চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সংবাদকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের শিকার সংবাদকর্মী আবু আজাদ অভিযোগ করেন, ‘ভাটা মালিক ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হবে না’ বলে হুমকি দিয়েছেন। তার নির্দেশেই ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহন মারধরের পর আমার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।’
রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার মঘাছড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আবু আজাদ ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে স্টাফ করেসপনডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে রোববার সকালে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের মঘাছড়িতে পৌঁছাই। সড়কের পাশে মাটি তুলে নামহীন একটি ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ছবি তুলতে গেলে ইউপি সদস্য মোহন পাঁচ থেকে ছয়জন লোক নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে।
'একসময় মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক একটি গাড়িতে তুলে আমাকে মঘাছড়ি বাজারে নিয়ে যায়। সেখানেও প্রকাশ্যে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে। এরপর তার কার্যালয়ে নিয়ে বেঁধে রেখে আমার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড কেড়ে নেয়।’
মারধরকারীরা একসময় বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বলে অভিযোগ করেন আবু আজাদ।
তিনি আরও বলেন, “মারধরের একপর্যায়ে ইউপি সদস্য মোহনের মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান সিরাজুল আমার সঙ্গে কথা বলেন। পরিচয় জানার পর তিনি বলেন, ‘এ রকম সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হবে না।’ পরে তার নির্দেশে আমার মোবাইল ফোনের গুগল ড্রাইভে ঢুকে সব ছবি-ভিডিও মুছে দিয়ে মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে মোহন।
এরপর মোহন আমার পকেটে তার ভিজিটিং কার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা থাকলে কিছু করে দেখাতে বলে।”
নির্যাতনের একপর্যায়ে ছেড়ে দিলে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন ওই সংবাদকর্মী।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহন বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই সাংবাদিককে আনতে যাই। গিয়ে দেখি চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে মারধর করছে। তার মোবাইল ফোনও ভেঙে ফেলেছে। তাদের থেকে উদ্ধার করে আমার অফিসে নিয়ে আসতে চাইলে, সে রাজি হয়নি।
পরে তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে আমার অফিসে আনি। তার মানিব্যাগ, এটিএম কার্ড, আইডি কার্ড আমার কাছে আছে। মোবাইলটা যেহেতু ভেঙে ফেলেছে, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনে দেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মোহন আমাকে ফোন করে বলেছে, একজন ইটভাটার ছবি তুলছে। আমি মোহনের মোবাইল ফোন দিয়ে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে তাকে গাড়িতে তুলে দিতে বলেছি। আমি সেখানে ছিলাম না।’
ঘটনার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘আমরা ঘটনার বিষয়টি শুনেছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। যদি মারধর ও সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে ইটভাটা মালিকদের মামলা চলমান, তাই আমরা চাইলেই ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি মাহবুব মিল্কী বলেন, ‘সাংবাদিক মারধরের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক ভাটার মধ্যে শুধু ইসলামপুর ইউনিয়নেই রয়েছে ৭০টির বেশি ভাটা। এসব ভাটার একটিরও অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন হামলার নির্দেশদাতা ও স্থানীয় চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তার নিজের দুটি ও ইউপি সদস্য মোহনের জমিতে ভাড়ায় চারটি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।
এদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রকাশ্যে একজন সাংবাদিককে অস্ত্র ঠেকিয়ে নির্যাতন কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। একদিকে তারা অবৈধভাবে পরিবেশবিরোধী ইটভাটা পরিচালনা করছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৮ দিন পর চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া আবিদা সুলতানা আয়নীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় রুবেল নামের এক সবজি ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়েছে।
পাহাড়তলী থানার পুকুরপাড়া মুরগীর ফার্ম এলাকা থেকে বুধবার ভোরে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার আব্দুল হাদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আটক সবজি ব্যবসায়ী রুবেলও একই এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, ‘১০ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী নিখোঁজের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে একজনকে আটক করে। তার দেখানো মতে পাহাড়তলী থানার আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগীর ফার্ম এলাকা থেকে আয়নীর মরদেহ পাওয়া যায়।’
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার (এসপি) নাঈমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশুটিকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে রুবেল। এ সময় আয়নী চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। পরবর্তী সময়ে মরদেহটি বস্তাবন্দির পর সবজির ঝুড়িতে করে রাতেই পুকুরপাড়া মুরগীর ফার্ম এলাকায় ফেলে দিয়ে যায়।’
তিনি জানান, ঘটনার পর দাড়ি কেটে বেশ পরিবর্তন করলেও এলাকায় থেকে সবজি বিক্রি করে যাচ্ছিলেন রুবেল। তার আচরণে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সময় লেগেছে।
গত ২১ মার্চ আরবি পড়তে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও না পেয়ে থানায় মামলার চেষ্টা করেন স্বজনরা, কিন্তু থানায় মামলা না নেয়ায় মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২- এ মামলার আবেদন করেন শিশুটির মা।
মামলায় মো. রুবেল নামের সবজি বিক্রেতাকে আসামি করা হয়। আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক শরমিন জাহান পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সরাসরি এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই শিশুর মা চট্টগ্রামে ও বাবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মা চাকরিতে গেলে শিশুটি তার দাদির কাছে থাকত। কয়েক দিন আগে শিশুটি তার মাকে জানায়, স্কুলের এক বান্ধবী বিড়ালছানা কিনেছে, সেও কিনবে। পাশাপাশি জানায়, রাস্তায় বসা এক সবজি বিক্রেতা তাকে আরেকজনের কাছ থেকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দেবে বলেছে, তবে শিশুটির মা তাকে জানিয়ে দেয়, কারও কাছে যেতে হবে না, বেতন পাওয়ার পর তিনিই কিনে দেবেন। এর কয়েক দিনের মাথায় শিশুটি বিকেলে আরবি পড়তে যাওয়ার পর আর ফিরে না এলে তার দাদি ফোনে কর্মস্থলে মাকে বিষয়টি জানান। এরপর শিশুটির মা দ্রুত এসে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তার মেয়েকে পাননি।
পরে শিশুটির মা আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখতে পান, ঘটনার আগের দিন ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে স্কুলে বিরতির সময় রুবেল কৌশলে শিশুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। আর ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে দেখতে পান, বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে শিশুটি বোরকা পরে আরবি পড়তে যাচ্ছিল। ওই সময় রুবেলের সঙ্গে সে কথা বলছিল। একপর্যায়ে রুবেল বাজারের থলেতে একটি বিড়ালছানা শিশুটির হাতে তুলে দেয়। এরপর রুবেল ও শিশুটিকে আর দেখা যায়নি।
শিশুটির পরিবারের ধারণা, বিড়ালছানার নাম করেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিশুটিকে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আয়নীকে রুবেল অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন শিশুটির মা।
চট্টগ্রামে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে নিখোঁজের পর দুটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হয় ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিন দিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছিলেন বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশেপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন:কথিত প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করতে আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর ড. এম এল পলাশকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীমউদ্দীন হল, জগন্নাথ হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়া হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত প্রলয় গ্যাং নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর উত্থানের কথা জানা যায়। কথিত এই গ্যাং-এর সদস্যদের আচরণে বখাটেপনা ও উচ্ছৃঙ্খলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী এই গ্যাং কার্যক্রম কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী এই গ্যাং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার জন্য এই আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন জাকির হোসেন। এরপর নিজেও নেমে পড়েন একই পথে। ফ্রিল্যান্সারদের টার্গেট করে ডলার বেচাকেনার নাম করে শুরু করেন প্রতারণা। এভাবে গত প্রায় দেড় বছরে অন্তত ১০টি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই প্রতারক হাতিয়ে নিয়েছেন ৩০ লক্ষাধিক টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাকিরের কাছ থেকে ডলার কিনতে গিয়ে প্রতারিত হন ফ্রিল্যান্সার ইহসান ইফতেখার লাবীব।
ওয়েব ডেভেলপারের কাজ করা লাবীব জানান- সার্ভার, ডোমেইন ইত্যাদির বিল পরিশোধের জন্য পাইওনিয়ার অ্যাকাউন্টে ডলারের প্রয়োজন হয়। টাকার বিনিময়ে তিনি ডলার খুঁজছিলেন। ফেসবুকে ডলার বিক্রির একটি পোস্ট দেখে সেখান থেকে ডলার কিনতে তিনি ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। ওই ব্যক্তি লাবীবকে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে। প্রথম দফায় তিনি আর ডলার কেনেননি।
লাবীব জানান, ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ডলারের জরুরি প্রয়োজন হয়। তখন তিনি আবার ওই ফেসবুক আইডিতে নক করেন। কথা অনুযায়ী, ৩০০ ডলারের জন্য একটি বিকাশ নম্বরে তিনি ৩০ হাজার ৯শ’ টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও লাবীব তার পাইওনিয়ার অ্যাকাউন্টে ডলার না পেয়ে ম্যাসেঞ্জারের যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে লাবীবকে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
লাবীব এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এই মামলায় মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
মামলাটির তদারকি কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাকির ফ্রিল্যান্সারদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি ফ্রিল্যান্সারদের আইডিতে থাকা তথ্য ও ছবি নিয়ে ভুয়া নাম ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি তৈরি করতেন।
‘ভুয়া এসব আইডি দিয়ে জাকির ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপে জয়েন করতেন এবং অন্যদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন। তার ভুয়া আইডিতে ফ্রিল্যান্সারদের মতো তথ্য ও পোস্ট থাকায় অনেকে তার রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে নিতেন। এতে করে সত্যিকার ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপে তার আইডির মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ডও বেড়ে যেত।
‘এরপর সুযোগ বুঝে এসব আইডি থেকে ডলার বিক্রির পোস্ট দিতেন। এসব পোস্ট দেখে বিশ্বাস করে যারা লেনদেন করতেন তাদেরকেই ব্লক করে নতুন আইডি খুলে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন এই প্রতারক।’
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জাকিরের অন্তত ১০টি ভুয়া ফেসবুক আইডির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। সেগুলো হল- অমিত বর্মণ কল্লোল, সিদ্দিকুর রহমান, জুবায়েদ আহম্মেদ আনসারী, চন্দন বিশ্বাস পুলক, খাঁন মুহাম্মদ সাব্বির, কার্তিক দাস, আতিকুর রহমান রাসেল, আব্দুল কাদের, নাবিল হাসান মধু ও জিআর পলাশ। এই আইডিগুলো দিয়ে তিনি প্রতারণা করে আসছিলেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফ্রিল্যান্সারদের ডলার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে ডলার দিয়ে অনলাইনে কোনো কিছুর পেমেন্ট (যেমন ফেসবুক অ্যাডস, ডোমেইন, সার্ভার, ক্লায়েন্ট রিফান্ড ইত্যাদি) করতে গেলে দেখা যায় যে, প্রতি ট্রানজেকশনে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ ইউএস ডলার পেমেন্ট করা যায়।
এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই এলসি করে ডলার পাঠানোর সুযোগ নেই। কারণ একে তো ডলারের পরিমাণ কম থাকে, অন্যদিকে প্রত্যেকেই সাধারণত অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাইওনিয়ার, পেপাল বা ট্রান্সফারওয়াইজ ব্যবহার করে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব অ্যাকাউন্টে ডলার নেয়ার কোনো উপায় নেই। শুধু অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট পেমেন্ট বা সেন্ড মানি করা সম্ভব হয় এবং এটাই একমাত্র উপায়। আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন জাকির।
এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে ফ্রিল্যান্সারদের সরকারি চ্যানেলে ডলার ট্রানজেকশনের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ।
তিনি বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা থাকলেও ডলার ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বৈধ চ্যানেলগুলোই ব্যবহার করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে ডলার কেনাবেচা করলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই এসব বিষয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু ঘটনায় র্যাবের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। ওই নারীকে যে তুলে নেয়া হয়েছে, এটা র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে আছে কি না তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৫ এপ্রিল দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
জেসমিনকে আটক করার ক্ষমতা র্যাবের আছে কি না, আটকের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিলো কি না এবং র্যাব আটকের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী ঘটেছিল?- এসব বিস্তারিত জানাতে বলেছে আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন মনোজ কুমার ভৌমিক।
পরে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেসমিনকে যে তুলে নেয়া হলো এটা র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে আছে কি না তা আদালত জানতে চেয়েছেন। তাছাড়া ওই নারী যখন র্যাবের হেফাজতে ছিলেন তখন র্যাব যে আচরণ করেছে তা আইন অনুযায়ী হয়েছে কি না তা-ও আদালত জানতে চেয়েছেন।
‘আমরা আদালতে বলেছি, আমরা বিচার বিভাগীয় উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করার দাবি করেছিলাম। মারা যাওয়ার পরও কেন ১৫৪ ধারায় মামলা হলো না- এ বিষয়ে আবেদন করেছিলাম।
আদালত শুনানি নিয়ে আরও কিছু ডকুমেন্ট দেখবেন। পোস্টমটেম রিপোর্টটা দেখবেন। আগামী বুধবার আরও শুনানি হবে।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, জেসমিন মারা গেছেন শুক্রবার। এর আগে বুধবার গ্রেপ্তারের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনি র্যাব হেফাজতে ছিলেন। এ সময় কী ঘটেছিল?
‘আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।’
এছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত তথ্য আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর খবরটি সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। এ ঘটনায় এই নারীর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তলব করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তারা বলেছে, এ ঘটনা বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের নিকৃষ্ট উদাহরণ।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংগঠন সোমবার ও মঙ্গলবার পৃথক বিবৃতিতে এমন বক্তব্য তুলে ধরেছে। তারা যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুকে মারাত্মক অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংস্থাটি।
সোমবার রাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে মারাত্মক অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হয়। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিশন।
মানবাধিকার কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ কর্তৃক ‘র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান’ সংক্রান্ত প্রকাশিত বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অনভিপ্রেত।
‘র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদকালে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক প্রতীয়মান হয়। এটা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। এ অবস্থায় হেফাজতে মৃত্যু সংক্রান্ত বর্ণিত অভিযোগের বিষয়টি র্যাব বাদে পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।’
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খতিয়ে দেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দরকার। একইসঙ্গে মামলা দায়েরের আগে আটক, বেআইনি জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশকে না জানানোর ঘটনা সংবিধান, মানবাধিকারের মূল নীতি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন। এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের নিকৃষ্ট উদাহরণ।’
এইচআরএফবির দাবি, তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত র্যাব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে, যাতে তারা তদন্তকে কোনোভাবে প্রভাবিত করতে না পারেন।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে বলেন, মেডিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মাথায় আঘাত ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে পরিষদ।’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিবৃতিতে বলেছে, ‘সুলতানা জেসমিনের পরিবারের অভিযোগ গুরুতর। তবে এবারই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়ই নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। আগের ঘটনাগুলোর আইনগত প্রতিকার না পাওয়া ও বিচার না হওয়ায় এসব ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না।’
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২২ মার্চ) নওগাঁ শহর থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আটকের পর মস্তিষ্কে গুরুতর রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিন মারা যান বলে র্যাব দাবি করেছে।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা জিলা স্কুল রোড সংলগ্ন অভিজাত বিপণি বিতান প্ল্যানেট এসআরের ভেতর ডায়মন্ড হাউজের শাটার ভেঙে বিপুল পরিমাণ হীরার অলংকার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে। চুরি শেষে চোরের দল বাইরে থেকে দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে চলে যায়। সোমবার রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি দোকানের ভেতর সব শো-কেস খালি। বাইরে থেকে নতুন তালা দেয়া।
‘কী পরিমাণ অলংকার ও টাকা চুরি হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নই। তদন্ত চলছে। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে। তবে এটুকু বলতে পারি, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই এখানে চুরি হয়েছে।’
চুরি হওয়া দোকান ডায়মন্ড হাউজের মালিক সৌমেন সাহা৷ তিনি ঢাকার বাসিন্দা। এই শো-রুমের পরিচালক নিলয় সাহা বলেন, ‘সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে আমরা বাসায় চলে যাই। মঙ্গলবার সকালে আমি ও বিক্রয়কর্মী মিঠু দাশ শো-রুমের একপাশের শাটার খুলে দেখি সব অর্নামেন্ট চুরি হয়ে গেছে। বাক্সগুলো খালি পড়ে আছে। ক্যাশবাক্স থেকে নগদ টাকাও নিয়ে গেছে চোর।’
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথা ছিল। তার আগের রাতে এমন চুরির ঘটনা ঘটল।’
বাংলাদেশের জুয়েলার্স এসোসিয়েশন কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ জামান বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের আটক ও চুরি হওয়া ডায়মন্ড উদ্ধারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগে সব ধরনের পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নোটিশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ।
গত ১১ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল/ প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীকে পরিচয় শনাক্ত করার জন্য কানসহ মুখমণ্ডল পরীক্ষা চলাকালীন দৃশ্যমান রাখতে হবে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকরা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেছেন। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্ত পালনে শৈথিল্য দেখাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- ১৮ সেপ্টেম্বর গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে যারা পালন করবে না তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিসট্রার ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
পরে আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ বলেন, কান ও মুখ খোলা রাখতে হবে; এটা যারা পর্দা করেন তাদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থি। তাই এ রিট আবেদন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য