মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈশ্বিক মন্দার এ সময়ে দেশের অর্থনীতি এখনও ভালো জানিয়ে দেশবাসীকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার সকালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৫৯তম বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ আছি কাজ করে যাব, তবে আমি চাই, সব মানুষই যেন ন্যায়বিচারটা পায়। দ্রুত মামলাগুলো যেন নিষ্পত্তি হয়। একটা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি যেন সৃষ্টি হয়। সেই পরিবেশটা যেন থাকে। সেটাই আমরা চাই।
‘আমরা তো আইন প্রণয়ন করি। আপনারা (বিচারক) আইন ব্যবহার করেন। কাজেই সেখানেও যখন যেটা হয়, আমরা সংশোধন করি, আরও উন্নত করি। যা-ই করি, মানুষের কল্যাণে, মানুষের উন্নয়নে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যতক্ষণ আছি, এটুকু বলব, বাংলাদেশে আমাদের মানুষ যেন অন্তত আইনের শাসন পায়, সঠিক বিচার পায়। তাদের স্বার্থে এই জুডিশিয়াল সার্ভিসের জন্য যা যা করণীয়, তা আমরা করে দেব।’
সারা দেশে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ই-জুডিশিয়ারি চালু করা গেলে মামলা ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আসবে। বিচারকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা আমরা করে দেব…সেই সঙ্গে একটা আইনি বিশ্ববিদ্যালয় আমরা প্রতিষ্ঠা করব। আমি মনে করি যে, সর্বক্ষেত্রে ট্রেনিংটা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এখন এই সময়টা আসলে অর্থনৈতিক মন্দা যেহেতু বিশ্বব্যাপী, তার একটা ধাক্কা আমাদের আছে। তাই আমি বলতে পারি না যে, এক্ষুনি করে দিতে পারব, তবে আমার ইচ্ছে আছে আমাদের এই জুডিশিয়ারি সার্ভিসটাকে আরও আধুনিক, যুগোপযোগী এবং অ্যাকাডেমি বা যা-ই করব, তা আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন হয়, যাতে বিশ্ব থেকে কেউ এসে দেখতে পারে। আমরা যেমন বিদেশে পাঠাব ট্রেনিংয়ের জন্য, বিদেশ থেকেও যেন আমাদের এখানে আসে, সেই ধরনের করেই আমি করতে চাই।’
করোনাভাইরাসের অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট মন্দা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। আমাদেরও কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে। অনেক কাজ এখন আমাদের একটু কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। কারণ সারা বিশ্বের তো এই দুরবস্থা।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা নিয়েও আলোচনা ছিল সরকারপ্রধানের কণ্ঠে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)। আমেরিকার এই স্যাংশনের কারণেই আমাদের যে পণ্য, বিশেষ করে যেগুলো বিদেশ থেকে আমাদের আনতে হয়, কিনতে হয়, সেগুলোর এত বেশি দাম বেড়ে গেছে; জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের মূল্য বেড়ে গেছে। গম, চিনি, সার—যা যা আমাদের কিনতে হচ্ছে, ভুট্টা যে আমাদের কিনতে হয় বিদেশ থেকে, সেগুলোও কয়েক গুণ বেশি; মুদ্রাস্ফীতি সারা বিশ্বব্যাপী।
‘উন্নত দেশ ধনী দেশ, তারাও নিজেদের এখন অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা করে দিয়েছে, তবে বাংলাদেশটা এখনও আমরা ওই অবস্থায় পৌঁছায়নি। সে কারণেই আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, যে যা পারবেন, অন্তত উৎপাদন বাড়ান, যেন আমাদের খাদ্য বা অন্য কোনো কারণে কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। জ্বালানি তেল হোক, ভোজ্যতেল হোক, বিদ্যুৎ। কারণ আমাদের কথা ছিল বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার, আমরা কিন্তু সেটা দিতে পেরেছি, কিন্তু এই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
সারা দেশের আদালত ভবনগুলোর উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিচার করবেন, যারা বিচার চাইতে আসবেন, সবাই যেন একটা সুস্থ পরিবেশ পায়। ভালোভাবে থাকলে, ভালো পরিবেশ পেলে পরে চিন্তা করারও একটা সুযোগ হয়। কাজেই একটা সঠিক চিন্তা করেই কিন্তু বিচারটা করতে হয়। এটা একটা কঠিন কাজ। কাজেই সেই কাজটা যেন সহজভাবে হয়, তার ব্যবস্থা করা, এটা আমাদের দায়িত্ব।
‘এ জন্য ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ৮ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৪টির কাজ শেষ; আরও ৭টি সমাপ্তির পথে। তা ছাড়া সব জেলারগুলো উন্নতি করে দিচ্ছি। জেলা জজ আদালতে এজলাস সংকট নিরসনে ২৮টি জেলায় জজ আদালত ভবন যেগুলো তিন তলা, সেগুলো চার তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী করে দেয়া হয়েছে।’
অবশিষ্ট ভবনগুলোর উন্নয়নেও প্রকল্প নেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিচারকদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্যের দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব যখন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে একেবারে বিধ্বস্ত, বাংলাদেশে কিন্তু মাত্র একটা ঘটনাই ঘটতে পেরেছে। সেই হোলি আর্টিজান। তারপর থেকে কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা প্রত্যেকেই সতর্ক। আর কোনো ঘটনা এমনভাবে ঘটতে দিইনি আজ পর্যন্ত, ঘটতে পারেনি।’
আদালতেও সন্ত্রাসী হামলা হওয়ায় বিচারকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রায় দিয়ে যখন ঘরে ফিরতে যান, যেকোনো সময় তাদের ওপরে হামলা হতে পারে। সেটা যাতে না হয়, সে ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে…কিছু ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সামনে আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে, সবাই যেন নিরাপদ থাকতে পারেন সে জন্য।’
সন্ত্রাসবিরোধী মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম—এটারও কিন্তু ধরন পাল্টে যাচ্ছে। এখানেও কিন্তু সাইবার ক্রাইমটা সব থেকে বেশি। তার জন্য আমরা আইনও করেছি। অনেকে এর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলে, কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। এই কারণে যে এখন কিন্তু আগের মতো যুদ্ধ আর মল্ল যুদ্ধ তো হয় না।
‘এটাও বোতাম টিপে হয়, এখন তো ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। যুদ্ধও ডিজিটাল পদ্ধতিতে, ক্রাইমগুলোও এ ধরনের পদ্ধতিতে হয়ে যায়। এমনকি ট্রেনিং পর্যন্ত। কারণ অনলাইনে ট্রেনিং দেয়া হয় কীভাবে বোমা বানাবে, কীভাবে মানুষ খুন করবে—সেগুলো শেখানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী মামলাগুলোর দ্রুত বিচার সম্পন্ন হলে পরে তখন যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তারা আর হবে না।’
নিজের বাবা-মা হত্যার বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষার যন্ত্রণার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমিও চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। কেউ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না। প্রতিটি মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। নইলে যতবার আমার ওপর আঘাত এসেছে, সব তো মামলাও করতে পারিনি।
‘অনেক ক্ষেত্রে মামলা করারও সুযোগ ছিল না তখন। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় আমরা মামলা করতে পারিনি। অনেক মামলা পেন্ডিং ছিল। সেগুলো একে একে আপনারা নিষ্পত্তি করে দিচ্ছেন। দোষীরা সাজা পাচ্ছে।’
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উঠে আসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বদলে যাওয়া রাজনীতি এবং ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে নিজের ছয় বছরের শরণার্থী জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যদি বেঁচে থাকতেন ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত।’
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মোট ২৯ বছরের এই সময়কালকে ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই সময়গুলোতে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শুধু অন্ধকারই নেমে এসেছে। কোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বাংলাদেশকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন তখনও ওই পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে রয়ে গেছে।’
জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধী বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়েও নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা আসে বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘শুধু দেশে না, অনেক অনেক বড় বড় দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরাও এই বিচারে অনেক বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। কেউ কেউ তো সরাসরি টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথাও বলে, কিন্তু যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, তাদের বিচার হবে না…তাদের শুধু আমি একটা কথা বলেছিলাম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা অপরাধ করেছিল, তাদের বিচার তো এখনও চলছে। তো বাংলাদেশে মানুষের ওপর যারা এ রকম অত্যাচার করেছে, আমার মা-বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে, তারা এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের বিচার হবে না কেন? এ ধরনের চাপ কিন্তু সবসময় ছিল। তারপরেও এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিন্তু আমরা করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
মন্তব্য