট্রোরেল চালু হবার পর তা নিজ চোখে দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। জীবনের শেষ সময়ে এসে এই চাওয়া মনের অজান্তেই উঁকি দিত দিনভর।
শেওড়াপাড়ায় বসবাসরত এই বৃদ্ধ দুপুরে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শুধু দেখছি কাজ হচ্ছে। কিন্তু কবে শেষ হবে, আদৌ দেখে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধায় ছিলাম। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।’
নতুন আশায় ব্যবসায়ীরা
আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে বছরের পর বছর মিরপুরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিগত সাত বছরের অধিকাংশ সময় নির্মাণকাজের কারণে রাস্তা এক পাশ বন্ধ করে আরেক পাশে যাওয়া-আসা দুটোই করতে হয়েছে। ফলে যানজট ছিল এ এলাকার নিত্যসঙ্গী। অনেকে যানজটের কারণে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলেও গেছেন।
ব্যবসায়ীরাও কঠিন সময় পার করেছেন। সাত বছর আগে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় থেকেই ব্যবসায় ক্ষতি গুনেছেন তারা। তাদের সেই দুর্দশা করোনা মহামারিতে বাড়ে আরও।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ গোলচত্বর পর্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই পথে রাস্তার দুপাশে সারি সারি আসবাবপত্র, পর্দা, বিছানা চাদর, জুতা, রেস্টুরেন্ট ছাড়াও ছিল মুদি ও মনিহারি দোকানও। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই ছিল রাস্তা বন্ধ। ঘুরে দোকানে ঢুকতে হতো। ফলে দোকানে বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে।
দোকানরা জানান, নির্মাণকাজের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ক্রেতা হারিয়ে তারা লাখ লাখ টাকার দেনায় পড়েছেন। বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকান টিকিয়ে রাখতে অনেককে নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। কেউ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হয়ে গেছেন খেলাপি।
শেওড়াপাড়া মুসলিম সুইটস এর চারটি দোকান ছিল। মেট্রোর কাজের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দুটি। তবে নতুনভাবে দোকান দিচ্ছেন মুসলিমের মালিক।
দোকানি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে দুটি চালু আছে আর একটি নতুনভাবে শুরু করেছি। স্টেশনের নিচের দোকানে আগে বেকারি সামগ্রী বিক্রি করা হতো। সেখানে এখন থেকে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, খেজুর, মধু, কালোজিরা, সরিষার তেলসহ অর্গানিক পণ্য বিক্রি করা হবে।
‘মেট্রোরেল চালু হয়ে গেছে। আর ২/৩ মাসের মধ্যে শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হবে। তখন দোকানের বিক্রি আরও বাড়বে।’
শেওড়াপাড়ার পূর্বপ্রান্তে মুদি দোকানি স্বপন খান। তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে এখানে দোকান করি। প্রথমে দোকান রাস্তার পাশে ছিল। মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু হওয়ার পর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওইখানের দোকান উঠিয়ে দেয়া হয়। ভেতরে এসে আবার দোকান করি।
‘প্রথমে খুব আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলাম। অনেক কাস্টমার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভবে চলাফেলা করতে পারেনি। দৈনিক ৪০ হাজার, ৫০ হাজার, এমনি ৮০ হাজার টাকাও বিক্রি হতো। মেট্রোর নির্মাণ শুরুর পর আর কাস্টমার আসতে পারেনি। বেচাকেনা কমতে কমতে প্রায় জিরোতে চলে যায়। কিন্তু এখন আবার ব্যবসা ফিরতে শুরু করেছে।’
বইখাতাসহ স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রি করেন হামিদ আলী। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর কষ্টে গেছে। ব্যবসা নেমেছে অর্ধেকে। কষ্টের সময় শেষ। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে ভালো আছি। এখানে অনেক অনেক নাম করা স্কুল-কলেজ আছে। এই এলাকা আগের চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় সরগরম হয়ে উঠবে।’
পর্দা, বিছানা চাদরসহ গৃহস্থালী সামগ্রী বিক্রেতা শফিকুল আলম বলেন, ‘মেট্রোরেল চালুর কারণে মিরপুর এলাকায় ব্যবসা আরও বাড়বে। কারণ মিরপুরে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ বসবাস করেন। মানুষের সমাগম বাড়লে বাড়বে ব্যবসাও।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা প্রশাসন ও কুলাউড়া শিশু একাডেমির আয়োজনে পরিষদ হল রুমে সমাপনী দিবসে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল বাসার এর সভাপতিত্বে এবং ইসরাত জাহান নওরিনের উপস্থাপনায় দিবসের সমাপনীতে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশ গঠনের নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদেরকে সু- শিক্ষা ও সু-নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডঃ রজত কান্তি ভট্টাচার্য , প্রভাষক সুরজিৎ কুমার । আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল দেবনাথ, সংগীত প্রশিক্ষক সুমিত্রা ভট্টাচার্য, নৃত্য প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন দুর্জয়, প্রাক প্রাথমিক প্রশিক্ষক সেবিন আক্তার, সংগীত শিল্পী নান্টু দাস ও হোসনে আরা বেগম। পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২৬ জনকে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ৩৫০ জন শিশু ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে দেখা গেছে হাসিনাকে।
এদিকে ২০২৪ সালের শেষভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠককে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ১৯ ডিসেম্বর ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
সিআইডির ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন বৈধ সরকার উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়ার পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন।
এই তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে, ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত ও অভিযোগ দায়েরের অনুমতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ রমনা থানায় সিআর মামলা নং-২২২/২০২৫ দাখিল হয়, যার ধারাগুলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১২১, ১২১(ক), ১২৪(ক)।
পাঁচ মাসেই সিআইডির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার শুরু হচ্ছে। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি প্রধান এজেন্ডা- সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারায় (১২১/১২১ক/১২৪ক) অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১৮, ঢাকায় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের অধিকাংশ অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে দেশে থাকা সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করে বিভিন্ন জেলা কারাগারে থাকা ৯১ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৯৫ জন আসামি এখনো পলাতক বলে জানা গেছে।
গতকালকের শুনানিতে প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য সমন ও গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা অনুপস্থিত থাকলে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১২ ধারার আওতায় অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালনা করা হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিচার ও দায়বদ্ধতা’ এজেন্ডার বাস্তব প্রতিফলন, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দৃঢ় সঙ্কেতও।
রাজবাড়ীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ ধরার অপরাধে ১১ জেলেকে আটক করেছে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ। এ সময় ৪০ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল এবং ১৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা।
তিনি বলেন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে গোয়ালন্দঘাট থানার পদ্মা নদীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ১১ জন জেলেকে মা ইলিশ ধরার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। একই সময়ে প্রায় ৪০ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল ও ১৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আটককৃত ১১ জন জেলের প্রত্যেককে ১৪ দিন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজা প্রদান করেন। জব্দকৃত কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’। ১৬৭ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা শহর দুটি ভারতের।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম অস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ২৬০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, বায়ুর মানের স্কোর ২২৪, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৬৮। ১৬৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাতারের রাজধানী দোহা। দূষিত বাতাসে শীর্ষ দশে থাকা অপর শহরগুলোর বাতাসের মানের স্কোর ১৫৭ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয় বায়ুর মান। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠী’র (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ অবস্থায় গোডাউনের পাশের রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের অনেকে এই কেমিক্যালের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শিয়ালবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ওই কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিভে গেছে।
এদিকে, কেমিক্যাল গোডাউনের পাশে অবস্থিত রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টসের কর্মীরা সকালে কর্মক্ষেত্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় কেমিক্যাল গ্যাসে পুরো গার্মেন্টস ভরে যায়। সকালে গার্মেন্টসে প্রবেশের পর একে একে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
রাইজিং ফ্যাশনের কর্মী মো. আল আমিন বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের বিষাক্ত গ্যাসে গার্মেন্টস ভরে ছিল। আমরা সকালে যখন কাজ করতে আসলাম, তখন কেমিক্যাল রিয়েকশনে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এসময় রাইজিং ফ্যাশন নামের ওই গার্মেন্টসের সামনে কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিরা বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১২টির বেশি ইউনিট। ভবনটিতে রাসায়নিক থাকায় এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মন্তব্য