বাজারে সুপরিচিত সবজিগুলোর চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় হবিগঞ্জে চাষ হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আবাদ শুরু হওয়া বিভিন্ন সবজি।
এসব সবজি বিক্রি করে জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার কৃষকরা লাভবান হলেও এগুলো সহজে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
উচ্চমূল্য এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে কম ধারণা থাকায় স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকোলির মতো সবজিগুলো খুব একটা কিনতে চান না গ্রামের লোকজন। ফলে শহরে নিয়ে কিংবা অনলাইনে বিক্রি করতে হয় সবজি।
এমন বাস্তবতায় উপজেলা পর্যায়ে বিক্রয়কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা, যাতে করে পাইকার ও ক্রেতারা নিয়মিত একটি জায়গায় এসে এসব সবজি কিনে নিতে পারেন।
চাষিদের ভাষ্য, বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর চাহিদা বাড়লে সবজির উৎপাদনও বাড়ানো যাবে।
কৃষি বিভাগের ভাষ্য, উচ্চমূল্যের সবজি বিক্রি করতে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব সবজির জন্য আলাদা একটি বাজার বসানোর পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
কী বলছেন কৃষকরা
বাহুবল উপজেলার বুলকোড গ্রামের কৃষক ছানু মিয়া জানান, তিন বছর ধরে ৩০ শতক জায়গায় বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করছেন তিনি। যে জমিতে আগে শিম কিংবা আলু চাষ করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ করতেন, সেখানে স্কোয়াশ চাষে লাভ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সামনের বছর স্কোয়াশ চাষ আরও বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি।
সবজি বিক্রি সহজ করতে উপজেলায় পর্যায়ে একটি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন এ কৃষক।
বাহুবলের ব্রোকোলি চাষি ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ১৫ হাজার ব্রোকোলি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ টাকার মতো, তবে যে ফসল আসছে, আমি আশা করি তিন লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব।’
হাফিজপুর গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি এ বছর প্রথম ২০ শতক জায়গায় ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। আশা করছি লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এসব সবজি চাষ করতে চাই, কিন্তু সমস্যায় পড়ি বিক্রি করতে গিয়ে। বেশি দাম হওয়ায় এবং লোকজন সবজিটা না চেনার কারণে এলাকার কেউ এটা কিনতে চায় না।
‘ফলে সিলেট বা শ্রীমঙ্গল বিক্রি করতে হয়। যদি সরকার আমাদের বিক্রির একটা সুব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমরা আরও বেশি করে বিদেশি সবজি চাষ করতাম।’
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য
বাহুবল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘কৃষিকে লাভজনক করার জন্য সরকার এখন উচ্চমূল্যের ফসল চাষে জোর দিচ্ছে। এ জন্য আমি বিভিন্ন ধরনের উচ্চমূল্যের সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
‘প্রথম অবস্থায় কৃষকরা এসব সবজি চাষ করতে চায়নি। তিন বছর আগে কয়েকজন কৃষককে রাজি করিয়েছিলাম। এখন সব কৃষকই এই সবজি চাষ করতে চায়।’
বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল জানান, উচ্চমূল্যের এসব সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যদিও এসব সবজি বিক্রি করতে একটু সমস্যা হচ্ছে, তবে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চমূল্যের সবজি বিক্রির জন্য বাহুবলের মিরপুর বাজারে একটি বিক্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা চলছে। আশা করি আগামী বছর আর কোনো কৃষক বিদেশি সবজি বিক্রির জন্য সমস্যায় পড়বেন না।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের দুইশ’ কৃষকের প্রায় ৪ শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাটার আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় পার্শ্ববর্তী দড়িনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জমির ফসল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার মতো লালচে রঙ ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা ও সবজির বাগান।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সাল থেকে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়। হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করলেও বর্তমানে এসআরএফ নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বর্তমান মালিক।
তারা জানান, এ ইটভাটার ২০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘনবসতি রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না; সব কিছু অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে, তা হলো কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায় ফসলের মাঠ। এ বছরও বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনুমোদন না থাকায় ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইটের ভাটাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এই ভাটাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েকদিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন, কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুরু হয় ভাটার কার্যক্রম। তবে সেসব সময় অদৃশ্য কারণে নীরবতা পালন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি ফল উৎপাদন ও কৃষির বিভিন্ন ফসল। কৃষকদের দাবি, অথচ এক ইটভাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পুরো এলাকার মানুষের।
মো. বুরুজ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার আগুনের তাপে তা পুড়ে গেছে। টাকা ধার করে জমি চাষ করেছিলাম। সেই ধারের টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
কৃষক মো. রফিকুল বলেন, ‘এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছি। তার এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারব না। ইটভাটার আগুনের তাপে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
‘গরুকে খাওয়ানোর যে কুটা (খড়) লাগবে তাও পাই কিনা সন্দেহ। আগুনের তাপে ঝলসে যাওয়া কুটা গরুও খেতে চায় না। এখন গরু কী খাবে, আর আমরাই বা কী খাব?’
আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান কৃষক আব্দুল হাই।
কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাটার আগুনের তাপ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, যা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ওই জমির ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাওয়ার যোগান হয়। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’
কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল বাতেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতে কাজ করতে গেলেই আমার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।’
এই এলাকায় যেন কোনো ইটের ভাটা না থাকে, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রাখেন তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’
কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ভাটাটি বন্ধ রয়েছে। আমি এখনও ভাটার লাইসেন্স করতে পারিনি।’
কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন সম্প্রতি কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফলজ গাছ ও ধানের ফসল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধান করে জেনেছেন, স্থানীয় ইটভাটার কারণেই কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধান পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় সব ঝলসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেয়া হবে।’
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা পাওয়া গেছে। স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধান উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নওরোজ মিয়াসহ এলাকার তিনজন কৃষক চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নতমানের নতুন একটি জাত। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাতটি সর্বাধিক লম্বা ও সরু। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। বিদেশ থেকে যে বাসমতি চাল আমদানি করা হয় এটাও অবিকল সেই চালের মতো। এজন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।
এর বাজারমূল্যও বেশ ভালো জানিয়ে সূত্র আরও জানায়, উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। তবে ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধান রপ্তানিও করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। এই প্রথম নতুন জাতের বিনা ধান-২৫ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি ধান ধরেছে।
‘অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা ধান-২৫ জাতে শীষ প্রতি ধানের পরিমাণও বেশি। চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় নিজেকে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলছে বলে মনে হচ্ছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।’
সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।
বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।
জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।
‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’
আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’
কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার হাকালুকি হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালি ফসল তুলতে মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।
কুলাউড়ার অনেক জায়গায় অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির শঙ্কায় কৃষকরা আধা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন। হাওরে পানি ঢোকার আগে ফসল ঘরে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। হাকালুকি হাওরপাড়ের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের ভাষ্য, হাওরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
এ বছর হাওরে এখন পর্যন্ত পানি না আসায় সময়মতো নিরাপদে ধান কাটছেন কৃষকরা। হাওরপাড়ের ভুকশিমইল, কানেহাত, কারেরা, বাদে ভুকশিমইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় কৃষকরা হাওরের ভেতর থেকে ধান কাটেছেন।
কৃষক মনিরুল উসলাম বলেন, ‘ধান পাকার আগে অতি বৃষ্টি হলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। হাওরে উজানের পানি ঢুকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। হাওরে এখন পানি না থাকায় ফসল তুলতে সুবিধা হচ্ছে।’
আরেক কৃষক জমির মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ধান পাকতে শুরু করলে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ছিলাম। এখন অতিরিক্ত গরম থাকলেও ধান নিরাপদে কাটা সম্ভব হচ্ছে।’
এক কৃষকের ভাষ্য, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতি বছর বোরো আবাদে বেশ ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। গেল বছর খরায় বোরো ধান আবাদ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির সংকটে পড়ায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, বোরো চাষের এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি সংকটের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। গত বছর হাকালুকি হাওরে যে ছোট-বড় খাল রয়েছে, সেগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। আবাদি জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তুলনামূলক পানির জোগান না থাকায় দেখা দিয়েছিল পানির অতিরিক্ত সংকট। কোনো কোনো জায়গায় ধান বের হলেও পানির অভাবে চারার অবস্থা ছিল শোচনীয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সব শঙ্কা কাটিয়ে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসে হাওর অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে।
‘এ বছর বোরো ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য সরকারি ভর্তুকি মূল্যে কয়েকটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার কৃষকদের দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আর কয়েকদিন পর পেকে গেলে তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বাতাসে দোল খাওয়া আঙুর বাগানের এমন দৃশ্য দেখা গেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে বিস্তৃর্ণ ধানি জমি। তার মাঝেই উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা। সেই মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় সবুজ রঙের আঙুর।
বাগানে নিবিষ্ট চিত্তে গাছের পরিচর্যা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। এ সংবাদ সগ্রাংহককে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি। এরপর আগ্রহ নিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তার শখের আঙুর বাগান।
বাগানের প্রতিটি কোণায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায় আঙুর গাছগুলো সজীব ও সতেজ হয়ে বাগানে শোভা ছড়াচ্ছে।
বিল্লাল জানান, বছর দুই আগে শখ করে তার নার্সারিতে দুটি আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। সেবার গাছ দুটি থেকে তিনি প্রায় ১৮ কেজি আঙুর পেয়েছিলেন। তারপর ইউটিউব দেখে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নেন তিনি।
তিনি জানান, এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন। মোটামুটি লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার আঙুর তিনি বিক্রি করতে পারবেন।
শখের এ কৃষকের চিন্তা, আগামী বছর তিনি বাগানের পরিসর আরও বড় করবেন।
কুমিল্লা জেলার মাটিতে আঙুর চাষের উপযোগিতা আছে কি না তা এ মুর্হুতে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ জেলার মাটি সব ধরনের ফল উৎপাদনে সহায়ক বলে জানান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।
কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে আঙুর চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আঙুর চাষে শিক্ষক খোকনের প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি জেলায় ফলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।’
রমজানের মধ্যে শসার বাজার চড়া দাম থাকলেও বর্তমানে শসাচাষিরা দাম পাওয়া নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন।
এমন দুঃসময়ে শসাচাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের অন্যতম রিটেইল চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শসাচাষিরা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে চার টাকায়। ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।
এমন সময় সেই শসাচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্যটি কেনে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ। সেই শসা এখন খোলাবাজারের চেয়ে কম দামে স্বপ্ন আউটলেটে পাওয়া যাচ্ছে।
খোলা বাজারে বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি করতে দেখা গেলেও স্বপ্ন আউটলেটে তা ১২ টাকা কেজিতে গ্রাহকরা কিনতে পেরেছেন। এরই মধ্যে দিনাজপুরের খানসামার ওই এলাকা থেকে দুই টন এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকা থেকে ছয় টন শসা কিনেছে স্বপ্ন প্রতিনিধি।
বর্তমানে তাদের উৎপাদিত শসা পৌঁছে গেছে স্বপ্নর আউটলেটে। স্টক থাকা অবধি এ অফার গ্রাহকরা পাবেন।
স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘আমরা শসাচাষিদের দুর্ভোগের কথা জানতে পেরেছি নিউজের মাধ্যমে। আমরা দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানার পর তাদের কাছ থেকে শসা কিনেছি ন্যায্য মূল্যে।
‘অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও কৃষকদের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান থাকবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভবান না করে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সেতুবন্ধের চেষ্টা করে আসছে স্বপ্ন। এ চেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে স্বপ্নর হেড অফ পার্চেজ সাজ্জাদুল হক বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে শসাচাষিদের সংকটের খবর দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াব। দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এরই মধ্যে ৮ টন শসা আমরা কিনেছি।
“দুঃসময়ে কষ্টে থাকা অনেক কৃষকদের পাশে ‘স্বপ্ন’ এর আগেও দাঁড়িয়েছে। সামনেও পাশে থাকবে।”
দিনাজপুরের খানসামা এলাকার কৃষক সাকিব হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলাম এবার। শসার বীজ, সারসহ নানা কাজে লাখ টাকা খরচ হয় আমার, কিন্তু ১০ রমজান অবধি কিছু শসা বিক্রি করার পর বাজারে শসার দাম কমে যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা, এরপর পাঁচ টাকা এবং সবশেষে আরও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অনেক শসা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক লোকসান হচ্ছিল।’
তিনি আরও বলেন, “আমার এলাকার এক সাংবাদিক নিউজ করার পর এসিআই কোম্পানির ‘স্বপ্ন’ থেকে যোগাযোগ করে আমার অনেকগুলো শসা কিনে নিয়েছেন উনারা। এতে করে লোকসানের অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে আমার। তাদের অশেষ ধন্যবাদ।”
আরও পড়ুন:কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য